ওজন কমানোর সহজ উপায়।
প্রথম যে কাজটি করবেন লিকুইড ক্যালোরি খাওয়া কমিয়ে দেয়া। লিকুইড ক্যালোরি হচ্ছে তরল পানীয় সাথে আমরা যে খাবারগুলো খাই। যেমন চা ,কফি,তারপরে পেপসি কোক বিভিন্ন জুস এগুলো আমরা সাধারণত খাবার হিসেবে চিন্তা করি না খেতে মজা লাগে খেলাম। কিন্তু এগুলোতে ক্যালোরি থাকে অনেক। তাই লিকুইড ক্যালোরি হাওয়া থেকে বিরত থাকতে হবে।
দ্বিতীয় বিষয়টি হচ্ছে খাবার আগে ৫০০ মিলি পানি খাওয়া। খাবার খাওয়ার আগে আধা লিটার পানি খেয়ে নেয়া উচিত। এক্ষেত্রে আপনি একটা ৫০০ এম এল এর একটা বোতল রাখতে পারেন।পানি খেয়ে তারপরে খাবার খেয়ে নিতে হবে, এটা করলে যা হয় অল্প খাবারের পেট ভরে যায়,এটা গবেষণাতেও দেখা গেছে খাবার খাওয়ার আগে যদি পানি খেয়ে নেয়া হয় তাহলে ওজন কমাতে সাহায্য করে।এক্ষেত্রে আপনারা অনেকে হয়তো শুনে থাকতে পারেন যে খাবারের সাথে যদি পানি খায় তাহলে পাকস্থলী থেকে হজমে যে রস বের হবে সেগুলো পাতলা হয়ে যেতে পারে এজন্য খাবারের সাথে পানি খাওয়া যায় না, এ কথাগুলোর আসলে কোন ভিত্তি নেই।আমরা ফল খায় শাকসবজি খায় এগুলোতে কিন্তু পানি থাকে তারপর আমরা যে তরকারি খায় ভাতের সাথে সেগুলোতেও কিন্তু ঝোলের মধ্যে অনেক পরিমানে পানি থাকে,সেটা খেলে তো আমাদের পাকস্থলীর রস পাতলা হয়ে যায় না আপনারা ভাত খাওয়ার আগে বা ভাত খাওয়ার সাথে পানি খেতে পারেন। ওজন কমানোর সময় এই স্ট্যাটিজিটা চেষ্টা করে দেখতে পারেন,যে ভাত খাওয়ার আগে বা যেকোনো বেলার খাবার খাওয়ার আগে একটু পেটটা ভরে পানি খেয়ে নিবেন।আধ লিটারের মতো পানি খেয়ে নিলে হয়তো আপনার কম খাবারে সহজে পেটটা ভরতে পারে এবং ওজন কমতে সাহায্য করতে পারি।
তিন নম্বর ধাপ এ আসি।
ফাইবার যুক্ত খাবার খাওয়া। এটাও পেট ভরার সাথে সম্পর্কিত কিন্তু অন্য উপকার ও আছে। ওজন কমানোর সময় আমাদের পেট ভরা একটু গুরুত্বপূর্ণ।স্বাস্থ্যকর খাবার খেয়ে যতটুকু পরিমাণ খাবার খাওয়ার কথা সেটা খেয়ে যদি পেট ভরা থাকে তাহলে ওজন কমানোর জার্নি টা সহজ হবে। পেট ভরার জন্য একটা গুরুত্বপূর্ণ খাবার হচ্ছে ফাইবারযুক্ত খাবার খাওয়া।এটার জন্য চাল টা লাল চাল রাখতে পারেন।ওজন কমানোর জন্য শুধুমাত্র লাল চাল খেতে পারেন।
লাল চাল খাওয়ার অনেক ধরনের স্বাস্থ্যের জন্য উপকারিতা আছে। ডায়াবেটিসের ক্ষেত্রে,হার্টের রোগের ক্ষেত্রে।ওজন কমানোর জন্য এটা কেন গুরুত্বপূর্ণ একটু বলি। লাল চালের ফাইবার বেশি থাকে। ফাইবার বেশি থাকাতে এটা আমাদের পেটে অনেকক্ষণ ধরে থাকে। তো পেটে অনেকক্ষণ ধরে থাকলে ক্ষুধা কম লাগে।আরেকটা বিষয় বুঝিয়ে বলি। সেটা হলো আমরা যখন যে কোন খাবার খাই, শরীর সেটা ভাঙ্গে আর সেটা ভাঙতে শরীরে কিছু ক্যালরি খরচ করতে হয়। অর্থাৎ লাল চাল খেলে ক্ষুধা কম লাগে পেট ভরা থাকে এবং একটা হল পেট ভরে থেকেছে বেশিক্ষণ এবং ক্যালরি জমা পড়ছে কম। লাল আটা রুটি এবং হোল গেইন ওটস সকালে নাস্তা হিসেবে খেতে পারেন ওজন কমানোর ক্ষেত্রে। লাল চাল বলতে চালটা যে লাল হতে হবে ওরকম না,এটাকে ব্রাউন রাইস বলে। ব্রাউন মানে খয়রি কিন্তু আমরা সাধারণত লাল চাল বলি।
প্রেম কামানোর ক্ষেত্রে প্রসেস খাবার অর্থাৎ প্রক্রিয়াজাত খাবার এড়িয়ে চলতে হবে। আমরা যখন বাসায় রান্না করি তখন চেষ্টা করি ভালো জিনিসপত্র দিয়ে ভালো উপাদান দিয়ে খাবারটা রান্না করার। কিন্তু যখন রেস্ট্রন থেকে খাবার আনায় ওরা হয়তো চিনি বেশি দিচ্ছে লবণ দিচ্ছে এতে করে স্বাস্থ্যের ঝুঁকি রয়েছে। এই প্রসেস ফুড গুলো আমাদের খুব হজম হয়ে যায় তাড়াতাড়ি দেখা যায় ক্যালরি অনেক বেশি থাকে পুষ্টি কম থাকে। তোর স্বাস্থ্যের জন্য যেমন সেই খাবারগুলো ভালো না। আবার ওজন কমানোর ক্ষেত্রে সেটা একদমই ভালো খাবার না। প্রসেস ফুডে সাধারণত যতই চকচকে লেবেল ঐ থাকুক ,যতই বলুক এটা স্বাস্থ্যের জন্য খুব ভালো করে তৈরি করা হয়েছে সাথে আরো অনেক কিছু স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর জিনিসও ওই খাবারটাতে আছে।তাই খুব সাবধানে প্রসেস ফুড খেতে হলে খুব ভালো করে ইনভেস্টিগেট করে খেতে হবে। আর পারতপক্ষে না খাওয়াই ভালো ,ওজন কমানোর সময় তো একদমই না।
ওজন কমানোর ক্ষেত্রে ফলমূল শাকসবজি অধিক পরিমাণে খেতে হবে। ফলমূলের অধিক দাম হয় এক্ষেত্রে আপনি কিন্তু শাকসবজি আমাদের দেশে কম দামে পাওয়া যায়। তা আপনারা চেষ্টা করবেন সতেজ শাকসবজি গুলো কিনতে।এবং জানার পরে ওই দিনেই রান্না করে খেয়ে ফেলার চেষ্টা করবেন। ওজন কমানোর জন্য এটা গুরুত্বপূর্ণ কারণ শাকসবজিতে খুব কম পরিমাণে ক্যালরি থাকে,ফাইবার ও বেশি থাকে আর পুষ্টিগুণ তো আছেই।আর শাক-সবজি থেকে যথেষ্ট পরিমাণ পুষ্টি পেতে চান তখন একটু একটা জিনিস মাথায় রাখবেন। বিভিন্ন শাকসবজিতে বিভিন্ন পুষ্টি থাকে ।বিভিন্ন রকম সবজি ,বিভিন্ন রং এর সবজি খেতে পারেন। এক একটাতে এক এক ধরনের পুষ্টি আছে। শাক সবজির ক্ষেত্রে যেটা বলা হয় যে রংধনুর মতো রং মিলিয়ে খাবার জন্য,তখন আপনার শরীরে যা যা পুষ্টি দরকার সেটা শরীর পেয়ে যায়।
রং এর মধ্যে ধরেন যে লাল রঙের সবজিতে লাইকোপিন থাকে। যেমন টমেটো, টমেটোতেও প্রচুর পরিমাণে লাইকোপিন থাকে। তারপরে হলুদ আর কমলা রঙের যে শাকসবজি ফলমূল আছে যেমন ,গাজর, মিষ্টি আলু আনারস, পেঁপে,এইসবে থাকে বিটা ক্যারোটিন। বিটা ক্যালোরি থেকে আমাদের শরীর ভিটামিন ,এ , তৈরি করে।আর হচ্ছে সবুজ রঙের শাকসবজি এটাই আমরা বেশি করে চিনি। আমাদের যত ধরনের শাক আছে ,পালং শাক পুঁইশাক তারপরে পাতাকপি তারপর ফলের মধ্যে অ্যাভোকাডো সেটা একটা সবুজ ফল।তারপরে রঙের মধ্যে আরো আছে নীল বেগুনি রং। বেগুনের মধ্যে আমাদের বেগুন হচ্ছে বেগুনি সবজি। তারপরে সাদা এবং খয়রি যে সবজি ফলমূল গুলো আছে। সাদার মধ্যে ফুলকপি হচ্ছে সাদা। খয়েরির মধ্যে খেজুরটা হচ্ছে খয়েরি ফল। তো এরকম বিভিন্ন রঙের যদি আপনি ফলমূল শাকসবজি খেতে পারেন তাহলে আপনার শরীরে যত ধরনের পুষ্টির দরকার সবকিছু কিন্তু শরীর নিয়ে নেবে। আমরা যদি একই ধরনের ফল ধরনের সবজি খায়,তাহলে কিন্তু যত পুষ্টি দরকার সেগুলো শরীর পাচ্ছে না,তো চেষ্টা করবেন অনেক ধরনের শাকসবজি ফলমূল খেতে।টমেটো ,বেগুন, পাতাকপি ফুলকপি, মটরশুঁটি, মিষ্টি আলু, পালং শাক এগুলো খাওয়ার চেষ্টা করবেন। শাকসবজি রান্নার ক্ষেত্রে সেটা হলো যত কম পরিমাণ তেল দেয়া যায়। কিছু কিছু শাকসবজি তেল ছাড়াও রান্না করে শুদ্ধ করে খেতে পারেন।এর মানে তেল দেয়া যাবে না সেরকম না কিন্তু তেলের পরিমাণটা খেয়াল রাখতে হবে। স্বাস্থ্যকর তেলের ব্যবহার করতে পারেন। কিছু কিছু সবজি আছে যেটা ২৫০ গ্রাম অর্থাৎ সোয়া কেজি পরিমাণেও এত ক্যালরি হবে না,যত পরিমাণে এক চামচ তেলে থাকে। সেজন্য তেলটা অবশ্যই পরিমাণমতো নিতে হবে,অলিভ অয়েল,কেনলা অয়েল ইত্যাদি।সোশ্যাল মিডিয়াতে কিছু কিছু জায়গায় দেখেছি, কেনলা অয়েল বলা হচ্ছে স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর,স্বাস্থ্যের জন্য ভালো না এটা কিন্তু সঠিক তথ্য না। কেননা অয়েলে কোন ফ্যাটের কতটুকু পার্সেন্টেজ থাকে,কোন ফ্যাট স্বাস্থ্যের জন্য ভালো।কিন্তু একটা সোর্স যেটা আপনি বিশ্বাস করতে পারবেন সেটার কথা বলছি স্বাস্থ্যের জন্য সবচেয়ে ভালো তেল গুলোর মধ্যে একটি হল কেনলা অয়েল। ওজন কমানোর ক্ষেত্রে আরেকটা বিষয় যেটা খেয়াল রাখবেন। আগে থেকে প্রস্তুতি নিয়ে রাখবেন সেটা হল
দুই খাবারের মাঝখানে যখন ক্ষুদা লাগবে তখন কি খাবেন?
এক্ষেত্রে তিনটা খাবারের আশ্রয় নিতে পারেন। সেগুলো হলো শসা, টমেটো ,আর গাজর,এগুলোতে ক্যালরি অনেক কম থাকে। তোর সহজে আপনি দুই তিনটা খেয়ে নিতে পারবেন। আন হেলদি প্রসেসফুল যেগুলো স্ন্যাকসে সাধারণত আমরা খাই,চকলেট চিপস ওগুলো থেকে নিজেকে দূরে রাখবেন।আর অস্বাস্থ্যকর খাবার থেকে নিজেকে বিরত রাখবেন।নাস্তার জন্য আরো কিছু খাবার খাওয়া যেতে পারে,বাদাম খাওয়া যেতে পারে বাদাম স্বাস্থ্যের জন্য ভালো। কিন্তু বাদামে ক্যালরি বেশি থাকে তাই খুব অল্প পরিমানে খেতে হবে।
ওজন কমাতে আরো একটি যে গুরুত্বপূর্ণ কাজ সেটা হলো নিয়মিত ব্যায়াম করা।
প্রতিদিন অন্তত আধাঘন্টা ব্যায়াম করবেন। এক্ষেত্রে বাইরে দৌড়াতে যেতে পারেন বা দ্রুত হাঁটতে পারেন।
একদম সর্বশেষ পয়েন্টটা হল পরিমিত পরিমানে খাবার খাওয়া।আমরা স্বাস্থ্যকর খাবার খেলেও যদি অনেক পরিমাণে খাই,অনেক ক্যালরি যদি আমাদের শরীরে ঢোকায়,তাহলে কিন্তু ওজন কমানো যাবে না। স্টপ কাউন্টিং ক্যালোরিজ অথবা ক্যালরি গুনে কখনো ওজন কমানো যায় না।আপনার শরীর যতটুকু ক্যালরি খরচ করে,তার চেয়ে বেশি ক্যালরি যদি আপনি প্রতিদিন খান তাহলে ওজন বাড়বে, এটা ধ্রুব সত্য।মোটকথা পরিমিত খাবার খেতে হবে ক্যালরির একটা আন্দাজ মাথায় রাখতে হবে।
নিরাপদে থাকবেন।
Leave a Reply