করোনা টিকায় কি শুকরের চর্বি আছে?

করোনা ভ্যাকসিন নিয়ে কিছু প্রশ্ন অনেকেই করছেন। এই ভ্যাকসিন এ কি শুকরের চর্বি আছে?

শুকরের চর্বি থাকলে কি এই ভ্যাকসিন নেয়া যাবে?ভ্যাকসিনের উপরে চর্বি আছে কিনা, এটা অবান্তর কোন প্রশ্ন নয়।কিছু ভ্যাকসিন যেমন ,এক প্রকারের চিকেন পক্স ভ্যাকসিন,এক প্রকারের এম এম আর ভ্যাকসিনে শুকর থেকে তৈরি একটা পদার্থ থাকে। এই দুইটা ভ্যাকসিন এরই আবার বিকল্প আছে। যাতে শুকর থেকে তৈরি কোন পদার্থ নেই। এ আলোচনায় বুঝিয়ে বলব ভ্যাকসিনে শূকরের কোন অংশ থাকে? কেন থাকে? বিকল্প কি?এবং করোনা ভ্যাকসিনে এগুলো ব্যবহার করা হয়েছে কিনা?একদম ভেঙ্গে ভেঙ্গে খুব সহজ করে বলবো।

প্রথমে বলি একটা ভ্যাকসিনে কি কি থাকে? 

যেকোনো ভ্যাকসিনের সাধারণত দুইটা মূল উপাদান থাকে,সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ উপাদান হল এটার একটিভ ইনগ্রেডিয়েন্ট অর্থাৎ যে অংশটুকু  আমাদেরকে রোগ  থেকে সুরক্ষা দিবে। এটা ভাইরাস বা ব্যাকটেরিয়া থেকে তৈরি করা হয়।ভ্যাকসিনের এই অংশে জীবাণু জীবিত হতে পারে,মৃত হতে পারে,কিংবা জীবাণুর কেবল একটা অংশ থাকতে পারে।যেটাই থাকুক খুব অল্প পরিমাণে থাকে।এটা এমন ভাবে তৈরি করা হয়,যাতে শরীরে প্রবেশ করলে কোন রোগ সৃষ্টি  করতে না পারে। কিন্তু আমাদের রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থা এটাকে শত্রু  হিসেবে চিনে রাখে। পরে যদি আসল জীবাণুর শরীরে ঢুকে,সেটার বিরুদ্ধে  যুদ্ধ করার জন্য তখন  শরীর প্রস্তুত খুব তাড়াতাড়ি শরীর রোগ সৃষ্টি করার আগে জীবাণু কুপোকাত  হয়ে যায়। এটার পাশাপাশি ভ্যাকসিনের আরেকটা মূল উপাদান হলো, পানি।বেশিরভাগ ভ্যাকসিন যেগুলা ইঞ্জেকশন এর মাধ্যমে দেয়া হয়, এগুলোতে কয়েক ফোঁটা পানি থাকে।এই দুইটা উপাদান ছাড়া সামান্য পরিমাণে বাকি কিছু উপাদান থাকে যা সব মিলিয়ে কয়েক মিলিগ্রাম হয় অর্থাৎ,এক গ্রামকে ১০০০  ভাগে ভাগ করলে তার কয়েক ভাগ পরিমান।এগুলো যোগ করা হয়, ভ্যাকসিনের কার্যক্ষমতা বাড়ানোর জন্য, স্থিতিশীল রাখার জন্য,সংরক্ষণ করার জন্য। এই উপাদান গুলোর মধ্যে রয়েছে অ্যালুমিনিয়ামের লবণ, জিলাটিন ইত্যাদি। এই জিলাটিন  একটা প্রকার রয়েছে যা শুকরের  শরীর থেকে তৈরি হয়।সেখান থেকে এই প্রশ্নের শুরু। ভ্যাকসিন হালাল নাকি হারাম। এখন দেখব করোনা তৈরি ভ্যাকসিন শুকরের তৈরি জিলাটিন আছে কিনা তার আগেই জিলাটিন সম্পর্কে ভালোভাবে জেনে নিতে হবে। 

জেলাটিন তৈরি করা হয় বিভিন্ন প্রাণীর শরীরে থাকা কলোজিন নামের এক ধরনের প্রোটিন থেকে। মুরগি, গবাদি পশু, শুকর, এমনকি মাছের শরীর থেকেও কলেজিন নিয়ে জিলাটিন তৈরি করা হয়।

শুকরের দেহ থেকে  কলোজিন নিয়ে যে জিলাটিন তৈরি করা হয় তাকে বলা হয় পড়সাইন জেলাটিন। বিভিন্ন ভ্যাকসিনে এই পরসাইন জেলাটিন ব্যবহার করা হয়। ভ্যাকসিনে  ব্যবহার করার জন্য জেলাটিনকে অনেক স্তরে  বিশুদ্ধ করা হয়,পানি দিয়ে ভেঙ্গে ভেঙ্গে একদম ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র অনুতে রূপান্তরিত  করা হয়,এটাকে বলে হাইড্রোলাইস করা।ভ্যাকসিন তৈরি করার জন্য জিলাটিনকে এত ক্ষুদ্র অংশে ভেঙ্গে ফেলা হয় যে এটা কোন প্রাণীর প্রোটিন থেকে তৈরি করা হয়েছে তা  সূক্ষ্ম  বৈজ্ঞানিক পরীক্ষা করেও বুঝার উপায় থাকে না।উদাহরণস্বরূপ বলি, নেয়জালফ্লু ভ্যাকসিন নামের একটা ভ্যাকসিন আছে যেখানে শুকর থেকে তৈরি জিলাটিন ব্যবহার করা হয়। এই ভ্যাকসিন এর ওপর অনেক পরীক্ষা করেও কোন ডিএনএ পাওয়া যায়নি। অর্থাৎ এটা যে শুকর থেকে নেয়া হয়েছে এটা বোঝার উপায়ই ছিল না। ভ্যাকসিনে কেন এই শুকর দেহের থেকে তৈরি জিলাটিন ব্যবহার করা হয়? আসলে কি এই জিলাটিন রাখা প্রয়োজন আছে ভ্যাকসিনে?কিছু ভ্যাকসিনে জীবিত ভাইরাস থাকে,জীবিত হলেও এ ভাইরাস গুলোকে অনেক দুর্বল করে দেয়া হয়েছে। এরা সুস্থ মানুষের শরীরে রোগ সৃষ্টি করতে পারবেনা।এই ভ্যাকসিন গুলোর  কয়েকটাতে  স্ট্যাভেজালাইজার বা স্থিতিকারক হিসেবে পড়সাইন জিলাজিন ব্যবহার করা হয়। এটা ভ্যাকসিন সংরক্ষণ এবং পরিবহন করার সময় তাপমাত্রার পরিবর্তন থেকে  জীবিত ভাইরাসকে সুরক্ষিত রাখে। এভাবে ভ্যাকসিনটির নিরাপত্তা আর কার্যকারিতা অক্ষুন্ন থাকে। ভ্যাকসিনের  স্থিতিকারক হিসেবে অন্য কিছু কি ব্যবহার করা যায় না?

উত্তর হচ্ছে যায়। 

বিভিন্ন ভ্যাকসিনের বিভিন্ন স্ট্যাবিলাইজার ব্যবহার করা হয়।সুক্রোজ, ল্যাকটোজ, ইউরিয়া ইত্যাদি অনেক ধরনের স্টেবিলাইজার আছে। ভ্যাকসিন প্রস্তুত করার সময় দেখা হয় কোন স্ট্যাবিলাইজার টা ওই ভ্যাকসিন এর জন্য ভালো মানসম্পন্ন।এই সব কিছু বিবেচনা করে নির্বাচন করা হয়।এখন আপনাকে ভ্যাকসিনে কি কি উপাদান ব্যবহার করা হয়েছে এটা দেখালে আপনি বলে দিতে পারবেন এটাতো শুকরের চর্বি বা শুকর থেকে তৈরি পদার্থ আছে কিনা।এখন পর্যন্ত বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা অনুযায়ী  ২৩২টি ক্যান্ডিডিতে ভ্যাকসিন  নিয়ে গবেষণা চলছে।তার মধ্যে সাতটি ভ্যাকসিনের মানবদেহে পরীক্ষা-নিরীক্ষা চলছে। যে তিনটি ভ্যাকসিন অনুমোদন পেয়ে গেছে,সেই তিনটি ভ্যাকসিন ঘেটে দেখেছি। এই ভ্যাকসিনগুলোতে শুকর থেকে তৈরি জিলাটিন আছে কিনা এটা এখন বলবো। অক্সফোর্ড এর ভ্যাকসিন দিয়ে শুরু করছি যেহেতু এটা বাংলাদেশে ও ভারতে সম্ভবত সবার আগে পৌঁছাবে। প্রথমে ভাইরাল পার্টিক্যালস এটা হচ্ছে ভ্যাকসিনের একটিভ ইনগ্রেডিয়েন্স যা আমাদেরকে করোনা রোগ থেকে সুরক্ষা দিবে,তারপরে অন্যান্য উপাদানের নাম আছে চিনি আছে ,লবণ আছে, শেষে পানির কথা লেখা আছে, কিন্তু কোথাও জিলাটিন লেখা নেই। মর্ডণা  ও ফাইজারের  তৈরি ভ্যাকসিন উপাদান গুলো বলে দিচ্ছে,এটাতেও  জিলাটিন উপাদান  লেখা নেই। শেষে মর্ডণা  তৈরি ভ্যাকসিনের উপাদান বলছি,এখানেও কিন্তু কোন জিলাটিন  নেই।অর্থাৎ এই তিনটা ভ্যাকসিনের একটাও নেয়া যদি সুযোগ আপনার থাকে তাহলে শুকর থেকে তৈরি জেলাটিন আছে এমন চিন্তা করার দরকার নেই।শেষে একটু বলে নেই ফাইজার ও মর্ডানার ভ্যাকসিন ভিন্ন প্রযুক্তি ব্যবহার করে তৈরি করা হয়েছে।

নিরাপদে থাকবেন।

Comments

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Call Now Button