হঠাৎ ব্লাড প্রেশার বেড়ে গেলে কী করবেন?

যারা উচ্চ রক্তচাপ বা হাই ব্লাড প্রেসারে ভুগছেন তাদের ব্লাড প্রেসার যদি দ্রুত অনেক বেড়ে যায় তখন একটা বিপজ্জনক অবস্থার সৃষ্টি হতে পারে। এখন আলোচনা করব কি কি ভুলের কারণে প্রেসার অনেক বেড়ে যেতে পারে। আর বেড়ে যদি যাই তবে কি করবেন? শুরু করছি কারণ গুলো ভালো ভাবে বুঝিয়ে বলতে,

সবচেয়ে কমন কারণ হলো, হাই ব্লাড প্রেসার চিকিৎসা না হওয়া বা অপর্যাপ্ত চিকিৎসা হওয়া। 

কখন এমন হতে পারে? 

চারটা উদাহরণ দিচ্ছি। 

এক, যদি রোগী না জানে যে তার উচ্চ রক্তচাপ আছে। গবেষণায় দেখা গেছে উচ্চ রক্তচাপের অর্ধেক রোগী জানেন না যে তারা এ রোগে ভুগছেন। কারণ এ রোগের সাধারণত কোন লক্ষণ দেখা যায় না। একমাত্র ব্লাড প্রেসার মাপলে বোঝা যায় কার উচ্চ রক্তচাপ আছে। গত এক বছরে যারা রক্তচাপ মাপেন নেই তারা তো জানবে না তাদের এই রোগ আছে কিনা। না, জানলে চিকিৎসাও হবে না। জীবনযাপনে কোন পরিবর্তনও আসবে না। তখন রক্তচাপ অনেক বেড়ে যাওয়ার ঝুঁকি থাকে। 

দুই, ব্লাড প্রেসার ওষুধ খাওয়া বন্ধ করে দেওয়া। 

অনেকে ডাক্তারের পরামর্শে ব্লাড প্রেসার ওষুধ খাওয়া শুরু করেন। তারপর একটু সুস্থ বোধ করলে ডাক্তারের পরামর্শ না নিয়ে নিজে নিজে ওষুধ খাওয়া বন্ধ করে দেন। হাই ব্লাড প্রেশার নীরবে শরীরের বিভিন্ন অঙ্গ পতঙ্গ ক্ষতি করতে থাকে। যেমন ধরেন, উচ্চ রক্তচাপের কারণে রক্তনালী ক্ষতি হওয়া একটা কমন ব্যাপার। রক্তনালীর এই ক্ষতি হঠাৎ একদিন  রক্তচাপ অনেক বাড়িয়ে দিতে পারে। এজন্য ডাক্তার পরামর্শ ছাড়া ওষুধ বন্ধ করতে নিষেধ করেন। 

তিন, ব্লাড প্রেসার এর ওষুধ কমিয়ে খাওয়া। 

ডাক্তার দুইটা ওষুধ দিয়েছিল কিন্তু আপনি একটা ওষুধ খাচ্ছেন। অথবা ডাক্তার বলেছেন দুই বেলা ওষুধ খেতে আপনি এক বেলা করে খাচ্ছেন। এমনটা করার কারণে আপনার ব্লাড প্রেসার বেড়ে যেতে পারে। এটা হয়তো আপনি বুঝতেও পারবেন না। একটা ব্যাপার স্পষ্ট করে দিচ্ছি  ব্লাড প্রেসারের ওষুধ সারা জীবন একই পরিমাণে খেতে হবে ব্যাপারটা এমন না। অবশ্যই পরিস্থিতি অনুযায়ী বাড়ানো বা কমানো যাবে। এমনকি ঔষধ বন্ধ করা যেতে পারে। কিন্তু সেটা হতে হবে আপনার ব্লাড প্রেসার কত? শরীরে অন্যান্য কি কি রোগ আছে,ইত্যাদি বিষয়ে যত্ন সহকারে বিবেচনা করে। এই বিবেচনা টি নিজে না করে অনুগ্রহ করে ডাক্তারের পরামর্শ নিবেন,না হলে বিপদ হতে পারে। 

চার, ওষুধ খেতে ভুলে যাওয়া। প্রেসারের ওষুধ সাধারণত প্রতিদিন খেতে হয়। কিন্তু হাই ব্লাড  প্রেসার হলে রোগী  সাধারণত কোনো ব্যথা বা অস্বস্তিতে থাকেন না, তাই অনেক সময়  রোগী ওষুধ খেতে ভুলে যান। 

এছাড়াও প্রেসার হঠাৎ বেড়ে যাওয়ার আরো কিছু কারণ রয়েছে। সেগুলা হচ্ছে মানসিক চাপ, কিডনি বা থাইরয়েড এর রোগ ইত্যাদি।

এখন আসি প্রেসার হঠাৎ বেড়ে গেলে কি করনীয়? 

আপনি প্রেসার মেপে দেখলেন উপরেরটা ১৮০ বা  নিচেরটা  ১২০ এর বেশি। তারপর আপনার প্রথম কাজ হল, না ঘাবড়ানো। শান্ত হয়ে বসুন। তারপর পাঁচ মিনিট পরে আবার সঠিক নিয়মে  ব্লাড প্রেসার মাপুন। দ্বিতীয়বার মাপার পরও যদি প্রেসার বেশি আসে তাহলে আপনাকে ব্যবস্থা নিতে হবে আর দেরি করা যাবে না

কি কি  ব্যবস্থা নিবেন সেটা দুই ভাগে ভাগ করে বলবো
প্রথম ভাগ হলো যাদের প্রেসার হাই কিন্তু আর কোন লক্ষণ নাই তাদের জন্য। 

দ্বিতীয় ভাগ হল, যাদের প্রেশার হাই এবং সাথে  অন্যান্য লক্ষণ আছে তাদের জন্য। 

প্রথমে বলেই যাদের প্রেসার হাই কিন্তু আর কোন লক্ষণ নেই। এমন তাহলে প্রথম কাজ হল খুঁজে বের করা কেন প্রেসার এত বেড়ে গেল? 

প্রেসারের ওষুধ ঠিকমত কাজ করছে না,নাকি শরীরে অন্য কোন সমস্যার সৃষ্টি হল। একটা সূক্ষ্ম কাজ,যার জন্য প্রয়োজন মেডিকেল নলেজ। এটা বাসায় বসে নিজে নিজে করা ঠিক হবে না। তাই একজন ডাক্তারের পরামর্শ নিতে হবে। ডাক্তারের কাছে যাওয়া আগ পর্যন্ত প্রতি  ঘণ্টায় প্রেসার মেপে দুটো সংখ্যায় কাগজে লিখে রাখবেন,রাতে লিখবেন কয়টা সময় এ প্রেসার মেপেছেন। দুই, আপনি ব্লাড প্রেসারের কি কি ওষুধ খান, কি পরিমানে কোন সময় খান? কোন কোন বেলায় ওষুধ খেতে মিস করেছেন। এসব তথ্য আর কাগজপত্র একত্র করবেন। অন্য কোন ওষুধ খেয়ে থাকলে সেটা হোমিওপ্যাথি হোক বা ভেষজ হোক সেগুলো  সাথে করে নিয়ে যাবেন।এই দুইটা তথ্য পেলে চিকিৎসকের জন্য সহজ হবে আপনার শরীরে কি হচ্ছে সেটা বোঝা এবং তিনি প্রকৃত অবস্থা জেনে শুনে একটা সুচিন্তিত মতামত দিতে পারবেন। 

উচ্চ রক্তচাপ অনেকদিন থাকলে বিপদ আসন্ন। তাই খুব কড়া নজর রেখে রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে আনতে হবে। 

এখন বলব প্রেসার বাড়ার পাশাপাশি বাহ্যিক লক্ষণ দেখা দিল কি করবেন? 

এ লক্ষণ গুলো কি কি? 

  • মাথা ব্যথা। 
  • চোখে ঝাপসা দেখা। 
  • বমি ভাব। 
  • বমি ।
  • কনফিউশন বা আবোল তাবোল বকা ভুলে যাওয়া ,ঝিমিয়ে পড়া। 

অচেতন বা অজ্ঞান হয়ে পড়া,খিচুনি,মুখ বেঁকে যাওয়া,হাত বা পা অবশ হয়ে যাওয়া,মুখের কথা আটকে যাওয়া,পিঠে বা পেটে ব্যথা,অস্থির লাগা,বুকে ব্যথা, শ্বাসকষ্ট ,প্রসাবের পরিমাণ কমে যাওয়া।এমন হলে নিজে নিজে ওষুধ খেয়ে প্রেসার কমানোর চেষ্টা করবেন না। কারণ এ অবস্থায় খুব সতর্ক সহকারে প্রেসার কমাতে হয়। এমনকি কিছু ক্ষেত্রে প্রেসার কমালে করে ধোয়ার সম্ভাবনা আছে। কেমন রোগী  যদি স্ট্রোক করে থাকে।সাথে সাথে প্রেসার কমানো হয় না,তাতে ব্রেনের রক্ত চলাচল আরো কমে যেতে পারে। আবার কিছু ক্ষেত্রে প্রেসার খুব দ্রুত নামিয়ে আনা লাগে।সাধারণত শিরায় ইনজেকশন দিয়ে প্রেসার কমানো হয়,  মুখের ওষুধ দেওয়া হয় না, মাথা ঠান্ডা রেখে কিভাবে দ্রুততম উপায়ে রোগীকে ইমারজেন্সি বিভাগে নেয়া যায় সেটা পরিকল্পনা করুন।

অনেকে জিজ্ঞেস করেন টক খেলে বা তেঁতুল খেলে সাথে সাথে প্রেসার কমবে কিনা?
উত্তর হল,  না। 

তাৎক্ষণিকভাবে  প্রেশার কমানোর এটা সঠিক উপায় নয়। তবে দীর্ঘ মেয়াদে তেঁতুল খেলে একটা উপকার আছে, কারণ তেতুল একটা ফল, আর রক্তচাপের রোগীকে  আমরা দিনে চার থেকে পাঁচটা মাঝারি সাইজের ফল খেতে বলি। কারণ ফলে তুলনামূলক বেশি পটাশিয়াম থাকে, তাছাড়া রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে।তেতুলে ভালো পরিমাণে পটাশিয়াম আছে। অন্যান্য ফল যেমন, খেজুর কমলা, কলা আম, গাজরেও পটাশিয়াম আছে। শুধু তেতুল খেতে হবে এমন কোন কথা নয়। 

নিরাপদে থাকবেন।

Comments

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Call Now Button