Author: Go Nursing Care

  • ওজন কমানোর সহজ উপায়

    ওজন কমানোর সহজ উপায়

    ওজন কমানোর সহজ উপায়। 

    প্রথম যে কাজটি করবেন লিকুইড  ক্যালোরি খাওয়া কমিয়ে দেয়া। লিকুইড ক্যালোরি হচ্ছে তরল পানীয় সাথে আমরা যে খাবারগুলো খাই। যেমন চা ,কফি,তারপরে পেপসি কোক  বিভিন্ন জুস এগুলো আমরা সাধারণত খাবার হিসেবে চিন্তা করি না খেতে মজা লাগে খেলাম। কিন্তু এগুলোতে ক্যালোরি থাকে অনেক। তাই লিকুইড ক্যালোরি হাওয়া থেকে বিরত থাকতে হবে। 

    দ্বিতীয় বিষয়টি হচ্ছে খাবার আগে ৫০০ মিলি পানি খাওয়া। খাবার খাওয়ার আগে আধা লিটার পানি খেয়ে নেয়া উচিত। এক্ষেত্রে আপনি একটা ৫০০ এম এল এর একটা বোতল  রাখতে পারেন।পানি খেয়ে তারপরে খাবার খেয়ে নিতে হবে, এটা করলে যা হয় অল্প খাবারের পেট ভরে যায়,এটা গবেষণাতেও দেখা গেছে খাবার খাওয়ার আগে যদি পানি খেয়ে নেয়া হয় তাহলে ওজন কমাতে সাহায্য করে।এক্ষেত্রে আপনারা অনেকে হয়তো শুনে থাকতে পারেন যে খাবারের সাথে যদি পানি খায় তাহলে পাকস্থলী থেকে হজমে যে  রস বের হবে সেগুলো পাতলা হয়ে যেতে পারে এজন্য খাবারের সাথে পানি খাওয়া যায় না, এ কথাগুলোর আসলে কোন ভিত্তি নেই।আমরা ফল খায় শাকসবজি খায় এগুলোতে কিন্তু পানি থাকে তারপর আমরা যে তরকারি খায় ভাতের সাথে সেগুলোতেও কিন্তু ঝোলের মধ্যে অনেক পরিমানে পানি থাকে,সেটা খেলে তো আমাদের  পাকস্থলীর রস পাতলা হয়ে যায় না  আপনারা ভাত খাওয়ার আগে বা ভাত খাওয়ার সাথে পানি খেতে পারেন। ওজন কমানোর সময় এই স্ট্যাটিজিটা চেষ্টা করে দেখতে  পারেন,যে ভাত খাওয়ার আগে বা যেকোনো বেলার খাবার খাওয়ার আগে একটু পেটটা ভরে  পানি খেয়ে নিবেন।আধ লিটারের মতো পানি খেয়ে নিলে হয়তো আপনার কম খাবারে সহজে পেটটা ভরতে পারে এবং ওজন কমতে সাহায্য করতে পারি।

    তিন নম্বর ধাপ এ আসি। 

    ফাইবার যুক্ত খাবার খাওয়া। এটাও পেট ভরার সাথে সম্পর্কিত কিন্তু অন্য উপকার ও আছে। ওজন কমানোর সময় আমাদের পেট ভরা একটু গুরুত্বপূর্ণ।স্বাস্থ্যকর খাবার খেয়ে যতটুকু পরিমাণ খাবার খাওয়ার কথা সেটা খেয়ে যদি পেট ভরা থাকে তাহলে ওজন কমানোর জার্নি টা সহজ হবে। পেট ভরার জন্য একটা গুরুত্বপূর্ণ খাবার হচ্ছে ফাইবারযুক্ত খাবার খাওয়া।এটার জন্য চাল টা লাল চাল রাখতে পারেন।ওজন কমানোর জন্য শুধুমাত্র লাল চাল খেতে পারেন।

    লাল চাল খাওয়ার অনেক ধরনের স্বাস্থ্যের জন্য উপকারিতা আছে। ডায়াবেটিসের ক্ষেত্রে,হার্টের রোগের ক্ষেত্রে।ওজন কমানোর জন্য এটা কেন গুরুত্বপূর্ণ একটু বলি। লাল চালের ফাইবার বেশি থাকে। ফাইবার বেশি থাকাতে এটা আমাদের পেটে অনেকক্ষণ ধরে থাকে। তো পেটে অনেকক্ষণ ধরে থাকলে ক্ষুধা  কম লাগে।আরেকটা বিষয় বুঝিয়ে বলি। সেটা হলো আমরা যখন যে কোন খাবার খাই, শরীর সেটা ভাঙ্গে আর সেটা ভাঙতে শরীরে কিছু ক্যালরি খরচ করতে হয়। অর্থাৎ লাল চাল খেলে ক্ষুধা কম লাগে পেট ভরা থাকে এবং একটা হল পেট ভরে থেকেছে বেশিক্ষণ এবং ক্যালরি জমা পড়ছে কম। লাল আটা রুটি এবং হোল গেইন ওটস সকালে নাস্তা হিসেবে খেতে পারেন ওজন কমানোর ক্ষেত্রে।  লাল চাল বলতে চালটা যে লাল হতে হবে ওরকম না,এটাকে ব্রাউন রাইস বলে। ব্রাউন মানে খয়রি কিন্তু আমরা সাধারণত লাল চাল বলি। 

    প্রেম কামানোর ক্ষেত্রে প্রসেস খাবার অর্থাৎ প্রক্রিয়াজাত খাবার এড়িয়ে চলতে হবে। আমরা যখন বাসায় রান্না করি তখন চেষ্টা করি ভালো জিনিসপত্র দিয়ে ভালো উপাদান দিয়ে খাবারটা রান্না করার। কিন্তু যখন রেস্ট্রন থেকে খাবার আনায় ওরা হয়তো চিনি বেশি দিচ্ছে লবণ দিচ্ছে এতে করে স্বাস্থ্যের ঝুঁকি রয়েছে। এই প্রসেস ফুড গুলো আমাদের খুব হজম হয়ে যায় তাড়াতাড়ি দেখা যায় ক্যালরি অনেক বেশি থাকে পুষ্টি কম থাকে। তোর স্বাস্থ্যের জন্য যেমন সেই খাবারগুলো ভালো না। আবার ওজন কমানোর ক্ষেত্রে সেটা একদমই ভালো খাবার না। প্রসেস ফুডে সাধারণত যতই চকচকে লেবেল ঐ থাকুক ,যতই বলুক এটা স্বাস্থ্যের জন্য খুব ভালো করে তৈরি করা হয়েছে সাথে  আরো অনেক কিছু স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর জিনিসও ওই খাবারটাতে আছে।তাই খুব সাবধানে প্রসেস ফুড খেতে হলে খুব ভালো করে ইনভেস্টিগেট করে খেতে হবে। আর পারতপক্ষে না খাওয়াই ভালো ,ওজন কমানোর সময় তো একদমই না।

    ওজন কমানোর ক্ষেত্রে ফলমূল শাকসবজি অধিক পরিমাণে খেতে হবে। ফলমূলের অধিক    দাম হয় এক্ষেত্রে আপনি কিন্তু শাকসবজি আমাদের দেশে কম দামে পাওয়া যায়। তা আপনারা চেষ্টা করবেন সতেজ শাকসবজি গুলো কিনতে।এবং জানার পরে ওই দিনেই রান্না করে খেয়ে ফেলার চেষ্টা করবেন। ওজন কমানোর জন্য এটা গুরুত্বপূর্ণ কারণ শাকসবজিতে খুব কম পরিমাণে ক্যালরি থাকে,ফাইবার ও বেশি থাকে  আর পুষ্টিগুণ  তো আছেই।আর শাক-সবজি থেকে যথেষ্ট পরিমাণ পুষ্টি পেতে চান তখন একটু একটা জিনিস মাথায় রাখবেন। বিভিন্ন শাকসবজিতে বিভিন্ন পুষ্টি থাকে ।বিভিন্ন রকম সবজি ,বিভিন্ন রং এর সবজি খেতে পারেন। এক একটাতে এক এক ধরনের পুষ্টি  আছে। শাক সবজির ক্ষেত্রে যেটা বলা হয় যে রংধনুর মতো রং মিলিয়ে খাবার জন্য,তখন আপনার শরীরে যা যা পুষ্টি দরকার সেটা শরীর পেয়ে যায়।

    রং এর মধ্যে ধরেন যে লাল রঙের সবজিতে লাইকোপিন থাকে। যেমন টমেটো, টমেটোতেও প্রচুর পরিমাণে লাইকোপিন থাকে। তারপরে হলুদ আর কমলা রঙের যে শাকসবজি ফলমূল আছে যেমন ,গাজর, মিষ্টি আলু আনারস, পেঁপে,এইসবে থাকে বিটা ক্যারোটিন। বিটা ক্যালোরি থেকে আমাদের শরীর ভিটামিন  ,এ , তৈরি করে।আর হচ্ছে সবুজ রঙের  শাকসবজি এটাই আমরা বেশি করে চিনি। আমাদের যত ধরনের  শাক আছে ,পালং শাক পুঁইশাক তারপরে পাতাকপি তারপর ফলের মধ্যে  অ্যাভোকাডো সেটা একটা সবুজ ফল।তারপরে রঙের মধ্যে আরো আছে নীল বেগুনি রং। বেগুনের মধ্যে আমাদের বেগুন হচ্ছে বেগুনি সবজি। তারপরে সাদা এবং খয়রি যে সবজি ফলমূল গুলো আছে। সাদার মধ্যে ফুলকপি হচ্ছে সাদা। খয়েরির মধ্যে খেজুরটা হচ্ছে খয়েরি ফল। তো এরকম বিভিন্ন রঙের যদি আপনি ফলমূল  শাকসবজি খেতে পারেন তাহলে আপনার শরীরে যত ধরনের পুষ্টির দরকার সবকিছু কিন্তু শরীর নিয়ে নেবে। আমরা যদি একই ধরনের ফল ধরনের সবজি খায়,তাহলে কিন্তু যত পুষ্টি দরকার সেগুলো  শরীর পাচ্ছে না,তো চেষ্টা করবেন অনেক ধরনের শাকসবজি ফলমূল খেতে।টমেটো ,বেগুন, পাতাকপি ফুলকপি, মটরশুঁটি, মিষ্টি আলু, পালং শাক এগুলো খাওয়ার চেষ্টা করবেন। শাকসবজি রান্নার ক্ষেত্রে সেটা হলো যত কম পরিমাণ তেল দেয়া যায়। কিছু কিছু শাকসবজি তেল ছাড়াও রান্না করে শুদ্ধ করে খেতে পারেন।এর মানে তেল দেয়া যাবে না সেরকম না কিন্তু তেলের পরিমাণটা খেয়াল রাখতে হবে। স্বাস্থ্যকর তেলের ব্যবহার করতে পারেন। কিছু কিছু সবজি আছে যেটা ২৫০ গ্রাম অর্থাৎ সোয়া কেজি পরিমাণেও এত ক্যালরি হবে না,যত পরিমাণে এক চামচ তেলে থাকে। সেজন্য তেলটা অবশ্যই পরিমাণমতো নিতে হবে,অলিভ অয়েল,কেনলা অয়েল ইত্যাদি।সোশ্যাল মিডিয়াতে কিছু কিছু জায়গায় দেখেছি, কেনলা অয়েল বলা হচ্ছে স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর,স্বাস্থ্যের জন্য ভালো না এটা কিন্তু সঠিক তথ্য না। কেননা অয়েলে কোন ফ্যাটের কতটুকু পার্সেন্টেজ থাকে,কোন ফ্যাট স্বাস্থ্যের জন্য ভালো।কিন্তু একটা সোর্স যেটা আপনি বিশ্বাস করতে পারবেন সেটার কথা বলছি স্বাস্থ্যের জন্য সবচেয়ে ভালো তেল গুলোর মধ্যে একটি হল কেনলা অয়েল। ওজন কমানোর ক্ষেত্রে আরেকটা বিষয় যেটা খেয়াল রাখবেন। আগে থেকে প্রস্তুতি নিয়ে রাখবেন সেটা হল 

    দুই খাবারের মাঝখানে যখন ক্ষুদা লাগবে তখন কি খাবেন? 

    এক্ষেত্রে তিনটা খাবারের আশ্রয় নিতে পারেন। সেগুলো হলো শসা, টমেটো ,আর গাজর,এগুলোতে ক্যালরি অনেক কম থাকে। তোর সহজে আপনি দুই তিনটা খেয়ে নিতে পারবেন। আন হেলদি প্রসেসফুল যেগুলো স্ন্যাকসে  সাধারণত আমরা খাই,চকলেট চিপস ওগুলো থেকে নিজেকে দূরে রাখবেন।আর অস্বাস্থ্যকর খাবার থেকে নিজেকে বিরত রাখবেন।নাস্তার জন্য আরো কিছু খাবার খাওয়া যেতে পারে,বাদাম খাওয়া যেতে পারে বাদাম স্বাস্থ্যের জন্য ভালো। কিন্তু বাদামে ক্যালরি বেশি থাকে তাই খুব অল্প পরিমানে খেতে হবে। 

    ওজন কমাতে আরো একটি যে গুরুত্বপূর্ণ কাজ সেটা হলো নিয়মিত ব্যায়াম করা। 

    প্রতিদিন অন্তত আধাঘন্টা ব্যায়াম করবেন। এক্ষেত্রে বাইরে দৌড়াতে যেতে পারেন বা দ্রুত হাঁটতে পারেন।

    একদম সর্বশেষ পয়েন্টটা হল পরিমিত  পরিমানে খাবার খাওয়া।আমরা স্বাস্থ্যকর খাবার খেলেও যদি অনেক পরিমাণে খাই,অনেক ক্যালরি যদি আমাদের শরীরে ঢোকায়,তাহলে কিন্তু ওজন কমানো যাবে না। স্টপ কাউন্টিং ক্যালোরিজ অথবা ক্যালরি গুনে কখনো ওজন কমানো যায় না।আপনার শরীর যতটুকু ক্যালরি খরচ করে,তার চেয়ে বেশি ক্যালরি যদি আপনি প্রতিদিন খান তাহলে ওজন বাড়বে, এটা ধ্রুব সত্য।মোটকথা পরিমিত খাবার খেতে হবে ক্যালরির একটা আন্দাজ মাথায় রাখতে হবে।

    নিরাপদে থাকবেন।

  • করোনা টিকায় কি শুকরের চর্বি আছে?

    করোনা টিকায় কি শুকরের চর্বি আছে?

    করোনা ভ্যাকসিন নিয়ে কিছু প্রশ্ন অনেকেই করছেন। এই ভ্যাকসিন এ কি শুকরের চর্বি আছে?

    শুকরের চর্বি থাকলে কি এই ভ্যাকসিন নেয়া যাবে?ভ্যাকসিনের উপরে চর্বি আছে কিনা, এটা অবান্তর কোন প্রশ্ন নয়।কিছু ভ্যাকসিন যেমন ,এক প্রকারের চিকেন পক্স ভ্যাকসিন,এক প্রকারের এম এম আর ভ্যাকসিনে শুকর থেকে তৈরি একটা পদার্থ থাকে। এই দুইটা ভ্যাকসিন এরই আবার বিকল্প আছে। যাতে শুকর থেকে তৈরি কোন পদার্থ নেই। এ আলোচনায় বুঝিয়ে বলব ভ্যাকসিনে শূকরের কোন অংশ থাকে? কেন থাকে? বিকল্প কি?এবং করোনা ভ্যাকসিনে এগুলো ব্যবহার করা হয়েছে কিনা?একদম ভেঙ্গে ভেঙ্গে খুব সহজ করে বলবো।

    প্রথমে বলি একটা ভ্যাকসিনে কি কি থাকে? 

    যেকোনো ভ্যাকসিনের সাধারণত দুইটা মূল উপাদান থাকে,সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ উপাদান হল এটার একটিভ ইনগ্রেডিয়েন্ট অর্থাৎ যে অংশটুকু  আমাদেরকে রোগ  থেকে সুরক্ষা দিবে। এটা ভাইরাস বা ব্যাকটেরিয়া থেকে তৈরি করা হয়।ভ্যাকসিনের এই অংশে জীবাণু জীবিত হতে পারে,মৃত হতে পারে,কিংবা জীবাণুর কেবল একটা অংশ থাকতে পারে।যেটাই থাকুক খুব অল্প পরিমাণে থাকে।এটা এমন ভাবে তৈরি করা হয়,যাতে শরীরে প্রবেশ করলে কোন রোগ সৃষ্টি  করতে না পারে। কিন্তু আমাদের রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থা এটাকে শত্রু  হিসেবে চিনে রাখে। পরে যদি আসল জীবাণুর শরীরে ঢুকে,সেটার বিরুদ্ধে  যুদ্ধ করার জন্য তখন  শরীর প্রস্তুত খুব তাড়াতাড়ি শরীর রোগ সৃষ্টি করার আগে জীবাণু কুপোকাত  হয়ে যায়। এটার পাশাপাশি ভ্যাকসিনের আরেকটা মূল উপাদান হলো, পানি।বেশিরভাগ ভ্যাকসিন যেগুলা ইঞ্জেকশন এর মাধ্যমে দেয়া হয়, এগুলোতে কয়েক ফোঁটা পানি থাকে।এই দুইটা উপাদান ছাড়া সামান্য পরিমাণে বাকি কিছু উপাদান থাকে যা সব মিলিয়ে কয়েক মিলিগ্রাম হয় অর্থাৎ,এক গ্রামকে ১০০০  ভাগে ভাগ করলে তার কয়েক ভাগ পরিমান।এগুলো যোগ করা হয়, ভ্যাকসিনের কার্যক্ষমতা বাড়ানোর জন্য, স্থিতিশীল রাখার জন্য,সংরক্ষণ করার জন্য। এই উপাদান গুলোর মধ্যে রয়েছে অ্যালুমিনিয়ামের লবণ, জিলাটিন ইত্যাদি। এই জিলাটিন  একটা প্রকার রয়েছে যা শুকরের  শরীর থেকে তৈরি হয়।সেখান থেকে এই প্রশ্নের শুরু। ভ্যাকসিন হালাল নাকি হারাম। এখন দেখব করোনা তৈরি ভ্যাকসিন শুকরের তৈরি জিলাটিন আছে কিনা তার আগেই জিলাটিন সম্পর্কে ভালোভাবে জেনে নিতে হবে। 

    জেলাটিন তৈরি করা হয় বিভিন্ন প্রাণীর শরীরে থাকা কলোজিন নামের এক ধরনের প্রোটিন থেকে। মুরগি, গবাদি পশু, শুকর, এমনকি মাছের শরীর থেকেও কলেজিন নিয়ে জিলাটিন তৈরি করা হয়।

    শুকরের দেহ থেকে  কলোজিন নিয়ে যে জিলাটিন তৈরি করা হয় তাকে বলা হয় পড়সাইন জেলাটিন। বিভিন্ন ভ্যাকসিনে এই পরসাইন জেলাটিন ব্যবহার করা হয়। ভ্যাকসিনে  ব্যবহার করার জন্য জেলাটিনকে অনেক স্তরে  বিশুদ্ধ করা হয়,পানি দিয়ে ভেঙ্গে ভেঙ্গে একদম ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র অনুতে রূপান্তরিত  করা হয়,এটাকে বলে হাইড্রোলাইস করা।ভ্যাকসিন তৈরি করার জন্য জিলাটিনকে এত ক্ষুদ্র অংশে ভেঙ্গে ফেলা হয় যে এটা কোন প্রাণীর প্রোটিন থেকে তৈরি করা হয়েছে তা  সূক্ষ্ম  বৈজ্ঞানিক পরীক্ষা করেও বুঝার উপায় থাকে না।উদাহরণস্বরূপ বলি, নেয়জালফ্লু ভ্যাকসিন নামের একটা ভ্যাকসিন আছে যেখানে শুকর থেকে তৈরি জিলাটিন ব্যবহার করা হয়। এই ভ্যাকসিন এর ওপর অনেক পরীক্ষা করেও কোন ডিএনএ পাওয়া যায়নি। অর্থাৎ এটা যে শুকর থেকে নেয়া হয়েছে এটা বোঝার উপায়ই ছিল না। ভ্যাকসিনে কেন এই শুকর দেহের থেকে তৈরি জিলাটিন ব্যবহার করা হয়? আসলে কি এই জিলাটিন রাখা প্রয়োজন আছে ভ্যাকসিনে?কিছু ভ্যাকসিনে জীবিত ভাইরাস থাকে,জীবিত হলেও এ ভাইরাস গুলোকে অনেক দুর্বল করে দেয়া হয়েছে। এরা সুস্থ মানুষের শরীরে রোগ সৃষ্টি করতে পারবেনা।এই ভ্যাকসিন গুলোর  কয়েকটাতে  স্ট্যাভেজালাইজার বা স্থিতিকারক হিসেবে পড়সাইন জিলাজিন ব্যবহার করা হয়। এটা ভ্যাকসিন সংরক্ষণ এবং পরিবহন করার সময় তাপমাত্রার পরিবর্তন থেকে  জীবিত ভাইরাসকে সুরক্ষিত রাখে। এভাবে ভ্যাকসিনটির নিরাপত্তা আর কার্যকারিতা অক্ষুন্ন থাকে। ভ্যাকসিনের  স্থিতিকারক হিসেবে অন্য কিছু কি ব্যবহার করা যায় না?

    উত্তর হচ্ছে যায়। 

    বিভিন্ন ভ্যাকসিনের বিভিন্ন স্ট্যাবিলাইজার ব্যবহার করা হয়।সুক্রোজ, ল্যাকটোজ, ইউরিয়া ইত্যাদি অনেক ধরনের স্টেবিলাইজার আছে। ভ্যাকসিন প্রস্তুত করার সময় দেখা হয় কোন স্ট্যাবিলাইজার টা ওই ভ্যাকসিন এর জন্য ভালো মানসম্পন্ন।এই সব কিছু বিবেচনা করে নির্বাচন করা হয়।এখন আপনাকে ভ্যাকসিনে কি কি উপাদান ব্যবহার করা হয়েছে এটা দেখালে আপনি বলে দিতে পারবেন এটাতো শুকরের চর্বি বা শুকর থেকে তৈরি পদার্থ আছে কিনা।এখন পর্যন্ত বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা অনুযায়ী  ২৩২টি ক্যান্ডিডিতে ভ্যাকসিন  নিয়ে গবেষণা চলছে।তার মধ্যে সাতটি ভ্যাকসিনের মানবদেহে পরীক্ষা-নিরীক্ষা চলছে। যে তিনটি ভ্যাকসিন অনুমোদন পেয়ে গেছে,সেই তিনটি ভ্যাকসিন ঘেটে দেখেছি। এই ভ্যাকসিনগুলোতে শুকর থেকে তৈরি জিলাটিন আছে কিনা এটা এখন বলবো। অক্সফোর্ড এর ভ্যাকসিন দিয়ে শুরু করছি যেহেতু এটা বাংলাদেশে ও ভারতে সম্ভবত সবার আগে পৌঁছাবে। প্রথমে ভাইরাল পার্টিক্যালস এটা হচ্ছে ভ্যাকসিনের একটিভ ইনগ্রেডিয়েন্স যা আমাদেরকে করোনা রোগ থেকে সুরক্ষা দিবে,তারপরে অন্যান্য উপাদানের নাম আছে চিনি আছে ,লবণ আছে, শেষে পানির কথা লেখা আছে, কিন্তু কোথাও জিলাটিন লেখা নেই। মর্ডণা  ও ফাইজারের  তৈরি ভ্যাকসিন উপাদান গুলো বলে দিচ্ছে,এটাতেও  জিলাটিন উপাদান  লেখা নেই। শেষে মর্ডণা  তৈরি ভ্যাকসিনের উপাদান বলছি,এখানেও কিন্তু কোন জিলাটিন  নেই।অর্থাৎ এই তিনটা ভ্যাকসিনের একটাও নেয়া যদি সুযোগ আপনার থাকে তাহলে শুকর থেকে তৈরি জেলাটিন আছে এমন চিন্তা করার দরকার নেই।শেষে একটু বলে নেই ফাইজার ও মর্ডানার ভ্যাকসিন ভিন্ন প্রযুক্তি ব্যবহার করে তৈরি করা হয়েছে।

    নিরাপদে থাকবেন।

  • নিয়মিত সাদা ভাত খাওয়া নিয়ে গুরুত্বপূর্ণ কিছু তথ্য

    নিয়মিত সাদা ভাত খাওয়া নিয়ে গুরুত্বপূর্ণ কিছু তথ্য

    সাদা চাল আর লাল চালের মধ্যে পার্থক্য অনেক। কোনটা আমাদের স্বাস্থ্যের কি উপকার ও অপকার করে তা আজকে বিস্তারিত বুঝিয়ে বলব। 

    প্রথমে বলি সাদা চাল আর সাদা আটা কিভাবে তৈরি হয়? 

    ধান ,গম, বা যে কোন শস্য দানার তিনটি অংশ থাকে। শস্যদানার বাইরের আস্তরণ কে বলা হয় ব্রান। বাংলায় আমরা এ অংশকে সাধারণত কুড়া বলেছি। এই ব্রান বা কুড়াতে অনেক পুষ্টি উপাদান আছে। আইরন ,কপার  জিরিং,ম্যাগনেসিয়াম ,ভিটামিন বি আর থাকে প্রচুর পরিমাণে ফাইবার। এগুলোর একেকটা একেক রকম কাজ করে আমাদের শরীরকে সুস্থ রাখতে। শস্যদানা থেকে যখন মেশিনে সাদা চাল বানানো হয়, তখন পুষ্টিকর এই বাইরের আস্তরণ  অর্থাৎ ব্রান বা কুড়া ফেলে দেয়া হয়। তার মানে চাল  থেকে ফাইবার চলে যায়। তখন চালের পুষ্টিগুণ অনেক কমে যায়।

    শস্যদানার ভেতরের অংশকে বলে জার্ম। এখান থেকে নতুন উদ্ভিদ জন্মাবে। জার্ম এর  ভিতরে একদম পুষ্টি ভরপুর। ভিটামিন বি, ভিটামিন ই, স্বাস্থ্যের জন্য উপকারী ফ্যাট, ফাইটোকেমিক্যালস, এন্টিঅক্সিডেন্টস থাকে এরমধ্যে। চালের  মধ্যে এই অংশটা থাকলে চাল অনেকদিন সংরক্ষণ করা যায় না।এটা ফেলে দিলে অনেক দিন গোদামে বা দোকানে চাল রেখে দেয়া যায়। তাই সাদা চাল বানানোর সময় এই পুষ্টিকর অংশটুকুও ফেলে দেয়া হয়। সাদা চালে থাকে শুধু ইন্ডোস্পার্ম ।এখানে মূলত কার্বোহাইড্রেট থাকে, আর খুব অল্প পুষ্টি থাকে। সামান্য পরিমানে ভিটামিন বি, প্রোটিন,মিনারেল থাকে। অর্থাৎ পুষ্টিগুণ একেবারেই কম যেখানে সেটাই থাকে সাদা চালে।সাদা আটাতেও তাই। গন থেকে মেশিনে যখন সাদা আটা বানানো হয়,৯০ শতাংশ ভিটামিন ই,৫০ শতাংশ ভিটামিন বি এবং ১০০ শতাংশ ফাইবার উধাও হয়ে যায়। লাভ যেটা হয় সেটা হল এই আটা দিয়ে সুন্দর পাউরুটি ,পরোটা , বানানো যায়,এবং এগুলো অনেকদিন দোকানে সংরক্ষণ করা যায়। যখন শস্যদানা তিনটা অংশই অটুট থাকে এটাকে বলে লাল চাল।আমরা লালচাল বলতে এই পুরো শস্যদানা কে বুঝায়।চালের রং লাল হতে হবে সেটা বাধ্যতামূলক নয়। তিনটাই অংশ থাকলে এই চাল রান্না করতে সময় বেশি লাগবে। খেতে একটু শক্ত লাগে কিন্তু এতে অনেক ধরনের পুষ্টি উপাদান থাকে। আবার শস্যদানা তিনটে অংশের মেশিনে ঢুকিয়ে আটা বানানো হয়,সেটা হচ্ছে লাল আটা। 

    তবে এই দুই প্রকারের চালের পার্থক্য পুষ্টিতেই শেষ নয়। এই দুই প্রকারের চাল খেলে শরীরে কি ঘটে, সেটা বুঝিয়ে বলব?

    কার্বোহাইড্রেট খাওয়ার পরে সেটা ভেঙ্গে আমাদের শরীরে চিনি তৈরি করে। সেখান  থেকে চিনি রক্তে প্রবেশ করে। রক্ত যখন চিনে পরিমাণ বাড়তে থাকে তখন আমাদের শরীর একটা হরমোন বানানো শুরু করে। এই হরমোনের নাম হল ইনসুলিন। ইনসুলিন দিয়ে রক্তে চিনির পরিমাণ কমায়। চিনি গুলোকে রক্ত থেকে সরিয়ে আমাদের কোষের  ভিতর ঢুকায়,সেখান থেকে আমরা শক্তি পাই। কার্বোহাইড্রেট খাওয়ার পরে কত দ্রুত আমাদের রক্তে  চিনির পরিমাণ বেড়ে যায়।সেটার পরিমাপ হচ্ছে গ্লাইসেমিক ইনটেক্স।

    সাধারণ নিয়ম হল কম গ্লাইসেমিক ইনটেক্স এর খাবার গুলো আমাদের স্বাস্থ্যের জন্য ভালো অর্থাৎ যে খাবারগুলো খেলে রক্তে আস্তে আস্তে চিনির পরিমাণ বারে হুট করে অনেক পরিমাণে বেড়ে যায় না সে খাবার গুলো ভালো। যেসব খাবারে গ্লাইসেমিক ইনটেক্স বেশি সেগুলো রক্তে চিনির পরিমাণ খুব দ্রুত বাড়ায়। এমন একটা খাবার হল সাদা চালের ভাত। খুব তাড়াতাড়ি শরীরে এই খাবার ভেঙ্গে চিনি তৈরি করতে পারে। এবং অল্প সময় রক্তে অনেক পরিমাণ চিনি চলে আসে। রক্তে এত বেশি চিনি কমানোর জন্য অনেক পরিমান ইনসুলিন প্রয়োজন হয়। অন্যদিকে লাল চালের ভাতে গ্লাইসেমিক ইনটেক্স অনেক কম।এটা ভাঙতে শরীরে বেশ সময় লাগে রক্ত চিনির পরিমাণ ধীরে ধীরে বাড়ে,ফলে ইনসুলিন কম প্রয়োজন হয়।আর অনেকক্ষণ পেট ভরা ভরা লাগে। আপনারা অনেকে হয়তো ডায়াবেটিস রোগীদের ওষুধ হিসেবে ইনসুলিন নাম শুনেছেন। যারা ডায়াবেটিসে ভোগে তাদের শরীর হয় ইনসুলিন তৈরি পারেনা অথবা শরীরে ইনসুলিন ঠিকমতো কাজ করতে পারে না। ফলে রক্তে চিনির পরিমাণ বেড়ে থাকে, ওষুধ খেয়ে বা বাইরে থেকে ইনসুলিন নিয়ে রক্তে চিনির পরিমাণ কমাতে হয়। তবে এইখানে আরেকটা কথা ,খাবারের গুনাগুন নির্ধারণ করার জন্য শুধুমাত্র গ্লাইসেমিক ইনটেক্স ব্যবহার করাই যথেষ্ট নয়। এটা একটা উপায় মাত্র। যেমন চকলেট কেক এ গ্লাইসেমেক ইনটেক্স কম,তাই বলে কি এটা স্বাস্থ্যকর নয় এটা মোটামুটি আমরা সবাই আন্দাজ করতে পারি।

    আড়াই লক্ষেরও বেশি মানুষের উপর করা সাতটি গবেষণা একত্রে করে দেখা হয়েছে। যে যারা প্রতিদিন হোল গ্রীন খায় আর যারা খায় না তাদের মধ্যে হার্ট অ্যাটাক ,স্ট্রোকের ঝুঁকির মতো কোনো পার্থক্য আছে কিনা। ফলাফল কি পাওয়া গেল?

    যারা হোল গ্রীন বা গোটা শস্য দানা  খেয়েছে তাদের হার্ট অ্যাটাক,স্ট্রোক ঝুঁকি ২১ শতাংশ কম ছিল। আর একটা গবেষণায় দেখা গেছে, জাপানিজ ও চাইনিজ মানুষদের মধ্যে যারা সাদা ভাত সবচেয়ে বেশি খায় তাদের মধ্যে ডায়াবেটিস হওয়ার ঝুঁকি ৫৫ শতাংশ বেশি।আবার প্রায় চার লক্ষ মানুষের মধ্যে দশটা করা গবেষণা একত্রে করে দেখা গেছে সারা দিনে দেড় কাপ লাল ভাত খায়,তাদের ডায়াবেটিস হওয়ার ঝুঁকি  কমেছে ৩২ শতাংশ। শুধু হার্ট অ্যাটাক স্টক ডায়াবেটিসের মতো প্রাণঘাতী ও অসুখ না, কোষ্ঠকাঠিন্য বা পাইলসের মতো পীড়াদায়ক অসুখকে দূরে রাখে লাল চাল আটা।অর্থাৎ লাল চাল আর লাল আটায় যে ফাইবার থাকে তা খাবার হজমে সাহায্য করে। মল নরম করে ফলে কোষ্ঠকাঠিন্য হয় না। আর আপনার যদি মনে হয় আপনার খাদ্য  অভ্যাস পরিবর্তন আনবেন তবে গোটা শস্য দানা বেশি খাবেন।

    তাহলে আপনার জন্য তিনটি পরামর্শ। 

    এক, আস্তে আস্তে শুরু করবেন। প্রথমে নতুন কিছু খেলে সেটা সব ভালো লাগে না। একবারে পুরোটা না বদলাতে পারলে অল্প অল্প করে খাদ্য অভ্যাস পরিবর্তন করতে পারেন। সাদা ভাতের সাথে লাল  ভাত মিশিয়ে খেলেন। সাদা আটা রুটির সাথে একটা লাল আটা রুটি খেলেন। এভাবে পরিবর্তন করতে পারেন। 

    দুই,ভাত রুটি ছাড়াও অন্যান্য হোল গ্রীন খেতে পারেন। যেমন নাস্তা খাওয়ার জন্য ওটস খেতে পারেন। 

    তিন, লাল চাল বা লাল আটা খেলেই যে পরিমাণে বেশি খাওয়া যাবে তা কিন্তু না। সুষম খাবারে অংশ হিসেবে আপনি লাল চাল,আর লাল আটা খাবেন। চেষ্টা করবেন দিনের অর্ধেক বেলা শাকসবজি ফলমূল খাবেন।

    লাল আটা আর লাল চালে ভিটামিন, মিনারেল, ফাইবার, আছে যা সাদা চাল আর সাদা আটায় পাওয়া যায় না। এই খাবারগুলো স্বাস্থ্যকর কার্বোহাইড্রেটের উৎস ,এই খাবারগুলো ডাইবেটিস, হার্ট এটাক, স্টোক ইত্যাদি রোগের ঝুঁকি কমায় এমনকি কোষ্ঠকাঠিন্য ও দূর করে। 

    নিরাপদে থাকবেন।

  • সঠিকভাবে ব্লাড প্রেশার মাপার পদ্ধতি

    সঠিকভাবে ব্লাড প্রেশার মাপার পদ্ধতি

    ব্লাড প্রেসার মাপতে গিয়ে আমরা অনেক রকমের  ভুল করি। এতে প্রেসার কম বা বেশি দেখায় ,আসল অবস্থা জানা যায় না। ফলে  অতিরিক্ত বা অল্প চিকিৎসা হয়। আজকে বলবো আপনি কিভাবে সঠিক ভাবে ব্লাড প্রেসার মাপতে পারবেন। 

    প্রেশার মাপার আগে দুইটা বিষয় খেয়াল রাখতে হবে। 

    ১,ব্লাড প্রেসার মাপার আগে ৩০ মিনিট নির্দিষ্ট কিছু কাজ করা যাবে না। এ কাজগুলো কিছুক্ষণের জন্য প্রেসার বাড়িয়ে দিতে পারে। ফলে এইসবের পরে প্রেসার মাপলে প্রকৃত অবস্থা বোঝা যায় না। এই কাজগুলো কি কি? চা, কফি, কমল পানীয় পান, ধূমপান,আর ব্যায়াম। চা কফি কমল পানীয়তে আছে ক্যাফেইন,যা ব্লাড প্রেসার বাড়িয়ে দিতে পারে। সিগারেট আছে নিকোটিন সেটাও ব্লাড প্রেসার বাড়িয়ে দিতে পারে। আবার ব্যায়াম করলে ব্লাড প্রেসার বেড়ে যেতে পারে। 

    দুই,প্রেসার মাপার সময় নিজেকে স্বস্তিতে রাখবেন। আমেরিকান হার্ট অ্যাসোসিয়েশন সহ অন্যান্য বিশ্বস্ত প্রতিষ্ঠান পরামর্শ দেয় যে প্রেশার মাপার আগে কমপক্ষে পাঁচ মিনিট চুপ করে বসে বিশ্রাম নিতে। এই সময় কারো সাথে কথা বলবেন না। নিজেকে রিলাক্স করার জন্য এই সময়টা কাজে লাগাবেন। প্রেশার মাপার সময় স্বস্তিতে থাকা নিয়ে আরেকটা কথা, পেটে যদি প্রসাবের চাপ থাকে তাহলে তা অস্বস্তি  বাড়াতে পারে,ব্লাড প্রেসার বাড়িয়ে দিতে পারে। তাই প্রেসার মাপার আগে বাথরুম সেরে নিবেন। পেটে যাতে কোনরকম চাপ বা অস্বস্তি না থাকে। 

    এখন বলব প্রেসার মাপার  সাতটা নিয়ম। 

    খুব সহজ করে বলবো। 

    এক, প্রেসার কি বসে  মাপবেন, দাড়িয়ে মাপবেন ,নাকি শুয়ে মাপবেন? উত্তর হচ্ছে বসে মাপবেন। যেখানেই বসেন আপনার দুইটা জিনিস খেয়াল রাখতে হবে। পিঠ কিছুটা হেলান দিয়ে আছেন আর সোজা হয়ে বসেছেন। অনেকেই বিছানায় বসে প্রেসার মাপেন বিছানায় বসলে সাধারণত  পিঠের পিছনে হেলান দেয়ার জন্য কিছু থাকে না। পীর যদি কোথাও হেলান না দেন তাহলে আপনার সিস্টলিক প্রেসার ,অর্থাৎ প্রেসার মাপলে উপরের যে  সংখ্যাটা আসে সেটা ৫  থেকে ১৫ পয়েন্ট পর্যন্ত বেড়ে যেতে পারে। আর ডায়ালস্টিক প্রেসার অর্থাৎ নিচের সংখ্যা ছয়  পয়েন্ট পর্যন্ত বেড়ে যেতে পারে।তাই পিঠ  হেলান দিয়ে বসা খুব গুরুত্বপূর্ণ। আবার কেউ কেউ সোফায় বসে প্রেসার মাপেন এতে প্রেসার  বেশি আসতে পারে।প্রেসার  মাপার জন্য একটা চেয়ারে সোজা হয়ে বসবেন।

    শুরু করছি কিভাবে উচ্চ রক্তচাপের সৃষ্টি হয় সেটা  সহজ ভাষায় বুঝিয়ে বলতে,

    আমাদের শরীরের রক্ত নালীগুলো রাবারের মত সেটা প্রসারিত ও সংকুচিত হতে পারে কিন্তু এই রক্তনালী যদি শক্ত হয়ে যায় তখন প্রয়োজন মত প্রসারিত হতে পারেনা, রক্ত চলাচলে বাধা বেড়ে যায় দেখা দেয় হায় ব্লাড প্রেসার। এছাড়াও প্রেসার বাড়ার আরো কিছু  সূক্ষ্ম কারণ রয়েছে।

    এখন খুব সহজ করে বুঝিয়ে বলছি প্রেসার বেড়ে গেলে কি কি সমস্যার সৃষ্টি হতে পারে ?

    এক, উচ্চ রক্তচাপের ফলে রক্ত নালি গুলো দুর্বল হয়ে যেতে পারে, রক্তনালী গুলোর  দেয়াল পাতলা হয়ে বেলুনের মতো ফুলে ওঠে সেটা হঠাৎ ছিড়ে  যেতে পারে তখন ব্রেনে মারাত্মক রক্তক্ষরণ দেখা দেয়, একই সমস্যা পেটের রক্তনালিতেও হতে পারে 

    দ্বিতীয় যে সমস্যাটা হতে পারে সেটা হল রক্তনালীতে চর্বি জমা সুস্থ স্বাভাবিক রক্তনালী তার গায়ে চর্বি জমতে দেয় না তবে উচ্চ রক্তচাপ রক্তনালীকে ক্ষতিগ্রস্ত করতে থাকে তখন রক্ত  নালিগুলোর  গায়ে চর্বি  কোলেস্ট্রল ও ক্যালসিয়াম ডমাট বাঁধতে  পারে আস্তে আস্তে এই চর্বি জমাট বড় হয় রক্তনালী সরু হয়।কিছু ক্ষেত্রে দেখা যায় চর্বির গায়ে এসে  রক্ত জমাট বাঁধে এক পর্যায়ে রক্তনালীর মুখ পুরোটাই বন্ধ হয়ে যেতে পারে তখন রক্ত আর সামনে আগাতে পারে না ,এটা খুবই মারাত্মক ঘটনা 

    আপনারা নিশ্চয়ই ব্রেইন স্টক আর হার্ট অ্যাটাকের কথা শুনেছেন এইটা সেই ঘটনা ,

    ব্রেন এর রক্তনালী বন্ধ হলে হয় স্ট্রোক তখন ব্রেইনের এক  অংশ আর  রক্ত পায় না কোষগুলো মরে যায় 

    একইভাবে হার্টের রক্তনালী বন্ধ হলে হয় হার্ট অ্যাটাক। এছাড়াও হাই ব্লাড প্রেসার দীর্ঘদিন থাকলে আরো অনেক ধরনের সমস্যা দেখা দিতে পারে যেমন হার্ট দুর্বল হয়ে ,যাওয়া কিডনি ওকেজো হয়ে যাওয়া দৃষ্টিশক্তিতে সমস্যা দেখা দেয়া ইত্যাদি।

    আপনার ব্লাড প্রেসার এর সংখ্যা দেখে ডাক্তাররা অনেক ধরনের সিদ্ধান্ত নেয়। আপনার ওষুধ কাজ করছে কিনা, ওষুধের ডোজ বাড়াতে হবে কিনা,নতুন ওষুধ যোগ করতে হবে কিনা ইত্যাদি।নিয়ম না জানার  কারণে কিংবা ভুল বা অসতর্কতার কারণে আপনার প্রেসার সংখ্যাগুলো যদি বেশি হয় তাহলে ব্লাড প্রেসার নিয়ন্ত্রণে থাকার পরেও মনে হবে যে সেটা নিয়ন্ত্রণে নেই। তখন  যে ওষুধ আপনার প্রয়োজন নেই সেটা আপনাকে খেতে দেয়া হবে। ওষুধ যেখানে কমানো যেত সেখানে হয়তো ওষুধ বাড়িয়ে দেয়া হবে। আর প্রেসার হাই এই চিন্তা করে আপনি এবং আপনার আপনজন টেনশন করতে থাকবে। 

    এখন বলব প্রেসার মাপার সময় পা কিভাবে রাখবেন? 

    পায়ের পাতা গুলো মেঝের উপর সমান ভাবে রাখবেন। একটা ছোট টুলের ওপরেও রাখতে পারেন। অনেকেই খাটের এক পাশে বসে পা ঝুলিয়ে প্রেসার মাপেন পায়ের পাতা নিচে কিছু না রেখে পা ঝুলে প্রেসার মাপলে প্রেসার বেশি আসতে পারে। আবার পা একটার উপর আর  একটা উঠিয়ে বসা যাবে না। এমন করলে পায়ের রক্তনালীতে চাপ পড়ে ফলে প্রেসার হালকা বেশি আসতে পারে। প্রেসার এর উপরে সংখ্যা 5 থেকে 8 পয়েন্ট  পর্যন্ত বেড়ে যেতে পারে।আর নিচের সংখ্যাটা পাঁচ পয়েন্ট পর্যন্ত বাড়তে পারে।

    প্রেশার মাপার সময় হাত কোথায় ও কিভাবে রাখবেন? 

    আপনার হাত থাকতে হবে হার্টের লেভেল বরাবর। হার্টের লেভেল হচ্ছে বুকের মাঝখানে  হাড্ডির মাঝ বরাবর।আপনার হাতের রক্তনালীর ভিতরে যে রক্ত প্রবাহ হচ্ছে এটা থেকেই মেশিন প্রেসার মাপবে  হাতের মাংস পেশি সংকুচিত হয়ে থাকলে প্রেসার বেশি আসবে। 

    হাতের উপর জামা কাপড় থাকলে কি করবেন? 

    প্রেসার মাপার সময় হাত থেকে কাপড় সরিয়ে নিতে হবে। তাই ছোট হাতের শার্ট গেঞ্জি বা জামা পড়বেন, যাতে সহজেই প্রেসার  মাপা যায়।

    নিরাপদ এ থাকবেন|

  • ধূমপান ছাড়তে যে উপায় অবলম্বন করবেন। 

    ধূমপান ছাড়তে যে উপায় অবলম্বন করবেন। 

    ধূমপান ছাড়তে চান কিন্তু পারছেন না। তাহলে এই আলোচনাটি আপনার জন্য। 

    ধূমপান ছাড়তে গিয়ে অনেকে মাঝপথে মনোবল হারিয়ে ফেলেন। তাই প্রথমে বুঝিয়ে বলছি ধূমপান করলে আপনার শরীরে কি কি ঘটে। আপনারা জানেন অক্সিজেন  ছাড়া মানুষ বাঁচতে পারে না। আমাদের নিঃশ্বাসের সাথে অক্সিজেন প্রথমে ফুসফুসে যায়, সেখান থেকে ঢুকে যায় রক্তে।ফুসফুসে আছে কোটি কোটি বায়ু ধূলি, এ বায়ু ধুলি দিয়ে ফুসফুস থেকে অক্সিজেন রক্তে প্রবেশ করে।

    ধুমপান আপনার ফুসফুসের বায়ু  ধুলিগুলোকে ধ্বংস করতে থাকে। একবার ধ্বংস হলে  বায়ু ধুলি আবার নতুন করে তৈরি হয় না। কোটি কোটি বায়ু ধুলি থাকার কারণে কিছু নষ্ট হলে আমরা বুঝতে পারিনা, তবে নিরবে ফুসফুসের ক্ষতি হতে থাকে।

    দিনে দিনে অনেক পরিমাণ বায়ু ধুলি ধ্বংস হলে শুরু হয় শ্বাসকষ্টের রোগ। এই শ্বাসকষ্টের রোগ শুরু হলে তা থেকে আর পুরোপুরি সেরে ওঠার উপায় নেই।

    শ্বাস কষ্টের পাশাপাশি ধূমপান ফুসফুসের ক্যান্সারের ঝুঁকি বাড়ায় অন্তত ২৫ গুণ। শুধু ফুসফুস নয় শরীরে সবখানেই ক্যান্সার সৃষ্টি করতে পারে ধূমপান।

    মুখ, গলা, পাকস্থলী,লিভার, কিডনি,মুত্রথলী, জরায়ু,এমন লম্বা একটা লিস্ট।কিছু  ধুমপানকারি কে  বলতে শুনেছি ,ধূমপান তো মাত্র  ঝুঁকি বাড়ায়, তার মানে হতেও পারে নাও হতে পারে। আমার হয়তো হবে না। এই চিন্তা যারা করেন তাদের জন্য দুইটা সংখ্যা তুলে ধরছি,

    এক, যারা ধূমপান করে, তাদের প্রতি দুইজনের মধ্যে একজনের মৃত্যু ঘটায় ধূমপান।অর্থাৎ জগতের যত মৃত্যুর কারণ আছে সে সবগুলো কারণ মিলে  ৫০ জন ধুমপাই মৃত্যু ঘটালে বাকি ৫০ জনের মৃত্যু ধূমপান একাই ঘটায়। 

    দুই, ধূমপান কারীরা গড়  এ   ৮ থেকে ১০ বছর কম বাঁচে। অর্থাৎ আপনার অধুমপাই  বন্ধু ৭০ বছর বাঁচলে ,আপনার বাঁচার সম্ভাবনা ৬০  থেকে ৬২ বছর। আবার কিছু ধূমপানকারী আছেন তারা বলেন, মৃত্যু যখন আসবে আসবেই। ক্যান্সারের ভয় করিনা। যতদিন বেঁচে আছি আনন্দে বাঁচতে চাই। এখানে সমস্যা হল ধূমপান মৃত্যুর আগেও আপনার আনন্দ সহ্য করতে পারে না।

    ধূমপান দীর্ঘদিন করলে প্রজনন ক্ষমতা কমে যাওয়া অর্থাৎ বাচ্চা হতে সমস্যা হওয়া। বাচ্চা হলে বাচ্চার শরীরে জন্মগত ত্রুটি থাকা। অল্প বয়সে চামড়া ভাজপরা হার নরম হয়ে যাওয়া যে কারণে হাড় ভেঙ্গে যেতে পারে। দাঁত মাড়ি নষ্ট হয়ে যাওয়া ,দাঁত পড়ে যাওয়া, চোখে ছানি পড়া ,শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যাওয়া, কারণে করোনা হলে ঝুঁকি বেশি।

    ধূমপান হার্ট এটাক ও স্ট্রোকের ঝুঁকি বাড়ায়। এটা শুনলে অনেকেই বলেন,যারা ধূমপান করে না তাদেরও তো হার্ট অ্যাটাক স্ট্রোক, হয়।কথা ঠিক কিন্তু যুক্তি ভুল। এ কথাগুলা শোনার পর কেউ কেউ বলেন,ধূমপান করে শরীরে যা ক্ষতি হওয়ার  সেগুলো তো হয়ে গেছে,এখন আর ধূমপান ছেড়ে  কোন লাভ হবে না। এটা সম্পূর্ণ একটা ভুল কথা। আপনি যতদিন ধরে ধূমপান করেন না কেন, যে মুহূর্ত থেকে আপনি ধূমপান ছাড়বেন তখন থেকেই আপনার শরীর নিজেকে মেরামতের কাজ শুরু করে দিবে।

    কি মেরামত করে?

    শেষ সিগারেট খাওয়ার

    • ২০ মিনিটের মধ্যেই হার্ট বিট  ও ব্লাড প্রেসার স্বাভাবিক হয়ে আসতে থাকে।
    • ৮ ঘণ্টার মধ্যে রক্তে অক্সিজেনের পরিমাণ স্বাভাবিক হতে শুরু করে।
    • ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে শরীর থেকে সব ক্ষতিকর কার্বন মনোক্সাইড দূর  হয়ে যায়, নাকের ঘ্রাণ ও মুখের স্বাদ ফিরে আসে,
    • ৭২ ঘণ্টার মধ্যে শ্বাসতন্ত্র প্রসারিত হওয়া শুরু করে ফলে শ্বাস নেয়া সহজতর হয়।
    • তিন থেকে নয় মাসের মধ্যে ফুসফুসের ক্ষমতার ১০% পর্যন্ত বাড়তে পারে।
    • এক বছর এর মধ্যে  আপনার হার্ট অ্যাটাকের ঝুঁকি অর্ধেকে নেমে আসে।
    • পাঁচ বছরের মধ্যে, মুখ ,গলা খাদ্যনালী, আর মূত্রথলির ক্যান্সার এর ঝুঁকি অর্ধেকে নেমে আসে। জরায়ু ক্যান্সার আর স্টকের ঝুঁকি একজন অধুমপায়ীর সমান হয়ে যায়।
    • দশ বছর পর ফুসফুসের ক্যান্সারে মৃত্যু হওয়ার  ঝুঁকি অর্ধেকে নেমে আসে।
    • পনেরো বছর পর আপনার হার্ট অ্যাটাকের ঝুঁকি আর যে কখনো ধূমপান করেনি তার হার্ট এটাকের ঝুঁকি সমান হয়ে যায়।

    আশা করি আপনার ধূমপান ছাড়ার মনোবল শক্ত হয়েছে। 

    এখন বলে দিচ্ছি ধূমপান ছাড়ার সাতটি পরামর্শ। 

    এক ,সিগারেট এ আর একটাও টান দেয়া যাবে না। যখন আপনি সিদ্ধান্ত নিয়ে নিয়েছেন ধূমপান ছাড়বেন তারপর থেকে আর একটাও সিগারেট ব্যবহার করবেন না। গবেষণায় দেখা গেছে জাস্ট একটা সিগারেট বা শুধু একটা টান দেবে এমন চিন্তা থাকলে একটা ধূমপানকারী আবার আগের মতো নেশায় জড়িয়ে যায়। তাই চিন্তা শক্ত  থাকতে হবে। যাতে একটা সিগারেটও ব্যবহার করা যাবে না। 

    যেসব জায়গায় আপনি ধূমপান করতেন পারলে সে সব জায়গায় ত্যাগ করুন। 

    দুই ,ধূমপান বন্ধ করলে প্রথম কিছুদিন আপনার খারাপ লাগবে। এই খারাপ লাগার কাটিয়ে ওঠার পরিকল্পনা আগে থেকে করে নিতে হবে।শরীরে যেসব প্রতিক্রিয়া, দেখা দিতে পারে অস্থিরতা,মেজাজ খিটখিটে হওয়া,ক্লান্ত লাগা ঘুমের সমস্যা,কোষ্ঠকাঠিন্য ,কোন কাজে মনোযোগ না আসা এগুলো দেখা দিলে ঘাবড়ে  যাবেন না। জানবেন এগুলা স্বাভাবিক এবং কিছুদিনের মধ্যেই সেরে যাবে। 

    তিন ,ধূমপানের ইচ্ছা দমন করার উপায় বের করে রাখতে হবে। যখন সিগারেট টান দিতে খুব ইচ্ছা করবে তখন ঠেকানোর চেষ্টা করবেন। নিজের মনকে অন্যদিকে নিতে হবে। বিভিন্ন ধরনের কাজে নিজেকে ব্যস্ত রাখতে হবে। একজন বন্ধু নির্ধারণ করে রাখবেন আপনার প্রিয় কোন বিষয় গল্প শুরু করবেন। যে কারণে আপনি ধূমপান ছাড়তে চান সেটা চিন্তা করেন। বাইরে থেকে একটু হেটে আসতে পারেন শারীরিক ব্যায়াম করতে পারেন। ধুমপান করেনা এমন বন্ধুর সাথে বেশি সময় কাটান। কেউ আপনাকে ধুমপান করতে বললে সেটা কিভাবে না বলবেন সেটা চিন্তা করবেন। প্রতিদিন ৫ মিনিট করে ব্যায়াম করলেও তা ধূমপানের ইচ্ছা কমাতে সাহায্য করতে পারে। 

    ছয় ,কিছু ওষুধ ,নিকোটিন প্যাচ,ইনহেলারস,স্প্রে আপনাকে এগুলা ব্যবহার করতে পারেন এগুলা ধূমপানের তাড়না  কমাবে। চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে যেটা আপনার জন্য ভালো হয় সেটা শুরু করতে পারেন।

    সাত ,ছেড়ে দেওয়ার পরে আবার ধূমপান করলে নিরাশ হবেন না। সিংহভাগ ধূমপাই প্রথম অবস্থায় ধূমপান ছাড়তে ব্যর্থ হয়। তাই বলে নিরাশ হবেন না।যারা ধূমপান সেরেছেন তাদের মধ্যে বেশিভাগ সফল হয়েছে কয়েকবার চেষ্টা করার পরে। তাই আপনি ছাড়ার প্রক্রিয়া শুরু করার পরে কোন কারণে যদি একবার ধূমপান করে ফেলেন নিরাশ হবেন না। কোন পরিস্থিতিতে আপনি নিজেকে আটকাতে পারেননি সেটা যাচাই করবেন, যাতে একই ভুল আর না করেন। প্রয়োজনে ডাক্তারের পরামর্শ নিন তবে ধূমপান বন্ধ না  করে হাল ছাড়বেন না। 

    নিরাপদে থাকবেন।

  • হঠাৎ ব্লাড প্রেশার বেড়ে গেলে কী করবেন?

    হঠাৎ ব্লাড প্রেশার বেড়ে গেলে কী করবেন?

    যারা উচ্চ রক্তচাপ বা হাই ব্লাড প্রেসারে ভুগছেন তাদের ব্লাড প্রেসার যদি দ্রুত অনেক বেড়ে যায় তখন একটা বিপজ্জনক অবস্থার সৃষ্টি হতে পারে। এখন আলোচনা করব কি কি ভুলের কারণে প্রেসার অনেক বেড়ে যেতে পারে। আর বেড়ে যদি যাই তবে কি করবেন? শুরু করছি কারণ গুলো ভালো ভাবে বুঝিয়ে বলতে,

    সবচেয়ে কমন কারণ হলো, হাই ব্লাড প্রেসার চিকিৎসা না হওয়া বা অপর্যাপ্ত চিকিৎসা হওয়া। 

    কখন এমন হতে পারে? 

    চারটা উদাহরণ দিচ্ছি। 

    এক, যদি রোগী না জানে যে তার উচ্চ রক্তচাপ আছে। গবেষণায় দেখা গেছে উচ্চ রক্তচাপের অর্ধেক রোগী জানেন না যে তারা এ রোগে ভুগছেন। কারণ এ রোগের সাধারণত কোন লক্ষণ দেখা যায় না। একমাত্র ব্লাড প্রেসার মাপলে বোঝা যায় কার উচ্চ রক্তচাপ আছে। গত এক বছরে যারা রক্তচাপ মাপেন নেই তারা তো জানবে না তাদের এই রোগ আছে কিনা। না, জানলে চিকিৎসাও হবে না। জীবনযাপনে কোন পরিবর্তনও আসবে না। তখন রক্তচাপ অনেক বেড়ে যাওয়ার ঝুঁকি থাকে। 

    দুই, ব্লাড প্রেসার ওষুধ খাওয়া বন্ধ করে দেওয়া। 

    অনেকে ডাক্তারের পরামর্শে ব্লাড প্রেসার ওষুধ খাওয়া শুরু করেন। তারপর একটু সুস্থ বোধ করলে ডাক্তারের পরামর্শ না নিয়ে নিজে নিজে ওষুধ খাওয়া বন্ধ করে দেন। হাই ব্লাড প্রেশার নীরবে শরীরের বিভিন্ন অঙ্গ পতঙ্গ ক্ষতি করতে থাকে। যেমন ধরেন, উচ্চ রক্তচাপের কারণে রক্তনালী ক্ষতি হওয়া একটা কমন ব্যাপার। রক্তনালীর এই ক্ষতি হঠাৎ একদিন  রক্তচাপ অনেক বাড়িয়ে দিতে পারে। এজন্য ডাক্তার পরামর্শ ছাড়া ওষুধ বন্ধ করতে নিষেধ করেন। 

    তিন, ব্লাড প্রেসার এর ওষুধ কমিয়ে খাওয়া। 

    ডাক্তার দুইটা ওষুধ দিয়েছিল কিন্তু আপনি একটা ওষুধ খাচ্ছেন। অথবা ডাক্তার বলেছেন দুই বেলা ওষুধ খেতে আপনি এক বেলা করে খাচ্ছেন। এমনটা করার কারণে আপনার ব্লাড প্রেসার বেড়ে যেতে পারে। এটা হয়তো আপনি বুঝতেও পারবেন না। একটা ব্যাপার স্পষ্ট করে দিচ্ছি  ব্লাড প্রেসারের ওষুধ সারা জীবন একই পরিমাণে খেতে হবে ব্যাপারটা এমন না। অবশ্যই পরিস্থিতি অনুযায়ী বাড়ানো বা কমানো যাবে। এমনকি ঔষধ বন্ধ করা যেতে পারে। কিন্তু সেটা হতে হবে আপনার ব্লাড প্রেসার কত? শরীরে অন্যান্য কি কি রোগ আছে,ইত্যাদি বিষয়ে যত্ন সহকারে বিবেচনা করে। এই বিবেচনা টি নিজে না করে অনুগ্রহ করে ডাক্তারের পরামর্শ নিবেন,না হলে বিপদ হতে পারে। 

    চার, ওষুধ খেতে ভুলে যাওয়া। প্রেসারের ওষুধ সাধারণত প্রতিদিন খেতে হয়। কিন্তু হাই ব্লাড  প্রেসার হলে রোগী  সাধারণত কোনো ব্যথা বা অস্বস্তিতে থাকেন না, তাই অনেক সময়  রোগী ওষুধ খেতে ভুলে যান। 

    এছাড়াও প্রেসার হঠাৎ বেড়ে যাওয়ার আরো কিছু কারণ রয়েছে। সেগুলা হচ্ছে মানসিক চাপ, কিডনি বা থাইরয়েড এর রোগ ইত্যাদি।

    এখন আসি প্রেসার হঠাৎ বেড়ে গেলে কি করনীয়? 

    আপনি প্রেসার মেপে দেখলেন উপরেরটা ১৮০ বা  নিচেরটা  ১২০ এর বেশি। তারপর আপনার প্রথম কাজ হল, না ঘাবড়ানো। শান্ত হয়ে বসুন। তারপর পাঁচ মিনিট পরে আবার সঠিক নিয়মে  ব্লাড প্রেসার মাপুন। দ্বিতীয়বার মাপার পরও যদি প্রেসার বেশি আসে তাহলে আপনাকে ব্যবস্থা নিতে হবে আর দেরি করা যাবে না

    কি কি  ব্যবস্থা নিবেন সেটা দুই ভাগে ভাগ করে বলবো
    প্রথম ভাগ হলো যাদের প্রেসার হাই কিন্তু আর কোন লক্ষণ নাই তাদের জন্য। 

    দ্বিতীয় ভাগ হল, যাদের প্রেশার হাই এবং সাথে  অন্যান্য লক্ষণ আছে তাদের জন্য। 

    প্রথমে বলেই যাদের প্রেসার হাই কিন্তু আর কোন লক্ষণ নেই। এমন তাহলে প্রথম কাজ হল খুঁজে বের করা কেন প্রেসার এত বেড়ে গেল? 

    প্রেসারের ওষুধ ঠিকমত কাজ করছে না,নাকি শরীরে অন্য কোন সমস্যার সৃষ্টি হল। একটা সূক্ষ্ম কাজ,যার জন্য প্রয়োজন মেডিকেল নলেজ। এটা বাসায় বসে নিজে নিজে করা ঠিক হবে না। তাই একজন ডাক্তারের পরামর্শ নিতে হবে। ডাক্তারের কাছে যাওয়া আগ পর্যন্ত প্রতি  ঘণ্টায় প্রেসার মেপে দুটো সংখ্যায় কাগজে লিখে রাখবেন,রাতে লিখবেন কয়টা সময় এ প্রেসার মেপেছেন। দুই, আপনি ব্লাড প্রেসারের কি কি ওষুধ খান, কি পরিমানে কোন সময় খান? কোন কোন বেলায় ওষুধ খেতে মিস করেছেন। এসব তথ্য আর কাগজপত্র একত্র করবেন। অন্য কোন ওষুধ খেয়ে থাকলে সেটা হোমিওপ্যাথি হোক বা ভেষজ হোক সেগুলো  সাথে করে নিয়ে যাবেন।এই দুইটা তথ্য পেলে চিকিৎসকের জন্য সহজ হবে আপনার শরীরে কি হচ্ছে সেটা বোঝা এবং তিনি প্রকৃত অবস্থা জেনে শুনে একটা সুচিন্তিত মতামত দিতে পারবেন। 

    উচ্চ রক্তচাপ অনেকদিন থাকলে বিপদ আসন্ন। তাই খুব কড়া নজর রেখে রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে আনতে হবে। 

    এখন বলব প্রেসার বাড়ার পাশাপাশি বাহ্যিক লক্ষণ দেখা দিল কি করবেন? 

    এ লক্ষণ গুলো কি কি? 

    • মাথা ব্যথা। 
    • চোখে ঝাপসা দেখা। 
    • বমি ভাব। 
    • বমি ।
    • কনফিউশন বা আবোল তাবোল বকা ভুলে যাওয়া ,ঝিমিয়ে পড়া। 

    অচেতন বা অজ্ঞান হয়ে পড়া,খিচুনি,মুখ বেঁকে যাওয়া,হাত বা পা অবশ হয়ে যাওয়া,মুখের কথা আটকে যাওয়া,পিঠে বা পেটে ব্যথা,অস্থির লাগা,বুকে ব্যথা, শ্বাসকষ্ট ,প্রসাবের পরিমাণ কমে যাওয়া।এমন হলে নিজে নিজে ওষুধ খেয়ে প্রেসার কমানোর চেষ্টা করবেন না। কারণ এ অবস্থায় খুব সতর্ক সহকারে প্রেসার কমাতে হয়। এমনকি কিছু ক্ষেত্রে প্রেসার কমালে করে ধোয়ার সম্ভাবনা আছে। কেমন রোগী  যদি স্ট্রোক করে থাকে।সাথে সাথে প্রেসার কমানো হয় না,তাতে ব্রেনের রক্ত চলাচল আরো কমে যেতে পারে। আবার কিছু ক্ষেত্রে প্রেসার খুব দ্রুত নামিয়ে আনা লাগে।সাধারণত শিরায় ইনজেকশন দিয়ে প্রেসার কমানো হয়,  মুখের ওষুধ দেওয়া হয় না, মাথা ঠান্ডা রেখে কিভাবে দ্রুততম উপায়ে রোগীকে ইমারজেন্সি বিভাগে নেয়া যায় সেটা পরিকল্পনা করুন।

    অনেকে জিজ্ঞেস করেন টক খেলে বা তেঁতুল খেলে সাথে সাথে প্রেসার কমবে কিনা?
    উত্তর হল,  না। 

    তাৎক্ষণিকভাবে  প্রেশার কমানোর এটা সঠিক উপায় নয়। তবে দীর্ঘ মেয়াদে তেঁতুল খেলে একটা উপকার আছে, কারণ তেতুল একটা ফল, আর রক্তচাপের রোগীকে  আমরা দিনে চার থেকে পাঁচটা মাঝারি সাইজের ফল খেতে বলি। কারণ ফলে তুলনামূলক বেশি পটাশিয়াম থাকে, তাছাড়া রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে।তেতুলে ভালো পরিমাণে পটাশিয়াম আছে। অন্যান্য ফল যেমন, খেজুর কমলা, কলা আম, গাজরেও পটাশিয়াম আছে। শুধু তেতুল খেতে হবে এমন কোন কথা নয়। 

    নিরাপদে থাকবেন।

  • হাই ব্লাড প্রেশার কমানোর ঘরোয়া উপায়

    হাই ব্লাড প্রেশার কমানোর ঘরোয়া উপায়

    উচ্চ রক্তচাপ বা হাই ব্লাড প্রেসার এই রোগটার প্রতিকার নিয়ে আজকে বিস্তারিত আলোচনা করব,

    শুরু করছি কিভাবে উচ্চ রক্তচাপের সৃষ্টি হয় সেটা  সহজ ভাষায় বুঝিয়ে বলতে,

    আমাদের শরীরের রক্ত নালীগুলো রাবারের মত সেটা প্রসারিত ও সংকুচিত হতে পারে কিন্তু এই রক্তনালী যদি শক্ত হয়ে যায় তখন প্রয়োজন মত প্রসারিত হতে পারেনা, রক্ত চলাচলে বাধা বেড়ে যায় দেখা দেয় হায় ব্লাড প্রেসার। এছাড়াও প্রেসার বাড়ার আরো কিছু  সূক্ষ্ম কারণ রয়েছে।

    এখন খুব সহজ করে বুঝিয়ে বলছি প্রেসার বেড়ে গেলে কি কি সমস্যার সৃষ্টি হতে পারে ?

    এক, উচ্চ রক্তচাপের ফলে রক্ত নালি গুলো দুর্বল হয়ে যেতে পারে, রক্তনালী গুলোর  দেয়াল পাতলা হয়ে বেলুনের মতো ফুলে ওঠে সেটা হঠাৎ ছিড়ে  যেতে পারে তখন ব্রেনে মারাত্মক রক্তক্ষরণ দেখা দেয়, একই সমস্যা পেটের রক্তনালিতেও হতে পারে 

    দ্বিতীয় যে সমস্যাটা হতে পারে সেটা হল রক্তনালীতে চর্বি জমা সুস্থ স্বাভাবিক রক্তনালী তার গায়ে চর্বি জমতে দেয় না তবে উচ্চ রক্তচাপ রক্তনালীকে ক্ষতিগ্রস্ত করতে থাকে তখন রক্ত  নালিগুলোর  গায়ে চর্বি  কোলেস্ট্রল ও ক্যালসিয়াম ডমাট বাঁধতে  পারে আস্তে আস্তে এই চর্বি জমাট বড় হয় রক্তনালী সরু হয়।কিছু ক্ষেত্রে দেখা যায় চর্বির গায়ে এসে  রক্ত জমাট বাঁধে এক পর্যায়ে রক্তনালীর মুখ পুরোটাই বন্ধ হয়ে যেতে পারে তখন রক্ত আর সামনে আগাতে পারে না, এটা খুবই মারাত্মক ঘটনা 

    আপনারা নিশ্চয়ই ব্রেইন স্টক আর হার্ট অ্যাটাকের কথা শুনেছেন এইটা সেই ঘটনা ,

    ব্রেন এর রক্তনালী বন্ধ হলে হয় স্ট্রোক তখন ব্রেইনের এক  অংশ আর  রক্ত পায় না কোষগুলো মরে যায় 

    একইভাবে হার্টের রক্তনালী বন্ধ হলে হয় হার্ট অ্যাটাক। এছাড়াও হাই ব্লাড প্রেসার দীর্ঘদিন থাকলে আরো অনেক ধরনের সমস্যা দেখা দিতে পারে যেমন হার্ট দুর্বল হয়ে ,যাওয়া কিডনি ওকেজো হয়ে যাওয়া দৃষ্টিশক্তিতে সমস্যা দেখা দেয়া ইত্যাদি।

     হাই ব্লাড প্রেসার এর সবচেয়ে ভয়ংকর দিক হচ্ছে এর নীরবতা। হাই  ব্লাড প্রেসার যখন শরীরে  দেখা হয় তখন কোন ব্যথা বা অসুবিধা সৃষ্টি করে না, অধিকাংশ মানুষই আমরা এটাকে অগ্রাহ্য করি তখন হাই ব্লাড প্রেসার শরীরে  আস্তে আস্তে ক্ষতি করতে থাকে।

    হাই ব্লাড প্রেসারে কি খাওয়া যাবেনা?

    প্রথমে বলি লবণ, দিনে কতটুকু লবণ খাচ্ছেন সেদিকে সতর্ক নজর রাখতে হবে দিনের চা চামচের পরিমাণে পনে এক চা চামচ থেকে কম লবণ খাবেন।

    কি কি উপায়ে লবণ খাওয়া কমানো যায়? 

    নয়টা উপায় বলবো। 

    এক ,

    ভাত খাওয়ার সময় আলাদা করে কাচা লবণ খাবেন না।

    দুই ,

     অনেকের কাছে মনে হয় ভাজা লবন খেলে কোন ক্ষতি নেই। লবণ ভাজা হোক বা কাঁচা হোক উভয়ই সোডিয়াম থাকে। আর সোডিয়াম ব্লাড প্রেসার বাড়ায়। তাই তরকারিতে লবণ কম দিতে হবে। 

    তিন,

    সয়া সস, বিট লবণ, টেস্টি সল এগুলোতে বেশি পরিমাণে লবণ থাকে। রান্নায় তাই এগুলার বদলে অন্য কিছু ব্যবহার করবেন। 

    ৪,

    বাসায় রান্না করা খাবার,কিছু প্রাকৃতিক খাবারেও লবণ একটু বেশি থাকে ,সেগুলো এড়িয়ে চলবেন। খেলেও অল্প পরিমাণে খাওয়ার চেষ্টা করবেন। যেমন চিংড়ি মাছ,পুডিং কিছু কিছু ভর্তা বা আচার ইত্যাদি ।বাজার থেকে কেনা খাবার। 

    পাঁচ,

     বাজার থেকে কেনা খাবার।রাস্তার পাশে টঙের দোকানের খাবার। হোটেল কিংবা রেস্টুরেন্টের খাবার যতটা পারেন এড়িয়ে চলুন। এগুলোতে কতটুকু লবণ দেয়া আছে? এটা আপনার জানা নেই। ব্লাড প্রেসারের রোগীদের অল্প লবন দিয়ে খাবার রান্না করা দরকার এবং লবণ পরিহার করা। 

    ৬,

    সয়া সস , টমেটো কেচাপ এড়িয়ে চলবেন। এগুলোতে অনেক লবণ থাকে। 

    ৭ ,

    নাস্তায় পুরি, সিঙ্গারা ,চপ ,নলডন্স,চিপস, স্যান্ডউচ,এসব পরিহার করলে নিজের অনেক উপকার করবেন। নাস্তার জন্য একটা ফল খেতে পারেন তবুও এগুলা খাবেন না। ফল আবার বিট লবণ দিয়ে মাখিয়ে খাবেন না। 

    ৮ ,

    যারা প্রক্রিয়াজাত খাবার কিনেন যেমন  পাস্তা নুডুলস ইত্যাদি তারা প্যাকেটের গায়ে লবনের পরিমাণ দেখে কিনবেন। লবণ কম আছে এমন অপশন থাকলে সেটা দেখে কিনবেন। 

    নয়,

    দাওয়াতে গেলে পোলাও বা ফ্রাইড রাইস না নিয়ে সাদা ভাত খাবেন। কারণ ভাত আমরা সাধারণত লবণ ছাড়াই রান্না করি। নান রুটি না নিয়ে সাধারণ শেখা রুটি  খাবেন লবণ পরিহার করার জন্য। 

    ফ্যাট ,তেল, চর্বি জাতীয় খাবার এড়িয়ে চলবেন। দিনে তিন চা চামচের বেশি তেল খাওয়া যাবে না। সেটা  মাছ-মাংস সবজি তরকারির সাথে হোক বা নাস্তার ভাজা পড়ার সাথেই হোক।

    খাবারের ফ্যাট কমানোর ছয়টি উপায় বলছি 

    এক ,রান্নায় তেল ঢালার সময় চা চামচ ব্যবহার করবেন।তাহলে কতটুকু তেল দিচ্ছেন সেটা হিসাব রাখতে  সুবিধা হবে। 

    ২,মাংস খেতে হলে চর্বি ছাড়া মাংস বেছে  নিবেন।

    তিন, মুরগির চামড়া খেতে মন চাইলেও এড়িয়ে চলবেন। কারন মুরগির চামড়ায় অনেক ফ্যাট থাকে। 

    ৪ ,ঘি  আর মাখন থেকে দূরে থাকবেন। কারণে এগুলোতে ফ্যাটের পরিমাণ বেশি। 

    ৫,  দুধের সর ফুল ক্রিম বা ফুল ফ্যাট দুধ এবং মিষ্টি দই খাবেন না। টক দই খাবেন। 

    ৬,ডিম ভেজে না খেয়ে সিদ্ধ করে বা পজ  করে খাওয়ার চেষ্টা করবেন। একটা ডিম ভাজতেই অনেকে এক থেকে দুই চামচ তেল ব্যবহার করেন।

    এবার আসি খাবারের তালিকা থেকে কমাতে হবে এমন তিন নম্বর খাবারে। সেটা হলো চিনি,

    সারা সপ্তাহের খাবারে যাদের দুই থেকে পাঁচ টেবিল চামচের কম চিনি থাকে। এ বিষয়ে দুইটি টিপস। 

    এক,

    কোক ,সেভেন আপ,সফট ড্রিংকস প্রচুর পরিমানে চিনি থাকে এগুলো একদম না খাওয়াই ভালো।

    দুই ,

    টমেটো কেচাপ।এটাতে ভালো পরিমাণ চিনি থাকে। এটাতে লবন থাকে তাই এটা বাদ দিতে হবে। 

    লবণের মতোই তেল এবং চিনি বিভিন্ন রান্নার  উপকরণ এবং খাবারের মধ্যে লুকিয়ে থাকতে পারে। তাই বুদ্ধি খাটিয়ে সতর্কতার সাথে রান্না করা এবং খাবার খাওয়া সম্পন্ন করতে হবে।

    এবার আসি কি খাবেন? 

    কিছু কিছু খাদ্যে পটাশিয়াম থাকে যেটা রক্তচাপ কমায়। কোন খাবারে পটাশিয়াম থাকে আর কিভাবে বেশি পটাশিয়াম খাবেন,তিনটা উপায় বলছি। 

    এক ,দিনে চার থেকে পাঁচটা মাঝারি সাইজের ফল খাবেন বা  সপ্তাহে অন্তত প্রতিদিন দুইটা করে ফল খাবেন।

    দুই ,

    দিনে দুই থেকে আড়াই কাপ কাটা বা রান্না করা সবজি খাবেন।অল্প অল্প করে পরিবর্তন করুন যদি সবজি তেমন খাওয়া না হয় তাহলে সিদ্ধান্ত নেন আপনি আগামী সপ্তাহে প্রতিদিন অন্তত একবেলা সবজি খাবেন। ফল আর শাকসবজিতে প্রাকৃতিকভাবে পটাশিয়াম মজুদ আছে। এগুলো আপনাকে রক্তচাপ কমাতে সাহায্য করে। পটাশিয়াম বাড়ানোর জন্য ভুলেও নিজে নিজে পটাশিয়াম ট্যাবলেট খাওয়া শুরু করবেন না। 

    খাদ্যে পটাশিয়াম বাড়ানোর তৃতীয় উপায় হল দুধ এবং দই। ফুল ক্রিম দুধ আর মিষ্টি দই খাওয়া যাবে না। কারণ সেগুলোতে ফ্যাট বেশি। খেতে হবে ফ্যাট ফ্রী দুধ কিংবা টক দই। দিনে দুই থেকে তিন কাপ ফ্যাট ফ্রি দুধ ও টক দই খেতে পারেন।

    যাদের উচ্চ রক্তচাপের পাশাপাশি অন্য রোগ আছে যেমন কিডনি রোগ আছে। অবশ্য একজন ডাক্তার বা পুষ্টিবিদের  পরামর্শ নিবেন।

    এবার  আসি খাবার ছাড়া আর কি কি উপায়ে উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ রাখা  যেতে পারে। উপায় বলবো। 

    এক ,ঔষধ,রক্তচাপ  নিয়ন্ত্রণে রাখার জন্য ঔষধের  প্রয়োজন হতে পারে।আপনার  অবস্থা অনুযায়ী ডাক্তার আপনাকে ঔষধ দিবেন দয়া করে ডাক্তারের পরামর্শ ছাড়া এই ওষুধ বন্ধ করবেন না। 

    দুই, অতিরিক্ত ওজন কমানো। প্রতি এক কেজি অতিরিক্ত ওজন কমালে রক্তচাপ সাধারণত এক পয়েন্টের মতো কমে। যাদের ওজন বেশি। চেষ্টা করুন। 

    তিন ,নিয়মিত শরীর চর্চা করা। সপ্তাহে আড়াই ঘন্টা পরে নিয়মিত শরীর  চর্চা করতে পারলে রক্তচাপ ৫ পয়েন্ট পর্যন্ত কমতে পারে। সপ্তাহে অন্তত পাঁচ দিন আধা ঘন্টা করে দ্রুত হাটতে। একটা জিনিস উচ্চ রক্তচাপের রোগীরা করবেন না সেটা হল ধূমপান। ধুমপান উচ্চ রক্তচাপ ও হার্টের ঝুঁকি বাড়ায়। তাই ধূমপান ত্যাগ করতে হবে। 

    নিরাপদে থাকবেন।

  • পাইলসের কার্যকরী ঘরোয়া সমাধান 

    পাইলসের কার্যকরী ঘরোয়া সমাধান 

    পাইলস বা অর্শ রোগ

    পাইলস একটি অতি পরিচিত স্বাস্থ্য সমস্যা। এটি অর্শ রোগ নামেও পরিচিত। অনেকেই এই সমস্যায় দীর্ঘদিন ভুগলেও এ ব্যাপারে পরামর্শ চাইতে বা ডাক্তার দেখাতে সংকোচ বোধ করেন। ক্ষেত্রবিশেষে পাইলস এর সঠিক চিকিৎসার বদলে হোমিওপ্যাথি, কবিরাজি ঔষধ ও অন্যান্য টোটকা গ্রহণ করেন। এসব কারণে পাইলস ক্রমশ জটিল আকার ধারণ করে। তাই পাইলস বা অর্শ রোগ সম্পর্কে বিস্তারিত জেনে এ সম্বন্ধে সচেতন হওয়া জরুরি।

    পাইলস বা অর্শ রোগ কী?

    পায়ুপথ বা পায়খানার রাস্তার মুখ যদি কোনো কারণে ফুলে যায় এবং সেখান থেকে রক্ত পড়ে কিংবা পায়খানার রাস্তায় যদি গোটার মত হয় তখন একে বলা হয় পাইলস। চিকিৎসাবিজ্ঞানের ভাষায় এর নাম হেমোরয়েড। জটিল আকার ধারণ করার আগে অপারেশন ছাড়া অর্শ রোগের চিকিৎসা সম্ভব।

    পাইলস এর লক্ষণগুলো কী?

    পাইলস বা অর্শ রোগের অন্যতম চারটি লক্ষণ নিচে তুলে ধরা হলো। এসব লক্ষণ দেখা দিলে চিকিৎসা শুরু করা জরুরি।

    ১. পায়খানার সাথে রক্ত যাওয়া

    পাইলস হলে পায়খানার সাথে উজ্জ্বল লাল বর্ণের অর্থাৎ তাজা রক্ত যেতে পারে। সাধারণত পায়খানার পরে টয়লেট পেপার ব্যবহার করলে সেখানে রক্তের ফোটা লেগে থাকতে পারে। অথবা কমোডে বা প্যানের গায়ে টকটকে লাল রক্তের ছোপ দেখা যেতে পারে।। পাইলস হলে পায়ুপথের মুখে থাকা অ্যানাল কুশনগুলো থেকে রক্তক্ষরণ হয়। এই রক্ত বেরিয়ে গিয়ে জমাট বাধার সুযোগ পায় না। এ কারণে এক্ষেত্রে তাজা লাল রঙের রক্ত দেখা যায়।

    কিন্তু যদি কোনো কারণে পায়খানার সাথে গাঢ় খয়েরী রঙের রক্ত যায়, বা আলকাতরার মতো কালো ও নরম পায়খানা হয়, তবে তা সাধারণত পাইলস এর কারণে নয়। পরিপাকতন্ত্রের কোনো অংশে রক্তপাতের কারণে পায়খানার সাথে এমন গাঢ় রক্ত যেতে পারে, তাই এমনটা হলে রক্তপাতের কারণ জানার জন্য দ্রুত ডাক্তারের শরণাপন্ন হতে হবে।

    ২. পায়ুপথের মুখের অংশগুলো বেরিয়ে আসা

    পাইল হলে সাধারণত মলত্যাগের পরে অ্যানাল কুশনগুলো নরম গোটার মতো বের হয়ে আসে। এগুলো কিছু সময় পর নিজে নিজেই ভেতরে ঢুকে যায়। অনেকের ক্ষেত্রে এগুলো আঙ্গুল দিয়ে ভেতরে ঢোকানোর প্রয়োজন হতে পারে। আবার কারও কারও ক্ষেত্রে পাইলস এমন পর্যায়ে পৌঁছে যায় যে আঙ্গুল দিয়েও গোটাগুলো ভেতরে ঢোকানো যায় না।

    ৩. পায়খানার রাস্তায় ব্যথা হওয়া

    পাইলস রোগে সাধারণত তীব্র ব্যথা হয় না। তবে যদি পায়ুপথের গোটা এমন পর্যায়ে চলে যায় যে সেগুলো আঙুল দিয়ে ঠেলেও ভেতরে ঢোকানো না যায়, এবং সেগুলোতে রক্ত চলাচল বন্ধ হয়ে যায়, সেক্ষেত্রে অনেক সময় তীক্ষ্ণ বা তীব্র ব্যথা হতে পারে। এই ব্যথা সাধারণত ১-২ দিন স্থায়ী হয়। ব্যথা বেশি হলে ডাক্তারের পরামর্শ নিতে হবে। এছাড়া বিশেষ প্রয়োজনে ঘরোয়া উপায়ে ব্যথার চিকিৎসা করা যায়।

    ৪. পায়খানার রাস্তায় চুলকানি

    পাইলস হলে কখনো কখনো পায়ুপথে বা এর মুখের আশেপাশে চুলকানি হতে পারে। এছাড়া পায়ুপথ দিয়ে মিউকাস বা শ্লেষ্মা-জাতীয় পিচ্ছিল ও আঠালো পদার্থ বের হতে পারে। অনেক সময় মলত্যাগ করে ফেলার পরও বারবার মনে হতে পারে যে পেট পরিষ্কার হয় নি, আবার মলত্যাগ করা প্রয়োজন।

    পারে যে পেট পরিষ্কার হয় নি, আবার মলত্যাগ করা প্রয়োজন।

    পাইলস ও এনাল ফিসার-এর মধ্যে কিভাবে পার্থক্য করবেন? 

    পাইলস ও এনাল ফিসার বা গেজ রোগের লক্ষণগুলোর মধ্যে কিছুটা মিল থাকলেও এই দুইটি পৃথক দুইটি রোগ। দুটি রোগেই পায়ুপথে চুলকানি হতে পারে এবং টাটকা লাল রক্ত যেতে পারে। তবে এনাল ফিসারে রক্ত খুব অল্প পরিমাণে যায়। পাইলস এবং এনাল ফিসার এই দুইটির মধ্যে মূল পার্থক্য হচ্ছে—

    পাইলস হলে পায়ুপথে নরম গোটার মত দেখা দেয়। গোটাগুলো সাধারণত মলত্যাগের পরে বের হয়ে আসে, আবার কিছু সময় পর নিজে নিজেই ভেতরে ঢুকে যায় অথবা আঙ্গুল দিয়ে ভেতরে ঢোকাতে হয়। এছাড়া পাইলস হলে পায়ুপথে শ্লেষ্মার মতো দেখতে পিচ্ছিল কিছু পদার্থ বের হতে পারে।

    এনাল ফিসার বা গেজ রোগের ক্ষেত্রে সাধারণত এসব লক্ষণ দেখা যায় না। আর এক্ষেত্রে প্রতিবার মলত্যাগের সময়ই তীব্র ব্যথা হয়। পাইলসে সাধারণত ব্যথা হয় না। 

    পাইলস কেন হয়?

    কিছু কিছু জিনিস পাইলস এর ঝুঁকি বাড়ায়, সেই সাথে ইতোমধ্যে কারো পাইলস রোগ হয়ে থাকলে তার তীব্রতাও বাড়িয়ে দেয়, যেমন—

    • শক্ত বা কষা পায়খানা
    • মলত্যাগের সময় জোরে চাপ দেয়া
    • অনেক সময় ধরে মলত্যাগের কসরত করা
    • পায়খানার বেগ আটকে রাখা
    • শারীরিক পরিশ্রম না করা 
    • অতিরিক্ত ওজন 

    এছাড়া গর্ভাবস্থায় নানান শারীরিক পরিবর্তনের কারণেও কারও কারও ক্ষেত্রে পাইলস এর ঝুঁকি বেড়ে যায়।

    স্বাভাবিক অবস্থায় পায়খানার রাস্তা বা পায়ুপথের মুখ সাধারণত বন্ধ থাকে। যখন প্রয়োজন হয়, তখন চাপ দিয়ে পায়ুপথের মুখ খুলে শরীর থেকে পায়খানা বা মল বের করে দেওয়া হয়।

    পায়ুপথের মুখ বন্ধ রাখতে সেখানে বেশ কিছু জিনিস একসাথে কাজ করে। তার মধ্যে বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ হল অ্যানাল কুশন। এই কুশনগুলো ৩ দিক থেকে চাপ দিয়ে পায়ুপথের মুখ বন্ধ রাখতে সাহায্য করে।

    যদি কোনো কারণে তিন দিকের এই কুশনগুলো ফুলে যায়, সেগুলো থেকে রক্তক্ষরণ হয়, সেগুলো নিচের দিকে নেমে যায়, অথবা পায়ুপথের চারপাশে গোটার মত দেখা যায়, তখন তাকে পাইলস বা অর্শ রোগ বলা হয়ে থাকে।

    পাইলস এর ব্যথা সারানোর উপায়

    পাইলস এর ব্যথা উপশম করতে প্যারাসিটামল ঔষধ খাওয়া যেতে পারে। এই ব্যথায় কার্যকরী অন্যান্য ঔষধ ও মলম পাওয়া যায়, ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী সেগুলো ব্যবহার করতে পারেন। ঘরোয়া পদ্ধতিতে অর্শ রোগের ব্যথা কমানোর ৪টি উপায় নিচে তুলে ধরা হলো—

    • ব্যথার জায়গাটি কুসুম গরম পানিতে ভিজিয়ে রাখা যায়। ছোট বাচ্চাদের গোসল করানো হয় এমন আকারের একটি বোলে কুসুম গরম পানি নিয়ে সেখানে বসতে পারেন। দিনে ৩ বার পর্যন্ত এটি করা যায়। অন্য সময়ে কোথাও বসতে গেলে একটি বালিশ ব্যবহার করে সেটার ওপর বসা যেতে পারে।
    • একটা প্যাকেটে কিছু বরফ নিয়ে সেটা তোয়ালে দিয়ে পেঁচিয়ে পায়ুপথে গোটাগুলোর ওপরে লাগানো যায়। এতে আরাম পাওয়া যাবে।
    • বিছানায় শুয়ে পা উঁচু করে রাখলে পাইলস এর গোটাগুলোতে রক্ত চলাচল সহজ হবে ও ব্যথা উপশম হবে। শোবার সময় পায়ের নিচে বালিশ দিতে পারেন। এছাড়া খাটের পায়ার নিচে কোন কিছু দিয়ে খাটের এক পাশ উঁচু করে সেদিকে পা দেওয়া যেতে পারে।
    • পায়ুপথ সবসময় পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন ও শুকনো রাখতে হবে। মলত্যাগের পর জোরে ঘষাঘষি না করে আলতোভাবে জায়গাটি পরিষ্কার করে নিতে হবে। টয়লেট পেপার হালকা ভিজিয়ে তারপর সেটা দিয়ে মুছতে পারেন।

    যেসব ব্যথানাশক ঔষধ ব্যবহার করা যাবে না

    ট্রামাডল: এই ঔষধের একটি পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হচ্ছে কোষ্ঠকাঠিন্য, তাই অর্শ রোগের জন্য এটি খাওয়া যাবেনা। প্যারাসিটামল ও ট্রামাডল একত্রে আছে এমন ব্যথানাশকও এড়িয়ে চলতে হবে।

    আইবুপ্রোফেন: এটি রক্তক্ষরণের ঝুঁকি বাড়ায়। তাই আপনার পায়ুপথে ব্যথার সাথে রক্ত গেলে এটি খাওয়া যাবেনা। 

    কখন দ্রুত হাসপাতালে যাবেন?

    পাইলস হলে কিছু বিশেষ ক্ষেত্রে দ্রুত ডাক্তারের শরণাপন্ন হওয়া জরুরি। যেমন—

    • টানা ৭ দিন বাসায় চিকিৎসা নেয়ার পরেও অবস্থার উন্নতি না হলে
    • বারবার পাইলস এর সমস্যা হলে
    • ৫৫ বছরের বেশি বয়সী কারও প্রথমবারের মত পাইলস এর লক্ষণ দেখা দিলে
    • পাইলস থেকে পুঁজ বের হলে
    • জ্বর বা কাঁপুনি হলে, অথবা খুব অসুস্থ বোধ হলে
    • অনবরত রক্তক্ষরণ হলে
    • অত্যধিক রক্তপাত হলে (উদাহরণস্বরূপ, যদি কমোডের পানি লাল হয়ে যায় বা পায়ুপথ দিয়ে  রক্তের বড় বড় চাকা যায়)
    • তীব্র, অসহনীয় ব্যথা হলে
    • পায়খানার রঙ কালচে বা আলকাতরার মত কালো মনে হলে

    পাইলস এর ঘরোয়া চিকিৎসা

    পাইলস এর চিকিৎসা জন্য পাইলস হওয়ার কারণগুলো প্রতিরোধ করতে হবে। অর্শ রোগ সারানোর ৬টি কার্যকর ঘরোয়া উপায় নিচে তুলে ধরা হলো

    • কোষ্ঠকাঠিন্য থেকে বাঁচতে বেশি বেশি আঁশ বা ফাইবারযুক্ত খাবার খতে হবে। এর মধ্যে রয়েছে শাকসবজি, ফলমূল, ডাল, লাল চাল ও লাল আটার তৈরি খাবার। সেই সাথে প্রচুর পরিমাণে পানি পান করতে হবে। ফাইবার পানি শোষণ করার মাধ্যমে পায়খানা নরম করে, তাই ফাইবারকে কাজ করতে হলে সারাদিনে অন্তত দুই লিটার পানি পান করতে হবে। এই দুটো কাজ করলে সাধারণত কয়েকদিনের মধ্যে কোষ্ঠকাঠিন্য দূর হয়, আর কয়েক সপ্তাহের মধ্যে পাইলস এর সব ধরনের লক্ষণ উপশম হয়। ৬ সপ্তাহ অর্থাৎ দেড় মাস ধরে যদি খাবারে যথেষ্ট পরিমাণ ফাইবার নিশ্চিত করা যায়, তাহলে ৯৫ শতাংশ পাইলস রোগীর পায়খানার সাথে রক্ত যাওয়া কমে আসে। কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করতে ইসবগুলের ভুসি একটি কার্যকর ঔষধ।
    • মলত্যাগের সময় খুব জোরে চাপ দেয়া থেকে বিরত থাকতে হবে। পায়খানা যাতে নরম হয় এবং সহজেই মলত্যাগ করা যায়, সেই উপদেশগুলো মেনে চলতে হবে।
    • মলত্যাগে প্রয়োজনের অতিরিক্ত সময় ব্যয় করা যাবে না। টয়লেটে বসে ম্যাগাজিন, পেপার, মোবাইল-এসবে মনোনিবেশ করা বাদ দিতে হবে।
    • পায়খানার চাপ আসলে তা আটকে রাখা উচিত না, এতে পায়খানা আরও শক্ত হয়ে কোষ্ঠকাঠিন্য  দেখা দেয়। চাপ আসলে দেরি না করে বাথরুমে চলে যেতে হবে।
    • নিয়মিত ব্যায়াম বা শরীরচর্চা করতে হবে। ব্যায়ামের মধ্যে ভারী ব্যায়াম বা প্রতিদিন দৌড়ানো বেছে নিতে হবে, তা নয়। শরীরকে চলমান রাখতে হাঁটাচলা, হালকা স্ট্রেচিং, যোগব্যায়াম ইত্যাদির মধ্যে যেকোনোটাই বেছে নেওয়া যায়। গবেষণায় দেখা গেছে, কোষ্ঠকাঠিন্য কমাতে হাঁটাহাঁটি বা হালকা শরীরচর্চাও কার্যকরী ভূমিকা রাখে। প্রয়োজনে অল্প অল্প করে শুরু করতে পারেন। দিনে ২০ মিনিট হাঁটুন। এক বেলা দিয়ে শুরু করুন, এরপর সকাল-সন্ধ্যা দুই বেলা করে হাঁটুন। প্রথমে সপ্তাহে তিন দিন এভাবে হেঁটে আস্তে আস্তে সেটা পাঁচ দিনে নিয়ে আসুন। 
    • ওজন অতিরিক্ত হলে তা কমিয়ে ফেলতে হবে। ওজন বেশী হলে পাইলস হওয়ার সম্ভাবনা বাড়ে, তাই পাইলস এর রোগীদের ওজন কমানোর পরামর্শ দেয়া হয়।

    পাইলস এর অপারেশন

    ঘরোয়া চিকিৎসার উপদেশ এবং ডাক্তারের ঔষধ সেবনের পরামর্শগুলো সঠিকভাবে মেনে চলার পরেও যদি অর্শ রোগের এর সমাধান না হয়, সেক্ষেত্রে অপারেশনের প্রয়োজন হতে পারে। এ ব্যাপারে আপনার চিকিৎসক আপনাকে পরামর্শ দিবেন। সাধারণত ৩ ধরনের অপারেশন করা হয়ে থাকে

    • হেমোরয়েডেকটোমি: এই অপারেশনের মাধ্যমে পাইলস এর গোটাগুলো কেটে অপসারণ করা হয়। 
    • স্টেপলড হেমোরয়েডোপেক্সি: এই পদ্ধতিতে সার্জারির মাধ্যমে পাইলস এর গোটাগুলো পুনরায় পায়ুপথের ভেতরে ঢুকিয়ে দেয়া হয়।
    • হেমোরয়েডাল আর্টারি লাইগেশন: এক্ষেত্রে পাইলস এর গোটাগুলোর রক্ত সরবরাহ অপারেশনের মাধ্যমে বন্ধ করে দেয়া হয়, যাতে গোটাগুলো শুকিয়ে যায়।

    এসব অপারেশনের জন্য সাধারণত এনেসথেসিয়া বা চেতনানাশক ব্যবহার করে রোগীকে অজ্ঞান করা হয় এবং সার্জারির পর দুই-একদিন হাসপাতালে থাকার প্রয়োজন হতে পারে।

  • মাথাব্যথার ঘরোয়া সমাধান

    মাথাব্যথার ঘরোয়া সমাধান

    মাথা ব্যথা কেন হয়? মাথা ব্যথা হলে সমাধান কি? কোন ধরনের মাথা ব্যথা হলে ডাক্তারের কাছে যাওয়া প্রয়োজন ? 

    মাথাব্যথার কারণ ও প্রতিকার ,

    বাড়িঘর পরিষ্কার করা থেকে শুরু করে দেরিতে ঘুমানো – এমন অনেক কারণেই মাথাব্যথা হতে পারে। আমরা এখানে মাথাব্যথার ১০ টি প্রধান কারণ ও প্রতিকার তুলে ধরবো।

    পরিচ্ছেদসমূহ

    • মানসিক চাপের পরে রিল্যাক্স করা
    • জমে থাকা রাগ
    • অস্বাস্থ্যকর দেহভঙ্গি Poor posture
    • পারফিউম
    • খারাপ আবহাওয়া
    • দাঁতে দাঁত ঘষা
    • উজ্জ্বল আলো
    • খাবার থেকে মাথাব্যথা
    • যৌন সহবাস থেকে মাথাব্যথা
    • আইসক্রিম

    মানসিক চাপের পরে রিল্যাক্স করা

    আপনি সারা সপ্তাহে প্রতিদিন ১০ ঘণ্টা করে কাজ করেও সুস্থ বোধ করেন। কিন্তু ছুটির দিন ভালো ঘুম দিয়ে উঠে দেখেন তীব্র ব্যথায় আপনার মাথা টনটন করছে। কেন এমন হয়? কারণটার ব্যখ্যা জটিল, তবে সমাধানটা সহজ। আপনি চাইলে কারণ না পড়ে সরাসরি নিচে সমাধানে পড়তে পারেন।

    কারণ: পুরো সপ্তাহের মানসিক চাপ শেষ হয়ে যাওয়ার ফলে শরীরের স্ট্রেস হরমোন শারীরিক ও মানসিক চাপ বেড়ে গেলে নিঃসৃত বিশেষ হরমোন) নিঃসরণের পরিমাণ কমে যায়। এর ফলে দ্রুতই মস্তিষ্কে নিউরোট্রান্সমিটার নামের বার্তা বহনকারী কিছু রাসায়নিক পদার্থের ক্ষরণ বেড়ে যায়। এই পদার্থগুলো রক্তনালীকে প্রথমে সংকুচিত ও পরে প্রসারিত করার নির্দেশ পাঠায়, যার ফলে মাথাব্যথা হয়।

    সমাধান

    সপ্তাহ শেষে ছুটির দিনে বেশি ঘুমানোর লোভ সংবরণ করুন। আট ঘন্টার বেশি ঘুমানোর কারণে মাথাব্যথা হতে পারে। সবটুকু বিশ্রাম সপ্তাহের শেষে ছুটির দিনে নেবার জন্য রেখে দিবেন না। মানসিক প্রশান্তি আনে এমন কিছু কাজ, যেমন যোগব্যায়াম, সপ্তাহের মাঝখানেই করার চেষ্টা করুন।

    জমে থাকা রাগ

    আপনি যখন রেগে যান, তখন আপনার ঘাড়ের পেছনের মাংসপেশি ও মাথার ত্বক টানটান হয়ে মাথার চারিদিকে একটি আঁটসাঁট ব্যান্ড পরে থাকার মত অনুভূতি হয়। এটি দুশ্চিন্তাজনিত মাথাব্যথা বা টেনশন-টাইপ মাথাব্যথার Tension Headache একটি লক্ষণ।

    প্রতিকার কী?

    আপনার রাগ ওঠা শুরু হলে বুক ভরে ধীরে ধীরে শ্বাস নিন। নাক দিয়ে শ্বাস নিন আর মুখ দিয়ে বের করে দিন। এতে আপনার মাথা ও ঘাড়ের পেশি শিথিল হবে।

    অস্বাস্থ্যকর দেহভঙ্গি Poor posture

    অস্বাস্থ্যকর দেহভঙ্গী ,যেমন কুঁজো হয়ে বসা আপনার পিঠের উপরের দিকে, ঘাড়ে ও কাঁধ দুটোতে চাপ সৃষ্টি করে, যা থেকে মাথাব্যথা হতে পারে।

    এই মাথাব্যথায় সাধারণত মাথার নিচের দিকে টনটনে ব্যথা করে এবং কখনো কখনো মুখমণ্ডলে, বিশেষ করে কপালের দিকে, ঝলকানির মত করে ব্যথার অনুভূতি হয়।

    কীভাবে এর চিকিৎসা করবেন?

    একই ভঙ্গীতে দীর্ঘ সময় বসে বা দাঁড়িয়ে থাকবেন না। সোজা হয়ে, কোমরে ঠেক বা সাপোর্ট দিয়ে বসুন।

    আপনার দীর্ঘক্ষণ ফোন ব্যবহার করার প্রয়োজন বা অভ্যাস থাকলে আলাদা হেডসেট বা ইয়ারফোন Earphones ব্যবহার করুন, কারণ বেশি সময় ধরে মাথা ও কাঁধের মাঝামাঝি ফোন ধরে রাখলে আপনার মাংসপেশিতে চাপ পড়ে মাথাব্যথা হতে পারে।

    আপনি একজন ফিজিক্যাল থেরাপিস্ট ,physical therapist এর পরামর্শও নিতে পারেন। তারা আপনার দেহভঙ্গির সমস্যা বের করে সেটা সংশোধন করতে সাহায্য করতে পারবেন।

    পারফিউম,

    আপনার যদি মনে হয় যে ঘরের কাজ করলে আপনার মাথাব্যথা হয়, তবে আপনার ধারণা সঠিকও হতে পারে। বাসাবাড়ি পরিষ্কার করার কাজে ব্যবহৃত সাবান বা ডিটারজেন্ট, সেই সাথে পারফিউম এবং সুগন্ধি এয়ার ফ্রেশনার – এগুলোতে নানান ধরনের রাসায়নিক পদার্থ থাকে, যা মাথাব্যথার জন্য দায়ী।

    কীভাবে এর চিকিৎসা করবেন?

    কোন বিশেষ ঘ্রাণে যদি আপনার মাথাব্যথা শুরু হয়, তবে তীব্র ঘ্রাণযুক্ত পারফিউম বা সাবান, শ্যাম্পু ও কন্ডিশনার ব্যবহার করা থেকে বিরত থাকুন।

    বাড়িতে ঘ্রাণহীন সাবান, ডিটারজেন্ট ও এয়ার ফ্রেশনার ব্যবহার করুন ।

    ঘরের দরজা-জানালা যতক্ষণ সম্ভব খুলে রাখুন।

    কর্মস্থলে কোন সহকর্মীর পারফিউমে আপনার সমস্যা হলে নিজের ডেস্কে একটি ছোট ফ্যান চালাতে পারেন।

    খারাপ আবহাওয়া

    আপনার যদি প্রায়ই মাথাব্যথা হয়, তাহলে খেয়াল করুন যে আপনার নিচের সময়গুলোতে মাথাব্যথা শুরু হয় কি না:

    আকাশ মেঘলা হলে

    বাতাসে আর্দ্রতা বেশি থাকলে

    গরম পরলে বা তাপমাত্রা বাড়তে থাকলে

    ঝড় হলে,

    বায়ুচাপের পরিবর্তনের কারণে আবহাওয়ার পরিবর্তন হয়। এই পরিবর্তন মস্তিষ্কে রাসায়নিক ও বৈদ্যুতিক পরিবর্তন ঘটায়, যার ফলে স্নায়ু উত্তেজিত হয়ে মাথাব্যথা হয়।

    কীভাবে এর চিকিৎসা করবেন?

    আমরা তো আর আবহাওয়া পরিবর্তন করতে পারি না! তবে আপনি আবহাওয়ার পূর্বাভাস জেনে আপনার মাথাব্যথা হবে কি না সেটা ধারণা করতে পারেন, আর সেই অনুযায়ী মাথাব্যথা রোধে ২-১ দিন আগেই একটি ব্যথানাশক ওষুধ বা পেইনকিলার খেয়ে নিতে পারেন।

    দাঁতে দাঁত ঘষা,

    রাতে ঘুমের মধ্যে কেউ কেউ দাঁতে দাঁত ঘষেন, চিকিৎসাবিজ্ঞানের ভাষায় একে বলা হয় ব্রাক্সিজম (bruxism)। এর ফলে চোয়ালের পেশির সংকোচন হয়, ফলে একটা ভোঁতা ধরনের মাথাব্যথা হয়।

    কিভাবে এর চিকিৎসা করবেন?

    দাঁতের ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী ঘুমের মধ্যে দাঁতকে সুরক্ষিত রাখার জন্য আপনাকে সঠিক মাপের মাউথ গার্ড  mouth guard বানিয়ে নিতে হবে।

    উজ্জ্বল আলো

    উজ্জ্বল ও ঝলমলে আলো – বিশেষ করে তা যদি দ্রুত জ্বলতে আর নিভতে থাকে, তাহলে মাইগ্রেনের ব্যথা শুরু হতে পারে। এর কারণ হল, উজ্জ্বল ও মিটমিট করতে থাকা আলো মস্তিষ্কে বিশেষ কিছু রাসায়নিক পদার্থের ক্ষরণ বাড়িয়ে দেয়, যার ফলে মস্তিষ্কের মাইগ্রেনের কেন্দ্রটি সচল হয়ে যায়।

    কীভাবে এর চিকিৎসা করবেন?

    চোখে আলোর তীব্রতা কমাতে সানগ্লাসের ব্যবহার খুবই কার্যকর। আপনি ঘরে-বাইরে সব জায়গায় এটি পরতে পারেন। পোলারাইজড লেন্সও ঝলমলে আলোর তীব্রতা কমাতে সাহায্য করে।

    কর্মস্থলে আপনার মনিটরের উজ্জ্বলতার মাত্রা ঠিক করে নিন অথবা ঝলমলে আলো কমায় এমন গ্লেয়ার স্ক্রিন glare screen ব্যবহার করুন।

    অফিসে কিছু লাইট বন্ধ করে দিতে পারেন বা সেগুলোকে অন্য কোথাও সরিয়ে ফেলতে পারেন। যদি সেটা সম্ভব না হয়, তাহলে অফিসে আপনার বসার জায়গাটি বদলে ।

    টিউবলাইট ও ফ্লু্রোসেন্ট লাইট fluorescent lighting বেশি মিটমিট করে, তাই সম্ভব হলে এগুলোর বদলে অন্য ধরনের লাইট ব্যবহার করুন।

    খাবার থেকে মাথাব্যথা,

    চিজ কিংবা ডার্ক চকলেট এর মত লোভনীয় খাবার হতে পারে আপনার মাথাব্যথার কারণ! এই ব্যাপারে খেয়াল রাখুন। এসব খাবারে কিছু রাসায়নিক পদার্থ থাকে যার কারণে মাইগ্রেন অ্যাটাক শুরু হয়। এগুলো ছাড়া আরও যেসব খাবারের কারণে মাইগ্রেন হয় তার মধ্যে রয়েছে:

    • প্রক্রিয়াজাত মাছ ও মাংস
    • ডায়েট কোমল পানীয়

    কীভাবে এর চিকিৎসা করবেন?

    মাইগ্রেনের কারণগুলো লিখে রাখার জন্য একটি ডায়েরি রাখুন।

    কোনো খাবারের কারণে মাথাব্যথা হচ্ছে সন্দেহ হলে তা কয়েক মাসের জন্য খাওয়া বন্ধ রেখে দেখুন মাথাব্যথা আগের চেয়ে কমে কি না। কোন বিশেষ খাবার বন্ধ করার ব্যপারে আপনার মনে সন্দেহ থাকলে ডাক্তারের পরামর্শ নিন বা একজন রেজিস্টার্ড ডায়েটিশিয়ানের কাছে যান।

    নিয়মিত খাবার খান, কারণ কোন বেলার খাবার বাদ পড়লেও মাথাব্যথা শুরু হতে পারে।

    যৌন সহবাস থেকে মাথাব্যথা

    অনেক পুরুষ ও নারীর জন্য যৌনমিলনের সময় প্রচণ্ড উত্তেজনার কারণে হওয়া মাথাব্যথা একটি চরম বাস্তব ও পীড়াদায়ক সমস্যা।

    ডাক্তাররা ধারণা করেন যে এই মাথাব্যথার কারণ হল মাথা ও ঘাড়ের মাংসপেশিতে অতিরিক্ত চাপ সৃষ্টি হওয়া। এটা যৌন মিলনের যেকোন পর্যায়ে হতে পারে, এবং কয়েক মিনিট থেকে এক ঘন্টা পর্যন্ত স্থায়ী হতে পারে।

    কীভাবে এর চিকিৎসা করবেন?

    এই মাথাব্যথা অস্বস্তিকর হলেও তেমন ক্ষতিকর নয়, আর এমনটাও নয় যে এটি থাকলে আপনাকে যৌন সহবাস এড়িয়ে চলতে হবে। মাথাব্যথা রোধ করতে কয়েক ঘন্টা আগে একটি ব্যথানাশক ওষুধ খেয়ে নিন।

    আইসক্রিম,

    আইসক্রিমে কামড় দেওয়ার সাথে সাথে কি আপনি কপালে তীক্ষ্ণ, ছুরির আঘাতের মত ব্যথা অনুভব করেন? উত্তর যদি হ্যাঁ হয়, তাহলে আপনার আইসক্রিম থেকে মাথাব্যথা Ice-cream Headache হয়, যার কারণ হল মুখের ভেতরে উপরের তালু ও গলার ভেতরের দিক দিয়ে ঠাণ্ডা খাবারের চলাচল। বরফ-ঠাণ্ডা পানীয় থেকেও একই রকম সমস্যা হতে পারে।

    কীভাবে এর চিকিৎসা করবেন?

    এই ব্যথার জন্য কোনো চিকিৎসার প্রয়োজন হয় না, বরং এই ব্যথা এক থেকে দুই মিনিট থাকার পর বিদ্যুৎগতিতে সেরে যায়।

    মাথাব্যথা হলে কখন দ্রুত হাসপাতালে যাবেন?

    বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই মাথাব্যথা আপনাআপনি সেরে যায়। সাধারণত মাথাব্যথা কোন গুরুতর রোগের লক্ষণ নয়। মাথাব্যথা সাধারণত ৩০ মিনিট থেকে কয়েক ঘন্টা পর্যন্ত থাকতে পারে।

    যা করবেন, মাথাব্যথা হলে কী করবেন?

    বেশি করে পানি পান করুন।

    ঠান্ডা-জ্বর বা ফ্লু জাতীয় সমস্যা যেমন সর্দি কাশি থাকলে পর্যাপ্ত পরিমাণ বিশ্রাম করুন।

    দুশ্চিন্তা মুক্ত থাকার চেষ্টা করুন। যে কোন ধরণের মানসিক চাপ মাথাব্যথার তীব্রতা বাড়িয়ে দিতে পারে।

    যখন সম্ভব ব্যায়াম করুন।

    প্যারাসিটামল জাতীয় ওষুধ চাইলে নিতে পারেন। অবশ্যই আপনার বয়স অনুযায়ী সঠিক পরিমাণে সেবন করবেন।

    মাথাব্যথা হলে যেসব কাজ করবেন না

    কোন বেলার খাবার বাদ দিবেন না খাওয়ার রুচি না হলেও খেয়ে নিতে হবে।

    স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি ঘুমাবেন না। এতে করে মাথাব্যথা বেড়ে যেতে পারে।

    চোখ দুটোকে বেশি খাটাবেন না। যেমন যেকোন ইলেকট্রনিক স্ক্রিন যেমন টেলিভিশন, মোবাইল, কম্পিউটার ইত্যাদির দিকে লম্বা সময় ধরে তাকিয়ে থাকা।

    মদ সেবন করবেন না।

    কখন ডাক্তারের সহায়তা নিবেন?

    ঘনঘন মাথাব্যথা হলে।

    ব্যথানাশক ওষুধ যেমন প্যারাসিটামল খেলেও মাথাব্যথা না কমলে। ক্রমশ খারাপ হতে থাকলে।

    মাথার সামনের দিকে কিংবা এক পাশে বাজে টনটনে ব্যথা অনুভব করলে। এই ব্যথাটি মাইগ্রেন হতে পারে অথবা অল্প কিছু ক্ষেত্রে ক্লাসটার হেডেক  এক ধরণের  মাথাব্যথা  হতে পারে।

    মাথাব্যথার সাথে বমিভাব লাগলে, বমি হলে এবং আলো বা আওয়াজ যন্ত্রণাদায়ক হয়ে উঠলে

    কখন দ্রুত হাসপাতালে যাবেন?

    • মাথায় গুরুতর আঘাত পেলে যেমন কোন দুর্ঘটনার ফলে বা কোথাও পরে যাওয়ার ফলে।
    • মাথাব্যথা হঠাৎ শুরু হলে এবং শুরুতেই ব্যথার তীব্রতা অনেক বেশি হলে।
    • প্রচণ্ড মাথাব্যথার সাথে নিচের কোন লক্ষণ দেখা দিলে দ্রুত হাসপাতালে যাবেন:
    • কথা বলতে কিংবা কিছু মনে করতে হঠাৎ অসুবিধা হলে
    • হাত বা পা দুর্বল বা অবশ হয়ে আসলে
    • দৃষ্টিশক্তি হারিয়ে ফেললে
    • ঝিমিয়ে পরলে অথবা অসংলগ্ন আচরণ করলে
    • গায়ে জ্বর আসলে, কাঁপুনি হলে, ঘাড় শক্ত হয়ে গেলে  অথবা চামড়ায় র‍্যাশ, ফুসকুড়ি উঠলে
    • চোখের সাদা অংশ লাল হয়ে গেলে।
    • খিঁচুনি হলে
    • অজ্ঞান হয়ে পরলে

    এছাড়াও প্রচণ্ড মাথাব্যথার সাথে নিচের কোন লক্ষণ দেখা দিলে দ্রুত হাসপাতালে যাবেন। এই লক্ষণগুলি মাথা এবং ঘাড়ের রক্তনালীর প্রদাহের কারণে দেখা দিতে পারে। সেক্ষেত্রে জরুরী চিকিৎসা প্রয়োজন হয়।

    • খাওয়ার সময় চোয়ালে ব্যথা হলে
    • চোখে ঝাপসা দেখলে অথবা একটার জায়গায় দুটো দেখলে
    • মাথার তালুতে চাপ দিয়ে ব্যথা অনুভব করলে
    • মাথাব্যথার কারণ
    • সাধারণত যেসব কারণে মাথাব্যথা হয়:
    • জ্বর বা সর্দিকাশি, ফ্লু
    • মানসিক চাপ
    • অতিরিক্ত মদ্যপান করা
    • অস্বাস্থ্যকর দেহভঙ্গি যেমন কুঁজো হয়ে বসা
    • দৃষ্টিশক্তির সমস্যা
    • নিয়মিত খাবার না খাওয়া
    • পর্যাপ্ত পরিমাণ পানি পান না করা , পানিশূন্যতা
    • অতিরিক্ত ব্যথানাশক ওষুধ সেবন
    • মাসিকের বা মেনোপজের সময়ে হরমন জনিত ব্যথা। 

    নিরাপদে থাকবেন।

  • কষা পায়খানা দূর করার ঘরোয়া চিকিৎসা

    কষা পায়খানা দূর করার ঘরোয়া চিকিৎসা

    পেট পরিষ্কার হচ্ছে না। পায়খানা করতে কষ্ট হয়। টয়লেটে অনেক সময় ধরে বসে থাকতে হয়। কোষ্ঠকাঠিন্যে ভুগছেন। এমন সমস্যার সমাধান তুলে ধরেছি,

    পায়খানা কষা বা শক্ত হওয়াকেই মূলত কোষ্ঠকাঠিন্য বলা হয়। এটি খুব পরিচিত একটি স্বাস্থ্য সমস্যা। অনেকেরই মাঝে মাঝে পায়খানা খুব শক্ত হয়ে যায়, মলত্যাগের সময় অনেকক্ষণ কসরত করতে হয়। এ ছাড়া পায়খানার পর মনে হয় পেট ঠিকমতো পরিষ্কার হয়নি।

    কোষ্ঠকাঠিন্য হলে পায়খানা শক্ত হয়, যার কারণে অনেকে মলত্যাগের সময় ব্যথা অনুভব করেন। কারও কারও ক্ষেত্রে একটানা তিন–চারদিন পায়খানা নাও হতে পারে। এগুলো সবই সাধারণত কোষ্ঠকাঠিন্যের লক্ষণ। দীর্ঘদিন কোষ্ঠকাঠিন্য হলে পাইলস বা অর্শ রোগ কিংবা এনাল ফিসার বা গেজ রোগ এর মতো পায়ুপথের রোগ তৈরি হতে পারে। পায়খানা কষা কেন হয় তা জেনে কিছু সাধারণ নিয়ম মেনে চললে কোনো প্রকার ঔষধ ছাড়াই সম্পূর্ণ ঘরোয়া উপায়েই এই সমস্যা এড়িয়ে চলা সম্ভব।

    কোষ্ঠকাঠিন্যের লক্ষণ কী কী?

    সাধারণত সপ্তাহে যদি তিন বারের কম পায়খানা হয়, তবে সেটাকে কোষ্ঠকাঠিন্য বলা হয়। এ ছাড়াও কোষ্ঠকাঠিন্য হলে যেসব লক্ষণ থাকতে পারে সেগুলো হলো—

    পায়খানা শুকনো, শক্ত চাকার মত হওয়া

    পায়খানার আকৃতি স্বাভাবিকের চেয়ে বড় হওয়া

    পায়খানা করতে কষ্ট হওয়া

    পেট পরিষ্কার হচ্ছে না এমন মনে হওয়া

    পেটে ব্যথা হওয়া, পেট ফাঁপা লাগা, বা বমি বমি ভাব হওয়া

    কোষ্ঠকাঠিন্য কেন হয়? 

    নানাবিধ কারণে কোষ্ঠকাঠিন্য হতে পারে। এগুলোর মধ্যে সবচেয়ে কমন ও গুরুত্বপূর্ণ ৬টি কারণ হলো—

    খাবারের তালিকায় যথেষ্ট পরিমাণে ফাইবার বা আঁশ না থাকা 

    পর্যাপ্ত পরিমাণে পানি পান না করা

    শুয়ে-বসে থাকা ও শারীরিক পরিশ্রমের অভাব

    পায়খানার বেগ আসলে তা চেপে রাখা

    মানসিক চাপ, উদ্বেগ বা বিষণ্ণতা 

    ঔষধের পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া

    এই কারণগুলো কিভাবে কোষ্ঠকাঠিন্যের সমস্যা সৃষ্টি করে তা জানা গুরুত্বপূর্ণ। এর মাধ্যমে এগুলো সমাধান করা সহজ হবে।

    ১. যথেষ্ট ফাইবার বা আঁশযুক্ত খাবার না খাওয়া

    ফাইবার বা আঁশ হলো এক ধরনের শর্করা। পেট পরিষ্কার হওয়ার জন্য ফাইবার খুবই গুরুত্বপূর্ণ। আমাদের পরিপাকতন্ত্রের যে জায়গায় পায়খানা তৈরি হয় ও জমা থাকে, সেখানে ফাইবার অনেকটা স্পঞ্জের মত কাজ করে।

    পানি শোষণ ও ধারণ করার মাধ্যমে ফাইবার পায়খানায় পানি ধরে রাখতে সাহায্য করে। ফলে পায়খানা নরম ও ভারী হয়, সহজেই শরীর থেকে বের হয়ে আসে। কিন্তু খাবারে পর্যাপ্ত পরিমাণে ফাইবার না থাকলে পায়খানা শক্ত হয়ে যায়, ফলে কোষ্ঠকাঠিন্য দেখা দিতে পারে।

    ২. পর্যাপ্ত পরিমাণে পানি পান না করা

    পানি খাবারের ফাইবারের সাথে মিলে পায়খানাকে ভারী ও নরম করে। এর ফলে পরিপাকতন্ত্রের ভেতর দিয়ে পায়খানা চলাচল সহজ হয়। তাই পর্যাপ্ত পরিমাণে পানি পান না করলে কোষ্ঠকাঠিন্য হতে পারে।

    ৩. শুয়ে-বসে থাকা ও শারীরিক পরিশ্রমের অভাব

    নিয়মিত ব্যায়াম ও শারীরিক পরিশ্রম করলে আমাদের পরিপাকতন্ত্র অর্থাৎ পেটের ভেতরে থাকা নাড়িভুঁড়ি সচল হয়। এতে স্বাভাবিকভাবে পায়খানা বেরিয়ে আসে। নিয়মিত শারীরিক পরিশ্রমের অভাব হলে তাই কোষ্ঠকাঠিন্য দেখা দিতে পারে।

    ৪. পায়খানার বেগ আসলে তা চেপে রাখা 

    পায়খানা শক্ত হলে অনেকে টয়লেটে যেতে চায় না, কারণ তখন মলত্যাগ করতে কিছুটা কষ্ট হয়। কিন্তু পায়খানার বেগ আসলে তা যদি আটকে রাখা হয়, তাহলে শরীর ক্রমশ সেখান থেকে পানি শুষে নিতে থাকে। পেটের ভেতর পায়খানা জমিয়ে রাখলে সেটা দিন দিন আরও শক্ত হতে থাকে, ফলে কোষ্ঠকাঠিন্য দেখা দেয়।

    ৫. মানসিক চাপ, উদ্বেগ বা বিষণ্ণতা 

    অনেক সময় মানসিক চাপ, কোনো কিছু নিয়ে উদ্বিগ্ন থাকা বা বিষণ্ণতায় ভোগার ফলে শরীরের স্বাভাবিক গতিপ্রকৃতির ছন্দপতন হয়, শারীরবৃত্তীয় কাজকর্মে ব্যাঘাত ঘটে। এতে কোষ্ঠকাঠিন্য দেখা দিতে পারে।

    ৬. ঔষধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া 

    নির্দিষ্ট কিছু ঔষধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হিসেবে কোষ্ঠকাঠিন্য দেখা দিতে পারে। এর মধ্যে রয়েছে —

    ট্রামাডল বা ওপিয়েট জাতীয় ব্যথার ঔষধ

    আইবুপ্রোফেন

    আয়রন ট্যাবলেট

    ক্যালসিয়াম সাপ্লিমেন্ট

    কেমোথেরাপিতে ব্যবহৃত কিছু ঔষধ

    এ ছাড়া একসাথে পাঁচটার বেশি ঔষধ খেলেও কোষ্ঠকাঠিন্য হওয়ার সম্ভাবনা বাড়তে পারে। 

    কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করার উপায় কী? 

    যেসব কারণে কোষ্ঠকাঠিন্য হতে পারে সেগুলো এড়িয়ে চলার মাধ্যমে সহজেই কোষ্ঠকাঠিন্য থেকে পরিত্রাণ পাওয়া সম্ভব। নিচে ঘরোয়া উপায়ে কিভাবে কোষ্ঠকাঠিন্যের চিকিৎসা করা যায় তা তুলে ধরা হয়েছে।

    ১. খাবারের তালিকায় ফাইবারের পরিমাণ বাড়াতে হবে

    পর্যাপ্ত পরিমাণে ফাইবার বা আঁশ আছে এমন খাবার খেতে হবে। সবুজ শাকসবজি, ফলমূল, ডাল, লাল আটা ও লাল চালের মতো গোটা শস্যদানা বেশি করে খাওয়া উচিত। কোষ্ঠকাঠিন্য এড়াতে দৈনিক প্রায় ৩০ গ্রাম ফাইবার খাওয়ার পরামর্শ দেয়া হয়।

    কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করতে প্রতিদিনের খাবার তালিকায় কীভাবে ফাইবার যোগ করবেন? 

    ১. ভাত বা রুটি খাওয়ার ক্ষেত্রে লাল চাল ও লাল আটা ব্যবহার করতে পারেন। এগুলোতে ফাইবারের পরিমাণ বেশি থাকে।

    ২. প্রতিবেলার খাবারে ডাল রাখতে পারেন। ডালে যথেষ্ট পরিমাণে ফাইবার থাকে।

    ৩. প্রতিবেলার খাবারে কয়েক ধরনের বা সম্ভব না হলে কমপক্ষে এক ধরনের সবজি রাখতে হবে।

    ৪. যেসব ফল বা সবজি খোসাসহ খাওয়া যায় সেগুলো খোসা না ফেলে খাওয়ার চেষ্টা করুন। কারণ খোসায় উচ্চ পরিমাণে ফাইবার থাকে। টমেটো, আপেল ও আলুর মতো খাবারগুলো খোসাসহ খেতে পারেন। তবে খাওয়ার আগে অবশ্যই ভালোমতো পরিষ্কার করে ধুয়ে নিতে হবে।

    ৫. যেকোনো ফল বা সবজি গোটা বা আস্ত খেলে ভালো ফাইবার পাওয়া যায়। জুস বা ভর্তা বানিয়ে খেলে আঁশের পরিমাণ কমে যায়।

    তবে খাবারের তালিকায় ফাইবারের পরিমাণ হুট করে বাড়ানো উচিত নয়। কারণ হঠাৎ ডায়েটে ফাইবারের পরিমাণ বাড়িয়ে ফেললে বায়ুর সমস্যা হতে পারে। এ ছাড়া পেট ফাঁপা, তলপেটে তীব্র ব্যথাসহ নানা ধরনের জটিলতা দেখা দিতে পারে।

Call Now Button