Author: Go Nursing Care

  • ফুটবল মাঠে মেডিক্যাল ইমার্জেন্সি

    ফুটবল মাঠে মেডিক্যাল ইমার্জেন্সি

    গতকাল ডেনমার্ক বনাম ইংল্যান্ডের খেলা চলছিল। হঠাৎ মাঠের মধ্যে দৌড়ানো অবস্থায় অজ্ঞান হয়ে মাটিতে লুটিয়ে পড়েন ডেনমার্কের ক্রিশ্চিয়ান অ্যারিস্টন, সংকেত পেয়ে খুব দ্রুত চিকিৎসক দল মাঠে প্রবেশ করেন কিছুক্ষণের মধ্যে বুঝা যায় যে অবস্থা খুবই গুরুতর। পুরো স্টেডিয়ামে নেমে আসে নীরবতা। এরিস্টনের হার্ট বিট বন্ধ হয়ে গিয়েছিল এটাকে আমরা বলি cardiac arrest। এমন অবস্থায় সবচেয়ে মূল্যবান হয়ে দাঁড়ায়  সময়,তখন যুদ্ধ চলে ঘড়ির কাটার সাথে। দ্রুত সঠিক চিকিৎসার না পেলে কয়েক মিনিটের মধ্যেই মারা যেতে পারে মানুষ। তখন খেলার মাঠেই চিকিৎসকরা শুরু করেন সিপিআর নামের এক জীবন রক্ষাকারী চিকিৎসা। 

    এই সময় অ্যারিস্টনের সাথীরা চারপাশ ঘিরে দাঁড়ায় একটু আড়াল তৈরি করতে। রুদ্ধশ্বাস উৎকণ্ঠা নিয়ে অপেক্ষা করেন মাঠে এবং মাঠের বাইরে লক্ষ লক্ষ মানুষ। চিকিৎসা চলতে থাকে দশ মিনিটেরও বেশি সময় ধরে। অবশেষে এরিস্টোনের হার্ট আবারও সচল হয়। তাকে স্ট্রেচেয়ার  করে হাসপাতালে নেয়া হয় পরবর্তী চিকিৎসার জন্য। এক ঘন্টার কম সময়ের মধ্যে জানা যায় অ্যারিস্টটনের অবস্থা স্থিতিশীল হয়েছে। তার বাবা এবং তার স্ত্রীর সাথে কথা বলছেন। সবাই যেন হাফ ছেড়ে বাঁচে। রেফারি প্লেয়ার ও চিকিৎসক এর দল সকলের কাটায় কাটায় সঠিক পদক্ষেপের কারণে একটা সেভ ফার্স্ট এইড এর মাধ্যমে প্রাণ বেচে গেল অ্যারিস্টটনের। এই পুরো তোর ঘটনাটা বিশ্লেষণ করার কারণ হচ্ছে প্লেয়ার ও রেফারির এর মত আপনার কি করণীয় যদি দুর্ঘটনার শিকার হন?

    এরিস্টন স্বাভাবিক ভাবে দৌড়ে আসছিল তারপর

    হঠাৎ করে তার শরীর ছেড়ে দেয় পায়ে জোর নাই, সামনে নইয়ে আসছে। এইটুকু  দেখলে বুঝা যায় তার সিরিয়াস কোন সমস্যা হয়েছে। কেন সিরিয়াস বলছি তা এখন বুঝাবো , একজন চিকিৎসক রোগী অজ্ঞান হওয়ার আগে কেমন লাগছিল সেটা জানার চেষ্টা করে। তার কি মাথা ঘুরাচ্ছিল?বমি বমি লাগছিল,মনে হচ্ছিল যে জ্ঞান হারিয়ে ফেলবে?রোগী কি বসেছিল বা দাঁড়িয়েছিল?কি করছিল ?এগুলো জানলে অজ্ঞান হওয়ার কারণগুলো খুঁজে পেতে সহজ হয়। যদি রোগী বলে সে একদম ভালো ছিল কোন ধরনের কোন খারাপ লাগা ছিল না। হঠাৎ করে আশেপাশে মানুষ দেখল দেশে অজ্ঞান হয়ে মাটিতে পড়ে গেছে। তখন প্রথমেই চিন্তা করি গুরুতর কিছু হতে পারে। হার্টের সমস্যার কারণে এমন হয়ে থাকতে পারে,ব্যায়াম করতে করতে বা দৌড়ানোর মাঝে কেউ যদি জ্ঞান হারায় তখন আমরা হার্ট নিয়ে দুশ্চিন্তায় পড়ে যাই। এখানে আমরা এই দুটো জিনিসকে দেখতে পাই,এরিস্টেন  দৌড়াচ্ছিলেন তার মাঝে হুট করে কোন ওয়ার্নিং ছাড়াই মাটিতে পড়ে যান।

    তবে এরিস্টটনের সৌভাগ্য যে এ ঘটনাটা ঘটে পুরো দুনিয়ার সামনে। একা বাসায় এ অবস্থা হলে ব্যাপার অন্যরকম হতে পারতো।

    এরিস্টন মাঠে পড়ে যাওয়ার পরে রেফারি দ্রুত খেলা বন্ধ করে চিকিৎসক দল মাঠে আনার আহ্বান করেন। এটা ছিল প্রথম গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ। আপনারা প্রথমে এসে কি করলেন? এমন অবস্থায় রোগী দেখার জন্য আমরা একটা বিশেষ সিকোয়েন্স ফলো করি। সংক্ষেপে এটাকে বলা হয় এ ABCDe,যে জিনিসটির রোগীকে সবচেয়ে দ্রুত মৃত্যুর দিকে ঠেলে নিয়ে যাবে। এই সিকোয়েন্সটা ফলো করলে আমরা সবার আগে এই জিনিসটার জন্য চিকিৎসা করতে পারি। প্রথমে আমরা দেখি Airway অর্থাৎ শ্বাস নালীতে কোন সমস্যা আছে কিনা। রোগী যদি স্বাভাবিক ভাবে কথা বলে তখন ধরে নেই যে শ্বাসনালী ঠিক আছে। না, হলে মাথা ও চোয়াল একটা বিশেষ কায়দায় ধরে  শ্বাসনালী স্বাভাবিক রাখি।তারপর দেখি রোগী স্বাভাবিকভাবে শ্বাস নিতে পারছে কিনা, আমরা সাধারণত গলার এখানে পালস চেক করি।

    ঠিক চোয়ালের  নিচে হাত দিলে আপনিও পাবেন। ডাক্তাররা তার মাথার কাছে এই কাজগুলো করছিলেন প্রথমে অ্যারিস্টন শ্বাস নিচ্ছিলেন পালস  ছিল কিন্তু কিছুক্ষণের মধ্যেই তা বন্ধ হয়ে যায় হার্টবিট বন্ধ হয়ে গেলে মস্তিষ্কে এবং অন্যান্য অঙ্গের রক্ত চলাচল বন্ধ হয়ে যায় দ্রুত সঠিক চিকিৎসা না নিলে কয়েক মিনিটের মধ্যে মৃত্যু ঘটে। আর দুধ কেন বন্ধ হয় সেটা বুঝিয়ে বলি, আমাদের হার্টে একটা ইলেকট্রিক্যাল সিস্টেম আছে যেটা মিনিটে হার্ট কয়বার কিভাবে বিট করবে সেটা ঠিক করে দেয়। এই সিস্টেম যখন ঠিকভাবে কাজ করে হার্ট ঠিক মতো রক্ত পাম্প  করে শরীরের সব জায়গায় পাঠাতে পারে। এই ইলেকট্রিক্যাল সিস্টেম যখন মারাত্মক গন্ডগোল হয়, হার্টবিট এলোমেলো ,দুর্বল, বা বন্ধ হয়ে যায়। ফলে হার্ট শরীরে আর রক্ত পাম্প করতে পারে না। এমন একটা কমন অবস্থা কে বলে ফেলটিক্যাল ফ্যাবরিলেশন। ,ইলেকট্রিক্যাল সিস্টেম এত এলোমেলো হয়ে যায় যে চারপাশ থেকে ফায়ার করতে থাকে তখন হার্ট পাম্প করার বদলে কাপতে থাকে,এই অবস্থায় রোগীকে বাঁচানোর জন্য দ্রুত সিপিআর দিতে হয়। সিপিআর হল একটি নির্দিষ্ট পদ্ধতিতে বুকের উপর ঘন ঘন চাপ প্রয়োগ করা,উদ্দেশ্য হল মস্তিষ্ক আর হার্টের রক্ত চলাচল করানো।

    দ্রুত করতে পারলে রোগী বেঁচে যাওয়ার সম্ভাবনা ২ থেকে ৩ গুণ বেড়ে যায় ,এই সময় বল প্রয়োগ করে অনেক চাপ দিতে হয় মিনিটে ১০০ থেকে ১২০ বার। এইটা এতটাই পরিশ্রমের কাজ যে একজন মানুষ সাধারণত এক থেকে দুই মিনিট ঠিকভাবে করতে পারে। তাই অন্য মানুষকেও পাস থেকে ডেকে নিতে হয় যাতে কোন বিরতি ছাড়া সিপিআর চালিয়ে যাওয়া যায়। 

    এবার মাঠের আলোচনায় ফিরে আসি, যখন ডাক্তাররা দেখলেন যে এরিস্টোনের পালস বন্ধ হয়ে গেছে তারা সাথে সাথে সিপিআর শুরু করেন ।সিপিআর করার জন্য ডাক্তার হওয়ার প্রয়োজন নেই যে কেউ খুব অল্প সময়ে শিখে নিতে পারেন কিভাবে সিপিআর দেয়া যায়। হার্ড কাঁপলে বা পাম্প করতে না পারলে একটা ডিফেবিলেটর  যন্ত্রের মাধ্যমে ইলেকট্রিক শক দেয়া হয়,ইলেকট্রিক শক দেয়ার মধ্যে দিয়ে হার্টের এলোমেলো কাপাকাপি মুহূর্তের জন্য বন্ধ করা হয়। ডিফেবিলেটর ব্যবহার করতে যত মিনিট দেরি হয় ততই বাঁচার সম্ভাবনা কমতে থাকে অজ্ঞান হওয়ার সাথে সাথে সিপিআর আর তিন থেকে পাঁচ মিনিটের মধ্যে ইলেকট্রিক শক দিতে পারলে রোগী বেঁচে যাওয়া সম্ভাবনা ৭৫% পর্যন্ত বেড়ে যেতে পারে। এসবগুলো ধাপ অ্যারিস্টনের সাথে সময়মতো ঘটেছিল বলেই তিনি প্রাণে বেঁচে যান তারপরে তাকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয় চিকিৎসার পরের ধাপ গুলো সম্পন্ন করার জন্য। বুঝতেই পারছেন ডিফেবিলিটর কত গুরুত্বপূর্ণ জিনিস। ডিফেবিলেটর  দুই ধরনের আছে অটোমেটিক আর ম্যানুয়াল, এই যন্ত্রটাই ধাপে ধাপে বলে দেয় কীসের পরে কি করতে হবে।

    আর রোগীর প্রয়োজন না হলে ইলেকট্রিক শক দেয়া হয় না।

  • ব্ল্যাক ফাঙ্গাস থেকে সুরক্ষার উপায়।

    ব্ল্যাক ফাঙ্গাস থেকে সুরক্ষার উপায়।

    পত্রিকায় হয়তো অনেকে পড়েছেন,যে ভয়ংকর ব্ল্যাক  ফাঙ্গাস এ অন্ধ হয়ে যাচ্ছেন করোনা রোগীরা। করণীয় কি? 

    প্রথমেই বলি এই সংবাদে আতঙ্কিত হওয়ার কোন কারণ নেই,এইটা কোন নতুন রোগ নয়, বহু পুরনো রোগ খুব অল্প মানুষেরই এই রোগ হয়।আবার আমরা অনেকেই জানি কি কি কারনে কি কি করলে এই রোগের ঝুঁকি বাড়ে। পুরো বিষয়টা বুঝিয়ে বলব। 

    এই রোগের ফ্যাংগাস রোগের মূল নাম মিউকরমাইকোসিস। এটি একটি ছত্রাকঘটিত খুবই দুর্লভ রোগ। ছত্রাক কি সেটা অনেকে জানেন না। ছত্রাক দিয়ে অনেক অনেক রোগ হয় আবার আমরা ছত্রাক খাবার হিসেবেও খেতে পারি (মাশরুম এক ধরনের ছত্রাক)। মিউকরমাইকোসিস খুবই ক্ষুদ্র, আণুবীক্ষণিক ছত্রাক দিয়ে হয়।

    এই রোগটা কয়েক রকমের ফাঙ্গাস আমাদের শরীরের ভিতরে ঢুকে এই রোগটা সৃষ্টি করতে পারে।

    ফাঙ্গাসগুলো আমাদের চারপাশে যে পরিবেশ মাটি, পচনশীল বস্তু, এমনকি বাতাসেও থাকতে পারে।

    এই ফাঙ্গাসগুলো পরিবেশ থেকে অনেক ভাবে আমাদের শরীরে প্রবেশ করে। কিন্তু যত জনের শরীরে ব্ল্যাক ফ্যাঙ্গাস ঢুকে সবার এই রোগটা হয় না।। কারণ আমাদের শরীরে যে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা আছে এটা ফাঙ্গাসের সাথে যুদ্ধ করে। অধিকাংশ মানে সব ক্ষেত্রেই আমাদেরও প্রতিরোধ ক্ষমতা জিতে যায়,ব্ল্যাক ফাঙ্গাস কে ধ্বংস করতে পারে শরীরে বাসা বাঁধতে দেয় না কোনো রোগ সৃষ্টি হয় না। যদি কোন কারণে আমাদের প্রতিরোধ ক্ষমতা দুর্বল হয় তাহলে ব্ল্যাক ফাঙ্গাস জয়ী হওয়ার সম্ভাবনা থাকে রোগটা হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। আমাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা যদি স্বাভাবিকের চেয়ে অল্প দুর্বল থাকে তাহলেই ব্ল্যাক ফাঙ্গাস যে জিতে যায় তা না। যাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা খুবই দুর্বল মারাত্মকভাবে দুর্বল তাদের ক্ষেত্রে ব্ল্যাক ফাঙ্গাস জিতে যেতে পারে এবং এই মারাত্মক রোগটা দেখা দিতে পারে।যাদের রোগ  প্রতিরোধ ক্ষমতা খুবই দুর্বল তাদের ক্ষেত্রে এই রোগের ঝুঁকি থাকে। 

    এখন আসি রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কেন বা তাদের অতি দুর্বল হতে পারে?

    যাদের অনিয়ন্ত্রিত ডায়াবেটিস আছে তাদের  রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা খুবই দুর্বল থাকে। এই অবস্থায় যদি করোনা হয় তাদেরকে স্টেরয়েড নামের একটা ঔষধ দেয়ার প্রয়োজন হতে পারে। এই ঔষধটা রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা আরো দুর্বল করে দেয়। স্টেরয়েড ঔষধটা ডায়াবেটিসে আক্রান্ত করোনা  রোগী ছাড়াও অন্যান্যদেরকে দেয়া হয়। ধারণা করা হচ্ছে সেখান থেকেও এ রোগের ঝুঁকি বাড়তে পারে। 

    আশঙ্কার ব্যাপার হলো। বিভিন্ন প্রেসক্রিপশন দেখেছি, ভাইরাল হতে দেখেছি যেখানে স্টেরয়েড নামটাও দেয়া আছে। মানুষ চাইলেই দোকান থেকে এই ওষুধ কিনে খেতে পারে। কিন্তু দেখেন করোনা রোগীদের স্টেরয়েড ওষুধ দেয়ার নির্দিষ্ট সময় আছে। যখন রোগী একটা নির্দিষ্ট  পর্যায় যায় রোগীর অক্সিজেন প্রয়োজন হচ্ছে তখন স্টেরয়েড জীবন বাঁচায়।অক্সফোর্ডের গবেষণা থেকে আমরা যে জানি এই ঔষধ জীবন বাঁচায় মৃত্যুর ঝুঁকি কমায় এক তৃতীয়াংশ সেই একই গবেষণায় আমরা দেখেছি যে করোনার প্রাথমিক পর্যায়ে এই ঔষধটা দিলে মৃত্যু সম্ভাবনা বাড়তে পারে।

    এখন বলব কোন কোন ওষুধগুলো স্টেরয়েড জাতীয় ওষুধ 

    Betamethasone( বেটামেথাসন)

    Dexamethasone( ডেক্সামেথাসন)

    Prednisolone( প্রেডনিসোলোন)

    Methylprednisolone( মিথাইল প্রেডনিসোলোন

    Hydrocortisone ( হাইড্রকর্টিসন

     সুতরাং মৃদু করোনা রোগীদেরকে এই ওষুধটা দেয়া একেবারেই উচিত না। কিন্তু অনলাইনে ফেসবুকে বিভিন্ন প্রেসক্রিপশন এ স্টেরয়েড এর কথা বলা হচ্ছে মৃদু করোনা  রোগীদের জন্য। দয়া করে এই ঔষধ গুলো ডাক্তারের পরামর্শ ছাড়া কোন ক্রমে খাবেন না। একজন চিকিৎসক আপনার পরিস্থিতি বিবেচনা করে যদি ঔষধ খাওয়ার পরামর্শ দেন তখনই কেবল  এই ওষুধটা খাবেন।স্টেরয়েড ছাড়াও আরো কয়েকটা কারনে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা অতি দুর্বল হতে পারে। এর মধ্যে রয়েছে ক্যান্সার এ আক্রান্ত  রোগী,যাদেরকে কেমোথেরাপি   ইমওনেও থেরাপি দেয়া হচ্ছে,বা কোন অর্গান ট্রান্সপ্লান্ট হয়েছে। যেমন, হার্ট  , লিভার ,কিডনি ট্রান্সপ্লান্ট যাদের হয়েছে আর যারা এইচআইভি তে আক্রান্ত। এখন বলছি, স্টেরয়েড এর ব্যাপারে সতর্ক হওয়া ছাড়া আর কি কি করতে পারেন?

    অনেক ধুলাবালি আছে যেমন কনট্রাকশন হচ্ছে এমন জায়গা গুলো এড়িয়ে চলা,মাটি হাত তালে গ্লাভস পড়ে নেয়া আর নিয়মিত হাত ধোয়া তো আছেই। অপ্রয়োজনে ডাক্তারের পরামর্শ ছাড়া এন্টিবায়োটিক খাবেন না। ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখার চেষ্টা করবেন,সে এই রোগের  লক্ষণ গুলো বলে দেই,যাতে করোনা সময় এই লক্ষণ গুলো দেখা দিলে পরামর্শ নিতে পারেন। যত তাড়াতাড়ি শুরু করা যায় ততই ভালো তাই দেরি করবেন না।

    মুখের এক পাশ ফুলে যাওয়া ব্যথা হওয়া বা অবশ্  হয়ে যাওয়া,এক চোখ ব্যথা হওয়া,লাল হয়ে যাওয়া,একটা জায়গায় দুইটা দেখা চোখের পাতা নিচে চলে আসা,ঝাপসা দেখা। 

    জ্বর মাথা ব্যথা,বুকে ব্যথা,কাশি শ্বাসকষ্ট। কাশির সাথে রক্ত যাওয়া,চোয়াল ব্যাথা, বা দাঁত ব্যথা দাঁত খুলে খুলে আসা। নাক বন্ধ নাক থেকে কালচে কিছু বা রক্ত যাওয়া। নাকের উপর কালো কালো দাগ হওয়া বা মুখের ভেতর কালো দাগ হওয়া। 

    নিরাপদে থাকবেন।

  • মাইক্রোওয়েভ ওভেনে রান্না নিয়ে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য

    মাইক্রোওয়েভ ওভেনে রান্না নিয়ে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য

    মাইক্রোওয়েভ ওভেনে রান্না করা বা গরম করা কি অনিরাপদ?

    মাইক্রোওয়েভ কি খাবারের সব গুনাগুন পুষ্টি গুনাগুন কি নষ্ট করে দেয়? 

    অনেকেরই একটা ধারণা আছে যে মাইক্রোওয়েভে রান্না করা বা গরম করা খাবার স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর এবং এভাবে রান্না করলে বা গরম করলে খাবারের পুষ্টি গুনাগুন নষ্ট হয়ে যায়। 

    এই ধারণা সম্পূর্ণ ভুল এবং মোটেও বিজ্ঞানসম্মত নয়। 

    অন্যান্য রান্না করা পদ্ধতির মতই মাইক্রোওয়েভে রান্না করা নিরাপদ এবং কিছু কিছু ক্ষেত্রে মাইক্রোওয়েভ এ রান্না করলে খাবারের পুষ্টি বরং বেশি অটুট থাকে। এই পুরো ব্যাপারটা পরিষ্কার করে বুঝিয়ে বলব। 

    প্রথমেই আসি কেন বললাম যে মাইক্রোওয়েভে রান্না করলে কিছু খাবারের পুষ্টি গুনাগুন  বেশি অটুট থাকতে পারে। আমরা সাধারণত কোন খাবার রান্না করতে হলে তাপ দিয়ে রান্না করি,সেটা গ্যাসের  চুলায় রান্না হোক ,লাকড়ি চুলায় রান্না হোক মাইক্রোওয়েভ ওভেন বা অন্য ধরনের ওভেনে রান্নাই হোক। যখন আমরা একটা খাবারে তাপ দিয়ে রান্না করছি তখন সে খাবারের পুষ্টি গুনাগুন কিছুটা কমে যায়। কিছু পুষ্টি  উপাদান নষ্ট হয়। যত বেশি সময় ধরে সে খাবারটা তাপে থাকে,তত বেশি পুষ্টির উপাদান নষ্ট হতে থাকে। 

    তো এখন এই যে বিভিন্ন পদ্ধতির রান্নার  কথা বললাম,এরমধ্যে খেয়াল করে দেখেন মাইক্রোওয়েভ ওভেনে কিন্তু রান্না তাড়াতাড়ি হয়। খাবারটা অল্প সময় তাপে থাকে। তাই কিছু ক্ষেত্রে মাইক্রোওয়েভ ওভেনে রান্না করলে খাবারের পুষ্টি উপাদান বেশি অটুট থাকে। কিছু খাবার আছে যেটা আমরা তাপ ছাড়া রান্না ছাড়া খেতে পারি, কিন্তু বেশি ভাগ খাবারই আমাদেরকে তাপ দিয়ে রান্না করে খেতে হয়। না, হলে কাঁচা খাবারের যে সব জীবাণু আছে সেগুলো আমাদের শরীরে ঢুকে নানা রকম সমস্যার সৃষ্টি করতে পারে। ডায়রিয়া হতে পারে, বমি হতে পারে। তো এই যে তাপ দিয়ে রান্না করার ক্ষেত্রে অন্যান্য পদ্ধতির মধ্যে মাইক্রোওয়েভ ওভেনে যেহেতু কম সময় লাগে সেই জন্য কিছু ক্ষেত্রে খাবারের পুষ্টি উপাদান বেশি অটুট রাখে। আচ্ছা, পুষ্টি উপাদান না হয় বুঝলাম মাইক্রোওয়েভে রান্না করা খাবার কি আমাদের  শরীরের জন্য ক্ষতিকর? এই  খাবারে কি রেডিয়েশন থাকে? রেএ  থাকে যেটা আমরা যখন খাব আমাদের শরীরে মারাত্মক স্বাস্থ্য ঝুঁকি সৃষ্টি করবে ?

    এটা বোঝার জন্য মাইক্রোওয়েভ কি এটা বোঝা জরুরী। মাইক্রোওয়েভ হলো এক ধরনের ইলেক্ট্রোম্যাগনেটিক রেডিয়েশন,আমরা যে আলো দেখতে পাই এটাও এক ধরনের ইলেক্ট্রোম্যাগনেটিক রেডিয়েশন। স্কুলে যারা ফিজিক্স পড়েছেন তাদের মনে থাকবে যে বিভিন্ন ধরনের ইলেক্ট্রোম্যাগনেটিক রেডিয়েশন আছে একেকটার কাজ একেক রকম।

    মাইক্রোওয়েভ কি করে? 

    পানি বা এমন মলিকিউ যেটাতে পজিটিভ এবং নেগেটিভ দুটো চার্জ ই আছে সেগুলোর মধ্যে কম্পন সৃষ্টি করে। এই কম্পনের ফলে তাপ উৎপন্ন হয় এবং সেটা দিয়েই রান্না হয়। এসব খাবারে পানি বেশি থাকে দেখবেন মাইক্রোওয়েভ ওভেনে সেগুলো তাড়াতাড়ি রান্না হয়ে যায়,যেমন সবজি। মাইক্রোওয়েভের ক্ষেত্রে আরেকটা গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হল সেটা নন আয়নাইজিং রেডিয়েশন। এটা কেন গুরুত্বপূর্ণ একদম সহজ করে বুঝিয়ে বলব। ইলেক্ট্রোম্যাগনেটিক রেডিয়েশন এর ক্ষেত্রে কিছু আছে আয়নাইজিং রেডিয়েশন, যেমন এক্সরে। এগুলোর শক্তি অনেক বেশি থাকে। দেখা যায় একটা পরমাণু থেকে ইলেকট্রন সরিয়ে নিতে পারে,অনু, পরমাণুকে  বদলে দিতে পারে,কোষে ড্যামেজ করতে পারে। এইজন্যই আমরা কোন রোগীকে এক্সরে  বা সিটি স্ক্যান করতে বললে খুব সাবধানতার সাথে বিবেচনা করি যাতে এই এক্সরে বা সিটি স্ক্যান করার ফলে যে ক্ষতির সম্ভাবনা আছে তার চেয়ে উপকারের সম্ভাবনা বেশি কিনা। কিন্তু মাইক্রোওয়েভ যেহেতু আয়নাইজিং রেডিয়েশন নয়, তাই তার ক্ষেত্রে এই আলোচনার কোন অবকাশ নেই। অর্থাৎ মাইক্রোওয়েভ থেকে খাবার বের করার পরে সেটাতে রেডিয়েশন আছে, সেটা শরীরে গেলে ক্ষতি করবে ,স্বাস্থ্যঝুঁকি আছে এই আলোচনাগুলো সম্পূর্ণ অবান্তর। তাহলে মোট কথা হলো অন্যান্য রান্নার পদ্ধতির মত মাইক্রোওয়েভ ওভেনেও একটা নিরাপদ রান্নার পদ্ধতি। এবং কিছু ক্ষেত্রে খাবারের পুষ্টি গুনাগুন এতে বেশি অটুট থাকে। তবে মাইক্রোওয়েভ ওভেন ব্যবহার করার জন্য অবশ্যই নিয়মগুলি মেনে চলবেন। যেসব পাত্রে মাইক্রোওয়েভ ওভেনে রান্না করা যায় বা গরম করা যায় সেসব পাত্র ব্যবহার করবেন। অনেকে অনেক সময় প্লাস্টিকের পাত্র ব্যবহার করেন, এটা থেকে খুব সাবধান থাকতে হবে। কারণ প্লাস্টিকে অনেক সময় এমন কিছু কেমিক্যাল ব্যবহার করা হয় যেটা প্লাস্টিক টাকে নরম করে কিন্তু আমাদের স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর।মাইক্রোওয়েভের তাপে সে প্লাস্টিকটা কিন্তু খাবারের মধ্যে আসতে পারে। তাই এসব  ব্যবহার না করে যে সব পাত্র মাইক্রোওয়েভে ব্যবহার করার জন্য উপযোগী সেগুলো ব্যবহার করবেন। 

    নিরাপদে থাকবেন।

  • ইফতার ও সেহেরিতে কী খাবেন?

    ইফতার ও সেহেরিতে কী খাবেন?

    ইফতার ও সেহরিতে কি খাবেন?

     কতটুকু পানি খাওয়া প্রয়োজন। কখন কতখানি ব্যায়াম করবেন এই বিষয়গুলো নিয়ে আজকে আলোচনা করব। 

    শুরুতেই বলি ইফতার এ কি কি খাবেন? 

    অনেকেই শুরু করেন খেজুর দিয়ে এটা খুব একটা ভালো অভ্যাস। খেজুরের ন্যাচারাল সুগার আছে আপনাকে দ্রুত সারাদিনের ধকল কাটিয়ে উঠতে সাহায্য করে আর সাথে ফাইবার বা আজ এবং নানা ধরনের খনিজ পদার্থ তো আছেই। ফাইবার হজমের জন্য খুব উপকারী, আমরা সবাই যথেষ্ট ফাইবার যুক্ত খাবার খাই না। আবার রোজায় যাদের কোষ্ঠকাঠিন্য দেখা দেয় তাদের উপকারে আসবে। খেজুরের পরিবর্তে বা খেজুর খাওয়ার  ঠিক পরে যারা চিনির শরবত বা চিনি দিয়ে বানানো জুস খান এসবের পরিবর্তে পানি খাওয়া ভালো। যাদের সুযোগ আছে ডাবের পানি খেতে পারেন,ডাবের পানিতে পটাশিয়াম থাকে, আবার সারাদিন ঘামের সাথে শরীরে যে পানি শূন্যতা দেখা দেয় তা পুরনো সাহায্য করবে। শরবতের পরিবর্তে ফলের বানানো বাসার জুস খাওয়া যেতে পারে। তবে জুস বানানোর সময় চিনি দিবেন না। দোকান থেকে কেনা জুস ক্ষতিকর ক্যামিক্যাল থাকতে পারে,তাই বাসায় বানানো ফলের জুস খেতে  পরামর্শ দিয়েছে।

    কেন চিনির শরবত চিনি দিয়ে বানানো শরবত এড়িয়ে যাওয়ার পরামর্শ দিচ্ছি?

    আমাদের শরীরে আলাদা করে চিনি খাওয়ার প্রয়োজন বা উপকারিতা নেই। বড় অতিরিক্ত চিনি খেলে নানান স্বাস্থ্য সমস্যা দেখা দেয়, ওজন বেড়ে যাওয়া হার্টের রোগ ইত্যাদি। মিষ্টি কিছু খেতে চাইলে ফলমূল সবচেয়ে ভালো অপশন। খেজুর আর পানি খাওয়ার পরে কিছু ফলমূল খেতে পারেন। অনেক ধরনের ফলমূল পাবেন,যেটা ম্যানেজ করতে পারেন সেটাই খাবেন। একমাস যেহেতু খাবেন ফলমূলের পরিবর্তন তো আনতেই হবে। না, হলে একঘেয়ে লাগবে।একেক সময় হয়তো কম দামে একেক ফল পাবেন। আপনার জন্য যেটা সুবিধা হয় সেটাই বেছে নিবেন।নানা  রকমের ফলে নানা রকমের পুষ্টিগুণ থাকে তাই পরিবর্তন করে খাওয়া ভালো। এতক্ষণে  গেল তিনটা খাবার খেজুর, পানি, আর ফলমূল। অনেকেই এই সময় পেঁয়াজু ,বেগুনি,ডিম চপ , এগুলো খাবার খান।খাবার গুলো ডুবো তেলে ভাজা যা স্বাস্থ্যের জন্য খুব ক্ষতিকর। এই খাবারগুলোতে বেশি পরিমাণ ট্রান্সফ্যাট থাকা সম্ভাবনা বেশি।ট্রান্সফ্যাট হচ্ছে সবচেয়ে বিপদ ধরনের ফ্যাট। এই ফ্যাট অল্প পরিমানে খেলেও অনেক পরিমানে ক্ষতি করে।গবেষণায় দেখা গেছে আপনি দিনে যে পরিমাণ ক্যালরি খান তা মাত্র ২ শতাংশ ট্রান্সফ্যাট থেকে আসে তাহলে হার্টের রোগের ঝুঁকি বাড়ে তিন শতাংশ,ক্ষতিকর কোলেস্ট্রল বাড়ায়। সারাদিন রোজা রেখে এই খাবারগুলো খেয়ে নিজের ক্ষতি না করাই উত্তম। জিলাপি,বুন্দিয়া খাবার গুলো তেলে ভাজা,চিনি দেয়া। পায়ে খাবার গুলো এড়িয়ে গেলে ভালো।

    তাহলে খেজুর পানি আর ফলমূল খাওয়ার পরে আর কি খাবেন? 

    আগে আর কিছু না খেয়ে একটা বিরতি নেওয়া  ভালো। কেউ এই সময় নামাজ পারেন বা হাঁটেন ,এই বিরতি খুব ভালো জিনিস। সারাদিন উপবাসের পরে এই যে খাবার পেটে গেল সেটার বুঝতে কিছুটা সময় লাগে। বিরতি নেয়ার ফলে অতিরিক্ত খাবার খাওয়ার প্রবণতা কমে যায়। রোজার সময় অতিরিক্ত খাওয়া একটা বড় সমস্যা। এই কারণে অনেকে গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা হয় ,আবার অনেকের ওজন বেড়ে যায়। যারা রোজার সময় ওজন কমাতে চান তার জন্য এই বিশেষ বিরতি বিশেষ উপকারী হবে। 

    আপনার খাবারের প্লেটটা মনে মনে চার ভাগে ভাগ করবেন। অর্ধেক প্লেট নেবেন সবজি আর ফলমূল,বাকি থাকল অর্ধেক এই অর্ধেকের অর্ধেক অর্থাৎ চার ভাগের এক ভাগ নিবেন লাল চালের ভাত বা লাল আটা রুটি। আর বাকি অংশ নেবেন মাছ ,মাংস, ডাল।অর্থাৎ প্রোটিন জাতীয় খাবার। লাল চলে অনেক মিনারেল ,ভিটামিন ফাইবার থাকে,যা সাদা চালে থাকে না। সবজি বা মাছ রান্নায় অতিরিক্ত তেল ব্যবহার করবেন না।

    এই রান্না গুলোতে অলিভ অয়েল ব্যবহার করলে ভালো। এক্সট্রা ভার্জিন অলিভ অয়েল আরো ভালো।

    তবে এই তেলের দাম বেশি আবার অনেকে এক্সট্রা ভার্জিন অলিভ অয়েল এর গন্ধ সব খাবারে পছন্দ করেন না। সেই ক্ষেত্রে অলিভ অয়েল ব্যবহার করতে পারেন। আপনারা অন্য তেল কেনার সময় দেখে নিবেন তাতে ট্রান্স ফ্যাট আছে কিনা। ট্রান্স ফ্যাটের পরিমাণ বোতলের গায়ে লেখা থাকে।সন্ধ্যার খাবারে দুইটা জিনিস মনে রাখতে বলেছিলাম প্রথমটা হল তেল যা নিয়ে এতক্ষণ কথা বললাম আরেকটা হল অতিরিক্ত ভোজন।আমরা ব্রেক নিয়েছিলাম অতিরিক্ত ভোজনের  সম্ভাবনা কমাতে তবে খেয়াল না রাখলে অতিরিক্ত ভজন হয়ে যেতে পারে। বিশেষ করে অনেকেই মনে করেন সারাদিন রোজা রাখার পরে বড় একটা খাওয়া দিতে হবে। আসলে আপনার শরীর অতিরিক্ত ভোজনের কোন প্রয়োজন নেই। অতিরিক্ত ভোজন অস্বস্তি ও ক্ষতির কারণ হয়। সবজি লাল চালের ভাত মাছ মাংস খেলে প্রয়োজনীয় পুষ্টি পেয়ে যাবেন।

    এতক্ষণ আলোচনা করলাম ইফতার ও সন্ধ্যার খাবারে কি কি খাবেন

    এখন আরেকটা গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে পানি শূন্যতা। এটা বিশেষ করে গুরুত্বপূর্ণ কারণ এবার রোজা হচ্ছে অনেক গরমের মধ্যে। যদি পানির দিকে খেয়াল না রাখলে শরীর খারাপ হয়ে যেতে পারে। ইফতার থেকে সেহরি পর্যন্ত কমপক্ষে ১০ গ্লাস বা আড়াই লিটার পানি খেতে হবে। ইফতার আর সেহরিতে তো পানি খাবেন মাঝে সময়টাতেও মনে করে পানি খেতে থাকবেন। তারাবি নামাজের সময়ে সাথে একটা পানির বোতল রাখতে পারেন।নামাজের আগে পরে পানি খেলেন আবার যেহেতু এটা অনেক লম্বা সময়ের একটা নামাজ এর মাঝে পানি খেয়ে নিতে পারেন। পানির পাশাপাশি পানি জাতীয় খাবার যেমন তরমুজ, শসা, টমেটো এগুলো খেতে পারেন। চা কফি দিয়ে পানি শূন্যতা পূরণ করার  চেষ্টা না করা  ভালো।কারণ এগুলোতে ঘনঘন প্রস্রাব হতে পারে ফলে উল্টো আরো পানি শূন্যতা  তৈরি হতে পারে।ভালোভাবে খেয়াল রাখবে যেন পানি শূন্যতা না হয়।পানিশূন্যতা থেকে সমস্যা সৃষ্টি হতে পারে। এখন চলে আসি সেহরি তে কি খাবেন? 

    সেহরিতে এমন খাবার আমাদেরকে বেছে নিতে হবে যা অনেকক্ষণ ধরে পেটে থাকে।

    যে খাবারগুলোতে ফাইবার বেশি,লাইসেমিক  ইনডেক্স বা জিআই কম। এতে যা হবে আমরা দিনে অল্প অল্প করে বেশি সময় ধরে এনার্জি পাব। সাদা চালের ভাত খেলে সেটা খুব তাড়াতাড়ি হজম হয়ে যায়,অনেক সময় ধরে এনার্জি দিতে পারেনা একটু পর ক্ষুধা লেগে যায়। তাই সেহরির জন্য ভালো হচ্ছে লাল চালের ভাত। ওটস খেতে পারেন,কেনার সময় দেখবেন হোলগ্রেন ওটস লেখা আছে কিনা।বাদাম খেতে পারেন বাদামে ভালো ফ্যাট থাকে পেটে অনেক সময় ধরে থাকে হজম হতে সময় লাগে।চিয়া শীড এর শরবত খেতে পারেন,কলা, আপেল, কমলা, ফল খেতে পারেন। ভাত দিয়ে ঘন ডাল খেতে পারেন। রাজমা চাল খেতে পারেন, সিদ্ধ ডিম খেতে পারে। এ খাবারগুলোতে বা অন্যান্য খাবারগুলোতে আপনার গলা বুক যদি জ্বলে ,সেটা এড়িয়ে যাবেন।

    অনেকে সেহরিতে অতি ভোজন করেন এটাও কিন্তু গ্যাস্টিকের কারণ হতে পারে।

    যাদের এই গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা দেখা দেয় তারা খাবার পরে শুয়ে পড়বেন না। এবার আসি ব্যায়ামে রোজার মধ্যেও ব্যায়াম চালিয়ে যেতে পারেন। কমপক্ষে সন্ধ্যার পরে এমন একটা সময় বের করবেন যখন আপনি আধা ঘন্টা দ্রুত গতিতে হাঁটবেন সপ্তাহের সব মিলিয়ে যাতে আড়াই ঘন্টা হয়। দৌড়াতে পারলে তো খুবই ভালো। যদি ইফতারের আগে ব্যায়াম করতে চান সেটাও ভালো। যারা সকালে ইয়োগা বা জগ ব্যায়াম করতে চান,সেটা করতে পারেন। মোটকথা সুস্থ থাকতে শরীর চর্চা চালিয়ে যেতে পারেন।আমি মোট চারটি বিষয় নিয়ে আলোচনা করলাম ইফতার ,সেহেরী, পানি শূন্যতা ও ব্যায়াম।এই চারটি বিষয়ে মনোযোগ দিলে আশা করছি আপনার একটি স্বাস্থ্যকর রমজান কাটবে। আপনার ও আপনার পরিবারের বাড়ির সুস্বাস্থ্য কামনা করছি।

  • বাসায় কেউ করোনা আক্রান্ত হলে যে নিয়ম মেনে চলতে হবে

    বাসায় কেউ করোনা আক্রান্ত হলে যে নিয়ম মেনে চলতে হবে

    বাসায় কেউ করো না আক্রান্ত হলে তার জন্য যদি আলাদা রুম ভাড়া বাথরুমের ব্যবস্থা করা না যায় তাহলে কি কি পদক্ষেপগুলো নিবেন এ বিষয়গুলো আজকে আলোচনা করব। আর শেষে থাকবে বাসায় কেউ করোনা আক্রান্ত হলে অন্যদের মাঝে করনা বিস্তার রোধে কি কি করতে পারেন সেই পরামর্শ । প্রথমে বলবো অসুস্থ ব্যক্তির সাথে একই রুমে থাকার বিষয়ে ,তারপরে বলবো বাথরুম শেয়ার করার উপায় আর সবশেষে থাকবে বাসায় করোনা বিস্তার রোধে কিছু সাবধানতার কথা। 

    শুরু করছি রুম শেয়ার করার ব্যাপারে চারটি পরামর্শ নিয়ে। 

    এক, রোগীর সাথে এক রুমে থাকা অবস্থায় দুইজনেই সার্জিকাল মাক্স পড়ে থাকবেন।আর চেষ্টা করবেন রোগের রুমে যত কম সময় কাটানো যায়।

    দুই ,রোগীর সাথে এক বিছানায় ঘুমাবেন না। রোগী যেখানে আছে তার থেকে অন্তত ছয় ফিট দূরে আপনার ঘুমানোর জায়গা করবেন।সম্ভব হলে রুমে আরেকটা খাট রাখতে পারেন,অথবা মেঝেতে বিছানা পেতে নিবেন।রোগীর যেখানে মাথা আপনার খাটের পা 

    সেদিকে থাকবে। 

     তিন,রোগী যে বিছানায় আছে তার পাশে একটা পর্দা বা আবরণ তৈরি করবেন।সেটা  চাদর দিয়ে হতে পারে,কাথা দিয়ে হতে পারে ,এখানে আপনাকে সৃজনশীল চিন্তা করতে হবে।

    চার, রুমে বাতাস ঢুকতে ও বের হতে পারে এমন ব্যবস্থা করবেন।জানালা খুলে এটা করা সম্ভব। 

    এখন আসছি বাথরুম নিয়ে আলোচনায়। 

    বাসায় যদি দুইটা বাথরুম থাকে তাহলে একটা বাথরুম অসুস্থ ব্যক্তি ব্যবহার করবে আর অন্য বাথরুম বাকি সবার জন্য। কিন্তু বাসায় যদি বাথরুম একটাই থাকে তাহলে সবাইকে একটা বাথরুম ভাগাভাগি করে ব্যবহার করতে হবে। এই ক্ষেত্রে দুইটা সাবধানতার কথা মাথায় রাখবেন। 

    এক ,অসুস্থ ব্যক্তি বাথরুম ব্যবহার করবেন অন্যরা ব্যবহার করার পর। অসুস্থ ব্যক্তি বাথরুমে যাবে সবার শেষে। রোগীর জিনিসপত্র যেমন দাঁত মাজার ব্রাশ করোনা ছড়াতে পারে সেগুলো বেসিনের না রেখে একটা ব্যাগে ভরে রাখবেন। 

    দুই ,প্রতিবার বাথরুম ব্যবহারের পরে যে জায়গাগুলো হাত দিয়ে ধরেছেন সেগুলো  পরিষ্কার করতে হবে আর জীবনমুক্ত করতে হবে। 

    এবার বলি যে পাঁচ উপায়ে বাসায় করোনা ছড়ানো প্রতিরোধ করবেন।

    এক, যতদূর সম্ভব রোগীকে বাকিদের থেকে আলাদা রাখতে হবে।বিশেষ করে করোনা   হলে যাদের ঝুঁকি বেশি যেমন বয়স ৭০ এর উপরে,রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কম বা অন্যান্য রোগে আক্রান্ত যেমন ডায়াবেটিস হার্টের রোগ ইত্যাদি,তাদের থেকে রোগী অন্তত পক্ষে ছয় ফিট দূরত্ব বজায় রাখবেন। রোগীর কাছে যাবার দায়িত্ব বাসায় যে কোনো একজনকে দিবেন। বয়সে তরুণ অন্যান্য রোগ নয় এমন কেউ হলে ভালো হয়।আর এই পরিচর্যাকারি ব্যক্তি বাসার অন্যদের সংস্পর্শে আসার কমাবে যতটুকু সম্ভব। রোগীর কাছে গেলে সার্জিক্যাল  মাক্স পরে যাবেন। রোগীর জন্য গ্লাস ,প্লেট,চাদর তোয়ালে ইত্যাদি নিত্য ব্যবহার যে জিনিস সব আলাদা করে ফেলুন। একই জিনিস ভাগাভাগি করে ব্যবহার করবেন না। 

    তিন ,যিনি অসুস্থ তিনি যাতে রান্নাবান্না সাহায্য না করেন, তার খাবারটা রুমের দরজার বাইরে কেউ দিয়ে যাবে ,সে চলে গেলে রোগী খাবারটা রুমের ভিতরে নিয়ে এসে খাবে। 

    চার, কোন প্রয়োজনে রোগী রুম থেকে বের হয়ে বাসার অন্য কোথাও যেতে হয় যেমন বাথরুমে যাওয়া লাগল তখন অন্য কারো সংস্পর্শে আসার সম্ভাবনা থাকে,তাই একটা সার্জিক্যাল মাক্স পরে রুম থেকে বের হওয়া।আর একটা কাজ করতে পারেন বাসার  সবাইকে নিয়ে ফেসবুক বা হোয়াটসঅ্যাপে একটা গ্রুপ খুলে নিতে পারেন রুম থেকে বের হওয়ার আগে সেখানে একটা মেসেজ করে দিলেন।আবার রুমে ফিরে সবাইকে জানিয়ে  দিলেন।তাহলে বাসার অন্যরা সে সময়টাতে সতর্ক থাকতে পারবে।

    পাঁচ, রোগী নিজের রুম আর বাথরুম প্রতিদিন নিজে পরিষ্কার করবেন।যেসব জায়গা বেশি বেশি স্পর্শ করেছে যেমন টেবিল দরজার হাতল ইত্যাদি পরিষ্কার করতে হবে। নিয়মিত হাত ধুতে হবে। 

    এই সময়ে বাসায় যাতে মেহমান না আসে।করানোর সময় এটা করলে বিপরীত হতে পারে। পারলে ফোন করে রোগীর খোঁজ দিবেন। ভিডিও কলের মাধ্যমে খোঁজ নিতে পারেন। সোশ্যাল মিডিয়া ব্যবহার করুন খোঁজ নিলে রোগীর ভালো লাগবে। 

    নিরাপদে থাকবেন।

  • মাসিকের কতদিন পরে সহবাস করলে সন্তান হয়?

    মাসিকের কতদিন পরে সহবাস করলে সন্তান হয়?

    আজকে  আলোচনা করব কখন সহবাস করলে সন্তান ধারণের সম্ভাবনা সবচেয়ে বেশি থাকে? প্রতিমাসে মেয়েদের সাদা স্রাবের চার রকমের অবস্থা দেখা যায়। প্রথম প্রকারের অবস্থায় সহবাস করলে সন্তান ধারণের সম্ভাবনা খুবই ক্ষীন থাকে।তার পরের দুই ধরনের অবস্থায় সন্তান ধারণের সম্ভাবনা একটু করে বাড়তে থাকবে। চতুর্থ এক ধরনের সাদা স্রাব আছে যেটা দেখা দেয়ার সময় সহবাস করলে সন্তান ধারণের সম্ভাবনা থাকে সবচেয়ে বেশি।

    এখন এই চার ধরনের সাদা স্রাব কিভাবে চিনতে পারবেন?

    প্রথম অবস্থা হচ্ছে মাসিকের ঠিক পরে যখন কোন সাদা স্রাব যায় না। মাসিকের রাস্তাটা খুব শুকনো শুকনো মনে হয়,তখন গর্ভধারণের সম্ভাবনা প্রায় শূন্যের কাছাকাছি ০.৩ শতাংশ।এর পরের অবস্থায় মাসিকের রাস্তা হালকা ভেজা মনে হয় কিন্তু আপনি চোখে কোন সাদা স্রাব দেখেন না বাঁ হাতেও ধরতে পারেন না, তখন গর্ভধারণের সম্ভাবনা থাকে এক শতাংশের একটু বেশি এক দশমিক তিন শতাংশ। প্রথম এই দুই অবস্থা সবার মধ্যে দেখা যায় না। বিশেষ করে যাদের মাসিকের সার্কেল ছোট তাদের ক্ষেত্রে এই দুই অবস্থায় মাসিকের সময়ই হয়ে যেতে পারে। তৃতীয় ও চতুর্থ অবস্থা যেটা বলবো যেটা প্রায় সবার ক্ষেত্রেই দেখা যায়। তৃতীয় অবস্থায় ঘন ও আঠালো সাদা স্রাব যায়,যেটা আঙ্গুলের সাথে আঠালো হয়ে লেগে থাকে তখন গর্ভধারণের সম্ভাবনা বেড়ে আড়াই শতাংশের কাছে চলে আসে।চতুর্থ অবস্থায় সাদা স্রাব খুব পাতলা ও পিচ্ছিল হয়,কাঁচা ডিমের সাদা অংশ যেমন পিচ্ছিল হয়,দেখতে স্বচ্ছ হয় ,যেটা টেনে বড় করা যায়,কয়েক ইঞ্চি বড় করলেও ভাঙ্গে না,অসাধারণের সম্ভাবনা অনেক বেড়ে যায়। ২৮.৬ শতাংশ অর্থাৎ প্রায় ৩০ শতাংশের এর কাছাকাছি চলে আসে। এই চতুর্থ অবস্থা শেষ হওয়ার পর আবার সাদা স্রাব ঘন আঠালো বা নাই হয়ে যায়, মাসিকের ঠিক আগে আগে আবার পাতলা সাদাস্রাব যেতে পারে কিছু কিছু নারীর ক্ষেত্রে তবে সেটা গর্ভধারণের সাথে সম্পর্কিত নয়। 

    তাহলে করণীয় কি? 

    তৃতীয় অবস্থা যখন শুরু হবে তখন থেকে চেষ্টা শুরু করবেন,এবং চতুর্থ অবস্থায় যেদিন শেষ হবে তারপরে তিনদিন পর্যন্ত চেষ্টা চালিয়ে যাবেন। চতুর্থ অবস্থায় সম্ভাবনা সবচেয়ে বেশি থাকে। 

    এই গেল প্রথম পদ্ধতি আরো কয়েকটা সহজ উপায় যেটা বলবো। কারণ সবার শরীর তো এক ভাবে কাজ করে না।  নানা কারণে সাদাস্রাব ভিন্ন হতে পারে কয়েকটা পদ্ধতি যদি বুঝে নেন তাহলে একটা না একটা আপনাকে সঠিক সময় বুঝতে সাহায্য করবে। দ্বিতীয় পদ্ধতিতে চলে যায়, যা হলো শরীরের তাপমাত্রা মাপা। মাসিকের সময়ে আর মাসিকের পর পর শরীর এর তাপমাত্রা কিছুটা কম থাকে। যখন ডিম্বাশয় থেকে ডিম্বানু বের হয় অর্থাৎ ডিমটা ফুটে তখন একজন নারী শরীরের তাপমাত্রা খানিকটা বেড়ে যায়। না মাপলে সাধারণত এটা বোঝা যায় না কারণ খুব সামান্য পরিমাণে বাড়ে। ০.২ডিগ্রি সেলসিয়াস বা ০.৪ ডিগ্রি ফরেনহাইট এর মত। আপনি যদি প্রতিদিন শরীরের তাপমাত্রা মাপতে থাকেন তাহলে কখন বেড়ে গেল সেটা আপনি ধরতে পারবেন।

    এক্ষেত্রে একটা রুল মনে রাখবেন ছয়ের পরে   তিন। টানা ৬ দিন কম তাপমাত্রার পরে টানা ৩ দিন বেশি তাপমাত্রা থাকতে হবে। একদিন তাপমাত্রা এসে সেটা আবার চলে গেলে তা হবে না। সেটা মানসিক চাপ বা অন্য কোন কারণে হতে পারে। এই যে টানা বেশি তাপমাত্রা শুরু হলো,এটা শুরু হওয়ার তৃতীয় দিন পর্যন্ত ফার্টিল উইন্ডো থাকে। এই বেশি তাপমাত্রা যতদিনই থাক ধরে নেবেন তিনদিন পরে ফার্টিল উইন্ডো শেষ। কিছু নিয়ম মেনে তাপমাত্রা মাপতে হবে।যখন তখন মাপলে হবে না।কখন মাপবেন?

    ঘুম থেকে ওঠার পরে কোন কিছু করার আগে,বিছানায় থাকা অবস্থাতেই তাপমাত্রা মাপবেন।প্রতিদিন একই সময়ে মাপতে চেষ্টা করবেন। অর্থাৎ নিয়মিত একই সময়ে ঘুম থেকে ওঠার অভ্যাস করতে হবে। বিছানার কাছেই থার্মোমিটার রেখে দিবেন। আবার আমরা অনেকেই বগলের নিচে তাপমাত্রা মাপি।এখানে সেটা করলে হবে না।মুখের তাপমাত্রা মাপতে হবে।থার্মোমিটার জিভবার নিচে রেখে মুখ বন্ধ করবেন। জ্বর মাপার সাধারণত থার্মোমিটার দিয়ে মাপলে এত সূক্ষ্ম পরিবর্তন বোঝা যাবে না। তাই ডিজিটাল থার্মোমিটার ব্যবহার করবেন।বিভিন্ন ফার্মেসিতে অল্প খরচে কিনতে পাওয়া যায়। এই পদ্ধতিতে ফার্টিল উইন্ডো কখন শুরু হয় বোঝা যায় না। তবে কখন শেষ হচ্ছে সেটা বোঝা যায়।

     তাহলে এটা কিভাবে কাজে লাগাবেন?

    সেটা ব্যবহার করে সাদাস্রাব যাওয়া যেদিন শুরু হয়েছে সেদিন থেকে চেষ্টা শুরু করবেন। আর এই পদ্ধতিতে তাপমাত্রা বাড়ার তৃতীয় দিন পর্যন্ত চেষ্টা চালিয়ে যাবেন। তাহলে গর্ভধারণের সবচেয়ে সম্ভাবনাময়ী সময়টুকু কাজে লাগানো হলো।পরের পদ্ধতিতে যাওয়ার আগে একটু বোঝায়। কেন মাসের একটা সময় সন্তান ধারণের সম্ভাবনা এত বেড়ে যায়? 

    একটা নারীর শরীরে দুইটা ওভাড়ি বা ডিম্বাশয় থাকে। প্রতিমাসে এখানে একটা করে ডিম্বানু পরিপক্ক হয়।। যখন ডিম্বানু পরিপক্ক হয়ে যায়,তখন সেটা খোলস ভেঙ্গে  ওভাড়ি থেকে বের হয়ে ঢুকে ফেলোপিয়ান টিউব বা ডিম্বনালীতে। এই ঘটনাকেই আমরা ডিম ফুটে বেরিয়ে আসা বলি। যে ডিম্বানুটা বের হয়ে আসলো এটা এখন সন্তানধারণে সক্ষম। ফেলোপিয়ান টিউব বা ডিম্বনালীতে যদি পুরুষের শুক্রাণু আগে থেকে এসে বসে থাকে তাহলে সেটা ডিম্বানুর সাথে মিলিত  হয়। আর ডিম্বানু আর শুক্রাণুর মিলন হলে কেবল তা গর্ভধারণ এ সক্ষম।আর যদি শুক্রাণু মিলিত না হয়,ডিম্বাদু একা একা জরায়ুতে এসে পৌঁছায়,তাহলে আর কয়েকদিন পরে জরায়ু তার গায়ের মোটা প্রলেপ ঝেড়ে ফেলে। সেখান থেকে রক্তক্ষরণ হয়। এই ঘটনাকেই  আমরা বাইরে থেকে মাসে মাসে ঋতুস্রাব বা মাসিক হিসেবে দেখে থাকি। এটাই সাধারণভাবে ঘটে। এর বাইরেও কিছু ব্যাপার আছে,তবে এখানকার আলোচনার জন্য সেটা বোঝার প্রয়োজন নেই। এখন খেয়াল করেন নারীর দেহে পুরুষের শুক্রানু সাধারণত তিন দিন বাঁচে,কিছু কিছু ক্ষেত্রে সাত দিন পর্যন্ত বাঁচতে পারে। কিন্তু একটা পরিপক্ক ডিম্বাণু থাকে সর্বোচ্চ ২৪ ঘন্টা। তার মানে ডিম্বানু খুব অল্প সময়ের জন্য থাকে। তাই ডিম্বাণু যেই কয়েক ঘন্টা আছে,এই সময়টা আমাদেরকে ব্যবহার করতে হবে। না, হলে গর্ভধারণ হবে না। যেহেতু পুরুষের শুক্রানুর নারীর দেহে কয়েকদিন বেঁচে থাকতে পারে। তাই শুক্রাণুকে আগে আগে গিয়ে বসে থাকতে হবে ডিম্বাণুর জন্য। যাতে ডিম্বানু বের হলেই শুক্রাণু গিয়ে তার সাথে মিলিত হতে পারবে। অর্থাৎ ডিম্বাণু বের হওয়ার আগের কয়েকদিন যদি সহবাস করা হয়,তাহলে শুক্রাণু ঠিক সময়ে ঠিক জায়গায় থাকার  সম্ভাবনা বাড়ে। আর এই কয়েকটা দিনকেই বলে ফার্টিল উইন্ডো। এটাই আমরা বিভিন্ন হিসেব এর মাধ্যমে ধরার চেষ্টা করছি। এখন আবারো চলে যায়  ফার্টিল উইন্ডো চেনার পদ্ধতিতে।

    এখন খুব সহজ একটা উপায় বলবো তবে এটা তুলনামূলকভাবে একটু কম নির্ভরযোগ্য। এই পদ্ধতি ব্যবহার করবেন যদি আপনার মাসিক নিয়মিত হয়। একদম কাটায় কাটায় একমাস পরপর মাসিক হতে হবে এমন না। যদি ২৬ থেকে ৩২ দিন পর পর মাসিক হয় তাহলে এই পদ্ধতি ব্যবহার করতে পারবেন। এই পদ্ধতি অনুযায়ী মাসিক শুরু হওয়ার পর আট নাম্বার দিন থেকে ১৯ নাম্বার দিন পর্যন্ত আপনার ফার্টিল উইন্ডো। অর্থাৎ যদি এক তারিখে মাসিক শুরু হয়,তাহলে ৮ তারিখ থেকে ১৯ তারিখ পর্যন্ত সময়টাতে আপনার গর্ভধারণের সম্ভাবনা বেশি থাকবে। তবে শুধুমাত্র এই পদ্ধতি ব্যবহার না করে সাথে অন্য পদ্ধতি ও মিলিয়ে ব্যবহার করার চেষ্টা করবেন। কারন সব সময় যে ৮ নাম্বার থেকে ১৯ নাম্বার দিনের মধ্যেই ডিম্বাণু বের হবে এমন নয় ,এজন্যই অন্য পদ্ধতি গুলো বুঝিয়েছি। অন্য আরেকটি পদ্ধতিটা হল ক্যালেন্ডার এর তারিখ হিসেব রাখা। প্রথম যেদিন মাসিক হয় সে তারিখটা ক্যালেন্ডারের দাগ দিয়ে রাখবেন। মাসিক কবে শেষ হলো সেটা দাগানোর প্রয়োজন নাই।এরপরে আবার যেদিন মাসিক শুরু হবে ক্যালেন্ডারে সেই তারিখটা দাগ দিবেন। এই দুইটা তারিখের মধ্যে যতদিন পার্থক্য সেটা আপনার মাসিকের সাইকেলের দৈর্ঘ্য। ধরেন আপনার মাসিক শুরু হলো ১ তারিখ,তারপর আবার মাসিক হলো সেই মাসের এই ২৯ তারিখ। তাহলে এক তারিখ থেকে সাইকেল শুরু হয়েছে ২৮ তারিখে শেষ ২৯ তারিখে আবার নতুন সাইকেল শুরু। তাহলে এবার আপনার সাইকেল ছিল ২৮ দিনের। এভাবে অন্তত ছয় মাস ধরে আপনার মাসিক এর হিসাব রাখতে হবে। সবগুলো দৈর্ঘ্য হয়তো একই হবে না। কোন তার আজ ব্যক্তির ৩৩ দিন কোনটার ছাব্বিশ দিন। যখন ছয়টা দৈর্ঘ্য আপনি পেয়ে গেছেন,তার মধ্যে সবচেয়ে লম্বা আর সবচেয়ে ছোট সাইকেল দুটো আপনি নিবেন। সবচেয়ে ছোট সাইকেল থেকে ১৮ বিয়োগ করলে যেই সংখ্যাটা পাবেন ,আপনার সাইকেলের সেই দিন থেকে ফার্টিল উইন্ডো শুরু। আর সবচেয়ে লম্বা সাইকেল থেকে ১১ বিয়োগ করলে যে সংখ্যাটা আসবে সেই দিন আপনার ফার্টিল উইন্ডো এর শেষ দিন।একটা উদাহরণ দিয়ে বোঝাই।ধরা যাক আপনার সবচেয়ে ছোট সাইকেল হচ্ছে ২৬ দিনের। এখান থেকে ১৮ বিয়োগ করলে হল ৮। অর্থাৎ আপনার সাইকেলের অষ্টম দিন থেকে ফার্টিল উইন্ডো শুরু।তাহলে মাসিক শুরু হওয়ার পরে আট নাম্বার দিন থেকে ২২ নাম্বার দিন পর্যন্ত হলো আপনার ফার্টিল উইন্ডো।এর যেকোনো একদিন আপনার ওভারি থেকে ডিম্বাণু বের হওয়ার সম্ভাবনা আছে। এই সময়টা সহবাস করলে শুক্রাণু  আগে আগে গিয়ে ডিম্বাণুর জন্য বসে থাকতে পারবে।

    মাসিকের সাইকেল হিসাব করার সময় সাধারণত দুইটা ভুল যায়। 

    এক, মাসিক শেষ হওয়ার দিন থেকে অনেকেই গোনা শুরু করে। কিন্তু হিসাব করতে হবে যেদিন মাসিক শুরু হল সেই দিন থেকে।

    দুই, অনেকের পরের মাসিক শুরু হওয়া দিনটাও গনে।পরের মাসিক যেদিন শুরু হলো সেদিন থেকে নতুন সাইকেলের হিসাব করতে হবে। ফার্টিল উইন্ডো চেনার আরো অন্যান্য কিছু উপায় আছে। বাজারে অভিউলেশন কিট পাওয়া যায় সেগুলো কিছুটা প্রেগনেন্সি টেস্ট এর মত। প্রসাবে হরমোন এর লেভেল মেপে বলে দেয় কখন ডিম্বাণু বের হয়ে আসতে পারে। সেগুলো ব্যবহার করতে পারেন তবে দাম তুলনামূলক ভাবে বেশি।মোবাইল ফোনে কিছু app পাওয়া যায় যেমন  clue ,glow ইত্যাদি। মাসিকের তারিখ বসালে তারা  উইন্ডো হিসাব করে দেয়।তবে এই সবগুলো অ্যাপ নির্ভরযোগ্য নয়। ব্যবহার করলে আপনার সাইকেলের দৈর্ঘ্য সম্পর্কে একটা ধারণা পাবেন। এছাড়াও ডিম্বানু বের হওয়ার পরে  তলপেটে ব্যথা হতে পারে,পেট ফাঁপা লাগতে পারে। তবে এই লক্ষণ গুলো ব্যবহার করে  উইন্ডো বের করা নির্ভরযোগ্য নয়। সবার ফার্টিল উইন্ডো একই সময় হয় না। আবার একই মানুষের ক্ষেত্রে এক এক মাসে এক এক সময় হতে পারে,মাসিক নিয়মিত হলেও। তাই নিজের শরীরের লক্ষণ গুলো যেমন তাপমাত্রা, সাদাস্রাব,এগুলোর দিকে খেয়াল রাখলে সময়টা আরো ভালোভাবে চিনতে পারবেন। যতগুলো পদ্ধতি বললাম,এগুলোর কোনটাই একদম নিশ্চিত করে বলতে পারবে না যে এই সময়েই ডিম্বাশয় থেকে ডিম্বাণু বের হয়ে এসেছে এবং এর মধ্যে সহবাস করলে বাচ্চা হবে। তবে পদ্ধতি গুলো অনুসরণ করলে বিশেষ করে কয়েকটা পদ্ধতি সমন্বয় করলে,সন্তান ধারণের সম্ভাবনা অনেকটা বাড়বে। মনে রাখবেন নিয়মিত সহবাস করলে অর্থাৎ একদিন বা দুইদিন পর পর সহবাস করলে এক বছরের মধ্যে ৮০ শতাংশের বেশি দম্পতি সফল হন। তাই তিন চার মাস চেষ্টা করে সফল না হলে ঘাবড়ে যাবেন না।এক বছর নিয়মিত চেষ্টা করার পরে সফল না হলে ডাক্তারের পরামর্শ নিবেন। আর নারীর বয়স যদি ৩৫ এর বেশি হয়,তাহলে ৬ মাস চেষ্টা করার পরেই ডাক্তারের শরণাপন্ন হবেন। 

    আপনার সফলতা কামনা করছি। 

    নিরাপদে থাকবেন।

  • বাচ্চা নেয়ার সবচেয়ে ভালো বয়স কত?

    বাচ্চা নেয়ার সবচেয়ে ভালো বয়স কত?

    প্রথমবার বাচ্চা নেওয়ার সঠিক সময় কখন — এই প্রশ্নের উত্তরে অনেকেই হয়তো শুনে থাকবেন যে ৩০ বছর বয়সের আগে বাচ্চা নিয়ে নেওয়া উচিৎ। তবে মোটা দাগের এই উত্তরটি সবার জন্য প্রযোজ্য নয়। একটি দম্পতি কয়টি বাচ্চা চান, তার উপরে ভিত্তি করে বাচ্চা নেওয়ার বয়সটাও ভিন্ন হবে।

    একটি সন্তান চাইলে যে বয়সে বাচ্চা নেওয়ার চেষ্টা শুরু করা প্রয়োজন, তিনটি নিতে চাইলে তার অনেক আগে থেকেই চেষ্টা করতে হবে। এছাড়া সন্তান ধারণে সমস্যা হওয়ার সম্ভাবনা থাকতে পারে এমন উপসর্গগুলো লক্ষ করা গেলে আগে থেকেই ব্যবস্থা নেওয়া উচিত, তাছাড়া একটি দম্পতির জীবনের লক্ষ্য, পড়াশোনা, ক্যারিয়ার, আর্থিক অবস্থা — এমন অনেকগুলো ব্যক্তিগত বিষয়ের ওপরে সন্তান নেওয়ার আদর্শ সময় নির্ভর করে। সবদিক বিবেচনা করার পর সিদ্ধান্তটা একান্তই আপনার এবং আপনার সঙ্গীর। সিদ্ধান্তটি সহজ করতে বিভিন্ন পরিপ্রেক্ষিতে যে বয়সে বাচ্চা নেওয়ার চেষ্টা শুরু করা উচিত, সেই বিষয়টি চিকিৎসা বিজ্ঞানের দৃষ্টিকোণ থেকে এখানে তুলে ধরা হয়েছে।

    • বয়স অনুযায়ী ক্ষমতা
    • সঠিক বয়স
    • গর্ভধারণে সমস্যা বুঝা
    • পুরুষদের ক্ষমতা

    বাচ্চা নেওয়ার ক্ষমতা কোন বয়স থেকে এবং কত দ্রুত কমে?

    পুরুষের ক্ষেত্রে ৫০ বছর বয়সের আগে প্রজনন ক্ষমতা খুব একটা কমে না। তবে নারীদের ক্ষেত্রে সন্তান ধারণের ক্ষমতা বয়সের সাথে সাথে অনেকটা কমে যায়। একজন নারীর বয়সের সাথে সন্তান ধারণের সম্ভাবনার সম্পর্ক।

    একটি ছেলে শিশু শরীরে শুক্রাণু নিয়ে জন্মায় না, বয়ঃসন্ধিকালে দেহে শুক্রাণু তৈরি হওয়া শুরু হয়। একজন প্রাপ্তবয়স্ক পুরুষের শরীরে প্রতিদিন প্রায় ৩০ কোটি শুক্রাণু তৈরি হয়।

    অপরদিকে, একটি মেয়ে শিশু জন্মের সময়ে নির্দিষ্টই সংখ্যক ডিম্বাণুগুলো নিয়ে জন্মে। সেটাই পরবর্তী জীবনে তার সন্তান ধারণের পুঁজি। প্রতি মাসিক চক্রে একটি করে ডিম্বাণু পরিপক্ব হয়, এর সাথে আরো কিছু ডিম্বাণু এই প্রক্রিয়ায় পরিপক্ব হওয়ার আগেই নষ্ট হয়ে যায়। ফলে বয়সের সাথে সাথে ডিম্বাণুর সংখ্যা কমতে থাকে।

    যেহেতু জন্মের পরে নারীদের শরীরে নতুন করে কোনো ডিম্বাণু তৈরি হয় না, তাই বয়স বাড়ার সাথে সাথে তাদের প্রজনন ক্ষমতা কমতে থাকে। জন্মগ্রহণের সময়ে একজন মেয়ে শিশুর ডিম্বাশয়ে প্রায় ১০ লাখ থেকে ২০ লাখ ডিম্বাণু থাকে, ৩৭ বছর বয়সে তা কমে মাত্র ২৫,০০০ হাজারে গিয়ে পৌঁছে।

     ২০ থেকে ৩০ বছর বয়স পর্যন্ত একজন নারীর সন্তান ধারণের ক্ষমতা যেহেতু প্রায় একই রকম থাকে, তাহলে ৩০ বছর বয়সে বাচ্চা নেওয়ার চেষ্টা শুরু করলেও হবে। তবে ব্যাপারটা তেমন নয়। একটি দম্পতি কয়টা সন্তান নিতে চান সে সংখ্যা অনুযায়ী আরও আগে চেষ্টা শুরু করতে হতে পারে।

    কোন বয়স থেকে বাচ্চা নেওয়ার চেষ্টা করা উচিত?

    যে দম্পতি ১টি সন্তান চান, তারা যদি ৩২ বছর বয়সে বাচ্চা নেওয়ার চেষ্টা  শুরু করেন, তাহলে তাদের সফলতার সম্ভাবনা থাকে ৯০ শতাংশ। এর পর থেকে সেই সম্ভাবনা আস্তে আস্তে কমে যাবে। ৩৭ বছর বয়সে গর্ভধারণের সম্ভাবনা নেমে আসে ৭৫ শতাংশে। আর ৪১ বছর বয়সে তা ৫০ শতাংশে নেমে যায়।

    ২টি সন্তান নিতে চাইলে, ২৭ বছর বয়সে চেষ্টা শুরু করলে সফলতার সম্ভাবনা থাকে ৯০ শতাংশ। ৩৪ বছর বয়সে সেই সম্ভাবনা কমে ৭৫ শতাংশে চলে যায়। আর বয়স যদি ৩৮ বছর হয়ে যায়, তবে বাচ্চা হওয়ার সম্ভাবনা নেমে আসে ৫০ শতাংশে।

    ৩টি সন্তান নিতে চাইলে, ২৩ বছর বয়সে চেষ্টা করতে শুরু করলে সফলতার সম্ভাবনা থাকে ৯০ শতাংশ। ৩১ বছর বয়সে বাচ্চা নেওয়ার চেষ্টা শুরু করলে সেই সম্ভাবনা কমে ৭৫ শতাংশে আসে। আর ৩৫ বছর বয়সে গিয়ে সম্ভাবনা থাকে ৫০ শতাংশ।

    সহজে বোঝার জন্য নিচের তালিকাটি দেখুন। এখানে একটি, দুটি বা তিনটি সন্তান নেওয়ার জন্য নারীর সর্বোচ্চ যে বয়সে বাচ্চা নেওয়ার চেষ্টা করলে শতকরা ৫০, ৭৫ ও ৯০ শতাংশ সাফল্য মিলবে তা তুলে ধরা হয়েছে।

    সন্তান ধারণে সফল হওয়ার সম্ভাবনাএক সন্তানের জন্য সর্বোচ্চ বয়সদুই-সন্তানের জন্য সর্বোচ্চ বয়সতিন-সন্তানের জন্য সর্বোচ্চ বয়স
    ৫০%৪১৩৮৩৫
    ৭৫%৩৭৩৪৩১
    ৯০%৩২২৭২৩
    যে বয়সে বাচ্চা নেওয়ার চেষ্টা করলে শতকরা শতাংশ

    সিদ্ধান্ত সম্পূর্ন আপনার ও আপনার সঙ্গীর

    সন্তান গ্রহণের ক্ষেত্রে ৯০ শতাংশ সফলতার সম্ভাবনা চাইবেন, নাকি ৭৫ বা ৫০ শতাংশ – এটা একান্তই একটি দম্পতির নিজস্ব সিদ্ধান্ত। কিছু কিছু দম্পতির কাছে সন্তান নেওয়াই সব থেকে গুরুত্বপূর্ণ, এজন্য তারা সব ধরনের চেষ্টা করতে রাজি থাকেন। তারা হয়তো ৯০ শতাংশ সম্ভাবনা থাকার সময়টাকে বেছে নেবেন। আবার কেউ কেউ জীবনের বিভিন্ন অবস্থা বিবেচনা করে ৭৫ শতাংশ সম্ভাবনা থাকার সময়টাকে বেছে নেন। সব দিক বিবেচনা করে বাস্তবসম্মত ধারণা নিয়ে আপনাকে সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে সাহায্য করাই আর্টিকেলটির উদ্দেশ্য।

    সন্তান ধারণে সমস্যা হওয়ার সম্ভাবনা থাকলে লক্ষণগুলো সম্পর্কে সচেতন হয়ে আগে থেকে ব্যবস্থা নেওয়া উচিত। এই লক্ষণগুলো নিচে তুলে ধরা হলো যাতে আপনার অবস্থার সাথে মিলিয়ে নিতে পারেন।

    কিভাবে বুঝবেন গর্ভধারণে সমস্যা হতে পারে?

    সন্তান ধারণে সমস্যা হওয়ার সম্ভাবনা আছে কি না সে ব্যাপারে ধারণা পেতে নিচের লক্ষণগুলো জেনে নিন। এসব লক্ষণ থাকলে আগে থেকেই ব্যবস্থা নেওয়া ভালো। লক্ষণগুলো দেখা দিলেই যে সন্তান হবে না এমন নয়। এগুলো সমস্যা দেখা দেয়ার সম্ভাবনা মাত্র।

    এমন লক্ষণ দেখা দিলে কিছু পরীক্ষা নিরীক্ষা করতে হতে পারে, কারও ক্ষেত্রে একটু আগে থেকেই সন্তান নেওয়ার চেষ্টা করার প্রয়োজন হতে পারে। তবে শুরুতেই ঘাবড়ে যাওয়ার কারণ নেই। দেরী না করে আগে থেকেই চিকিৎসকের সাথে কথা পরামর্শ করে রাখা ভালো।

    গর্ভধারণে সমস্যা হতে পারে এমন ৬টি লক্ষণ হলো—

    • অনিয়মিত মাসিক
    • ৩৫ দিনের চেয়েও দেরীতে মাসিক হওয়া
    • ২১ দিনের আগেই পরবর্তী মাসিক শুরু হওয়া
    • মাসিক বন্ধ হয়ে যাওয়া
    • মাসিকের সময় প্রচুর রক্তক্ষরণ হওয়া
    • মাসিকের সময় প্রচণ্ড ব্যথা হওয়া

    এসব লক্ষণ সাধারণত থাইরয়েডের সমস্যা, পলিসিস্টিক ওভারি সিনড্রোম (PCOS), ফাইব্রয়েড (জরায়ুর টিউমার), এন্ডোমেট্রিয়োসিসের মতো রোগ হলে দেখা যায়। এমন স্বাস্থ্য সমস্যা থাকলে দ্রুত একজন চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।

    পুরুষদের সন্তান নেওয়ার ক্ষমতা

    পুরুষদের প্রজনন ক্ষমতা কমলে সাধারণত বাইরে থেকে কোন লক্ষণ দেখা যায়। তাই স্ত্রীর গর্ভধারণের দিকগুলো ঠিক থাকলেও, অনেকদিন ধরে স্বাভাবিকভাবে সন্তান নেওয়ার, চেষ্টা পরেও সফলতা নাও আসতে পারে। শুক্রাণু পরীক্ষা করার মাধ্যমে পুরুষের প্রজনন ক্ষমতা সম্পর্কে নিশ্চিত হওয়া যায়। এমন সমস্যার ক্ষেত্রে একজন ফার্টিলিটি বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের পরামর্শ নিতে হবে।

  • পায়খানার রাস্তায় ব্যথার ঘরোয়া সমাধান (গেজ বা এনাল ফিশার)

    পায়খানার রাস্তায় ব্যথার ঘরোয়া সমাধান (গেজ বা এনাল ফিশার)

    পায়খানা করার সময় ছুরির ধারের মতো ব্যথা করে,এত ব্যাথা যে বাথরুমে যাওয়াই একটা বিপত্তি।এগুলো এনাল ফিসার নামের রোগের  লক্ষণ ,এগুলোকে আমরা গ্যাজ বলে চিনি।

    এনাল ফিসার একধরণের পায়ুপথের রোগ। পায়খানা করার সময় খুব বেশি জ্বালাপোড়া হওয়া অথবা ছুরির ধারের মত ব্যথা করা — এটি একটি পরিচিত সমস্যা। কারো কারো ক্ষেত্রে এই ব্যথা এতই তীব্র হয় যে নিয়মিত মলত্যাগ করাই তাদের জন্য অসহনীয় হয়ে দাঁড়ায়। এই লক্ষণগুলো সাধারণত এনাল ফিসার রোগের লক্ষণ। বাংলায় এটি গেজ রোগ নামেও পরিচিত।

    পায়ুপথের রোগ বলে অনেকেই এই সমস্যায় দীর্ঘদিন ভোগা সত্ত্বেও সহজে ডাক্তার দেখাতে চান না। ফলে দিন দিন গেজ রোগ জটিল আকার ধারণ করে। একপর্যায় অপারেশন করা ছাড়া এই রোগ প্রতিকারের উপায় থাকে না। অথচ প্রাথমিক গেজ রোগ সম্পর্কে সচেতন হওয়া গেলে খুব সহজেই এই জটিল পরিস্থিতি এড়ানো সম্ভব।

    এনাল ফিসার কী?

    পায়ুপথের পেছনের যেই অংশে মল জমা থাকে তার নাম রেক্টাম বা মলাশয়। মলাশয় থেকে মল বা পায়খানা মলদ্বার দিয়ে বের হয়ে আসে। মলদ্বারের মুখের চারপাশে যেই মাংসপেশি থাকে তাতে চাপ প্রয়োগ করে পায়খানার রাস্তার মুখ বন্ধ করা এবং খোলা যায়।

    মলত্যাগের সময় খুব জোরে চাপ দিলে বা পায়খানা শক্ত হলে মলদ্বারের মুখের চারপাশের চামড়া অনেকসময় ফেটে বা চিড়ে যায়৷ মলদ্বারের এই ক্ষতকে এনাল ফিসার বা গেজ রোগ বলে।

    গেজ রোগ হলে মলত্যাগের সময় এই ফাটা বা চিড়ে যাওয়া অংশে প্রচণ্ড জ্বালাপোড়া বা তীক্ষ্ণ ব্যথা অনুভব হয়। সেই সাথে পায়ুপথের মাংসপেশি টানটান হয়ে যায়। মাংসপেশি টানটান হলে পায়ুপথের মুখটাও সরু হয়ে আসে বা টাইট হয়ে থাকে। ফলে মলত্যাগের প্রক্রিয়াটি ভীষণ কষ্টকর হয়ে দাঁড়ায়।

    চিড়ে যাওয়া স্থানে রক্ত প্রবাহ কমে গেলে ফাটল সারতে দীর্ঘদিন সময় লাগতে পারে। এভাবে অনেকের দীর্ঘমেয়াদি বা ক্রনিক এনাল ফিসারের সমস্যা দেখা দেয়।

    এনাল ফিসারের লক্ষণগুলো কী কী?

    ১. পায়খানার রাস্তায় তীব্র ও ধারালো ব্যথা হওয়া

    এনাল ফিসার বা গেজ রোগের সবচেয়ে সাধারণ লক্ষণ হলো মলত্যাগের সময় মলদ্বারে তীব্র ও ধারালো ব্যথা হওয়া। অনেক সময় রোগীদের মনে হয় যেন পায়ুপথ দিয়ে ধারালো কাঁচের টুকরো বের হচ্ছে। এনাল ফিসারের রোগীদের জন্য এই ব্যথাটাই সবচেয়ে যন্ত্রণাদায়ক। সাধারণত পায়খানার পর মলদ্বারে এই জ্বালা কয়েক ঘণ্টা পর্যন্ত থাকতে পারে।

    ২. পায়খানার সাথে উজ্জ্বল লাল রঙের রক্ত যাওয়া

    পায়খানার গায়ে বা ব্যবহৃত টয়লেট পেপারে তাজা লাল রক্তের ছোপ দেখা যেতে পারে। শুধুমাত্র চামড়ার কিছু অংশ ছিঁড়ে রক্ত যায় বলে এক্ষেত্রে সাধারণত বেশি রক্তপাত হয় না। যেহেতু পায়ুপথের মুখের কাছাকাছিই এই রক্তক্ষরণ হয়, তাই রক্তের রঙ উজ্জ্বল লাল হয়ে থাকে। আরও ভেতর থেকে রক্তক্ষরণ হলে রক্তের রঙ গাঢ় বা কালচে লাল হতো।

    ৩. পায়ুপথে চুলকানি হওয়া

    এনাল ফিসার রোগে পায়খানার রাস্তার মুখে চুলকানি হতে পারে।

    এনাল ফিসার কেন হয়?

    গেজ রোগের সবচেয়ে সাধারণ কারণ হলো কষা পায়খানা বা কোষ্ঠকাঠিন্য। পায়খানা শক্ত হলে অনেকে টয়লেটে যেতে চায় না, কারণ তখন মলত্যাগ করতে কিছুটা কষ্ট হয়। কিন্তু পেটের ভেতর পায়খানা জমিয়ে রাখলে সেটা দিন দিন আরও শক্ত থাকে। একসময় সেই শক্ত পায়খানা বের করতে গেলে পায়ুপথের চামড়া ছিঁড়ে গিয়ে দেখা দেয় এনাল ফিসার।

    গর্ভবতী অবস্থায়, বিশেষ করে শেষ তিন মাসে ও নরমাল ডেলিভারির মাধ্যমে বাচ্চা হওয়ার পরে এনাল ফিসার দেখা দিতে পারে। তবে সেক্ষেত্রে গেজ রোগ হওয়ার পদ্ধতি একটু ভিন্ন।

    কখনও কখনও ডায়রিয়ার কারণেও গেজ রোগ হতে পারে। আরও কিছু অসুখ বা ওষুধের কারণেও এনাল ফিসার হতে পারে। যে সব রোগের কারণে এনাল ফিসার দেখা দিতে পারে

    পরিপাকতন্ত্রের প্রদাহজনিত রোগ বা ইনফ্ল্যামেটরি বাওয়েল ডিজিজ (IBD)

    কোলোরেক্টাল বা পায়ুপথের ক্যান্সার

    যৌনরোগ, যেমন, এইচআইভি, সিফিলিস ও হার্পিস সিমপ্লেক্স

    সোরিয়াসিস নামক ত্বকের প্রদাহজনিত রোগ

    Pruritus ani নামের পায়ুপথের মুখের চুলকানি রোগ

    ভাইরাস, ব্যাকটেরিয়া বা ফাঙ্গাস সংঘটিত চর্মরোগ

    যেসব ওষুধ সেবন করলে পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হিসেবে এনাল ফিসার দেখা দিতে পারে—

    জাতীয় বুকের ব্যথায় ব্যবহৃত নিকোর‍ান্ডিল

    কেমোথেরাপিতে ব্যবহৃত কিছু ওষুধ

    আফিমজাতীয় ব্যথার ওষুধ (Opioids), যেমন ট্রামাডল, টাপেন্টাডল, মরফিন ও পেথিডিন

    মলদ্বারের ব্যথা কমানোর উপায়

    ১. মলত্যাগের পর গরম পানির সেঁক নেয়া

    একটি বোলে বা ডিশে কুসুম গরম পানি নিয়ে সেটাতে কিছুক্ষণ বসতে পারেন, যাতে কোমর থেকে মলদ্বার পর্যন্ত পানির নিচে থাকে। কুসুম গরম পানি মলদ্বারের মাংসপেশিকে রিল্যাক্স বা শিথিল করতে সাহায্য করে, ফলে ব্যথা কমে আসে। একে ইংরেজিতে সিটজ ব্যাথ  বলে।

    শুধু মলত্যাগ করার পরেই এটি নেওয়া করা যাবে, বিষয়টা এমন নয়। দিনে ২ থেকে ৩ বার গরম পানির সেঁক নেওয়া যায়। একটি গবেষণায় দেখা গেছে, যারা এই পদ্ধতি অবলম্বন করেছে গেজ রোগে তারা বেশ স্বস্তি পেয়েছে।

    ২. প্যারাসিটামল সেবন করা

    এনাল ফিসার এর ব্যথা কমানোর ঔষধ হিসেব প্যারাসিটামল খাওয়া যেতে পারে। প্যারাসিটামল সাধারণত ৫০০ মিলিগ্রামের ট্যাবলেট হিসেবে পাওয়া যায়। ব্যথা হলে ২টি ট্যাবলেট, অর্থাৎ, ১০০০ মিলিগ্রাম প্যারাসিটামল একেবারে সেবন করতে পারেন। এভাবে ৪ থেকে ৬ ঘণ্টা পরপর ঔষধ খাওয়া যায়।

    তবে দিনে যাতে ৮টা ট্যাবলেট, অর্থাৎ, ঔষধের পরিমাণ ৪০০০ মিলিগ্রামের বেশি না হয় সেই বিষয়ে সতর্ক থাকতে হবে। উল্লেখ্য, এই হিসাবটি একজন অন্যথায় সুস্থ, প্রাপ্তবয়স্ক মানুষের জন্য, যার ওজন ৫০ কেজির বেশি। আপনার শারীরিক অবস্থা এমনটা না হলে চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে প্যারাসিটামলের সঠিক ডোজ জেনে নিতে হবে।

    প্রয়োজন পড়লে ব্যথার জন্য আইবুপ্রোফেন খাওয়া যায়। তবে রক্তক্ষরণ হলে আইবুপ্রফেন এড়িয়ে চলাই ভালো, কারণ এটি রক্তক্ষরণের ঝুঁকি বাড়ায়।

    তবে ট্রামাডল ও টাপেন্টাডল জাতীয় ব্যথানাশক এড়িয়ে চলতে হবে। ট্রামাডল-টাপেন্টাডল সেবন করলে কোষ্ঠকাঠিন্য হতে পারে। ইতোমধ্যে কোষ্ঠকাঠিন্যের সমস্যা থাকলে এই জাতীয় ব্যথানাশক সেবনে এই সমস্যা গুরুতর.

    ৩. মলদ্বারের মুখে পেট্রোলিয়াম জেলি-জাতীয় পিচ্ছিল করার পদার্থ প্রয়োগ

    পেট্রোলিয়াম জেলি বা অন্যান্য পিচ্ছিলকারী পদার্থ মলদ্বারের মুখে ব্যবহার করা যায়। এতে মলত্যাগের সময় ছেঁড়া জায়গায় ঘর্ষণের মাধ্যমে ব্যথা অনুভব হওয়ার তীব্রতা কমবে। 

    ৪. মলত্যাগের সময় জোরে চাপ দেয়া থেকে বিরত থাকা

    পায়খানা করার সময় জোরে চাপাচাপি করলে গেজ রোগের জায়গাটি আরও ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে ব্যথা তীব্র হয়ে যেতে পারে।

    গেজ রোগের ঘরোয়া চিকিৎসা

    কিছু সাধারণ নিয়ম মেনে চললে এনাল ফিসার প্রতিরোধ করা সম্ভব। এগুলো হলো—

    ১. পায়খানার বেগ আসলে তা আটকে রাখা যাবে না। এতে পায়খানা শক্ত হয়ে কোষ্ঠকাঠিন্য দেখা দিতে পারে। পরবর্তীতে চাপ দিয়ে পায়খানা করতে গেলে সেখান থেকে এনাল ফিসার দেখা দিতে পারে। পায়খানা খুব শক্ত হলে এনাল ফিসার সারতেও দেরি হয়। তাই পায়খানার চাপ আসলে দেরি না করে টয়লেটে চলে যেতে হবে।

    তবে এনাল ফিসারের রোগীদের জন্য পায়খানা করার সময় হওয়া প্রচণ্ড ব্যথাটাই সবচেয়ে কষ্টদায়ক। তাই যথাসময়ে মলত্যাগ করার উপদেশ দেওয়া হলেও তা মেনে চলা কঠিন হয়ে পড়ে। এজন্য পায়খানা নরম রাখতে হবে, এবং উপরের ব্যথা কমানোর উপদেশগুলো মেনে চলতে হবে।

    ২. এনাল ফিসার প্রতিরোধে কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করার কোনো বিকল্প নেই৷ এজন্য কিছু বিষয় মেনে চলা জরুরি। যেমন—

    পর্যাপ্ত পরিমাণে ফাইবার বা আঁশ আছে এমন খাবার খেতে হবে। যেমন – সবুজ শাকসবজি, ফলমূল, ডাল, লাল আটা, লাল চাল ইত্যাদি। কোষ্ঠকাঠিন্য এড়াতে দৈনিক প্রায় ৩০ গ্রাম ফাইবার খাওয়ার পরামর্শ দেয়া হয়। তবে খাবারের তালিকায় ফাইবারের পরিমাণ হুট করে না বাড়িয়ে ধীরে ধীরে বাড়াতে হবে।

    পর্যাপ্ত পরিমাণে পানি পান করতে হবে। বেশি বেশি ফাইবার এর সাথে পরিমাণ মত পানি না খেলে নানান স্বাস্থ্য সমস্যা দেখা দিতে পারে।

    কোষ্ঠকাঠিন্য দেখা দিলে ইসবগুলের ভুসি খেতে পারেন। ভুসি খাওয়ার উপকারিতা ও নিয়ম সম্পর্কে জানতে কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করতে ইসবগুলের ভুসি লেখাটি পড়তে পারেন। 

    নিয়মিত শরীরচর্চা বা হালকা ব্যায়াম করতে পারেন।

    পায়ুপথ সবসময় পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন ও শুকনো রাখতে হবে। মলত্যাগের পর জোরে ঘষাঘষি না করে আলতোভাবে জায়গাটি পরিষ্কার করে নিতে হবে। এর ফলে গেজ রোগ হলেও তা দ্রুত সেরে উঠবে, এবং ইনফেকশন বা পুঁজ জমে ঘা হওয়ার মতো জটিলতা এড়িয়ে চলা সম্ভব হবে। 

    কখন ডাক্তারের পরামর্শ নিবেন? 

    যদি মনে হয় আপনার পায়ুপথে কোনো ফাটল রয়েছে, বা গেজ রোগের কোনো লক্ষণ রয়েছে, তাহলে দেরি না করে ডাক্তার দেখানো উচিত। অনেকে কবিরাজি বা ভেষজ ওষুধ কিংবা এনাল ফিসার এর হোমিও চিকিৎসা দিয়ে এগুলো সারানোর চেষ্টা করতে করতে অনেক দেরি করে ফেলেন, ফলে রোগটি আরও জটিল আকার ধারণ করে। তাই এগুলোর পেছনে সময় ও অর্থ নষ্ট করে নিজের ক্ষতি করবেন না।

    বিব্রত বা সংকোচ বোধ করে ডাক্তার দেখানো থেকে বিরত থাকবেন না। এনাল ফিসার একটি কমন সমস্যা৷ ডাক্তাররা প্রতিনিয়তই এমন অসংখ্য রোগীর চিকিৎসা করেন। অধিকাংশ ক্ষেত্রে এনাল ফিসার চিকিৎসা ছাড়াই ভালো হয়ে যায়। তবে ডাক্তারের কাছে গেলে তিনি একই ধরনের উপসর্গযুক্ত অন্য কোনো সমস্যা যেমন, পাইলস আছে কিনা তা খতিয়ে দেখতে পারবেন।

    এছাড়াও যেসব নিয়ম মেনে চললে আপনার এনাল ফিসারের লক্ষণগুলো উপশম হবে এবং পুনরায় গেজ রোগ হওয়া থেকে রক্ষা পাওয়া যাবে, সে ব্যাপারেও তিনি পরামর্শ দিবেন। আমাদের আর্টিকেলে তুলে ধরা পরামর্শগুলোর পাশাপাশি ডাক্তারের পরামর্শ মেনে চললে দ্রুত গেজ রোগ থেকে মুক্তি পাওয়া যাবে।

    এনাল ফিসার ও পাইলস-এর মধ্যে কিভাবে পার্থক্য করবেন? 

    এনাল ফিসার ও পাইলসের লক্ষণগুলোর মধ্যে কিছুটা মিল থাকলেও এই দুইটি পৃথক দুইটি রোগ। দুটি রোগেই পায়ুপথে চুলকানি হতে পারে এবং টাটকা লাল রক্ত যেতে পারে। তবে এনাল ফিসারে রক্ত খুব অল্প পরিমাণে যায়। পাইলস এবং এনাল ফিসার এই দুইটির মধ্যে মূল পার্থক্য হচ্ছে—

    পাইলস হলে পায়ুপথে নরম গোটার মত দেখা দেয়। গোটাগুলো সাধারণত মলত্যাগের পরে বের হয়ে আসে, আবার কিছু সময় পর নিজে নিজেই ভেতরে ঢুকে যায় অথবা আঙ্গুল দিয়ে ভেতরে ঢোকাতে হয়। এছাড়া পাইলস হলে পায়ুপথে শ্লেষ্মার মতো দেখতে পিচ্ছিল কিছু পদার্থ বের হতে পারে।

    এনাল ফিসার বা গেজ রোগের ক্ষেত্রে সাধারণত এসব লক্ষণ দেখা যায় না। আর এক্ষেত্রে প্রতিবার মলত্যাগের সময়ই তীব্র ব্যথা হয়। পাইলসে সাধারণত ব্যথা হয় না।

    গেজ রোগের অন্যান্য চিকিৎসা 

    ঘরোয়া চিকিৎসা নিয়ে এনাল ফিসার প্রতিরোধের পরামর্শগুলো মেনে চললে প্রায় অর্ধেক রোগীর এনাল ফিসার ভালো হয়ে যায়। বাকিদের আরও চিকিৎসা প্রয়োজন হয়। প্রথমে কিছু ওষুধ সেবন এবং মলম লাগানোর পরামর্শ দেওয়া হয়। এতেও কাজ না হলে এনাল ফিসার অপারেশনের প্রয়োজন হয়।

    গেজ রোগ প্রতিরোধের পরামর্শগুলো সঠিকভাবে মেনে চললে বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই অপারেশনের প্রয়োজন পড়বে না। অভ্যাসে স্বাস্থ্যকর পরিবর্তন আনা কঠিন মনে হতে পারে। যেমন প্রতিবার খাওয়ার সময়ে চিন্তা করতে হবে খাবারে ফাইবার কতটুকু আছে, তার চেয়ে একটি ওষুধ খেয়ে বা অপারেশন করে সমস্যা দূর হয়ে যাওয়া অনেকের কাছেই সহজতর মনে হতে পারে।

    কিন্তু এই রোগ যাতে আবার না হয়, সেজন্য স্বাস্থ্যকর অভ্যাসগুলো গড়ে তোলা জরুরী। অপারেশন করার পরেও ডাক্তার আপনাকে ফাইবারযুক্ত খাবার খাওয়া চালিয়ে যাওয়ার পরামর্শ দিবে। অন্যথায় কোষ্ঠকাঠিন্য হয়ে আবারও গেজ রোগ দেখা দিতে পারে। অর্থাৎ, ঔষধ সেবন ও অপারেশন করলেও, গেজ রোগ বা এনাল ফিসারের স্থায়ী সমাধানে, অভ্যাস পাল্টে সুস্থ জীবনধারা বেছে নেওয়ার বিকল্প নেই। এনাল ফিসারের ঔষধ

    এনাল ফিসারের চিকিৎসায় ডাক্তার অনেক ধরনের ওষুধ সেবনের এবং মলম ব্যবহারের পরামর্শ দিতে পারেন। ওষুধগুলো কেবল চিকিৎসকের পরামর্শক্রমেই সেবন করা উচিত, তা না হলে হিতে বিপরীত হতে পারে।

    গেজ রোগের চিকিৎসায় সবচেয়ে কার্যকর ওষুধগুলোর মধ্যে রয়েছে—

    ১. জোলাপ বা ল্যাক্সেটিভ: এগুলো সিরাপ, ট্যাবলেট বা বড়ি হিসেবে পাওয়া যায়। এই ওষুধগুলো পায়খানায় পানির পরিমাণ ধরে রেখে তা নরম রাখে ও পায়খানা শক্ত হওয়া প্রতিরোধ করে। একেক বয়সের মানুষের বিভিন্ন সমস্যার জন্য ভিন্ন ভিন্ন ওষুধ ব্যবহার করতে হয়। আপনার জন্য উপযুক্ত ওষুধটি বেছে নিতে ডাক্তারের পরামর্শ নিন।

    ২. গ্লিসারাইল ট্রাইনাইট্রেট ও ক্যালসিয়াম চ্যানেল ব্লকার মলম: এগুলো মলদ্বারের ভেতরের ও আশেপাশের পেশি ও রক্তনালীগুলোকে প্রসারিত করে। এর ফলে ফাটলের স্থানে রক্ত সরবরাহ বাড়ে ও তা দ্রুত সেরে ওঠে। সেই সাথে পায়ুপথের ভেতরে চাপ কমে যাওয়ার ফলে ব্যথাও কমে যায়।

    মলম দুটি বেশ কার্যকর। সঠিক উপায়ে ব্যবহার করলে প্রতি ১০ জন ক্রনিক ফিসারের রোগীর মধ্যে ৭ জনের ফাটল সেরে যায়। এগুলো সাধারণত কমপক্ষে ৬ সপ্তাহ বা ফাটল সম্পূর্ণরূপে সেরে না ওঠা পর্যন্ত ব্যবহার করতে হয়। 

    তবে মলমগুলোর বেশ কয়েকটি পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া আছে। তাই ডাক্তারের পরামর্শ ছাড়া ব্যবহার করা একেবারেই ঠিক নয়। এছাড়া শিশু, গর্ভবতী মা বা মাথাব্যথার সমস্যা আছে এমন কারও ক্ষেত্রে বিশেষজ্ঞের পরামর্শ ছাড়া এসব মলম ব্যবহার করা ঠিক নয়।

    ৩. টপিক্যাল অ্যানেস্থেটিক

    এগুলো শরীরের বহির্ভাগে ব্যবহার করার চেতনানাশক মলম বা জেল হিসেবে পাওয়া যায়। অসহনীয় ব্যথা হলে এটি ব্যবহার করা হয়। এতে ফাটল সারে না, তবে ব্যথা উপশম হয়।

    এনাল ফিসারের চিকিৎসায় ডাক্তারের সাথে নিয়মিত ফলো-আপে থাকতে হয়। ৮ সপ্তাহের মধ্যে অবস্থার উন্নতি না হলে সবকিছু বিবেচনা করে ডাক্তার আপনাকে পরবর্তী চিকিৎসার জন্য একজন বিশেষজ্ঞ কোলোরেক্টাল সার্জনের কাছে রেফার করতে পারেন।

  • টিকা নেয়ার আগে যা যা জানা প্রয়োজন

    টিকা নেয়ার আগে যা যা জানা প্রয়োজন

    কারা করোনা টিকা নিবেন আর কারা নিবেন না? টিকা নিলে কি সাইড ইফেক্ট দেখা দেয়,সাইড ইফেক্ট দেখা দিলে কি করবেন?এই ব্যাপারে আজকে আলোচনা করব।

    প্রথমে বলি কারা টিকা নিবেন?

    প্রায় সবাই করো না টিকা নিতে পারবেন। ডায়াবেটিসের রোগী, হাই প্রেসার এর রোগী,হার্টের রোগী,এজমা রোগী,কিডনি রোগ সহ বিভিন্ন যারা ভুগছেন ওষুধ খাচ্ছেন তারা প্রায় সবাই টিকা নিতে পারবেন। কিছু ক্ষেত্রে সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে,চিকিৎসকের সাথে পরামর্শ করে নিতে হবে। এই বিষয়গুলো নিয়ে সব প্রশ্নের উত্তর পাবেন। আগে বলি কে কে টিকা নিতে পারবেন না। শুধুমাত্র দুইদলের মানুষ এই টিকা  থেকে বিরত থাকবেন।প্রথম দলটি হল এলার্জি সংক্রান্ত,তবে যে কোন এলার্জি নয় খুব নির্দিষ্ট ধরনের এলার্জি। টিকায় কয়টা নির্দিষ্ট জিনিস ব্যবহার করা হয়েছে  সেই উপাদান গুলোতে যদি আপনার গুরুতর এলার্জি থাকে তবেই সমস্যা ,তাছাড়া এলার্জিতে কোন সমস্যা নেই।অতীতের যদি কোন টিকা নেয়াতে এলার্জি জনিত সমস্যা থাকে তাহলে তখন একজন চিকিৎসকের সাথে কথা বলে নিবেন।তিনি আপনাকে বলে দিবেন আপনার জন্য টিকা নেওয়া নিরাপদ হবে কিনা। এরপর খুব খুব অল্প সংখ্যক মানুষেরই টিকা নেয়ার পরে গুরুতর এলার্জি রিয়াকশন দেখা দিতে পারে,সেটা হলে সাধারণ টিকার নেয়ার কয়েক মিনিটের মধ্যেই দেখা দেয়। এর কার্যকরী চিকিৎসা আছে টিকা দেওয়ার কয়েক মিনিটের জন্য পর্যবেক্ষণে থাকা বলা হয়েছে। এটা রিঅ্যাকশন করলে সাথে সাথে চিকিৎসা নিয়ে সারিয়ে ফেলা সম্ভব। এর পাশাপাশি আর যারা টীকা নিতে পারবেন না তারা হলো শিশু-কিশোর,যাদের বয়স ১৮ এর নিচে। এই দুটো দলের বাইরে যারা আছে তারা প্রায় সবাই টিকা দিতে পারবেন। তবে কিছু কিছু ক্ষেত্রে সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে। কাদের ক্ষেত্রে সতর্কতা প্রয়োজন সেটা এখন বলছি? 

    এক্ষেত্রে চারটা দল আছে।

    এক, বর্তমানে যদি আপনি অসুস্থ থাকেন।গায়ে যদি প্রচন্ড জ্বর থাকে,তাপমাত্রা ১০৪ ডিগ্রী ফারেনহাইট এর বেশি হয় বা শরীররে কোন ইনফেকশন থাকে,তাহলে সেরে ওঠার পরে টিকা গ্রহণ করবেন। তবে যদি হালকা সর্দি বা ঠান্ডা থাকে তাহলে তার জন্য টিকা নেয়া দেরি করবার দরকার নাই। 

    দুই,আপনি যদি রক্ত পাতলা করবার জন্য কোন ওষুধ গ্রহণ করে থাকেন,তাহলে চিকিৎসকের সাথে পরামর্শ করবেন। রক্ত পাতলা থাকলে টিকা বা ইনজেকশনের সমস্যা হতে পারে,রক্তক্ষরণে একটা সম্ভাবনা থাকতে পারে।একইভাবে যদি কারো এমন অসুখ থাকে যাতে রক্ত জমাট বাঁধতে সমস্যা হয়,বা রক্তক্ষরণে সমস্যা হয়,যেমন হিমোফেলিয়া, তাহলেও ব্লিডিং বা রক্তক্ষরণে সম্ভাবনা থাকতে পারে।তাই সাবধানতা অবলম্বন করতে হবে। 

    তিন ,যাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা দুর্বল। এটা অসুখের কারণে হোক বা ওষুধের কারণে হোক ,অসুখের উদাহরণ হল এইচআইভি ইনফেকশন ঔষধের উদাহরণ হল ক্যান্সারের ওষুধ,উচ্চ মাত্রার স্টেরওয়েড ইত্যাদি।এমনযাদের অবস্থা তাদের করনা টিকা নিতে অবহেলা করবেন না। কারণ করোনাই আক্রান্ত হলে আপনার গুরুতর অসুস্থ হওয়ার সম্ভাবনা বেশি।রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা যেহেতু দুর্বল,তাই টিকার  কার্যকারিতা তুলনামূলকভাবে কম হতে পারে। এই সিদ্ধান্ত নিজে নিজে না নিয়ে ডাক্তারের পরামর্শ নিবেন। 

    চার, যারা গর্ভবতী তারা টিকা নেয়ার ব্যাপারে চিকিৎসকের পরামর্শ নিবেন।প্রাথমিক পর্যায়ে গবেষণায় নিরাপত্তা নিয়ে কোন ঝুঁকি বা প্রেগনেন্সিতে কোন ক্ষতির সম্ভাবনা দেখা যায়নি।এইটি কার কারণে মায়ের বা গর্ভের বাচ্চার কোন ইনফেকশন হবে না।তবে তথ্য যেহেতু সীমিত আরো গবেষণার প্রয়োজন তাই টিকা নেয়ার ক্ষেত্রে উপকার ও ঝুঁকি গুলোর  তুলনা করতে হবে।যুক্তরাজ্যের গর্ভবতী মহিলাদের টিকা দেয়া হচ্ছে।বাংলাদেশে এখনো দেয়া হচ্ছে না। তাই বলে এই না ঠিকা গর্ভবতী নারীদের জন্য নিরাপদ নয়। প্রাথমিকভাবে এই দলকে বাদ দেয়া হয়েছে। তবে নিয়ম পরিবর্তন হতে পারে। যখন আপনাদের টিকা অফার করা হবে তখন ঝুঁকির চেয়ে নিরাপত্তা বেশি হবে। চার বাচ্চাকে বুকের দুধ খাওয়াচ্ছেন তারাও টিকা দিতে পারবেন।তবে বাংলাদেশে তা এখনো কার্যকর হয়নি। তাই বলে এই না যারা বুকের দুধ খাওয়াচ্ছে তাদের জন্য টিকা অনিরাপদ।

    এই যে চার দলের কথা বললাম এরা ছাড়া কারো টিকা দেয়ার ক্ষেত্রে  সতর্কতা প্রয়োজন  নেই। টিকা নিয়ে কয়েকটা প্রশ্ন আরো অনেকবার এসেছে,সংক্ষেপে সেগুলোর উত্তর দিচ্ছি।

    প্রথম প্রশ্ন হল যাদের একবার করোনা হয়েছে  তারা কি টিকা নিবেন কিনা? 
    উত্তর হ্যাঁ টিকা নিবেন।

    কারণ একবার হওয়া মানে আর কখনো হবে না এমন নিশ্চয়তা নেই তাই করোনা থেকে সুস্থ হওয়ার পরও আপনি টিকা নিবেন। করোনা লক্ষণ শুরু হওয়ার অন্তত ২৮ দিন পরে টিকা নিবেন।আর যদি কোন লক্ষণ ছাড়া করোনা পজিটিভ আসে তাহলে যেদিন টেস্ট করিয়েছেন সেদিন থেকে অন্তত ২৮ দিন পর টিকা নিবেন। এই গ্যাপ  রাখার কারণ হলো টিকা নেয়ার পর অসুস্থ হলে সেটা কি টিকা দেওয়ার কারণে হয়েছে নাকি করোনা ইনফেকশনের কারণে হচ্ছে এ নিয়ে যাতে কনফিউশন তৈরি না হয় এবং সঠিক চিকিৎসা দেয়া যায়। যদি ২৮ দিন পরেও খুব অসুস্থ থাকেন বা হাসপাতালে ভর্তি থাকেন,তাহলে সুস্থ হওয়ার পরেই টিকা নিবেন। আর করোনা চিকিৎসার জন্য প্লাসমা থেরাপি নিয়ে থাকেন,তাহলে w h o  বলছে অন্তত ৯০ দিনের ব্যবধান রাখতে। আরেকটা প্রশ্ন হল যারা অন্য টিকা পাচ্ছেন যেমন হেপাটাইটিস ,বি, টিকা তারা করোনা টিকা নিতে পারবেন কিনা। উত্তর হল পারবেন। 

    করোনা টিকার সাথে অন্য টিকার মাঝে অন্তত ১৪ দিন ব্যবধান রাখার পরামর্শ দিচ্ছে ডাবলু এইচ ও। শেষ আরেকটা প্রশ্নের উত্তর দিচ্ছি,টিকা দেয়ার কারণে কি করোনা পজেটিভ আসবে কিনা। উত্তর হলো ,না। এই ভ্যাকসিনের মাধ্যমে আপনার দেহে করোনা সংক্রমিত হবে না।এখন আসি এই টিকার পার্শ্ব প্রতিক্রিয়ার কথা। পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া কেন হয় সেটা আগে জানতে হবে। টিকা নেয়ার উদ্দেশ্য হল রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাকে প্রস্তুত করা,যাতে শরীরে পরবর্তীতে করোনা ভাইরাস ঢুকলে সেটা প্রতিহত করতে পারে। আমরা চাই আমাদের শরীরে রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থা টিকাতে সারাতে ,যখন সেটা সারা দিচ্ছে তখন প্রাথমিকভাবে আমাদের শরীর কিছু লক্ষণ দেখা দিতে পারে,যেমন জ্বর জ্বর লাগা,বমি  ভাব ইত্যাদি। এগুলোকে আমরা পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া হিসেবে চিনি। এগুলো দুশ্চিন্তার কোনো কারণ নয়,এটা কিছু দিনেই সেরে যাবে।

    তাহলে কি লক্ষণ দেখা দিতে পারে? 

    খুব কমন কিছু সাইড এফেক্ট আছে,সেটা হলো যে জায়গাতে টিকা দেয়া হবে সেই জায়গাটা ব্যথা ,হওয়া লাল হওয়া,ফুলে যাওয়া,কালচে হয়ে যাওয়া হালকা গরম থাকা,চুলকানি ,তারপরে হচ্ছে শরীরের ক্লান্তি লাগা,শরীর ভালো না লাগা ,মাংসপেশিতে ব্যথা, গিরায় ব্যথা,মাথাব্যথা জ্বর ভাব,বমি বমি ভাব সাধারণত এইসব লক্ষণ বেশি দেখা যায়। কম দেখা যায় এমন কিছু সাইড ইফেক্ট আছে। দশ জনের একজনের মধ্যে দেখা দিতে পারে।যে জায়গায় ইনজেকশন হয়েছে সেই জায়গায় চাকার মতো হওয়া,বা বমি হওয়া, গায়ে জ্বর, সর্দি,কাশি গলা ব্যথা হওয়া। আরো কম দেখা যায় এমন কিছু লক্ষণ হল,মাথা ঘুরানো,রুচি কমে যাওয়া,পেটে ব্যথা,অতিরিক্ত ঘাম বা গায়ে রেস ,চুলকানি।এগুলো ১০০ জনে একজনের দেখা দিতে পারে।সাইড ইফেক্ট দেখা দিলে কি করবেন?

    প্রথম কথা হলো ঘাবড়ে যাবেন না,আগেই বলেছি এগুলো স্বাভাবিক। কয়েকদিনের মধ্যেই সেরে যাবে। ব্যথা আর জ্বরের জন্য প্যারাসিটামল খেতে পারেন। ১০০০ মিলিগ্রাম প্যারাসিটামল খাবেন অর্থাৎ ৫০০ গ্রাম এ থাকলে দুইটা খাবেন। প্যারাসিটামল খেলে টিকার কার্যকারিতা কোন প্রভাব ফেলবে না। তাই নিজেকে কষ্ট না দিয়ে প্রয়োজনে প্যারাসিটামল খেতে পারেন। আর জ্বর সাধারণত ৪৮ ঘণ্টায় সেরে যায়। যে লক্ষণ গুলো বললাম সেগুলো থেকে আপনার যদি গুরুতর হয় বা আপনি খুব অসুস্থবধ করেন,তাহলে চিকিৎসকের পরামর্শ নিবেন। আর একটা কথা পার্শপ্রতিক্রিয়া না, হলেও ঘাবরানোর কোন কারণ নেই। তার মানে এই না যে টিকা আপনার শরীরে কাজ করছে না। মনে রাখবেন কোন টিকাই শতভাগ কার্যকারী নয়,টিকা নিলেও আমাদেরকে স্বাস্থ্য সচেতনতা  মেনে চলতে হবে। দূরত্ব বজায় রাখতে হবে। নিয়মিত হাত ধুতে হবে আর মাক্স  পরতে হবে। 

    নিরাপদে থাকবেন।

  • টিকা নিবো নাকি নিবো না?  যেভাবে সিদ্ধান্ত নিয়েছি।

    টিকা নিবো নাকি নিবো না? যেভাবে সিদ্ধান্ত নিয়েছি।

    ভ্যাকসিন নেয়ার আগে উপকার ও ঝুঁকির হিসাব কিভাবে নিবেন তা আজকে আলোচনা করব। প্রথমেই বলছি কি কি ঝুঁকি বিবেচনা করবেন বা ভ্যাকসিনের বিপক্ষে যুক্তিগুলো কি কি তা বলব? 

    করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হলেও খুব ধকল ছাড়াই সুস্থ হওয়ার সম্ভাবনা বেশি।সব ওষুধের এই পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া রয়েছে ভ্যাকসিনের ক্ষেত্রেও সেটা ব্যতিক্রম নয়।যেসব ভ্যাকসিন এ পর্যন্ত নেয়া হয়েছে যে ভ্যাকসিনগুলো প্রাণঘাতী রোগ যেমন যক্ষা,হেপাটাইটিস বি,এই ভ্যাকসিনগুলো থেকে করোনা ভ্যাকসিন এর পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া কোন মতেই গুরুতর নয়।করোনা ভ্যাকসিন ও অন্যান্য ভ্যাকসিনের মত গবেষণার সবগুলো ধাপ পার করেছে।সকল ধরনের বৈজ্ঞানিক যাচাই-বাছাইয়ের প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে গিয়েছে,এবং নিরাপদ হিসেবে প্রমাণিত হয়েছে। তাই পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া নিয়ে চিন্তার কোন কারণ নেই। 

    করোনা হলে সুস্থ হওয়ার সম্ভাবনা বেশি তবে মৃত্যুর সম্ভাবনা একেবারে শূন্য নয়।একবার করোনা হলে তার প্রভাব শরীর থেকে যায় বলে আমরা অনেক ক্ষেত্রে দেখেছি। একটা গবেষণায় দেখা গেছে করোনার যে রোগীরা হাসপাতাল থেকে সুস্থ হয়ে বাসায় ফিরেছে  তাদের মধ্যে এক তৃতীয়াংশ অর্থাৎ প্রতি তিন  জনের একজন আবারও অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে,মাত্র ৫ মাসের মাথায়।এদের মধ্যে প্রতি আটজনে একজন মারা যাচ্ছে।করোনা একবার হলে হার্ট, ফুসফুস,কিডনি ও অন্যান্য অর্গানে ক্ষতি হয় বলে দেখতে পাচ্ছি আমরা।ভ্যাকসিন নিলে আমরা রোগ থেকে সুরক্ষা পাই,তবে এছাড়াও ভ্যাকসিন আমাদের কে আরেকভাবে সুরক্ষা দেয় সেটা হল,একটা ভ্যাকসিন যদি আপনাকে রোগে আক্রান্ত হতে সুরক্ষা দেয় তাহলে আপনি সেই রোগ অন্যের মাঝে ছড়াতে পারবেন না। এর অর্থ হল একটা সমাজে যখন যথেষ্ট সংখ্যক মানুষ ভ্যাকসিন দ্বারা সুরক্ষিত হয় ,তখন সে রোগ আর ছড়াতে পারে না।এটা হলে যারা ভেনোরেবল বা দুর্বল মানুষ তারা সুরক্ষিত থাকবে। এই দুর্বল মানুষের মধ্যে রয়েছে ,শিশু,চাঁদের বয়স ১৮ হয়েছে তাদেরকে এখনই  ভ্যাকসিন দেয়া সম্ভব নয়।এছাড়া রয়েছে গর্ভবতী বা বাচ্চাকে বুকের দুধ খাওয়াচ্ছেন এমনকি এমন কিছু মানুষ যাদের ক্যান্সার হয়েছে বা দেহের কোন অঙ্গ  ট্রান্সপ্লান্ট করা হয়েছে কারণ এদেরকে এমন ট্রিটমেন্ট দেয়া হচ্ছে যা তাদেরকে অনেক দুর্বল করে তুলবে। আবার এমন কিছু মানুষ রয়েছে যাদের শরীরের ভ্যাকসিন কাজ করে না ,কেন কাজ করে না সেটা বিজ্ঞান এখনো জানার চেষ্টা করছে। 

    আমাদের চারপাশের মানুষগুলো যদি ভ্যাকসিন গ্রহণ করি,তাহলে চারপাশে একটা সুরক্ষা বলই তৈরি হবে।এই বলই তাদেরকে এমন একটা রোগ থেকে সুরক্ষা দিবে যা তাদের মৃত্যু ঘটাতে পারে। আমরা যারা সক্ষম তারা সকলেএকত্র হয়ে সুরক্ষা নিশ্চিত করতে করোনার বিরুদ্ধে পাহারা দিতে পারি।ভ্যাকসিন নেয়ার পক্ষে এসব গুলো বিবেচনা করার পর ভ্যাকসিন নিতে আর কোন দ্বিধা করবেন না।

Call Now Button