একটা বাস্তব ঘটনা বলে শুরু করি,ষাটঊর্ধ্ব একজন লোক ৯ দিন ধরে তার জ্বর কাশি হয়েছে। একটু শ্বাসকষ্ট হচ্ছে। এক আত্মীয় ডাক্তারের কাছে কল করে পরামর্শ চাইলেন। আরো বললেন গতকালের চেয়ে আজকে রোগীর ভালো লাগছে,খাবার খেয়েছেন গোসল করেছেন হাসছেন,টিভি দেখছেন। এ আত্মীয়র কন্ঠে তেমন উদ্বেগ ছিল না। বাসায় এসে ডাক্তার দেখেন রোগী হাসছে ঠিকই কিন্তু ঠোঁট নীল হয়ে গেছে। মেপে দেখেন রোগীর অক্সিজেন মাত্র ৬৬। যেখানে থাকার কথা ৯৫।
আর দেরি না করে ডাক্তার সাথে সাথে অক্সিজেন দিলেন অ্যাম্বুলেন্স ডাকলেন,হাসপাতালে পৌঁছানোর মাত্র রোগীকে নেয়া লাগে ভেন্টিলেটারে । এটা কোন গল্প কাহিনী না, নরওয়েতে ঘরটা সত্য ঘটনা।
তো এখানে কি হলো?
রোগীর আশেপাশে যারা ছিলেন কেউই বুঝেনি এত ক্রিটিকাল অবস্থা। নিরবে অক্সিজেন কমে গেছে।
করোনাই বেশিভাগ রোগী বাসায় থাকে,কোন লক্ষণ ছাড়া যদি অক্সিজেন লেবেল কমতে থাকে তাহলে বুঝে ওঠার আগে রোগীর অবস্থা খারাপ হয়ে যায়। যতক্ষণে শ্বাস কষ্ট শুরু হয় তার আগে অক্সিজেন অনেক কমে যায়। হাসপাতালে আনতে আনতে দেখা যায় অনেক দেরি হয়ে গেছে।
গল্পে যে দুর্ভাগ্যজনক পরিস্থিতির কথা বললাম তা এড়ানোর একটা উপায় হল।
বাসায় নিয়মিত অক্সিজেন মেপে দেখা।
আমরা থার্মোমিটার দিয়ে যেমন জ্বর মাপি,
রক্তে অক্সিজেনের মাত্রা মাপার জন্য একটা সিম্পল যন্ত্র আছে নাম পালস অক্সিমিটার।
অনেকে হয়তো এই যন্ত্রের সাথে পরিচিত, কোন সুই ফোটাতে হয় না,সহজে অক্সিজেন মেপে নেয়া যায়। যারা করোনা লক্ষণ নিয়ে বাসায় আছেন তাদেরকে পরামর্শ দিব একটা পালস অক্সিমিটার সাথে রাখার।
ভালো দেখে মেডিকেল গ্রেডের একটা নিবেন।
অক্সিমিটার কিভাবে ব্যবহার করবেন আর কখন হসপিটালে যেতে হবে?
এই যন্ত্রটার এক পাশে চাপ দিলে আরেক পাশে খুলে যায়, সেখানে একটা আঙ্গুল ঢুকিয়ে দিবেন যতটুকু পরিমাণ ঢোকানো যায়, নখটা উপরের দিকে রেখে।
অক্সিমিটারের সুইচটা অন করে নিবেন।
তারপর কিছু নাম্বার দেখা যাবে শুরুতেই যেটা নাম্বার দেখবেন সেটা দেখে ঘাবড়ে যাবেন না। অক্সিমিটারকে কয়েক সেকেন্ড সময় দিন কাজ করার জন্য।
আপনি বড় বড় দুইটা সংখ্যা দেখতে পারবেন। এক জায়গায় লেখা থাকবে spo2 । O2 মানে অক্সিজেন। এই লেখাটার আশেপাশে যে সংখ্যাটি থাকবে সেটা দিয়ে বুঝবেন আপনার রক্তের অক্সিজেন এর পরিমাণ বুঝাচ্ছে। আর আরেকটার বড় সংখ্যার আশেপাশে PR বা পালস রেট লেখা থাকবে। এটার মানে হচ্ছে মিনিটে আপনার হার্ট কয়বার বিট করছে।
নিচে যে ঢেউটা আছে সেটা গুরুত্বপূর্ণ। ঢেউয়ের সাইজ দেখে বুঝতে পারবেন আপনার আঙ্গুলের রক্ত চলাচল ঠিক আছে কিনা ,অক্সিমিটার ঠিকভাবে কাজ করতে পারছে কিনা।
আমি এখন অক্সিমিটারটা পিছন থেকে চাপ দিচ্ছি। অর্থাৎ আমার আঙ্গুলের উপর চাপ পড়ছে রক্ত চলাচল ভালো হচ্ছে না। খেয়াল করে দেখেন ঢেউয়ের সাইজটা কিন্তু কমে গেছে। আবার যখন আমি ছেড়ে দিব তখন ঢেউ এর সাইজটা বড় হয়ে যাবে। যদি কোন কারনে আপনার আঙ্গুলের রক্ত চলাচল ঠিক না থাকে ,আঙ্গুলটা বেঁকে আছে কোথাও চাপ লেগে আছে, তখন ঢেউয়ের সাইজ টা ঠিক থাকবে না,এবং অক্সিমিটারটাও সঠিকভাবে কাজ করতে পারবে না।
তাই অক্সিমিটারটা ঠিকভাবে পড়তে হবে আঙ্গুল সোজা রাখতে হবে। আর সিগন্যালটা খেয়াল রাখতে হবে,রক্ত চলাচল ঠিক হচ্ছে কিনা। তারপর আপনি যে সংখ্যাটা দেখতে পারবেন সেটা হচ্ছে আপনার একিউরেট রিডিং।
অক্সিমিটারে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সংখ্যাটি হচ্ছে আপনার রক্তে অক্সিজেনের পরিমাণ ।সাধারণত ৯৫ বা তার চেয়ে বেশি থাকে,তার চেয়ে কমে গেলে সেটাকে বলে হাইপোক্সিয়া অর্থাৎ অক্সিজেনের অভাব ।
৯০ পর্যন্ত নামলে মায়েল হাইপোক্সিয়া, ধরে নেন এটা শুরুর দিকে বিপদ সংকেত। ৯০ এর নিচে নেমে গেলে মডারেট,রোগী মাঝামাঝি বিপদে আছে।
আর ৮০এর নিচে নামলে severe হাইপোক্সিয়া,
এটা মারাত্মক দুশ্চিন্তার কারণ।
অনেক সংখ্যা বলছে কমপক্ষে একটা সংখ্যা মনে রাখেন সেটা হচ্ছে ৯৫।
৯৫ এর নিচে নামলেই চিকিৎসকের শরণাপন্ন হতে হবে।
আরেকটা কারণের চিকিৎসকের কাছে যেতে হবে।
অনেক করোনা রোগীর ক্ষেত্রে বসে থাকা অবস্থায় অক্সিজেন স্বাভাবিক থাকে,কিন্তু হাঁটার পরে দেখা যায় অক্সিজেনের পরিমাণ কমে গেছে।
এটা কিভাবে বুঝা যাবে?
৪০ কদম হেটে দেখেন অক্সিজেনের পরিমাণ কত থাকে?
যদি ৩ পয়েন্ট পর্যন্ত নেমে যায়, ৯৬ থেকে ৯৩ হয়ে যায় তখন আপনাকে হাসপাতালে যেতে হবে।
এই পরীক্ষাটা করবেন কেবলমাত্র যদি আপনার অক্সিজেন ৯৬ বা তার বেশি থাকে ।এখানে কিন্তু ৯৫ বলছি না ৯৬ থাকতে হবে।
যাদের ফুসফুসে বা হার্টের রোগ আছে তাদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ বিষয় বলবো।
ফুসফুসে বা হার্টের রোগ যাদের আছে তাদের মধ্যে অনেকের অক্সিজেনের পরিমাণ এমনিতেই কম থাকে,দেখা যায় ৮৯ বা ৯০ এটা তাদের জন্য স্বাভাবিক।
সুস্থ অবস্থায় অক্সিজেন কত থাকে সেটা জানা থাকলে তো খুব ভালো।
না থাকলে অক্সিমিটার দিয়ে মেপে নিতে হবে। তাদের যেটা স্বাভাবিক তার চেয়ে নিচে নেমে গেলে চিকিৎসকের শরণাপন্ন হতে হবে। তাদের জন্য যেটা স্বাভাবিক সেটা নিচে নেমে গেলে চিকিৎসকের শরণাপন্ন হতে হবে। শেষ করার আগে আবার বলে দেই কখন হাসপাতালে যাবেন।
অক্সিজেন যদি ৯৫ এর কম থাকে আর
৪০ কদম হাঁটার পরে যদি তিন পয়েন্ট কমে যায় এবং যাদের ফুসফুসে বা হার্টের রোগ আছে তাদের জন্য স্বাভাবিক এর চেয়ে কমে যায় তাহলে চিকিৎসকের শরণাপন্ন হতে হবে।
নিরাপদে থাকবেন।
Leave a Reply