ইফতার ও সেহেরিতে কী খাবেন?

ইফতার ও সেহরিতে কি খাবেন?

 কতটুকু পানি খাওয়া প্রয়োজন। কখন কতখানি ব্যায়াম করবেন এই বিষয়গুলো নিয়ে আজকে আলোচনা করব। 

শুরুতেই বলি ইফতার এ কি কি খাবেন? 

অনেকেই শুরু করেন খেজুর দিয়ে এটা খুব একটা ভালো অভ্যাস। খেজুরের ন্যাচারাল সুগার আছে আপনাকে দ্রুত সারাদিনের ধকল কাটিয়ে উঠতে সাহায্য করে আর সাথে ফাইবার বা আজ এবং নানা ধরনের খনিজ পদার্থ তো আছেই। ফাইবার হজমের জন্য খুব উপকারী, আমরা সবাই যথেষ্ট ফাইবার যুক্ত খাবার খাই না। আবার রোজায় যাদের কোষ্ঠকাঠিন্য দেখা দেয় তাদের উপকারে আসবে। খেজুরের পরিবর্তে বা খেজুর খাওয়ার  ঠিক পরে যারা চিনির শরবত বা চিনি দিয়ে বানানো জুস খান এসবের পরিবর্তে পানি খাওয়া ভালো। যাদের সুযোগ আছে ডাবের পানি খেতে পারেন,ডাবের পানিতে পটাশিয়াম থাকে, আবার সারাদিন ঘামের সাথে শরীরে যে পানি শূন্যতা দেখা দেয় তা পুরনো সাহায্য করবে। শরবতের পরিবর্তে ফলের বানানো বাসার জুস খাওয়া যেতে পারে। তবে জুস বানানোর সময় চিনি দিবেন না। দোকান থেকে কেনা জুস ক্ষতিকর ক্যামিক্যাল থাকতে পারে,তাই বাসায় বানানো ফলের জুস খেতে  পরামর্শ দিয়েছে।

কেন চিনির শরবত চিনি দিয়ে বানানো শরবত এড়িয়ে যাওয়ার পরামর্শ দিচ্ছি?

আমাদের শরীরে আলাদা করে চিনি খাওয়ার প্রয়োজন বা উপকারিতা নেই। বড় অতিরিক্ত চিনি খেলে নানান স্বাস্থ্য সমস্যা দেখা দেয়, ওজন বেড়ে যাওয়া হার্টের রোগ ইত্যাদি। মিষ্টি কিছু খেতে চাইলে ফলমূল সবচেয়ে ভালো অপশন। খেজুর আর পানি খাওয়ার পরে কিছু ফলমূল খেতে পারেন। অনেক ধরনের ফলমূল পাবেন,যেটা ম্যানেজ করতে পারেন সেটাই খাবেন। একমাস যেহেতু খাবেন ফলমূলের পরিবর্তন তো আনতেই হবে। না, হলে একঘেয়ে লাগবে।একেক সময় হয়তো কম দামে একেক ফল পাবেন। আপনার জন্য যেটা সুবিধা হয় সেটাই বেছে নিবেন।নানা  রকমের ফলে নানা রকমের পুষ্টিগুণ থাকে তাই পরিবর্তন করে খাওয়া ভালো। এতক্ষণে  গেল তিনটা খাবার খেজুর, পানি, আর ফলমূল। অনেকেই এই সময় পেঁয়াজু ,বেগুনি,ডিম চপ , এগুলো খাবার খান।খাবার গুলো ডুবো তেলে ভাজা যা স্বাস্থ্যের জন্য খুব ক্ষতিকর। এই খাবারগুলোতে বেশি পরিমাণ ট্রান্সফ্যাট থাকা সম্ভাবনা বেশি।ট্রান্সফ্যাট হচ্ছে সবচেয়ে বিপদ ধরনের ফ্যাট। এই ফ্যাট অল্প পরিমানে খেলেও অনেক পরিমানে ক্ষতি করে।গবেষণায় দেখা গেছে আপনি দিনে যে পরিমাণ ক্যালরি খান তা মাত্র ২ শতাংশ ট্রান্সফ্যাট থেকে আসে তাহলে হার্টের রোগের ঝুঁকি বাড়ে তিন শতাংশ,ক্ষতিকর কোলেস্ট্রল বাড়ায়। সারাদিন রোজা রেখে এই খাবারগুলো খেয়ে নিজের ক্ষতি না করাই উত্তম। জিলাপি,বুন্দিয়া খাবার গুলো তেলে ভাজা,চিনি দেয়া। পায়ে খাবার গুলো এড়িয়ে গেলে ভালো।

তাহলে খেজুর পানি আর ফলমূল খাওয়ার পরে আর কি খাবেন? 

আগে আর কিছু না খেয়ে একটা বিরতি নেওয়া  ভালো। কেউ এই সময় নামাজ পারেন বা হাঁটেন ,এই বিরতি খুব ভালো জিনিস। সারাদিন উপবাসের পরে এই যে খাবার পেটে গেল সেটার বুঝতে কিছুটা সময় লাগে। বিরতি নেয়ার ফলে অতিরিক্ত খাবার খাওয়ার প্রবণতা কমে যায়। রোজার সময় অতিরিক্ত খাওয়া একটা বড় সমস্যা। এই কারণে অনেকে গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা হয় ,আবার অনেকের ওজন বেড়ে যায়। যারা রোজার সময় ওজন কমাতে চান তার জন্য এই বিশেষ বিরতি বিশেষ উপকারী হবে। 

আপনার খাবারের প্লেটটা মনে মনে চার ভাগে ভাগ করবেন। অর্ধেক প্লেট নেবেন সবজি আর ফলমূল,বাকি থাকল অর্ধেক এই অর্ধেকের অর্ধেক অর্থাৎ চার ভাগের এক ভাগ নিবেন লাল চালের ভাত বা লাল আটা রুটি। আর বাকি অংশ নেবেন মাছ ,মাংস, ডাল।অর্থাৎ প্রোটিন জাতীয় খাবার। লাল চলে অনেক মিনারেল ,ভিটামিন ফাইবার থাকে,যা সাদা চালে থাকে না। সবজি বা মাছ রান্নায় অতিরিক্ত তেল ব্যবহার করবেন না।

এই রান্না গুলোতে অলিভ অয়েল ব্যবহার করলে ভালো। এক্সট্রা ভার্জিন অলিভ অয়েল আরো ভালো।

তবে এই তেলের দাম বেশি আবার অনেকে এক্সট্রা ভার্জিন অলিভ অয়েল এর গন্ধ সব খাবারে পছন্দ করেন না। সেই ক্ষেত্রে অলিভ অয়েল ব্যবহার করতে পারেন। আপনারা অন্য তেল কেনার সময় দেখে নিবেন তাতে ট্রান্স ফ্যাট আছে কিনা। ট্রান্স ফ্যাটের পরিমাণ বোতলের গায়ে লেখা থাকে।সন্ধ্যার খাবারে দুইটা জিনিস মনে রাখতে বলেছিলাম প্রথমটা হল তেল যা নিয়ে এতক্ষণ কথা বললাম আরেকটা হল অতিরিক্ত ভোজন।আমরা ব্রেক নিয়েছিলাম অতিরিক্ত ভোজনের  সম্ভাবনা কমাতে তবে খেয়াল না রাখলে অতিরিক্ত ভজন হয়ে যেতে পারে। বিশেষ করে অনেকেই মনে করেন সারাদিন রোজা রাখার পরে বড় একটা খাওয়া দিতে হবে। আসলে আপনার শরীর অতিরিক্ত ভোজনের কোন প্রয়োজন নেই। অতিরিক্ত ভোজন অস্বস্তি ও ক্ষতির কারণ হয়। সবজি লাল চালের ভাত মাছ মাংস খেলে প্রয়োজনীয় পুষ্টি পেয়ে যাবেন।

এতক্ষণ আলোচনা করলাম ইফতার ও সন্ধ্যার খাবারে কি কি খাবেন

এখন আরেকটা গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে পানি শূন্যতা। এটা বিশেষ করে গুরুত্বপূর্ণ কারণ এবার রোজা হচ্ছে অনেক গরমের মধ্যে। যদি পানির দিকে খেয়াল না রাখলে শরীর খারাপ হয়ে যেতে পারে। ইফতার থেকে সেহরি পর্যন্ত কমপক্ষে ১০ গ্লাস বা আড়াই লিটার পানি খেতে হবে। ইফতার আর সেহরিতে তো পানি খাবেন মাঝে সময়টাতেও মনে করে পানি খেতে থাকবেন। তারাবি নামাজের সময়ে সাথে একটা পানির বোতল রাখতে পারেন।নামাজের আগে পরে পানি খেলেন আবার যেহেতু এটা অনেক লম্বা সময়ের একটা নামাজ এর মাঝে পানি খেয়ে নিতে পারেন। পানির পাশাপাশি পানি জাতীয় খাবার যেমন তরমুজ, শসা, টমেটো এগুলো খেতে পারেন। চা কফি দিয়ে পানি শূন্যতা পূরণ করার  চেষ্টা না করা  ভালো।কারণ এগুলোতে ঘনঘন প্রস্রাব হতে পারে ফলে উল্টো আরো পানি শূন্যতা  তৈরি হতে পারে।ভালোভাবে খেয়াল রাখবে যেন পানি শূন্যতা না হয়।পানিশূন্যতা থেকে সমস্যা সৃষ্টি হতে পারে। এখন চলে আসি সেহরি তে কি খাবেন? 

সেহরিতে এমন খাবার আমাদেরকে বেছে নিতে হবে যা অনেকক্ষণ ধরে পেটে থাকে।

যে খাবারগুলোতে ফাইবার বেশি,লাইসেমিক  ইনডেক্স বা জিআই কম। এতে যা হবে আমরা দিনে অল্প অল্প করে বেশি সময় ধরে এনার্জি পাব। সাদা চালের ভাত খেলে সেটা খুব তাড়াতাড়ি হজম হয়ে যায়,অনেক সময় ধরে এনার্জি দিতে পারেনা একটু পর ক্ষুধা লেগে যায়। তাই সেহরির জন্য ভালো হচ্ছে লাল চালের ভাত। ওটস খেতে পারেন,কেনার সময় দেখবেন হোলগ্রেন ওটস লেখা আছে কিনা।বাদাম খেতে পারেন বাদামে ভালো ফ্যাট থাকে পেটে অনেক সময় ধরে থাকে হজম হতে সময় লাগে।চিয়া শীড এর শরবত খেতে পারেন,কলা, আপেল, কমলা, ফল খেতে পারেন। ভাত দিয়ে ঘন ডাল খেতে পারেন। রাজমা চাল খেতে পারেন, সিদ্ধ ডিম খেতে পারে। এ খাবারগুলোতে বা অন্যান্য খাবারগুলোতে আপনার গলা বুক যদি জ্বলে ,সেটা এড়িয়ে যাবেন।

অনেকে সেহরিতে অতি ভোজন করেন এটাও কিন্তু গ্যাস্টিকের কারণ হতে পারে।

যাদের এই গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা দেখা দেয় তারা খাবার পরে শুয়ে পড়বেন না। এবার আসি ব্যায়ামে রোজার মধ্যেও ব্যায়াম চালিয়ে যেতে পারেন। কমপক্ষে সন্ধ্যার পরে এমন একটা সময় বের করবেন যখন আপনি আধা ঘন্টা দ্রুত গতিতে হাঁটবেন সপ্তাহের সব মিলিয়ে যাতে আড়াই ঘন্টা হয়। দৌড়াতে পারলে তো খুবই ভালো। যদি ইফতারের আগে ব্যায়াম করতে চান সেটাও ভালো। যারা সকালে ইয়োগা বা জগ ব্যায়াম করতে চান,সেটা করতে পারেন। মোটকথা সুস্থ থাকতে শরীর চর্চা চালিয়ে যেতে পারেন।আমি মোট চারটি বিষয় নিয়ে আলোচনা করলাম ইফতার ,সেহেরী, পানি শূন্যতা ও ব্যায়াম।এই চারটি বিষয়ে মনোযোগ দিলে আশা করছি আপনার একটি স্বাস্থ্যকর রমজান কাটবে। আপনার ও আপনার পরিবারের বাড়ির সুস্বাস্থ্য কামনা করছি।

Comments

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Call Now Button