করোনা হলে বাসায় যেভাবে চিকিৎসা করবেন

করোনা লক্ষণ দেখা দিলে বাসায় রোগীর ব্যবস্থাপনা কিভাবে করতে হবে সে বিষয়ে আজকে এ টু জেড একটা ধারণা দেয়ার চেষ্টা করব। কি ওষুধ খাওয়াবেন? কিভাবে বুঝবেন রোগীর অবস্থা স্বাভাবিক? গুরুতর দিকে যায়নি এখনো ,কোন খাবার দিবেন ,কোন খাবার গুলো এড়িয়ে যাবেন,কোন যন্ত্র সাথে রাখবেন, কিভাবে যন্ত্রগুলো ব্যবহার করবেন? আর কি কি সাবধানতা অবলম্বন করতে হবে,এসবগুলো বিষয় একসাথে থাকবে।

করণা রোগীর  ব্যবস্থাপনা নিয়ে অনেক পরামর্শ দেখা যাচ্ছে যা বিজ্ঞানসম্মত নয়।

আমি শুধু বিশ্বস্ত প্রতিষ্ঠানের পরামর্শ তুলে ধরব। 

শুরুতে বলছি করোনা হয়েছে কিনা কিভাবে বুঝবেন? 

১, টেস্ট করার মাধ্যমে যদি পজেটিভ ফলাফল আসে, 

২, টেস্ট করার সুযোগ নেই তবে করোনার লক্ষণ দেখা দিয়েছে। এক্ষেত্রে করোনা যে হয়েছে নিশ্চিত নয় তবে একই সাবধানতার অবলম্বন করা প্রয়োজন। হতেই পারে আপনার করোনা হয়নি।তবে সাবধানতা যদি অবলম্বন না করেন ,তবে অন্যকে আক্রান্ত করার সম্ভাবনা বহু গুণে বেড়ে যায়।

এখন বলব কি ওষুধ খাবেন?

টেস্টে পজিটিভ এসেছে বা টেস্ট করার সুযোগ নেই,  কিন্তু লক্ষণ দেখা দিয়েছে অথবা রিপোর্টের অপেক্ষায় আছেন।এই অবস্থায় কি ওষুধ খাওয়া যাবে? কোরোনার ঔষধ এখনো পাওয়া যায়নি। তবে করোনার যে উপসর্গ গুলো দেখা দেয়,তার ওষুধ আগেই আবিষ্কার হয়েছে। তাই করোনার যে ওষুধ দেয়া হয় লক্ষণ বা উপসর্গ অনুযায়ী।  জ্বর হলে জ্বরের ওষুধ,কাশি  থাকলে কাশির ওষুধ,অক্সিজেন কমে গেলে অক্সিজেন। শ্বাস কষ্ট শুরু হলে সে অনুযায়ী চিকিৎসা। 

প্রথমেই বলছি জ্বর নিয়ে,

যদি গায়ে জ্বর থাকে আপনাকে অস্বস্তি লাগে তাহলে প্যারাসিটামল খেতে পারেন। এটা একটা over the counted  ঔষধ অর্থাৎ ডাক্তারের পরামর্শ ছাড়াই সব দেশে এটা  পরিমিত পরিমাণে কেনা যায় ও সেবন করা যায়। বয়স অনুযায়ী প্যারাসিটামল এর ডোজ নিতে হবে। ঔষধ এর প্যাকেটে এটা লেখা দেখতে পারবেন,অতিরিক্ত সেবন করবেন না। 

এখন বলছি কাশির ব্যবস্থাপনা নিয়ে,

যদি কাশি হয় এক চা চামচ মধু খেয়ে দেখতে পারেন। চিৎ হয়ে না শুয়ে এক কাত হয়ে শুবেন  সোজা হয়ে বসবেন।তারপরে যদি দেখেন কাশির  কারণে অনেক বেগ পেতে হচ্ছে,তাহলে একজন চিকিৎসকের পরামর্শ নিবেন।আর মনে রাখবেন করোনাই কিন্তু বেশ অনেকদিন কাশি থাকবে।ডাক্তারের পরামর্শ ছাড়া আর কোন ওষুধ সেবনের প্রয়োজন নেই। 

এই কথাতে অনেকে মনে ক্ষুন্ন হতে পারেন।যেমন প্যারাসিটামল ছাড়া আর কোন ওষুধ কেন দিচ্ছে না। ওষুধ খাওয়ার ব্যাপারটা হালকাভাবে নিবেন না। করোনা রোগ সারাবে এমন কোন ওষুধ পাওয়া যায়নি,আর প্রতিটা ওষুধের পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া আছে।তাই ডাক্তারের পরামর্শ ছাড়া কোন ওষুধ সেবন করা বুদ্ধিমানের কাজ হবে না।তাই আসি শতাংশ করোনা রোগী কোন বিশেষ চিকিৎসা ছাড়াই ভালো হয়ে যায়।একটা ওষুধ রোগ সারাতে কাজ করে কিনা,রোগীর শরীরে কোন ক্ষতি করে কিনা কয়েক ধাপে সূক্ষ্ম গবেষণার পরেই বোঝা যায়।করোনা একটা ভাইরাস। অ্যান্টিবায়োটিক ওষুধ যুদ্ধ করে ব্যাকটেরিয়ার সাথে।ভাইরাস আর ব্যাকটেরিয়া দুইটা ভিন্ন জিনিস। ভাইরাসের কারণে জ্বর হলে এন্টিবায়োটিক খাওয়ার কোন প্রয়োজন নেই। তবে ডাক্তার আপনাকে পরীক্ষা করার  পরে যদি মনে করে ব্যাকটেরিয়া দিয়ে আক্রান্ত ভাইরাস নয়, অথবা ভাইরাস ব্যাকটেরিয়া দুইটা ধারে আক্রান্ত হয়েছেন তখন তিনি আপনাকে এন্টিবায়োটিক লিখে দিবেন। মোটকথা চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া প্যারাসিটামল বাদে আর কোন ওষুধ খাওয়ার প্রয়োজন নেই।

এখন কথা বলব অক্সিজেন কমে যাওয়া নিয়ে। 

অক্সিজেন কমে গেলে অধিকাংশ সময় রোগীর  শ্বাসকষ্ট শুরু হয়।তবে কিছু কিছু সময় শ্বাস কষ্ট শুরু হওয়ার আগেই রোগীর অবস্থা মারাত্মক হয়ে যায়। তাই করোনা রোগীর অক্সিজেনটা নিয়মিত মাপাটা গুরুত্বপূর্ণ। অক্সিজেন মাপার জন্য যে যন্ত্রটা  ব্যবহার করতে হয় তার নাম পালস অক্সিমিটার।এখন একটা প্রশ্ন করব,প্রশ্নটা হল

রোগী যে ঠিকঠাক অবস্থায় আছে এটা কিভাবে বুঝব? কখন হাসপাতালে নিতে হবে? কোন বিষয়টিকে খেয়াল রাখব?বাসায় করোনা হলে আমরা উৎকণ্ঠায়  থাকি রোগী ঠিকঠাক আছে কিনা ,অবস্থা খারাপের দিকে গেছে কিনা। রোগী  ঠিক অবস্থায় আছে জানতে পারলে মনে অনেক সাহস আসে।তাই এই প্রশ্নটির উত্তর মনোযোগ দিয়ে শুনুন।

রোগীর জ্বর কাশি আছে বা অন্যান্য মৃদু উপসর্গ আছে তোদের রোগী ভালো আছে ,খাওয়া দাওয়া করছে,অক্সিজেনের পরিমাণ ঠিক আছে, অন্যান্য রোগ যেমন ডায়াবেটিস থাকলে সেটা কন্ট্রোলে আছে তাহলে ধরে নিবেন রোগী  ঠিকঠাক অবস্থায় আছে এবং বাসাতেই পরিচর্যা চালানো যাবে।তবে জানা থাকা লাগবে কখন রোগীকে হাসপাতালে নিতে হবে এবং সেই লক্ষণ গুলো কি কি।

যে লক্ষণ গুলো দেখা দিলে আপনাকে হাসপাতালে যেতে হবে। আমি একটা নিয়ে এখানে বিশেষভাবে বলছি সেটা হল শ্বাসকষ্ট। 

রোগের শ্বাসকষ্ট দেখা দিলে দ্রুত ডাক্তারের শরণাপন্ন হতে হবে।তবে ডাক্তারের শরণাপন্ন হতে হলে কিছুক্ষণ তো সময় লাগে,সে সময় সঠিক পদক্ষেপ গুলো কি কি হবে,বাসা থেকে রোগীকে শ্বাস কষ্টের কোন চিকিৎসাটি শুরু করতে পারেন।

এখন বলবো  কোন খাবারটি খেতে হবে।আদা,লেবু ,তেজপাতা মিশিয়ে গরম পানি এক ঘন্টা পর পর খেলে করোনা নেগেটিভ নাকি ৫  দিনে হয়।এমন পরামর্শ অনেকের দিচ্ছে। গরম পানির ভাব,আদার চা,বা মশলা চা,রসুন ,এলাচ দারচিনি,মনে করেন রান্না করে যা যা পাওয়া যায় এসব নিয়ে বিভিন্ন জায়গায় বিভিন্ন নিয়ম চালু হয়ে গেছে। তবে এগুলা করোনা সারাবে এমন কোন বৈজ্ঞানিক ভিত্তি নেই। এগুলো আপনাকে আরাম দিতে পারে। তবে করোনা সারাতে কার্যকর এমন কোন প্রমাণ নেই। আপনার যদি গরম পানি খেতে আরাম লাগে তবে খাবেন। আপনার ভালো লাগলে এগুলো খেতেই পারেন কোন সমস্যা নাই। ভিটামিন সি, ভিটামিন ডি ,ইত্যাদি কি খেতে হবে? 

প্রতিদিন বিভিন্ন ধরনের তাজা খাবার খেলে সেখান থেকে  আপনার শরীর  প্রয়োজনীয় ভিটামিন,মিনারেল নিয়ে নেবে। 

একটা ব্যতিক্রম হচ্ছে ভিটামিন ডি,যা তৈরি করতে শরীরে সূর্যের আলো প্রয়োজন।অনেকদিন রোদে যেতে পারেননি লকডাউনের জন্য বা করোনা লক্ষণে  এখন এক রুমে আটকে আছেন রোদ পাওয়ার উপায় নাই সে ক্ষেত্রে ভিটামিন ডি এর ঘাটতি দেখা দিতে পারে তখন ভিটামিন ডি টা শুধুমাত্র আলাদা করে খেতে পারেন। আপনি পুষ্টিকর কোন খাবার খেতে পারছেন, নিয়মিত শাকসবজি,ফলমূল খাচ্ছেন,দিনে রোদ পোহাচ্ছেন,তখন আলাদা করে কোন ভিটামিন খাওয়ার প্রয়োজন নেই।শরীরে ভিটামিনের অভাব থাকলে শুধু প্রয়োজন অনুযায়ী ভিটামিন খেলে উপকারে আসবে। 

তাহলে কি খাবেন? 

খেতে হবে সুষম খাবার। প্রতিদিন দুই কাপ ফল,আড়াই কাপ সবজি ,এক কাপ শস্য দানা,এক কাপ মাংস বা ডাল শিম জাতীয় খাবার হচ্ছে সুষম খাবার। এত মেপে মেপে কি খাওয়া যায়?

 যতটা কাছাকাছি যেতে পারেন ততটাই ভালো। 

শাকসবজি ফলমূল বেশি খাবেন ,ভাজাপোড়া,আর খেতে হবে পর্যাপ্ত পরিমাণে পানি।

তেল চর্বি, চিনি যুক্ত খাবার পরিহার করবেন।ফুসফুস ভালো রাখার জন্য ধূমপান পরিহার করবেন। 

দিনে 8 থেকে 10 কাপ পানি খাবেন। যথেষ্ট পরিমাণে পানি খাচ্ছেন কিনা সেটা বোঝার জন্য একটা উপায় হল প্রসাবের রং দেখা। প্রসাবে রং  যদি গারো  হলুদ হয় তারমানে আপনি পর্যাপ্ত পরিমাণে পানি খাচ্ছেন না। যদি বমি বা ডায়রিয়া হয় সে ক্ষেত্রে স্যালাইন খেতে হবে এবং অনেক সচেতন ভাবে পানি শূন্যতা এড়িয়ে চলতে হবে। 

একটা থার্মোমিটার রাখতে পারেন জ্বর মাপার জন্য। বাসায় অন্যদের মাঝে করোনা  না ছড়ায়সে ক্ষেত্রে বাসায় নিজেকে এক রুমে আটকে রাখুন দরজা বন্ধ করে রাখুন,খাবার খাবেন রুমের ভিতরে।তবে যদি কারণে রোগের সামনে যেতেই হয় তবে সার্জক্যাল মাক্স  ব্যবহার করে যাবেন। যার আপনাকে সেবা দিচ্ছে তারাও আপনার সংস্পর্শে আসার জন্য সার্জকাল মাক্স  পরে নিবেন।সম্ভব হলে বাথরুম আলাদা করে ফেলবেন। আর যদি সম্ভব না হয় তবে অন্নরা ব্যবহার করার পরে আপনি বাথরুম ব্যবহার করবেন। কতদিন ব্যবহারের পরে আপনি যে জায়গা গুলো হাত দিয়ে ধরেছেন এই জায়গা গুলো পরিষ্কার করতে হবে। গ্লাস,প্লেট ,চাদর ,তোয়াল ,ইত্যাদি সব আলাদা করে ফেলুন। সেগুলো কারো সাথে ভাগাভাগি করে ব্যবহার করবেন না। নিজের রুম আর বাথরুম প্রতিদিন নিজের পরিষ্কার করুন। এসব জায়গা বেশি বেশি স্পর্শ করেছেন যেমন টেবিল, দরজা  হাতল ইত্যাদি পরিষ্কার করেন। আর বারবার হাত ধুতে হবে। হাত না দিলে হাত দিয়ে ভাইরাস ছড়াবে।পুষ্টিকর খাবার খাবেন,ধূমপান করবেন না, চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া ওষুধ খাবেন না,নিয়মিত অক্সিজেন মাপবেন আর খেয়াল রাখবেন রোগীর অবস্থা খারাপের দিকে যাচ্ছে কিনা।

নিরাপদে থাকবেন।

Comments

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Call Now Button