Author: Go Nursing Care

  • ধূমপান ছাড়তে যে উপায় অবলম্বন করবেন। 

    ধূমপান ছাড়তে যে উপায় অবলম্বন করবেন। 

    ধূমপান ছাড়তে চান কিন্তু পারছেন না। তাহলে এই আলোচনাটি আপনার জন্য। 

    ধূমপান ছাড়তে গিয়ে অনেকে মাঝপথে মনোবল হারিয়ে ফেলেন। তাই প্রথমে বুঝিয়ে বলছি ধূমপান করলে আপনার শরীরে কি কি ঘটে। আপনারা জানেন অক্সিজেন  ছাড়া মানুষ বাঁচতে পারে না। আমাদের নিঃশ্বাসের সাথে অক্সিজেন প্রথমে ফুসফুসে যায়, সেখান থেকে ঢুকে যায় রক্তে।ফুসফুসে আছে কোটি কোটি বায়ু ধূলি, এ বায়ু ধুলি দিয়ে ফুসফুস থেকে অক্সিজেন রক্তে প্রবেশ করে।

    ধুমপান আপনার ফুসফুসের বায়ু  ধুলিগুলোকে ধ্বংস করতে থাকে। একবার ধ্বংস হলে  বায়ু ধুলি আবার নতুন করে তৈরি হয় না। কোটি কোটি বায়ু ধুলি থাকার কারণে কিছু নষ্ট হলে আমরা বুঝতে পারিনা, তবে নিরবে ফুসফুসের ক্ষতি হতে থাকে।

    দিনে দিনে অনেক পরিমাণ বায়ু ধুলি ধ্বংস হলে শুরু হয় শ্বাসকষ্টের রোগ। এই শ্বাসকষ্টের রোগ শুরু হলে তা থেকে আর পুরোপুরি সেরে ওঠার উপায় নেই।

    শ্বাস কষ্টের পাশাপাশি ধূমপান ফুসফুসের ক্যান্সারের ঝুঁকি বাড়ায় অন্তত ২৫ গুণ। শুধু ফুসফুস নয় শরীরে সবখানেই ক্যান্সার সৃষ্টি করতে পারে ধূমপান।

    মুখ, গলা, পাকস্থলী,লিভার, কিডনি,মুত্রথলী, জরায়ু,এমন লম্বা একটা লিস্ট।কিছু  ধুমপানকারি কে  বলতে শুনেছি ,ধূমপান তো মাত্র  ঝুঁকি বাড়ায়, তার মানে হতেও পারে নাও হতে পারে। আমার হয়তো হবে না। এই চিন্তা যারা করেন তাদের জন্য দুইটা সংখ্যা তুলে ধরছি,

    এক, যারা ধূমপান করে, তাদের প্রতি দুইজনের মধ্যে একজনের মৃত্যু ঘটায় ধূমপান।অর্থাৎ জগতের যত মৃত্যুর কারণ আছে সে সবগুলো কারণ মিলে  ৫০ জন ধুমপাই মৃত্যু ঘটালে বাকি ৫০ জনের মৃত্যু ধূমপান একাই ঘটায়। 

    দুই, ধূমপান কারীরা গড়  এ   ৮ থেকে ১০ বছর কম বাঁচে। অর্থাৎ আপনার অধুমপাই  বন্ধু ৭০ বছর বাঁচলে ,আপনার বাঁচার সম্ভাবনা ৬০  থেকে ৬২ বছর। আবার কিছু ধূমপানকারী আছেন তারা বলেন, মৃত্যু যখন আসবে আসবেই। ক্যান্সারের ভয় করিনা। যতদিন বেঁচে আছি আনন্দে বাঁচতে চাই। এখানে সমস্যা হল ধূমপান মৃত্যুর আগেও আপনার আনন্দ সহ্য করতে পারে না।

    ধূমপান দীর্ঘদিন করলে প্রজনন ক্ষমতা কমে যাওয়া অর্থাৎ বাচ্চা হতে সমস্যা হওয়া। বাচ্চা হলে বাচ্চার শরীরে জন্মগত ত্রুটি থাকা। অল্প বয়সে চামড়া ভাজপরা হার নরম হয়ে যাওয়া যে কারণে হাড় ভেঙ্গে যেতে পারে। দাঁত মাড়ি নষ্ট হয়ে যাওয়া ,দাঁত পড়ে যাওয়া, চোখে ছানি পড়া ,শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যাওয়া, কারণে করোনা হলে ঝুঁকি বেশি।

    ধূমপান হার্ট এটাক ও স্ট্রোকের ঝুঁকি বাড়ায়। এটা শুনলে অনেকেই বলেন,যারা ধূমপান করে না তাদেরও তো হার্ট অ্যাটাক স্ট্রোক, হয়।কথা ঠিক কিন্তু যুক্তি ভুল। এ কথাগুলা শোনার পর কেউ কেউ বলেন,ধূমপান করে শরীরে যা ক্ষতি হওয়ার  সেগুলো তো হয়ে গেছে,এখন আর ধূমপান ছেড়ে  কোন লাভ হবে না। এটা সম্পূর্ণ একটা ভুল কথা। আপনি যতদিন ধরে ধূমপান করেন না কেন, যে মুহূর্ত থেকে আপনি ধূমপান ছাড়বেন তখন থেকেই আপনার শরীর নিজেকে মেরামতের কাজ শুরু করে দিবে।

    কি মেরামত করে?

    শেষ সিগারেট খাওয়ার

    • ২০ মিনিটের মধ্যেই হার্ট বিট  ও ব্লাড প্রেসার স্বাভাবিক হয়ে আসতে থাকে।
    • ৮ ঘণ্টার মধ্যে রক্তে অক্সিজেনের পরিমাণ স্বাভাবিক হতে শুরু করে।
    • ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে শরীর থেকে সব ক্ষতিকর কার্বন মনোক্সাইড দূর  হয়ে যায়, নাকের ঘ্রাণ ও মুখের স্বাদ ফিরে আসে,
    • ৭২ ঘণ্টার মধ্যে শ্বাসতন্ত্র প্রসারিত হওয়া শুরু করে ফলে শ্বাস নেয়া সহজতর হয়।
    • তিন থেকে নয় মাসের মধ্যে ফুসফুসের ক্ষমতার ১০% পর্যন্ত বাড়তে পারে।
    • এক বছর এর মধ্যে  আপনার হার্ট অ্যাটাকের ঝুঁকি অর্ধেকে নেমে আসে।
    • পাঁচ বছরের মধ্যে, মুখ ,গলা খাদ্যনালী, আর মূত্রথলির ক্যান্সার এর ঝুঁকি অর্ধেকে নেমে আসে। জরায়ু ক্যান্সার আর স্টকের ঝুঁকি একজন অধুমপায়ীর সমান হয়ে যায়।
    • দশ বছর পর ফুসফুসের ক্যান্সারে মৃত্যু হওয়ার  ঝুঁকি অর্ধেকে নেমে আসে।
    • পনেরো বছর পর আপনার হার্ট অ্যাটাকের ঝুঁকি আর যে কখনো ধূমপান করেনি তার হার্ট এটাকের ঝুঁকি সমান হয়ে যায়।

    আশা করি আপনার ধূমপান ছাড়ার মনোবল শক্ত হয়েছে। 

    এখন বলে দিচ্ছি ধূমপান ছাড়ার সাতটি পরামর্শ। 

    এক ,সিগারেট এ আর একটাও টান দেয়া যাবে না। যখন আপনি সিদ্ধান্ত নিয়ে নিয়েছেন ধূমপান ছাড়বেন তারপর থেকে আর একটাও সিগারেট ব্যবহার করবেন না। গবেষণায় দেখা গেছে জাস্ট একটা সিগারেট বা শুধু একটা টান দেবে এমন চিন্তা থাকলে একটা ধূমপানকারী আবার আগের মতো নেশায় জড়িয়ে যায়। তাই চিন্তা শক্ত  থাকতে হবে। যাতে একটা সিগারেটও ব্যবহার করা যাবে না। 

    যেসব জায়গায় আপনি ধূমপান করতেন পারলে সে সব জায়গায় ত্যাগ করুন। 

    দুই ,ধূমপান বন্ধ করলে প্রথম কিছুদিন আপনার খারাপ লাগবে। এই খারাপ লাগার কাটিয়ে ওঠার পরিকল্পনা আগে থেকে করে নিতে হবে।শরীরে যেসব প্রতিক্রিয়া, দেখা দিতে পারে অস্থিরতা,মেজাজ খিটখিটে হওয়া,ক্লান্ত লাগা ঘুমের সমস্যা,কোষ্ঠকাঠিন্য ,কোন কাজে মনোযোগ না আসা এগুলো দেখা দিলে ঘাবড়ে  যাবেন না। জানবেন এগুলা স্বাভাবিক এবং কিছুদিনের মধ্যেই সেরে যাবে। 

    তিন ,ধূমপানের ইচ্ছা দমন করার উপায় বের করে রাখতে হবে। যখন সিগারেট টান দিতে খুব ইচ্ছা করবে তখন ঠেকানোর চেষ্টা করবেন। নিজের মনকে অন্যদিকে নিতে হবে। বিভিন্ন ধরনের কাজে নিজেকে ব্যস্ত রাখতে হবে। একজন বন্ধু নির্ধারণ করে রাখবেন আপনার প্রিয় কোন বিষয় গল্প শুরু করবেন। যে কারণে আপনি ধূমপান ছাড়তে চান সেটা চিন্তা করেন। বাইরে থেকে একটু হেটে আসতে পারেন শারীরিক ব্যায়াম করতে পারেন। ধুমপান করেনা এমন বন্ধুর সাথে বেশি সময় কাটান। কেউ আপনাকে ধুমপান করতে বললে সেটা কিভাবে না বলবেন সেটা চিন্তা করবেন। প্রতিদিন ৫ মিনিট করে ব্যায়াম করলেও তা ধূমপানের ইচ্ছা কমাতে সাহায্য করতে পারে। 

    ছয় ,কিছু ওষুধ ,নিকোটিন প্যাচ,ইনহেলারস,স্প্রে আপনাকে এগুলা ব্যবহার করতে পারেন এগুলা ধূমপানের তাড়না  কমাবে। চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে যেটা আপনার জন্য ভালো হয় সেটা শুরু করতে পারেন।

    সাত ,ছেড়ে দেওয়ার পরে আবার ধূমপান করলে নিরাশ হবেন না। সিংহভাগ ধূমপাই প্রথম অবস্থায় ধূমপান ছাড়তে ব্যর্থ হয়। তাই বলে নিরাশ হবেন না।যারা ধূমপান সেরেছেন তাদের মধ্যে বেশিভাগ সফল হয়েছে কয়েকবার চেষ্টা করার পরে। তাই আপনি ছাড়ার প্রক্রিয়া শুরু করার পরে কোন কারণে যদি একবার ধূমপান করে ফেলেন নিরাশ হবেন না। কোন পরিস্থিতিতে আপনি নিজেকে আটকাতে পারেননি সেটা যাচাই করবেন, যাতে একই ভুল আর না করেন। প্রয়োজনে ডাক্তারের পরামর্শ নিন তবে ধূমপান বন্ধ না  করে হাল ছাড়বেন না। 

    নিরাপদে থাকবেন।

  • হঠাৎ ব্লাড প্রেশার বেড়ে গেলে কী করবেন?

    হঠাৎ ব্লাড প্রেশার বেড়ে গেলে কী করবেন?

    যারা উচ্চ রক্তচাপ বা হাই ব্লাড প্রেসারে ভুগছেন তাদের ব্লাড প্রেসার যদি দ্রুত অনেক বেড়ে যায় তখন একটা বিপজ্জনক অবস্থার সৃষ্টি হতে পারে। এখন আলোচনা করব কি কি ভুলের কারণে প্রেসার অনেক বেড়ে যেতে পারে। আর বেড়ে যদি যাই তবে কি করবেন? শুরু করছি কারণ গুলো ভালো ভাবে বুঝিয়ে বলতে,

    সবচেয়ে কমন কারণ হলো, হাই ব্লাড প্রেসার চিকিৎসা না হওয়া বা অপর্যাপ্ত চিকিৎসা হওয়া। 

    কখন এমন হতে পারে? 

    চারটা উদাহরণ দিচ্ছি। 

    এক, যদি রোগী না জানে যে তার উচ্চ রক্তচাপ আছে। গবেষণায় দেখা গেছে উচ্চ রক্তচাপের অর্ধেক রোগী জানেন না যে তারা এ রোগে ভুগছেন। কারণ এ রোগের সাধারণত কোন লক্ষণ দেখা যায় না। একমাত্র ব্লাড প্রেসার মাপলে বোঝা যায় কার উচ্চ রক্তচাপ আছে। গত এক বছরে যারা রক্তচাপ মাপেন নেই তারা তো জানবে না তাদের এই রোগ আছে কিনা। না, জানলে চিকিৎসাও হবে না। জীবনযাপনে কোন পরিবর্তনও আসবে না। তখন রক্তচাপ অনেক বেড়ে যাওয়ার ঝুঁকি থাকে। 

    দুই, ব্লাড প্রেসার ওষুধ খাওয়া বন্ধ করে দেওয়া। 

    অনেকে ডাক্তারের পরামর্শে ব্লাড প্রেসার ওষুধ খাওয়া শুরু করেন। তারপর একটু সুস্থ বোধ করলে ডাক্তারের পরামর্শ না নিয়ে নিজে নিজে ওষুধ খাওয়া বন্ধ করে দেন। হাই ব্লাড প্রেশার নীরবে শরীরের বিভিন্ন অঙ্গ পতঙ্গ ক্ষতি করতে থাকে। যেমন ধরেন, উচ্চ রক্তচাপের কারণে রক্তনালী ক্ষতি হওয়া একটা কমন ব্যাপার। রক্তনালীর এই ক্ষতি হঠাৎ একদিন  রক্তচাপ অনেক বাড়িয়ে দিতে পারে। এজন্য ডাক্তার পরামর্শ ছাড়া ওষুধ বন্ধ করতে নিষেধ করেন। 

    তিন, ব্লাড প্রেসার এর ওষুধ কমিয়ে খাওয়া। 

    ডাক্তার দুইটা ওষুধ দিয়েছিল কিন্তু আপনি একটা ওষুধ খাচ্ছেন। অথবা ডাক্তার বলেছেন দুই বেলা ওষুধ খেতে আপনি এক বেলা করে খাচ্ছেন। এমনটা করার কারণে আপনার ব্লাড প্রেসার বেড়ে যেতে পারে। এটা হয়তো আপনি বুঝতেও পারবেন না। একটা ব্যাপার স্পষ্ট করে দিচ্ছি  ব্লাড প্রেসারের ওষুধ সারা জীবন একই পরিমাণে খেতে হবে ব্যাপারটা এমন না। অবশ্যই পরিস্থিতি অনুযায়ী বাড়ানো বা কমানো যাবে। এমনকি ঔষধ বন্ধ করা যেতে পারে। কিন্তু সেটা হতে হবে আপনার ব্লাড প্রেসার কত? শরীরে অন্যান্য কি কি রোগ আছে,ইত্যাদি বিষয়ে যত্ন সহকারে বিবেচনা করে। এই বিবেচনা টি নিজে না করে অনুগ্রহ করে ডাক্তারের পরামর্শ নিবেন,না হলে বিপদ হতে পারে। 

    চার, ওষুধ খেতে ভুলে যাওয়া। প্রেসারের ওষুধ সাধারণত প্রতিদিন খেতে হয়। কিন্তু হাই ব্লাড  প্রেসার হলে রোগী  সাধারণত কোনো ব্যথা বা অস্বস্তিতে থাকেন না, তাই অনেক সময়  রোগী ওষুধ খেতে ভুলে যান। 

    এছাড়াও প্রেসার হঠাৎ বেড়ে যাওয়ার আরো কিছু কারণ রয়েছে। সেগুলা হচ্ছে মানসিক চাপ, কিডনি বা থাইরয়েড এর রোগ ইত্যাদি।

    এখন আসি প্রেসার হঠাৎ বেড়ে গেলে কি করনীয়? 

    আপনি প্রেসার মেপে দেখলেন উপরেরটা ১৮০ বা  নিচেরটা  ১২০ এর বেশি। তারপর আপনার প্রথম কাজ হল, না ঘাবড়ানো। শান্ত হয়ে বসুন। তারপর পাঁচ মিনিট পরে আবার সঠিক নিয়মে  ব্লাড প্রেসার মাপুন। দ্বিতীয়বার মাপার পরও যদি প্রেসার বেশি আসে তাহলে আপনাকে ব্যবস্থা নিতে হবে আর দেরি করা যাবে না

    কি কি  ব্যবস্থা নিবেন সেটা দুই ভাগে ভাগ করে বলবো
    প্রথম ভাগ হলো যাদের প্রেসার হাই কিন্তু আর কোন লক্ষণ নাই তাদের জন্য। 

    দ্বিতীয় ভাগ হল, যাদের প্রেশার হাই এবং সাথে  অন্যান্য লক্ষণ আছে তাদের জন্য। 

    প্রথমে বলেই যাদের প্রেসার হাই কিন্তু আর কোন লক্ষণ নেই। এমন তাহলে প্রথম কাজ হল খুঁজে বের করা কেন প্রেসার এত বেড়ে গেল? 

    প্রেসারের ওষুধ ঠিকমত কাজ করছে না,নাকি শরীরে অন্য কোন সমস্যার সৃষ্টি হল। একটা সূক্ষ্ম কাজ,যার জন্য প্রয়োজন মেডিকেল নলেজ। এটা বাসায় বসে নিজে নিজে করা ঠিক হবে না। তাই একজন ডাক্তারের পরামর্শ নিতে হবে। ডাক্তারের কাছে যাওয়া আগ পর্যন্ত প্রতি  ঘণ্টায় প্রেসার মেপে দুটো সংখ্যায় কাগজে লিখে রাখবেন,রাতে লিখবেন কয়টা সময় এ প্রেসার মেপেছেন। দুই, আপনি ব্লাড প্রেসারের কি কি ওষুধ খান, কি পরিমানে কোন সময় খান? কোন কোন বেলায় ওষুধ খেতে মিস করেছেন। এসব তথ্য আর কাগজপত্র একত্র করবেন। অন্য কোন ওষুধ খেয়ে থাকলে সেটা হোমিওপ্যাথি হোক বা ভেষজ হোক সেগুলো  সাথে করে নিয়ে যাবেন।এই দুইটা তথ্য পেলে চিকিৎসকের জন্য সহজ হবে আপনার শরীরে কি হচ্ছে সেটা বোঝা এবং তিনি প্রকৃত অবস্থা জেনে শুনে একটা সুচিন্তিত মতামত দিতে পারবেন। 

    উচ্চ রক্তচাপ অনেকদিন থাকলে বিপদ আসন্ন। তাই খুব কড়া নজর রেখে রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে আনতে হবে। 

    এখন বলব প্রেসার বাড়ার পাশাপাশি বাহ্যিক লক্ষণ দেখা দিল কি করবেন? 

    এ লক্ষণ গুলো কি কি? 

    • মাথা ব্যথা। 
    • চোখে ঝাপসা দেখা। 
    • বমি ভাব। 
    • বমি ।
    • কনফিউশন বা আবোল তাবোল বকা ভুলে যাওয়া ,ঝিমিয়ে পড়া। 

    অচেতন বা অজ্ঞান হয়ে পড়া,খিচুনি,মুখ বেঁকে যাওয়া,হাত বা পা অবশ হয়ে যাওয়া,মুখের কথা আটকে যাওয়া,পিঠে বা পেটে ব্যথা,অস্থির লাগা,বুকে ব্যথা, শ্বাসকষ্ট ,প্রসাবের পরিমাণ কমে যাওয়া।এমন হলে নিজে নিজে ওষুধ খেয়ে প্রেসার কমানোর চেষ্টা করবেন না। কারণ এ অবস্থায় খুব সতর্ক সহকারে প্রেসার কমাতে হয়। এমনকি কিছু ক্ষেত্রে প্রেসার কমালে করে ধোয়ার সম্ভাবনা আছে। কেমন রোগী  যদি স্ট্রোক করে থাকে।সাথে সাথে প্রেসার কমানো হয় না,তাতে ব্রেনের রক্ত চলাচল আরো কমে যেতে পারে। আবার কিছু ক্ষেত্রে প্রেসার খুব দ্রুত নামিয়ে আনা লাগে।সাধারণত শিরায় ইনজেকশন দিয়ে প্রেসার কমানো হয়,  মুখের ওষুধ দেওয়া হয় না, মাথা ঠান্ডা রেখে কিভাবে দ্রুততম উপায়ে রোগীকে ইমারজেন্সি বিভাগে নেয়া যায় সেটা পরিকল্পনা করুন।

    অনেকে জিজ্ঞেস করেন টক খেলে বা তেঁতুল খেলে সাথে সাথে প্রেসার কমবে কিনা?
    উত্তর হল,  না। 

    তাৎক্ষণিকভাবে  প্রেশার কমানোর এটা সঠিক উপায় নয়। তবে দীর্ঘ মেয়াদে তেঁতুল খেলে একটা উপকার আছে, কারণ তেতুল একটা ফল, আর রক্তচাপের রোগীকে  আমরা দিনে চার থেকে পাঁচটা মাঝারি সাইজের ফল খেতে বলি। কারণ ফলে তুলনামূলক বেশি পটাশিয়াম থাকে, তাছাড়া রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে।তেতুলে ভালো পরিমাণে পটাশিয়াম আছে। অন্যান্য ফল যেমন, খেজুর কমলা, কলা আম, গাজরেও পটাশিয়াম আছে। শুধু তেতুল খেতে হবে এমন কোন কথা নয়। 

    নিরাপদে থাকবেন।

  • হাই ব্লাড প্রেশার কমানোর ঘরোয়া উপায়

    হাই ব্লাড প্রেশার কমানোর ঘরোয়া উপায়

    উচ্চ রক্তচাপ বা হাই ব্লাড প্রেসার এই রোগটার প্রতিকার নিয়ে আজকে বিস্তারিত আলোচনা করব,

    শুরু করছি কিভাবে উচ্চ রক্তচাপের সৃষ্টি হয় সেটা  সহজ ভাষায় বুঝিয়ে বলতে,

    আমাদের শরীরের রক্ত নালীগুলো রাবারের মত সেটা প্রসারিত ও সংকুচিত হতে পারে কিন্তু এই রক্তনালী যদি শক্ত হয়ে যায় তখন প্রয়োজন মত প্রসারিত হতে পারেনা, রক্ত চলাচলে বাধা বেড়ে যায় দেখা দেয় হায় ব্লাড প্রেসার। এছাড়াও প্রেসার বাড়ার আরো কিছু  সূক্ষ্ম কারণ রয়েছে।

    এখন খুব সহজ করে বুঝিয়ে বলছি প্রেসার বেড়ে গেলে কি কি সমস্যার সৃষ্টি হতে পারে ?

    এক, উচ্চ রক্তচাপের ফলে রক্ত নালি গুলো দুর্বল হয়ে যেতে পারে, রক্তনালী গুলোর  দেয়াল পাতলা হয়ে বেলুনের মতো ফুলে ওঠে সেটা হঠাৎ ছিড়ে  যেতে পারে তখন ব্রেনে মারাত্মক রক্তক্ষরণ দেখা দেয়, একই সমস্যা পেটের রক্তনালিতেও হতে পারে 

    দ্বিতীয় যে সমস্যাটা হতে পারে সেটা হল রক্তনালীতে চর্বি জমা সুস্থ স্বাভাবিক রক্তনালী তার গায়ে চর্বি জমতে দেয় না তবে উচ্চ রক্তচাপ রক্তনালীকে ক্ষতিগ্রস্ত করতে থাকে তখন রক্ত  নালিগুলোর  গায়ে চর্বি  কোলেস্ট্রল ও ক্যালসিয়াম ডমাট বাঁধতে  পারে আস্তে আস্তে এই চর্বি জমাট বড় হয় রক্তনালী সরু হয়।কিছু ক্ষেত্রে দেখা যায় চর্বির গায়ে এসে  রক্ত জমাট বাঁধে এক পর্যায়ে রক্তনালীর মুখ পুরোটাই বন্ধ হয়ে যেতে পারে তখন রক্ত আর সামনে আগাতে পারে না, এটা খুবই মারাত্মক ঘটনা 

    আপনারা নিশ্চয়ই ব্রেইন স্টক আর হার্ট অ্যাটাকের কথা শুনেছেন এইটা সেই ঘটনা ,

    ব্রেন এর রক্তনালী বন্ধ হলে হয় স্ট্রোক তখন ব্রেইনের এক  অংশ আর  রক্ত পায় না কোষগুলো মরে যায় 

    একইভাবে হার্টের রক্তনালী বন্ধ হলে হয় হার্ট অ্যাটাক। এছাড়াও হাই ব্লাড প্রেসার দীর্ঘদিন থাকলে আরো অনেক ধরনের সমস্যা দেখা দিতে পারে যেমন হার্ট দুর্বল হয়ে ,যাওয়া কিডনি ওকেজো হয়ে যাওয়া দৃষ্টিশক্তিতে সমস্যা দেখা দেয়া ইত্যাদি।

     হাই ব্লাড প্রেসার এর সবচেয়ে ভয়ংকর দিক হচ্ছে এর নীরবতা। হাই  ব্লাড প্রেসার যখন শরীরে  দেখা হয় তখন কোন ব্যথা বা অসুবিধা সৃষ্টি করে না, অধিকাংশ মানুষই আমরা এটাকে অগ্রাহ্য করি তখন হাই ব্লাড প্রেসার শরীরে  আস্তে আস্তে ক্ষতি করতে থাকে।

    হাই ব্লাড প্রেসারে কি খাওয়া যাবেনা?

    প্রথমে বলি লবণ, দিনে কতটুকু লবণ খাচ্ছেন সেদিকে সতর্ক নজর রাখতে হবে দিনের চা চামচের পরিমাণে পনে এক চা চামচ থেকে কম লবণ খাবেন।

    কি কি উপায়ে লবণ খাওয়া কমানো যায়? 

    নয়টা উপায় বলবো। 

    এক ,

    ভাত খাওয়ার সময় আলাদা করে কাচা লবণ খাবেন না।

    দুই ,

     অনেকের কাছে মনে হয় ভাজা লবন খেলে কোন ক্ষতি নেই। লবণ ভাজা হোক বা কাঁচা হোক উভয়ই সোডিয়াম থাকে। আর সোডিয়াম ব্লাড প্রেসার বাড়ায়। তাই তরকারিতে লবণ কম দিতে হবে। 

    তিন,

    সয়া সস, বিট লবণ, টেস্টি সল এগুলোতে বেশি পরিমাণে লবণ থাকে। রান্নায় তাই এগুলার বদলে অন্য কিছু ব্যবহার করবেন। 

    ৪,

    বাসায় রান্না করা খাবার,কিছু প্রাকৃতিক খাবারেও লবণ একটু বেশি থাকে ,সেগুলো এড়িয়ে চলবেন। খেলেও অল্প পরিমাণে খাওয়ার চেষ্টা করবেন। যেমন চিংড়ি মাছ,পুডিং কিছু কিছু ভর্তা বা আচার ইত্যাদি ।বাজার থেকে কেনা খাবার। 

    পাঁচ,

     বাজার থেকে কেনা খাবার।রাস্তার পাশে টঙের দোকানের খাবার। হোটেল কিংবা রেস্টুরেন্টের খাবার যতটা পারেন এড়িয়ে চলুন। এগুলোতে কতটুকু লবণ দেয়া আছে? এটা আপনার জানা নেই। ব্লাড প্রেসারের রোগীদের অল্প লবন দিয়ে খাবার রান্না করা দরকার এবং লবণ পরিহার করা। 

    ৬,

    সয়া সস , টমেটো কেচাপ এড়িয়ে চলবেন। এগুলোতে অনেক লবণ থাকে। 

    ৭ ,

    নাস্তায় পুরি, সিঙ্গারা ,চপ ,নলডন্স,চিপস, স্যান্ডউচ,এসব পরিহার করলে নিজের অনেক উপকার করবেন। নাস্তার জন্য একটা ফল খেতে পারেন তবুও এগুলা খাবেন না। ফল আবার বিট লবণ দিয়ে মাখিয়ে খাবেন না। 

    ৮ ,

    যারা প্রক্রিয়াজাত খাবার কিনেন যেমন  পাস্তা নুডুলস ইত্যাদি তারা প্যাকেটের গায়ে লবনের পরিমাণ দেখে কিনবেন। লবণ কম আছে এমন অপশন থাকলে সেটা দেখে কিনবেন। 

    নয়,

    দাওয়াতে গেলে পোলাও বা ফ্রাইড রাইস না নিয়ে সাদা ভাত খাবেন। কারণ ভাত আমরা সাধারণত লবণ ছাড়াই রান্না করি। নান রুটি না নিয়ে সাধারণ শেখা রুটি  খাবেন লবণ পরিহার করার জন্য। 

    ফ্যাট ,তেল, চর্বি জাতীয় খাবার এড়িয়ে চলবেন। দিনে তিন চা চামচের বেশি তেল খাওয়া যাবে না। সেটা  মাছ-মাংস সবজি তরকারির সাথে হোক বা নাস্তার ভাজা পড়ার সাথেই হোক।

    খাবারের ফ্যাট কমানোর ছয়টি উপায় বলছি 

    এক ,রান্নায় তেল ঢালার সময় চা চামচ ব্যবহার করবেন।তাহলে কতটুকু তেল দিচ্ছেন সেটা হিসাব রাখতে  সুবিধা হবে। 

    ২,মাংস খেতে হলে চর্বি ছাড়া মাংস বেছে  নিবেন।

    তিন, মুরগির চামড়া খেতে মন চাইলেও এড়িয়ে চলবেন। কারন মুরগির চামড়ায় অনেক ফ্যাট থাকে। 

    ৪ ,ঘি  আর মাখন থেকে দূরে থাকবেন। কারণে এগুলোতে ফ্যাটের পরিমাণ বেশি। 

    ৫,  দুধের সর ফুল ক্রিম বা ফুল ফ্যাট দুধ এবং মিষ্টি দই খাবেন না। টক দই খাবেন। 

    ৬,ডিম ভেজে না খেয়ে সিদ্ধ করে বা পজ  করে খাওয়ার চেষ্টা করবেন। একটা ডিম ভাজতেই অনেকে এক থেকে দুই চামচ তেল ব্যবহার করেন।

    এবার আসি খাবারের তালিকা থেকে কমাতে হবে এমন তিন নম্বর খাবারে। সেটা হলো চিনি,

    সারা সপ্তাহের খাবারে যাদের দুই থেকে পাঁচ টেবিল চামচের কম চিনি থাকে। এ বিষয়ে দুইটি টিপস। 

    এক,

    কোক ,সেভেন আপ,সফট ড্রিংকস প্রচুর পরিমানে চিনি থাকে এগুলো একদম না খাওয়াই ভালো।

    দুই ,

    টমেটো কেচাপ।এটাতে ভালো পরিমাণ চিনি থাকে। এটাতে লবন থাকে তাই এটা বাদ দিতে হবে। 

    লবণের মতোই তেল এবং চিনি বিভিন্ন রান্নার  উপকরণ এবং খাবারের মধ্যে লুকিয়ে থাকতে পারে। তাই বুদ্ধি খাটিয়ে সতর্কতার সাথে রান্না করা এবং খাবার খাওয়া সম্পন্ন করতে হবে।

    এবার আসি কি খাবেন? 

    কিছু কিছু খাদ্যে পটাশিয়াম থাকে যেটা রক্তচাপ কমায়। কোন খাবারে পটাশিয়াম থাকে আর কিভাবে বেশি পটাশিয়াম খাবেন,তিনটা উপায় বলছি। 

    এক ,দিনে চার থেকে পাঁচটা মাঝারি সাইজের ফল খাবেন বা  সপ্তাহে অন্তত প্রতিদিন দুইটা করে ফল খাবেন।

    দুই ,

    দিনে দুই থেকে আড়াই কাপ কাটা বা রান্না করা সবজি খাবেন।অল্প অল্প করে পরিবর্তন করুন যদি সবজি তেমন খাওয়া না হয় তাহলে সিদ্ধান্ত নেন আপনি আগামী সপ্তাহে প্রতিদিন অন্তত একবেলা সবজি খাবেন। ফল আর শাকসবজিতে প্রাকৃতিকভাবে পটাশিয়াম মজুদ আছে। এগুলো আপনাকে রক্তচাপ কমাতে সাহায্য করে। পটাশিয়াম বাড়ানোর জন্য ভুলেও নিজে নিজে পটাশিয়াম ট্যাবলেট খাওয়া শুরু করবেন না। 

    খাদ্যে পটাশিয়াম বাড়ানোর তৃতীয় উপায় হল দুধ এবং দই। ফুল ক্রিম দুধ আর মিষ্টি দই খাওয়া যাবে না। কারণ সেগুলোতে ফ্যাট বেশি। খেতে হবে ফ্যাট ফ্রী দুধ কিংবা টক দই। দিনে দুই থেকে তিন কাপ ফ্যাট ফ্রি দুধ ও টক দই খেতে পারেন।

    যাদের উচ্চ রক্তচাপের পাশাপাশি অন্য রোগ আছে যেমন কিডনি রোগ আছে। অবশ্য একজন ডাক্তার বা পুষ্টিবিদের  পরামর্শ নিবেন।

    এবার  আসি খাবার ছাড়া আর কি কি উপায়ে উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ রাখা  যেতে পারে। উপায় বলবো। 

    এক ,ঔষধ,রক্তচাপ  নিয়ন্ত্রণে রাখার জন্য ঔষধের  প্রয়োজন হতে পারে।আপনার  অবস্থা অনুযায়ী ডাক্তার আপনাকে ঔষধ দিবেন দয়া করে ডাক্তারের পরামর্শ ছাড়া এই ওষুধ বন্ধ করবেন না। 

    দুই, অতিরিক্ত ওজন কমানো। প্রতি এক কেজি অতিরিক্ত ওজন কমালে রক্তচাপ সাধারণত এক পয়েন্টের মতো কমে। যাদের ওজন বেশি। চেষ্টা করুন। 

    তিন ,নিয়মিত শরীর চর্চা করা। সপ্তাহে আড়াই ঘন্টা পরে নিয়মিত শরীর  চর্চা করতে পারলে রক্তচাপ ৫ পয়েন্ট পর্যন্ত কমতে পারে। সপ্তাহে অন্তত পাঁচ দিন আধা ঘন্টা করে দ্রুত হাটতে। একটা জিনিস উচ্চ রক্তচাপের রোগীরা করবেন না সেটা হল ধূমপান। ধুমপান উচ্চ রক্তচাপ ও হার্টের ঝুঁকি বাড়ায়। তাই ধূমপান ত্যাগ করতে হবে। 

    নিরাপদে থাকবেন।

  • পাইলসের কার্যকরী ঘরোয়া সমাধান 

    পাইলসের কার্যকরী ঘরোয়া সমাধান 

    পাইলস বা অর্শ রোগ

    পাইলস একটি অতি পরিচিত স্বাস্থ্য সমস্যা। এটি অর্শ রোগ নামেও পরিচিত। অনেকেই এই সমস্যায় দীর্ঘদিন ভুগলেও এ ব্যাপারে পরামর্শ চাইতে বা ডাক্তার দেখাতে সংকোচ বোধ করেন। ক্ষেত্রবিশেষে পাইলস এর সঠিক চিকিৎসার বদলে হোমিওপ্যাথি, কবিরাজি ঔষধ ও অন্যান্য টোটকা গ্রহণ করেন। এসব কারণে পাইলস ক্রমশ জটিল আকার ধারণ করে। তাই পাইলস বা অর্শ রোগ সম্পর্কে বিস্তারিত জেনে এ সম্বন্ধে সচেতন হওয়া জরুরি।

    পাইলস বা অর্শ রোগ কী?

    পায়ুপথ বা পায়খানার রাস্তার মুখ যদি কোনো কারণে ফুলে যায় এবং সেখান থেকে রক্ত পড়ে কিংবা পায়খানার রাস্তায় যদি গোটার মত হয় তখন একে বলা হয় পাইলস। চিকিৎসাবিজ্ঞানের ভাষায় এর নাম হেমোরয়েড। জটিল আকার ধারণ করার আগে অপারেশন ছাড়া অর্শ রোগের চিকিৎসা সম্ভব।

    পাইলস এর লক্ষণগুলো কী?

    পাইলস বা অর্শ রোগের অন্যতম চারটি লক্ষণ নিচে তুলে ধরা হলো। এসব লক্ষণ দেখা দিলে চিকিৎসা শুরু করা জরুরি।

    ১. পায়খানার সাথে রক্ত যাওয়া

    পাইলস হলে পায়খানার সাথে উজ্জ্বল লাল বর্ণের অর্থাৎ তাজা রক্ত যেতে পারে। সাধারণত পায়খানার পরে টয়লেট পেপার ব্যবহার করলে সেখানে রক্তের ফোটা লেগে থাকতে পারে। অথবা কমোডে বা প্যানের গায়ে টকটকে লাল রক্তের ছোপ দেখা যেতে পারে।। পাইলস হলে পায়ুপথের মুখে থাকা অ্যানাল কুশনগুলো থেকে রক্তক্ষরণ হয়। এই রক্ত বেরিয়ে গিয়ে জমাট বাধার সুযোগ পায় না। এ কারণে এক্ষেত্রে তাজা লাল রঙের রক্ত দেখা যায়।

    কিন্তু যদি কোনো কারণে পায়খানার সাথে গাঢ় খয়েরী রঙের রক্ত যায়, বা আলকাতরার মতো কালো ও নরম পায়খানা হয়, তবে তা সাধারণত পাইলস এর কারণে নয়। পরিপাকতন্ত্রের কোনো অংশে রক্তপাতের কারণে পায়খানার সাথে এমন গাঢ় রক্ত যেতে পারে, তাই এমনটা হলে রক্তপাতের কারণ জানার জন্য দ্রুত ডাক্তারের শরণাপন্ন হতে হবে।

    ২. পায়ুপথের মুখের অংশগুলো বেরিয়ে আসা

    পাইল হলে সাধারণত মলত্যাগের পরে অ্যানাল কুশনগুলো নরম গোটার মতো বের হয়ে আসে। এগুলো কিছু সময় পর নিজে নিজেই ভেতরে ঢুকে যায়। অনেকের ক্ষেত্রে এগুলো আঙ্গুল দিয়ে ভেতরে ঢোকানোর প্রয়োজন হতে পারে। আবার কারও কারও ক্ষেত্রে পাইলস এমন পর্যায়ে পৌঁছে যায় যে আঙ্গুল দিয়েও গোটাগুলো ভেতরে ঢোকানো যায় না।

    ৩. পায়খানার রাস্তায় ব্যথা হওয়া

    পাইলস রোগে সাধারণত তীব্র ব্যথা হয় না। তবে যদি পায়ুপথের গোটা এমন পর্যায়ে চলে যায় যে সেগুলো আঙুল দিয়ে ঠেলেও ভেতরে ঢোকানো না যায়, এবং সেগুলোতে রক্ত চলাচল বন্ধ হয়ে যায়, সেক্ষেত্রে অনেক সময় তীক্ষ্ণ বা তীব্র ব্যথা হতে পারে। এই ব্যথা সাধারণত ১-২ দিন স্থায়ী হয়। ব্যথা বেশি হলে ডাক্তারের পরামর্শ নিতে হবে। এছাড়া বিশেষ প্রয়োজনে ঘরোয়া উপায়ে ব্যথার চিকিৎসা করা যায়।

    ৪. পায়খানার রাস্তায় চুলকানি

    পাইলস হলে কখনো কখনো পায়ুপথে বা এর মুখের আশেপাশে চুলকানি হতে পারে। এছাড়া পায়ুপথ দিয়ে মিউকাস বা শ্লেষ্মা-জাতীয় পিচ্ছিল ও আঠালো পদার্থ বের হতে পারে। অনেক সময় মলত্যাগ করে ফেলার পরও বারবার মনে হতে পারে যে পেট পরিষ্কার হয় নি, আবার মলত্যাগ করা প্রয়োজন।

    পারে যে পেট পরিষ্কার হয় নি, আবার মলত্যাগ করা প্রয়োজন।

    পাইলস ও এনাল ফিসার-এর মধ্যে কিভাবে পার্থক্য করবেন? 

    পাইলস ও এনাল ফিসার বা গেজ রোগের লক্ষণগুলোর মধ্যে কিছুটা মিল থাকলেও এই দুইটি পৃথক দুইটি রোগ। দুটি রোগেই পায়ুপথে চুলকানি হতে পারে এবং টাটকা লাল রক্ত যেতে পারে। তবে এনাল ফিসারে রক্ত খুব অল্প পরিমাণে যায়। পাইলস এবং এনাল ফিসার এই দুইটির মধ্যে মূল পার্থক্য হচ্ছে—

    পাইলস হলে পায়ুপথে নরম গোটার মত দেখা দেয়। গোটাগুলো সাধারণত মলত্যাগের পরে বের হয়ে আসে, আবার কিছু সময় পর নিজে নিজেই ভেতরে ঢুকে যায় অথবা আঙ্গুল দিয়ে ভেতরে ঢোকাতে হয়। এছাড়া পাইলস হলে পায়ুপথে শ্লেষ্মার মতো দেখতে পিচ্ছিল কিছু পদার্থ বের হতে পারে।

    এনাল ফিসার বা গেজ রোগের ক্ষেত্রে সাধারণত এসব লক্ষণ দেখা যায় না। আর এক্ষেত্রে প্রতিবার মলত্যাগের সময়ই তীব্র ব্যথা হয়। পাইলসে সাধারণত ব্যথা হয় না। 

    পাইলস কেন হয়?

    কিছু কিছু জিনিস পাইলস এর ঝুঁকি বাড়ায়, সেই সাথে ইতোমধ্যে কারো পাইলস রোগ হয়ে থাকলে তার তীব্রতাও বাড়িয়ে দেয়, যেমন—

    • শক্ত বা কষা পায়খানা
    • মলত্যাগের সময় জোরে চাপ দেয়া
    • অনেক সময় ধরে মলত্যাগের কসরত করা
    • পায়খানার বেগ আটকে রাখা
    • শারীরিক পরিশ্রম না করা 
    • অতিরিক্ত ওজন 

    এছাড়া গর্ভাবস্থায় নানান শারীরিক পরিবর্তনের কারণেও কারও কারও ক্ষেত্রে পাইলস এর ঝুঁকি বেড়ে যায়।

    স্বাভাবিক অবস্থায় পায়খানার রাস্তা বা পায়ুপথের মুখ সাধারণত বন্ধ থাকে। যখন প্রয়োজন হয়, তখন চাপ দিয়ে পায়ুপথের মুখ খুলে শরীর থেকে পায়খানা বা মল বের করে দেওয়া হয়।

    পায়ুপথের মুখ বন্ধ রাখতে সেখানে বেশ কিছু জিনিস একসাথে কাজ করে। তার মধ্যে বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ হল অ্যানাল কুশন। এই কুশনগুলো ৩ দিক থেকে চাপ দিয়ে পায়ুপথের মুখ বন্ধ রাখতে সাহায্য করে।

    যদি কোনো কারণে তিন দিকের এই কুশনগুলো ফুলে যায়, সেগুলো থেকে রক্তক্ষরণ হয়, সেগুলো নিচের দিকে নেমে যায়, অথবা পায়ুপথের চারপাশে গোটার মত দেখা যায়, তখন তাকে পাইলস বা অর্শ রোগ বলা হয়ে থাকে।

    পাইলস এর ব্যথা সারানোর উপায়

    পাইলস এর ব্যথা উপশম করতে প্যারাসিটামল ঔষধ খাওয়া যেতে পারে। এই ব্যথায় কার্যকরী অন্যান্য ঔষধ ও মলম পাওয়া যায়, ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী সেগুলো ব্যবহার করতে পারেন। ঘরোয়া পদ্ধতিতে অর্শ রোগের ব্যথা কমানোর ৪টি উপায় নিচে তুলে ধরা হলো—

    • ব্যথার জায়গাটি কুসুম গরম পানিতে ভিজিয়ে রাখা যায়। ছোট বাচ্চাদের গোসল করানো হয় এমন আকারের একটি বোলে কুসুম গরম পানি নিয়ে সেখানে বসতে পারেন। দিনে ৩ বার পর্যন্ত এটি করা যায়। অন্য সময়ে কোথাও বসতে গেলে একটি বালিশ ব্যবহার করে সেটার ওপর বসা যেতে পারে।
    • একটা প্যাকেটে কিছু বরফ নিয়ে সেটা তোয়ালে দিয়ে পেঁচিয়ে পায়ুপথে গোটাগুলোর ওপরে লাগানো যায়। এতে আরাম পাওয়া যাবে।
    • বিছানায় শুয়ে পা উঁচু করে রাখলে পাইলস এর গোটাগুলোতে রক্ত চলাচল সহজ হবে ও ব্যথা উপশম হবে। শোবার সময় পায়ের নিচে বালিশ দিতে পারেন। এছাড়া খাটের পায়ার নিচে কোন কিছু দিয়ে খাটের এক পাশ উঁচু করে সেদিকে পা দেওয়া যেতে পারে।
    • পায়ুপথ সবসময় পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন ও শুকনো রাখতে হবে। মলত্যাগের পর জোরে ঘষাঘষি না করে আলতোভাবে জায়গাটি পরিষ্কার করে নিতে হবে। টয়লেট পেপার হালকা ভিজিয়ে তারপর সেটা দিয়ে মুছতে পারেন।

    যেসব ব্যথানাশক ঔষধ ব্যবহার করা যাবে না

    ট্রামাডল: এই ঔষধের একটি পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হচ্ছে কোষ্ঠকাঠিন্য, তাই অর্শ রোগের জন্য এটি খাওয়া যাবেনা। প্যারাসিটামল ও ট্রামাডল একত্রে আছে এমন ব্যথানাশকও এড়িয়ে চলতে হবে।

    আইবুপ্রোফেন: এটি রক্তক্ষরণের ঝুঁকি বাড়ায়। তাই আপনার পায়ুপথে ব্যথার সাথে রক্ত গেলে এটি খাওয়া যাবেনা। 

    কখন দ্রুত হাসপাতালে যাবেন?

    পাইলস হলে কিছু বিশেষ ক্ষেত্রে দ্রুত ডাক্তারের শরণাপন্ন হওয়া জরুরি। যেমন—

    • টানা ৭ দিন বাসায় চিকিৎসা নেয়ার পরেও অবস্থার উন্নতি না হলে
    • বারবার পাইলস এর সমস্যা হলে
    • ৫৫ বছরের বেশি বয়সী কারও প্রথমবারের মত পাইলস এর লক্ষণ দেখা দিলে
    • পাইলস থেকে পুঁজ বের হলে
    • জ্বর বা কাঁপুনি হলে, অথবা খুব অসুস্থ বোধ হলে
    • অনবরত রক্তক্ষরণ হলে
    • অত্যধিক রক্তপাত হলে (উদাহরণস্বরূপ, যদি কমোডের পানি লাল হয়ে যায় বা পায়ুপথ দিয়ে  রক্তের বড় বড় চাকা যায়)
    • তীব্র, অসহনীয় ব্যথা হলে
    • পায়খানার রঙ কালচে বা আলকাতরার মত কালো মনে হলে

    পাইলস এর ঘরোয়া চিকিৎসা

    পাইলস এর চিকিৎসা জন্য পাইলস হওয়ার কারণগুলো প্রতিরোধ করতে হবে। অর্শ রোগ সারানোর ৬টি কার্যকর ঘরোয়া উপায় নিচে তুলে ধরা হলো

    • কোষ্ঠকাঠিন্য থেকে বাঁচতে বেশি বেশি আঁশ বা ফাইবারযুক্ত খাবার খতে হবে। এর মধ্যে রয়েছে শাকসবজি, ফলমূল, ডাল, লাল চাল ও লাল আটার তৈরি খাবার। সেই সাথে প্রচুর পরিমাণে পানি পান করতে হবে। ফাইবার পানি শোষণ করার মাধ্যমে পায়খানা নরম করে, তাই ফাইবারকে কাজ করতে হলে সারাদিনে অন্তত দুই লিটার পানি পান করতে হবে। এই দুটো কাজ করলে সাধারণত কয়েকদিনের মধ্যে কোষ্ঠকাঠিন্য দূর হয়, আর কয়েক সপ্তাহের মধ্যে পাইলস এর সব ধরনের লক্ষণ উপশম হয়। ৬ সপ্তাহ অর্থাৎ দেড় মাস ধরে যদি খাবারে যথেষ্ট পরিমাণ ফাইবার নিশ্চিত করা যায়, তাহলে ৯৫ শতাংশ পাইলস রোগীর পায়খানার সাথে রক্ত যাওয়া কমে আসে। কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করতে ইসবগুলের ভুসি একটি কার্যকর ঔষধ।
    • মলত্যাগের সময় খুব জোরে চাপ দেয়া থেকে বিরত থাকতে হবে। পায়খানা যাতে নরম হয় এবং সহজেই মলত্যাগ করা যায়, সেই উপদেশগুলো মেনে চলতে হবে।
    • মলত্যাগে প্রয়োজনের অতিরিক্ত সময় ব্যয় করা যাবে না। টয়লেটে বসে ম্যাগাজিন, পেপার, মোবাইল-এসবে মনোনিবেশ করা বাদ দিতে হবে।
    • পায়খানার চাপ আসলে তা আটকে রাখা উচিত না, এতে পায়খানা আরও শক্ত হয়ে কোষ্ঠকাঠিন্য  দেখা দেয়। চাপ আসলে দেরি না করে বাথরুমে চলে যেতে হবে।
    • নিয়মিত ব্যায়াম বা শরীরচর্চা করতে হবে। ব্যায়ামের মধ্যে ভারী ব্যায়াম বা প্রতিদিন দৌড়ানো বেছে নিতে হবে, তা নয়। শরীরকে চলমান রাখতে হাঁটাচলা, হালকা স্ট্রেচিং, যোগব্যায়াম ইত্যাদির মধ্যে যেকোনোটাই বেছে নেওয়া যায়। গবেষণায় দেখা গেছে, কোষ্ঠকাঠিন্য কমাতে হাঁটাহাঁটি বা হালকা শরীরচর্চাও কার্যকরী ভূমিকা রাখে। প্রয়োজনে অল্প অল্প করে শুরু করতে পারেন। দিনে ২০ মিনিট হাঁটুন। এক বেলা দিয়ে শুরু করুন, এরপর সকাল-সন্ধ্যা দুই বেলা করে হাঁটুন। প্রথমে সপ্তাহে তিন দিন এভাবে হেঁটে আস্তে আস্তে সেটা পাঁচ দিনে নিয়ে আসুন। 
    • ওজন অতিরিক্ত হলে তা কমিয়ে ফেলতে হবে। ওজন বেশী হলে পাইলস হওয়ার সম্ভাবনা বাড়ে, তাই পাইলস এর রোগীদের ওজন কমানোর পরামর্শ দেয়া হয়।

    পাইলস এর অপারেশন

    ঘরোয়া চিকিৎসার উপদেশ এবং ডাক্তারের ঔষধ সেবনের পরামর্শগুলো সঠিকভাবে মেনে চলার পরেও যদি অর্শ রোগের এর সমাধান না হয়, সেক্ষেত্রে অপারেশনের প্রয়োজন হতে পারে। এ ব্যাপারে আপনার চিকিৎসক আপনাকে পরামর্শ দিবেন। সাধারণত ৩ ধরনের অপারেশন করা হয়ে থাকে

    • হেমোরয়েডেকটোমি: এই অপারেশনের মাধ্যমে পাইলস এর গোটাগুলো কেটে অপসারণ করা হয়। 
    • স্টেপলড হেমোরয়েডোপেক্সি: এই পদ্ধতিতে সার্জারির মাধ্যমে পাইলস এর গোটাগুলো পুনরায় পায়ুপথের ভেতরে ঢুকিয়ে দেয়া হয়।
    • হেমোরয়েডাল আর্টারি লাইগেশন: এক্ষেত্রে পাইলস এর গোটাগুলোর রক্ত সরবরাহ অপারেশনের মাধ্যমে বন্ধ করে দেয়া হয়, যাতে গোটাগুলো শুকিয়ে যায়।

    এসব অপারেশনের জন্য সাধারণত এনেসথেসিয়া বা চেতনানাশক ব্যবহার করে রোগীকে অজ্ঞান করা হয় এবং সার্জারির পর দুই-একদিন হাসপাতালে থাকার প্রয়োজন হতে পারে।

  • মাথাব্যথার ঘরোয়া সমাধান

    মাথাব্যথার ঘরোয়া সমাধান

    মাথা ব্যথা কেন হয়? মাথা ব্যথা হলে সমাধান কি? কোন ধরনের মাথা ব্যথা হলে ডাক্তারের কাছে যাওয়া প্রয়োজন ? 

    মাথাব্যথার কারণ ও প্রতিকার ,

    বাড়িঘর পরিষ্কার করা থেকে শুরু করে দেরিতে ঘুমানো – এমন অনেক কারণেই মাথাব্যথা হতে পারে। আমরা এখানে মাথাব্যথার ১০ টি প্রধান কারণ ও প্রতিকার তুলে ধরবো।

    পরিচ্ছেদসমূহ

    • মানসিক চাপের পরে রিল্যাক্স করা
    • জমে থাকা রাগ
    • অস্বাস্থ্যকর দেহভঙ্গি Poor posture
    • পারফিউম
    • খারাপ আবহাওয়া
    • দাঁতে দাঁত ঘষা
    • উজ্জ্বল আলো
    • খাবার থেকে মাথাব্যথা
    • যৌন সহবাস থেকে মাথাব্যথা
    • আইসক্রিম

    মানসিক চাপের পরে রিল্যাক্স করা

    আপনি সারা সপ্তাহে প্রতিদিন ১০ ঘণ্টা করে কাজ করেও সুস্থ বোধ করেন। কিন্তু ছুটির দিন ভালো ঘুম দিয়ে উঠে দেখেন তীব্র ব্যথায় আপনার মাথা টনটন করছে। কেন এমন হয়? কারণটার ব্যখ্যা জটিল, তবে সমাধানটা সহজ। আপনি চাইলে কারণ না পড়ে সরাসরি নিচে সমাধানে পড়তে পারেন।

    কারণ: পুরো সপ্তাহের মানসিক চাপ শেষ হয়ে যাওয়ার ফলে শরীরের স্ট্রেস হরমোন শারীরিক ও মানসিক চাপ বেড়ে গেলে নিঃসৃত বিশেষ হরমোন) নিঃসরণের পরিমাণ কমে যায়। এর ফলে দ্রুতই মস্তিষ্কে নিউরোট্রান্সমিটার নামের বার্তা বহনকারী কিছু রাসায়নিক পদার্থের ক্ষরণ বেড়ে যায়। এই পদার্থগুলো রক্তনালীকে প্রথমে সংকুচিত ও পরে প্রসারিত করার নির্দেশ পাঠায়, যার ফলে মাথাব্যথা হয়।

    সমাধান

    সপ্তাহ শেষে ছুটির দিনে বেশি ঘুমানোর লোভ সংবরণ করুন। আট ঘন্টার বেশি ঘুমানোর কারণে মাথাব্যথা হতে পারে। সবটুকু বিশ্রাম সপ্তাহের শেষে ছুটির দিনে নেবার জন্য রেখে দিবেন না। মানসিক প্রশান্তি আনে এমন কিছু কাজ, যেমন যোগব্যায়াম, সপ্তাহের মাঝখানেই করার চেষ্টা করুন।

    জমে থাকা রাগ

    আপনি যখন রেগে যান, তখন আপনার ঘাড়ের পেছনের মাংসপেশি ও মাথার ত্বক টানটান হয়ে মাথার চারিদিকে একটি আঁটসাঁট ব্যান্ড পরে থাকার মত অনুভূতি হয়। এটি দুশ্চিন্তাজনিত মাথাব্যথা বা টেনশন-টাইপ মাথাব্যথার Tension Headache একটি লক্ষণ।

    প্রতিকার কী?

    আপনার রাগ ওঠা শুরু হলে বুক ভরে ধীরে ধীরে শ্বাস নিন। নাক দিয়ে শ্বাস নিন আর মুখ দিয়ে বের করে দিন। এতে আপনার মাথা ও ঘাড়ের পেশি শিথিল হবে।

    অস্বাস্থ্যকর দেহভঙ্গি Poor posture

    অস্বাস্থ্যকর দেহভঙ্গী ,যেমন কুঁজো হয়ে বসা আপনার পিঠের উপরের দিকে, ঘাড়ে ও কাঁধ দুটোতে চাপ সৃষ্টি করে, যা থেকে মাথাব্যথা হতে পারে।

    এই মাথাব্যথায় সাধারণত মাথার নিচের দিকে টনটনে ব্যথা করে এবং কখনো কখনো মুখমণ্ডলে, বিশেষ করে কপালের দিকে, ঝলকানির মত করে ব্যথার অনুভূতি হয়।

    কীভাবে এর চিকিৎসা করবেন?

    একই ভঙ্গীতে দীর্ঘ সময় বসে বা দাঁড়িয়ে থাকবেন না। সোজা হয়ে, কোমরে ঠেক বা সাপোর্ট দিয়ে বসুন।

    আপনার দীর্ঘক্ষণ ফোন ব্যবহার করার প্রয়োজন বা অভ্যাস থাকলে আলাদা হেডসেট বা ইয়ারফোন Earphones ব্যবহার করুন, কারণ বেশি সময় ধরে মাথা ও কাঁধের মাঝামাঝি ফোন ধরে রাখলে আপনার মাংসপেশিতে চাপ পড়ে মাথাব্যথা হতে পারে।

    আপনি একজন ফিজিক্যাল থেরাপিস্ট ,physical therapist এর পরামর্শও নিতে পারেন। তারা আপনার দেহভঙ্গির সমস্যা বের করে সেটা সংশোধন করতে সাহায্য করতে পারবেন।

    পারফিউম,

    আপনার যদি মনে হয় যে ঘরের কাজ করলে আপনার মাথাব্যথা হয়, তবে আপনার ধারণা সঠিকও হতে পারে। বাসাবাড়ি পরিষ্কার করার কাজে ব্যবহৃত সাবান বা ডিটারজেন্ট, সেই সাথে পারফিউম এবং সুগন্ধি এয়ার ফ্রেশনার – এগুলোতে নানান ধরনের রাসায়নিক পদার্থ থাকে, যা মাথাব্যথার জন্য দায়ী।

    কীভাবে এর চিকিৎসা করবেন?

    কোন বিশেষ ঘ্রাণে যদি আপনার মাথাব্যথা শুরু হয়, তবে তীব্র ঘ্রাণযুক্ত পারফিউম বা সাবান, শ্যাম্পু ও কন্ডিশনার ব্যবহার করা থেকে বিরত থাকুন।

    বাড়িতে ঘ্রাণহীন সাবান, ডিটারজেন্ট ও এয়ার ফ্রেশনার ব্যবহার করুন ।

    ঘরের দরজা-জানালা যতক্ষণ সম্ভব খুলে রাখুন।

    কর্মস্থলে কোন সহকর্মীর পারফিউমে আপনার সমস্যা হলে নিজের ডেস্কে একটি ছোট ফ্যান চালাতে পারেন।

    খারাপ আবহাওয়া

    আপনার যদি প্রায়ই মাথাব্যথা হয়, তাহলে খেয়াল করুন যে আপনার নিচের সময়গুলোতে মাথাব্যথা শুরু হয় কি না:

    আকাশ মেঘলা হলে

    বাতাসে আর্দ্রতা বেশি থাকলে

    গরম পরলে বা তাপমাত্রা বাড়তে থাকলে

    ঝড় হলে,

    বায়ুচাপের পরিবর্তনের কারণে আবহাওয়ার পরিবর্তন হয়। এই পরিবর্তন মস্তিষ্কে রাসায়নিক ও বৈদ্যুতিক পরিবর্তন ঘটায়, যার ফলে স্নায়ু উত্তেজিত হয়ে মাথাব্যথা হয়।

    কীভাবে এর চিকিৎসা করবেন?

    আমরা তো আর আবহাওয়া পরিবর্তন করতে পারি না! তবে আপনি আবহাওয়ার পূর্বাভাস জেনে আপনার মাথাব্যথা হবে কি না সেটা ধারণা করতে পারেন, আর সেই অনুযায়ী মাথাব্যথা রোধে ২-১ দিন আগেই একটি ব্যথানাশক ওষুধ বা পেইনকিলার খেয়ে নিতে পারেন।

    দাঁতে দাঁত ঘষা,

    রাতে ঘুমের মধ্যে কেউ কেউ দাঁতে দাঁত ঘষেন, চিকিৎসাবিজ্ঞানের ভাষায় একে বলা হয় ব্রাক্সিজম (bruxism)। এর ফলে চোয়ালের পেশির সংকোচন হয়, ফলে একটা ভোঁতা ধরনের মাথাব্যথা হয়।

    কিভাবে এর চিকিৎসা করবেন?

    দাঁতের ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী ঘুমের মধ্যে দাঁতকে সুরক্ষিত রাখার জন্য আপনাকে সঠিক মাপের মাউথ গার্ড  mouth guard বানিয়ে নিতে হবে।

    উজ্জ্বল আলো

    উজ্জ্বল ও ঝলমলে আলো – বিশেষ করে তা যদি দ্রুত জ্বলতে আর নিভতে থাকে, তাহলে মাইগ্রেনের ব্যথা শুরু হতে পারে। এর কারণ হল, উজ্জ্বল ও মিটমিট করতে থাকা আলো মস্তিষ্কে বিশেষ কিছু রাসায়নিক পদার্থের ক্ষরণ বাড়িয়ে দেয়, যার ফলে মস্তিষ্কের মাইগ্রেনের কেন্দ্রটি সচল হয়ে যায়।

    কীভাবে এর চিকিৎসা করবেন?

    চোখে আলোর তীব্রতা কমাতে সানগ্লাসের ব্যবহার খুবই কার্যকর। আপনি ঘরে-বাইরে সব জায়গায় এটি পরতে পারেন। পোলারাইজড লেন্সও ঝলমলে আলোর তীব্রতা কমাতে সাহায্য করে।

    কর্মস্থলে আপনার মনিটরের উজ্জ্বলতার মাত্রা ঠিক করে নিন অথবা ঝলমলে আলো কমায় এমন গ্লেয়ার স্ক্রিন glare screen ব্যবহার করুন।

    অফিসে কিছু লাইট বন্ধ করে দিতে পারেন বা সেগুলোকে অন্য কোথাও সরিয়ে ফেলতে পারেন। যদি সেটা সম্ভব না হয়, তাহলে অফিসে আপনার বসার জায়গাটি বদলে ।

    টিউবলাইট ও ফ্লু্রোসেন্ট লাইট fluorescent lighting বেশি মিটমিট করে, তাই সম্ভব হলে এগুলোর বদলে অন্য ধরনের লাইট ব্যবহার করুন।

    খাবার থেকে মাথাব্যথা,

    চিজ কিংবা ডার্ক চকলেট এর মত লোভনীয় খাবার হতে পারে আপনার মাথাব্যথার কারণ! এই ব্যাপারে খেয়াল রাখুন। এসব খাবারে কিছু রাসায়নিক পদার্থ থাকে যার কারণে মাইগ্রেন অ্যাটাক শুরু হয়। এগুলো ছাড়া আরও যেসব খাবারের কারণে মাইগ্রেন হয় তার মধ্যে রয়েছে:

    • প্রক্রিয়াজাত মাছ ও মাংস
    • ডায়েট কোমল পানীয়

    কীভাবে এর চিকিৎসা করবেন?

    মাইগ্রেনের কারণগুলো লিখে রাখার জন্য একটি ডায়েরি রাখুন।

    কোনো খাবারের কারণে মাথাব্যথা হচ্ছে সন্দেহ হলে তা কয়েক মাসের জন্য খাওয়া বন্ধ রেখে দেখুন মাথাব্যথা আগের চেয়ে কমে কি না। কোন বিশেষ খাবার বন্ধ করার ব্যপারে আপনার মনে সন্দেহ থাকলে ডাক্তারের পরামর্শ নিন বা একজন রেজিস্টার্ড ডায়েটিশিয়ানের কাছে যান।

    নিয়মিত খাবার খান, কারণ কোন বেলার খাবার বাদ পড়লেও মাথাব্যথা শুরু হতে পারে।

    যৌন সহবাস থেকে মাথাব্যথা

    অনেক পুরুষ ও নারীর জন্য যৌনমিলনের সময় প্রচণ্ড উত্তেজনার কারণে হওয়া মাথাব্যথা একটি চরম বাস্তব ও পীড়াদায়ক সমস্যা।

    ডাক্তাররা ধারণা করেন যে এই মাথাব্যথার কারণ হল মাথা ও ঘাড়ের মাংসপেশিতে অতিরিক্ত চাপ সৃষ্টি হওয়া। এটা যৌন মিলনের যেকোন পর্যায়ে হতে পারে, এবং কয়েক মিনিট থেকে এক ঘন্টা পর্যন্ত স্থায়ী হতে পারে।

    কীভাবে এর চিকিৎসা করবেন?

    এই মাথাব্যথা অস্বস্তিকর হলেও তেমন ক্ষতিকর নয়, আর এমনটাও নয় যে এটি থাকলে আপনাকে যৌন সহবাস এড়িয়ে চলতে হবে। মাথাব্যথা রোধ করতে কয়েক ঘন্টা আগে একটি ব্যথানাশক ওষুধ খেয়ে নিন।

    আইসক্রিম,

    আইসক্রিমে কামড় দেওয়ার সাথে সাথে কি আপনি কপালে তীক্ষ্ণ, ছুরির আঘাতের মত ব্যথা অনুভব করেন? উত্তর যদি হ্যাঁ হয়, তাহলে আপনার আইসক্রিম থেকে মাথাব্যথা Ice-cream Headache হয়, যার কারণ হল মুখের ভেতরে উপরের তালু ও গলার ভেতরের দিক দিয়ে ঠাণ্ডা খাবারের চলাচল। বরফ-ঠাণ্ডা পানীয় থেকেও একই রকম সমস্যা হতে পারে।

    কীভাবে এর চিকিৎসা করবেন?

    এই ব্যথার জন্য কোনো চিকিৎসার প্রয়োজন হয় না, বরং এই ব্যথা এক থেকে দুই মিনিট থাকার পর বিদ্যুৎগতিতে সেরে যায়।

    মাথাব্যথা হলে কখন দ্রুত হাসপাতালে যাবেন?

    বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই মাথাব্যথা আপনাআপনি সেরে যায়। সাধারণত মাথাব্যথা কোন গুরুতর রোগের লক্ষণ নয়। মাথাব্যথা সাধারণত ৩০ মিনিট থেকে কয়েক ঘন্টা পর্যন্ত থাকতে পারে।

    যা করবেন, মাথাব্যথা হলে কী করবেন?

    বেশি করে পানি পান করুন।

    ঠান্ডা-জ্বর বা ফ্লু জাতীয় সমস্যা যেমন সর্দি কাশি থাকলে পর্যাপ্ত পরিমাণ বিশ্রাম করুন।

    দুশ্চিন্তা মুক্ত থাকার চেষ্টা করুন। যে কোন ধরণের মানসিক চাপ মাথাব্যথার তীব্রতা বাড়িয়ে দিতে পারে।

    যখন সম্ভব ব্যায়াম করুন।

    প্যারাসিটামল জাতীয় ওষুধ চাইলে নিতে পারেন। অবশ্যই আপনার বয়স অনুযায়ী সঠিক পরিমাণে সেবন করবেন।

    মাথাব্যথা হলে যেসব কাজ করবেন না

    কোন বেলার খাবার বাদ দিবেন না খাওয়ার রুচি না হলেও খেয়ে নিতে হবে।

    স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি ঘুমাবেন না। এতে করে মাথাব্যথা বেড়ে যেতে পারে।

    চোখ দুটোকে বেশি খাটাবেন না। যেমন যেকোন ইলেকট্রনিক স্ক্রিন যেমন টেলিভিশন, মোবাইল, কম্পিউটার ইত্যাদির দিকে লম্বা সময় ধরে তাকিয়ে থাকা।

    মদ সেবন করবেন না।

    কখন ডাক্তারের সহায়তা নিবেন?

    ঘনঘন মাথাব্যথা হলে।

    ব্যথানাশক ওষুধ যেমন প্যারাসিটামল খেলেও মাথাব্যথা না কমলে। ক্রমশ খারাপ হতে থাকলে।

    মাথার সামনের দিকে কিংবা এক পাশে বাজে টনটনে ব্যথা অনুভব করলে। এই ব্যথাটি মাইগ্রেন হতে পারে অথবা অল্প কিছু ক্ষেত্রে ক্লাসটার হেডেক  এক ধরণের  মাথাব্যথা  হতে পারে।

    মাথাব্যথার সাথে বমিভাব লাগলে, বমি হলে এবং আলো বা আওয়াজ যন্ত্রণাদায়ক হয়ে উঠলে

    কখন দ্রুত হাসপাতালে যাবেন?

    • মাথায় গুরুতর আঘাত পেলে যেমন কোন দুর্ঘটনার ফলে বা কোথাও পরে যাওয়ার ফলে।
    • মাথাব্যথা হঠাৎ শুরু হলে এবং শুরুতেই ব্যথার তীব্রতা অনেক বেশি হলে।
    • প্রচণ্ড মাথাব্যথার সাথে নিচের কোন লক্ষণ দেখা দিলে দ্রুত হাসপাতালে যাবেন:
    • কথা বলতে কিংবা কিছু মনে করতে হঠাৎ অসুবিধা হলে
    • হাত বা পা দুর্বল বা অবশ হয়ে আসলে
    • দৃষ্টিশক্তি হারিয়ে ফেললে
    • ঝিমিয়ে পরলে অথবা অসংলগ্ন আচরণ করলে
    • গায়ে জ্বর আসলে, কাঁপুনি হলে, ঘাড় শক্ত হয়ে গেলে  অথবা চামড়ায় র‍্যাশ, ফুসকুড়ি উঠলে
    • চোখের সাদা অংশ লাল হয়ে গেলে।
    • খিঁচুনি হলে
    • অজ্ঞান হয়ে পরলে

    এছাড়াও প্রচণ্ড মাথাব্যথার সাথে নিচের কোন লক্ষণ দেখা দিলে দ্রুত হাসপাতালে যাবেন। এই লক্ষণগুলি মাথা এবং ঘাড়ের রক্তনালীর প্রদাহের কারণে দেখা দিতে পারে। সেক্ষেত্রে জরুরী চিকিৎসা প্রয়োজন হয়।

    • খাওয়ার সময় চোয়ালে ব্যথা হলে
    • চোখে ঝাপসা দেখলে অথবা একটার জায়গায় দুটো দেখলে
    • মাথার তালুতে চাপ দিয়ে ব্যথা অনুভব করলে
    • মাথাব্যথার কারণ
    • সাধারণত যেসব কারণে মাথাব্যথা হয়:
    • জ্বর বা সর্দিকাশি, ফ্লু
    • মানসিক চাপ
    • অতিরিক্ত মদ্যপান করা
    • অস্বাস্থ্যকর দেহভঙ্গি যেমন কুঁজো হয়ে বসা
    • দৃষ্টিশক্তির সমস্যা
    • নিয়মিত খাবার না খাওয়া
    • পর্যাপ্ত পরিমাণ পানি পান না করা , পানিশূন্যতা
    • অতিরিক্ত ব্যথানাশক ওষুধ সেবন
    • মাসিকের বা মেনোপজের সময়ে হরমন জনিত ব্যথা। 

    নিরাপদে থাকবেন।

  • কষা পায়খানা দূর করার ঘরোয়া চিকিৎসা

    কষা পায়খানা দূর করার ঘরোয়া চিকিৎসা

    পেট পরিষ্কার হচ্ছে না। পায়খানা করতে কষ্ট হয়। টয়লেটে অনেক সময় ধরে বসে থাকতে হয়। কোষ্ঠকাঠিন্যে ভুগছেন। এমন সমস্যার সমাধান তুলে ধরেছি,

    পায়খানা কষা বা শক্ত হওয়াকেই মূলত কোষ্ঠকাঠিন্য বলা হয়। এটি খুব পরিচিত একটি স্বাস্থ্য সমস্যা। অনেকেরই মাঝে মাঝে পায়খানা খুব শক্ত হয়ে যায়, মলত্যাগের সময় অনেকক্ষণ কসরত করতে হয়। এ ছাড়া পায়খানার পর মনে হয় পেট ঠিকমতো পরিষ্কার হয়নি।

    কোষ্ঠকাঠিন্য হলে পায়খানা শক্ত হয়, যার কারণে অনেকে মলত্যাগের সময় ব্যথা অনুভব করেন। কারও কারও ক্ষেত্রে একটানা তিন–চারদিন পায়খানা নাও হতে পারে। এগুলো সবই সাধারণত কোষ্ঠকাঠিন্যের লক্ষণ। দীর্ঘদিন কোষ্ঠকাঠিন্য হলে পাইলস বা অর্শ রোগ কিংবা এনাল ফিসার বা গেজ রোগ এর মতো পায়ুপথের রোগ তৈরি হতে পারে। পায়খানা কষা কেন হয় তা জেনে কিছু সাধারণ নিয়ম মেনে চললে কোনো প্রকার ঔষধ ছাড়াই সম্পূর্ণ ঘরোয়া উপায়েই এই সমস্যা এড়িয়ে চলা সম্ভব।

    কোষ্ঠকাঠিন্যের লক্ষণ কী কী?

    সাধারণত সপ্তাহে যদি তিন বারের কম পায়খানা হয়, তবে সেটাকে কোষ্ঠকাঠিন্য বলা হয়। এ ছাড়াও কোষ্ঠকাঠিন্য হলে যেসব লক্ষণ থাকতে পারে সেগুলো হলো—

    পায়খানা শুকনো, শক্ত চাকার মত হওয়া

    পায়খানার আকৃতি স্বাভাবিকের চেয়ে বড় হওয়া

    পায়খানা করতে কষ্ট হওয়া

    পেট পরিষ্কার হচ্ছে না এমন মনে হওয়া

    পেটে ব্যথা হওয়া, পেট ফাঁপা লাগা, বা বমি বমি ভাব হওয়া

    কোষ্ঠকাঠিন্য কেন হয়? 

    নানাবিধ কারণে কোষ্ঠকাঠিন্য হতে পারে। এগুলোর মধ্যে সবচেয়ে কমন ও গুরুত্বপূর্ণ ৬টি কারণ হলো—

    খাবারের তালিকায় যথেষ্ট পরিমাণে ফাইবার বা আঁশ না থাকা 

    পর্যাপ্ত পরিমাণে পানি পান না করা

    শুয়ে-বসে থাকা ও শারীরিক পরিশ্রমের অভাব

    পায়খানার বেগ আসলে তা চেপে রাখা

    মানসিক চাপ, উদ্বেগ বা বিষণ্ণতা 

    ঔষধের পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া

    এই কারণগুলো কিভাবে কোষ্ঠকাঠিন্যের সমস্যা সৃষ্টি করে তা জানা গুরুত্বপূর্ণ। এর মাধ্যমে এগুলো সমাধান করা সহজ হবে।

    ১. যথেষ্ট ফাইবার বা আঁশযুক্ত খাবার না খাওয়া

    ফাইবার বা আঁশ হলো এক ধরনের শর্করা। পেট পরিষ্কার হওয়ার জন্য ফাইবার খুবই গুরুত্বপূর্ণ। আমাদের পরিপাকতন্ত্রের যে জায়গায় পায়খানা তৈরি হয় ও জমা থাকে, সেখানে ফাইবার অনেকটা স্পঞ্জের মত কাজ করে।

    পানি শোষণ ও ধারণ করার মাধ্যমে ফাইবার পায়খানায় পানি ধরে রাখতে সাহায্য করে। ফলে পায়খানা নরম ও ভারী হয়, সহজেই শরীর থেকে বের হয়ে আসে। কিন্তু খাবারে পর্যাপ্ত পরিমাণে ফাইবার না থাকলে পায়খানা শক্ত হয়ে যায়, ফলে কোষ্ঠকাঠিন্য দেখা দিতে পারে।

    ২. পর্যাপ্ত পরিমাণে পানি পান না করা

    পানি খাবারের ফাইবারের সাথে মিলে পায়খানাকে ভারী ও নরম করে। এর ফলে পরিপাকতন্ত্রের ভেতর দিয়ে পায়খানা চলাচল সহজ হয়। তাই পর্যাপ্ত পরিমাণে পানি পান না করলে কোষ্ঠকাঠিন্য হতে পারে।

    ৩. শুয়ে-বসে থাকা ও শারীরিক পরিশ্রমের অভাব

    নিয়মিত ব্যায়াম ও শারীরিক পরিশ্রম করলে আমাদের পরিপাকতন্ত্র অর্থাৎ পেটের ভেতরে থাকা নাড়িভুঁড়ি সচল হয়। এতে স্বাভাবিকভাবে পায়খানা বেরিয়ে আসে। নিয়মিত শারীরিক পরিশ্রমের অভাব হলে তাই কোষ্ঠকাঠিন্য দেখা দিতে পারে।

    ৪. পায়খানার বেগ আসলে তা চেপে রাখা 

    পায়খানা শক্ত হলে অনেকে টয়লেটে যেতে চায় না, কারণ তখন মলত্যাগ করতে কিছুটা কষ্ট হয়। কিন্তু পায়খানার বেগ আসলে তা যদি আটকে রাখা হয়, তাহলে শরীর ক্রমশ সেখান থেকে পানি শুষে নিতে থাকে। পেটের ভেতর পায়খানা জমিয়ে রাখলে সেটা দিন দিন আরও শক্ত হতে থাকে, ফলে কোষ্ঠকাঠিন্য দেখা দেয়।

    ৫. মানসিক চাপ, উদ্বেগ বা বিষণ্ণতা 

    অনেক সময় মানসিক চাপ, কোনো কিছু নিয়ে উদ্বিগ্ন থাকা বা বিষণ্ণতায় ভোগার ফলে শরীরের স্বাভাবিক গতিপ্রকৃতির ছন্দপতন হয়, শারীরবৃত্তীয় কাজকর্মে ব্যাঘাত ঘটে। এতে কোষ্ঠকাঠিন্য দেখা দিতে পারে।

    ৬. ঔষধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া 

    নির্দিষ্ট কিছু ঔষধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হিসেবে কোষ্ঠকাঠিন্য দেখা দিতে পারে। এর মধ্যে রয়েছে —

    ট্রামাডল বা ওপিয়েট জাতীয় ব্যথার ঔষধ

    আইবুপ্রোফেন

    আয়রন ট্যাবলেট

    ক্যালসিয়াম সাপ্লিমেন্ট

    কেমোথেরাপিতে ব্যবহৃত কিছু ঔষধ

    এ ছাড়া একসাথে পাঁচটার বেশি ঔষধ খেলেও কোষ্ঠকাঠিন্য হওয়ার সম্ভাবনা বাড়তে পারে। 

    কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করার উপায় কী? 

    যেসব কারণে কোষ্ঠকাঠিন্য হতে পারে সেগুলো এড়িয়ে চলার মাধ্যমে সহজেই কোষ্ঠকাঠিন্য থেকে পরিত্রাণ পাওয়া সম্ভব। নিচে ঘরোয়া উপায়ে কিভাবে কোষ্ঠকাঠিন্যের চিকিৎসা করা যায় তা তুলে ধরা হয়েছে।

    ১. খাবারের তালিকায় ফাইবারের পরিমাণ বাড়াতে হবে

    পর্যাপ্ত পরিমাণে ফাইবার বা আঁশ আছে এমন খাবার খেতে হবে। সবুজ শাকসবজি, ফলমূল, ডাল, লাল আটা ও লাল চালের মতো গোটা শস্যদানা বেশি করে খাওয়া উচিত। কোষ্ঠকাঠিন্য এড়াতে দৈনিক প্রায় ৩০ গ্রাম ফাইবার খাওয়ার পরামর্শ দেয়া হয়।

    কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করতে প্রতিদিনের খাবার তালিকায় কীভাবে ফাইবার যোগ করবেন? 

    ১. ভাত বা রুটি খাওয়ার ক্ষেত্রে লাল চাল ও লাল আটা ব্যবহার করতে পারেন। এগুলোতে ফাইবারের পরিমাণ বেশি থাকে।

    ২. প্রতিবেলার খাবারে ডাল রাখতে পারেন। ডালে যথেষ্ট পরিমাণে ফাইবার থাকে।

    ৩. প্রতিবেলার খাবারে কয়েক ধরনের বা সম্ভব না হলে কমপক্ষে এক ধরনের সবজি রাখতে হবে।

    ৪. যেসব ফল বা সবজি খোসাসহ খাওয়া যায় সেগুলো খোসা না ফেলে খাওয়ার চেষ্টা করুন। কারণ খোসায় উচ্চ পরিমাণে ফাইবার থাকে। টমেটো, আপেল ও আলুর মতো খাবারগুলো খোসাসহ খেতে পারেন। তবে খাওয়ার আগে অবশ্যই ভালোমতো পরিষ্কার করে ধুয়ে নিতে হবে।

    ৫. যেকোনো ফল বা সবজি গোটা বা আস্ত খেলে ভালো ফাইবার পাওয়া যায়। জুস বা ভর্তা বানিয়ে খেলে আঁশের পরিমাণ কমে যায়।

    তবে খাবারের তালিকায় ফাইবারের পরিমাণ হুট করে বাড়ানো উচিত নয়। কারণ হঠাৎ ডায়েটে ফাইবারের পরিমাণ বাড়িয়ে ফেললে বায়ুর সমস্যা হতে পারে। এ ছাড়া পেট ফাঁপা, তলপেটে তীব্র ব্যথাসহ নানা ধরনের জটিলতা দেখা দিতে পারে।

  • ঘুম না হলে কী করণীয়? জেনে নিন দ্রুত ঘুমিয়ে পড়ার ঘরোয়া কৌশল।

    ঘুম না হলে কী করণীয়? জেনে নিন দ্রুত ঘুমিয়ে পড়ার ঘরোয়া কৌশল।

    আমরা অনেকেই নিদ্রাহীনতায় ভুগি। এর ফলে দিনের বেলা হাই তুলতে থাকি,কাজে মনোযোগ দিতে কষ্ট হয় সারাদিন মেজাজ খিটখিটে হয়।

    আমি আজকে নিদ্রাহীনতার চিকিৎসা নিয়ে কথা বলব। উল্লেখ করবো ভিন্ন ভিন্ন কারণ এবং তার চিকিৎসা। 

    এক , গবেষণায় দেখা গেছে, দিনে বেলা ঘুমাতে গেলে নানান দুশ্চিন্তা মাথায়  আসতে থাকে ফলে ঘুম আসে না। এই সমস্যার সমাধানের জন্য একটা পদ্ধতি আছে। 

    worry  time

    যাকে বলে  worry  time। বাংলা এর অর্থ হলো দুশ্চিন্তার সময়। অর্থাৎ দুশ্চিন্তা গুলো নিয়ে ভাবার জন্য দিনের বেলাতে একটা আলাদা সময় রাখা। ধরেন আপনি ঠিক করলেন প্রতিদিন বিকাল ৫ টা থেকে সাড়ে পাঁচটা আপনার দুশ্চিন্তার সময়। এই সময় আপনি আপনার দুশ্চিন্তাগুলো নিয়ে ভাববেন। তাহলে এগুলো দিনে সমাধান হয়ে যাবে। ঘুমাতে গেলে আপনাকে আর আপনাকে  বিরক্ত করবে না।কিন্তু ঘুমানোর সময় যদি নতুন দুশ্চিন্তা আসে তখন সেটা ভাবা নিয়ে প্রয়োজন নেই। 

    কিছু খাবার এড়িয়ে চলতে হবে। চা, কফি,কমল পানীয়,আর এনার্জি ড্রিংক। কারণ হচ্ছে এগুলোতে আছে ক্যাফেইন।ক্যাফেইন  ঘুম আসতে দেয় না। ঘুম আসলেও গভীর হতে দেয় না।তার ঘুমের সমস্যা থাকলে না খাওয়াই ভালো।বিশেষ করে ঘুমের  ৬ ঘণ্টা আগে এগুলা খাওয়া যাবেনা।

    ঘুমের কাছাকাছি সময়ে গরম দুধ পান করতে পারেন। গবেষণায় দেখা গেছে এটা ভালো   ভালো এবং লম্বা সময় ঘুমে সাহায্য করে।

    নিদ্রাহীনতায় রোগীদের আরেকটা চিকিৎসা।ঘুমাতে যাওয়ার আগে এক ঘন্টা রিলাক্স করা ,দিনের ব্যস্ততা ও দুশ্চিন্তাগুলো থেকে নিজেকে দূরে সরিয়ে আনতে এই সময়টা ব্যবহার করা হয়।এই এক ঘন্টা বই পড়া, ডায়েরি লেখা ,গরম পানি দিয়ে গোসল করা, মনে প্রশান্তি আমি এমন কিছু করা।যেগুলো কাজ করতে মানা করা হয় যেমন ঘুমানোর আগে টিভি দেখা,কম্পিউটার ব্যবহার করা, মোবাইল ফোন ব্যবহার করা, কারণ এই  যন্ত্র গুলোর স্কিন উজ্জ্বল আলো মস্তিষ্ক কে সজাগ করে তোলে ফলে  ঘুম আসতে দেরি হয়।

    রেস্টলেস লেগ সিন্ড্রোম’ অথবা 

    সাধারণত ৭–৯ ঘণ্টার ঘুমকেই আদর্শ বলে ধরা হয়। পর্যাপ্ত ঘুম না হলে দিনে ক্লান্তি ও বেখেয়ালি বোধ হতে পারে। ফলে দৈনন্দিন কাজ করতে সমস্যা তৈরি হতে পারে।

    ঘুম ঠিকমতো না হওয়া নিয়ে বেশি দুশ্চিন্তা করলে সেটি ঘুমাতে আরও বেশি সমস্যা তৈরি করতে পারে। এজন্য এটি নিয়ে দুশ্চিন্তা না করে নিচের সহজ ও কার্যকর পরামর্শগুলো মেনে চলতে পারেন। এগুলো আপনার ঘুমের সমস্যা সমাধানে সাহায্য করতে পারে।

    ঘুমানোর জন্য শান্তিপূর্ণ পরিবেশ বেছে নিন যেই রুমে ঘুমাবেন সেটি অন্ধকার ও আরামদায়ক রাখার চেষ্টা করুন। অতিরিক্ত গরম, ঠান্ডা অথবা উজ্জ্বল আলোতে ভালোমতো ঘুমাতে অসুবিধা হতে পারে। ঘুমানোর সময়ে ঘরে যাতে কোনো ধরনের আলো না আসে, এজন্য জানালায় ভারী পর্দা ব্যবহার করতে পারেন। এ ছাড়াও প্রয়োজন হলে ঘুমানোর সময় চোখে ‘আই মাস্ক’ ও কানে ‘ইয়ার প্লাগ’ ব্যবহার করতে পারেন। আই মাস্কের পরিবর্তে চোখের ওপর ছোটো কোনো কাপড় রেখেও ঘুমাতে পারেন।

    ঘুমানো অথবা বিশ্রাম নেওয়া ছাড়া বিছানায় অন্য কিছু করা পরিহার করুন: বিছানা শুধুমাত্র ঘুমানোর জন্যই ব্যবহার করুন। বিছানায় টিভি দেখা পরিহার করুন।

    ঘুমানোর আগে অনেক বেশি বেশি খাবার খেলে কারো কারো ঘুম ভালো নাও হতে পারে।

    যাদের রাতে ঘুমের সমস্যা আছে,তারা ঘুমানোর তিন থেকে চার ঘন্টা আগে রাতের  খাবার কেড়ে নেয়ার পরামর্শ দেয়া হয়। 

    ধূমপান এড়িয়ে চলতে হবে।কারণ নিকোটিন একটি উত্তেজক পদার্থ। যারা ধূমপান করেন তারা সচারচর ঘুমাতে পারেনা,ঘন ঘন ঘুম থেকে জেগে উঠে এবং প্রায় ঘুম ব্যাহত হয়। একদম সম্পূর্ণভাবে পরিহার করা সম্ভব না হলে অন্তত ঘুমানোর এক ঘন্টা আগে ধূমপান থেকে বিরত থাকুন। 

    আর একটা গুরুত্বপূর্ণ নির্দেশনা হল, নিয়মিত ব্যায়াম করা ,শরীর সচল  থাকলে রাতে ঘুম ভালো হয়, তবে ঘুমানোর তিন ঘন্টা আগে ব্যায়াম পরিহার করতে হবে।

    শরীরকে প্রতিদিন একই সময় ঘুমানোর অভ্যস্ত করার জন্য নির্দিষ্ট সময় ঘুমানো এবং নির্দিষ্ট সময় জেগে ওঠা প্রয়োজন।যেমন আপনি ঠিক করলেন রাত ১১ টায় ঘুমাতে যাবেন এবং সকাল সাতটায় জেগে উঠবেন। ঘুমাতে যাওয়া এবং জেগে ওঠা সময়টা নির্দিষ্ট করে রাখবেন। 

    নিদ্রাহীনতার চিকিৎসায় দিনের বেলা ঘুমাতে উৎসাহিত করা হয় না,যদি দিনের বেলা ঘুমাতেই হয় তবে দুপুরে আগে আগে ঘুমিয়ে নেবেন,তবে তা ৩০ মিনিটের বেশি নয়। 

    টাইফয়েড বা করোনা ভাইরাস হলে আমার নিশ্চয়ই জানতে পারি আপনার শরীরে জীবাণু প্রবেশ করেছে। নিদ্রাহীনতার কারণে তেমন একটা নিশ্চিত কারন নাও থাকতে পারে। 

    কখনোই ডাক্তারের পরামর্শ ছাড়া নিজে নিজে কোন ঘুমের ওষুধ খাওয়ার চেষ্টা করবেন না। বরং অনিদ্রার সমাধানে ডাক্তারের পরামর্শ নিন। ঘুম না হওয়ার পেছনে শারীরিক অথবা মানসিক কোনো কারণ থাকলে ডাক্তার উপযুক্ত পরামর্শ দিতে পারবেন। তিনি প্রয়োজনে আপনার অবস্থা বিবেচনা করে সবচেয়ে নিরাপদ ওষুধটি বেছে নিতে সাহায্য করতে পারবেন।

  • গ্যাস্ট্রিকের সহজ ঘরোয়া চিকিৎসা 

    গ্যাস্ট্রিকের সহজ ঘরোয়া চিকিৎসা 

    যখন পাকস্থলীর আস্তরণ কোন কারণে ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে তাতে প্রদাহের inflammation সৃষ্টি হয়, সেই রোগকে চিকিৎসাবিজ্ঞানের ভাষায় বলা হয় গ্যাস্ট্রাইটিস gastritis। আমরা অনেকেই এই রোগকে গ্যাস্ট্রিক বা গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা বলে থাকি। এই রোগটি অনেকগুলো কারণেই হতে পারে।

    বেশিরভাগ মানুষের ক্ষেত্রে এই সমস্যা মারাত্মক হয় না। চিকিৎসা নিলে দ্রুত সেরে ওঠে। কিন্তু চিকিৎসা না করালে এটি বছরের পর বছর ভোগাতে পারে।

    এই রোগের লক্ষণগুলো কী?

    ব্যাকটেরিয়ার সংক্রমণের কারণে এই রোগ হলে অনেকেরই কোন লক্ষণ দেখা যায় না। আবার কারো কারো নিচের লক্ষণগুলো দেখা যেতে পারে, 

    বদহজম

    পেট কামড়ানো বা পেটে জ্বালাপোড়া করা

    বমি বমি ভাব বা বমি হওয়া

    খাওয়ার পর পেট ভরা ভরা মনে হওয়া

    পাকস্থলীর আস্তরণ ক্ষয় হয়ে erosive gastritis যদি তা পাকস্থলীতে থাকা অ্যাসিডের সংস্পর্শে চলে আসে,  তখন উপরের লক্ষণগুলোর সাথে ব্যথা, রক্তপাত, বা পাকস্থলীর আলসারের মত লক্ষণ দেখা দিতে পারে।

    এই লক্ষণগুলো হঠাৎ করেই তীব্রভাবে শুরু হতে পারে

    acute gastritis বা অনেকদিন ধরে ধীরে ধীরে হতে পারে chronic gastritis।

    কখন ডাক্তারের কাছে যাবেন?

    আপনার যদি বদহজম থাকে, তাহলে আপনি নিজে নিজেই খাদ্যাভ্যাস ও জীবনযাত্রার পরিবর্তন করে অথবা অ্যান্টাসিড antacid এর মত ওষুধ সেবন করে এর সমাধানের করার চেষ্টা করতে পারেন। তবে নিজে নিজে অ্যান্টাসিড খাওয়ার আগে এই ওষুধ আপনার জন্য নিরাপদ কি না, কিভাবে সেবন করবেন আর পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া গুলো অবশ্যই জেনে নিবেন।

    বদহজমের কারণ ও ঘরোয়া সামাধান

    একজন ডাক্তারের পরামর্শ নিন যদি

    আপনার বদহজমের লক্ষণগুলো এক সপ্তাহ বা তার বেশি সময় ধরে থাকে, অথবা বহজমের কারণে পেটে তীব্র ব্যথা বা অস্বস্তি বোধ হয়

    কোন ওষুধের কারণে সমস্যাগুলো হচ্ছে বলে মনে হয়

    বমি বা পায়খানার সাথে রক্ত যায়, পায়খানা কালচে হয় বা বমির সাথে কফি দানার মত কিছু আসে

    পেটে ব্যথা হওয়া মানেই যে সেটা গ্যাস্ট্রিকের সমস্যার লক্ষণ, তা নয়।  অনেক কারণেই পেট ব্যথা হতে পারে, যেমন আটকে থাকা বায়ু, ইরিটেবল বাওয়েল সিনড্রোম Irritable Bowel Syndrome ইত্যাদি।

    কী কী পরীক্ষা করা হয়?

    ডাক্তার আপনাকে নিচের পরীক্ষাগুলো থেকে এক বা একাধিক পরীক্ষা করানোর পরামর্শ দিতে পারেন।

    পায়খানা পরীক্ষা stool test  এই পরীক্ষার মাধ্যমে পাকস্থলীতে কোন জীবাণুর সংক্রমণ infection আছে কি না বা পাকস্থলী থেকে রক্ত যাচ্ছে কি না, তা দেখা হয়।

    নিঃশ্বাস পরীক্ষা  breath test Helicobacter pylori নামক ব্যাকটেরিয়ার সংক্রমণ আছে কি না দেখার জন্য এই পরীক্ষাটি করা হয়। স্বচ্ছ, স্বাদহীন, তেজস্ক্রিয় কার্বনযুক্ত এক গ্লাস তরল পদার্থ পান করে একটি ব্যাগে ফুঁ দিতে বলা হয়।

    এন্ডোস্কোপি  endoscopy একটি নমনীয় নল গলার ভেতর দিয়ে প্রবেশ করিয়ে খাদ্যনালীর মধ্য দিয়ে পাকস্থলীতে নিয়ে গিয়ে প্রদাহের কোন চিহ্ন আছে কি না, তা দেখা হয়।

    বেরিয়াম সোয়ালো  Barium swallow বেরিয়াম নামক একটা রাসায়নিক পদার্থের দ্রবণ খেতে দেওয়া হবে। সেই দ্রবণ পরিপাকতন্ত্রের ভেতর দিয়ে যাওয়ার সময় এক্স-রে তে পরিষ্কারভাবে দেখা যায় এবং তা রোগ নির্ণয়ে সাহায্য করে।

    এই রোগের কারণগুলো কী?

    সাধারণত যেসব কারণে এই রোগ দেখা দেয়, সেগুলো হল, 

    Helicobacter pylori নামক ব্যাকটেরিয়ার সংক্রমণ

    ধূমপান

    নিয়মিত অ্যাসপিরিন aspirin আইবুপ্রোফেন ibuprofen বা নন–স্টেরয়েডাল অ্যান্টি–ইনফ্লামেটরি non-steroidal anti-inflammatory জাতীয় কোন ব্যথার ওষুধ সেবন

    শরীরের ওপর চাপ সৃষ্টিকারী ঘটনা, যেমন বড় অপারেশন, গুরুতর আঘাত বা কোন জটিল রোগ

    অতিরিক্ত কোকেইন বা অ্যালকোহল সেবন

    কিছু ক্ষেত্রে শরীরের রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থা ভুলবশত নিজের শরীরকেই আক্রমণ করে। পাকস্থলীর আস্তরণকে আক্রমণ করলে এই রোগ দেখা দেয়।

    এই রোগের চিকিৎসা কী?

    চিকিৎসার মূল ৩টি লক্ষ্য হল, 

    পাকস্থলীতে থাকা এসিডের পরিমাণ কমিয়ে লক্ষণগুলো নিরসন করা

    পাকস্থলীর আস্তরণ সেরে তোলা

    রোগের অন্তর্নিহিত কারণ আছে কি না তা খুঁজে বের করে চিকিৎসা করা

    যেসব ওষুধ ব্যবহার করা হয়:

    অ্যান্টাসিড  antacids  এই সহজলভ্য ওষুধ পাকস্থলীর এসিড প্রশমিত করে দ্রুত ব্যথা কমায়।

    হিস্টামিন ২ ব্লকার  Histamine 2 blockers এই ওষুধগুলো পাকস্থলীতে অ্যাসিড তৈরির পরিমাণ কমায়।

    প্রোটন পাম্প ইনহিবিটর  proton pump inhibitors  এই ওষুধগুলিও পাকস্থলীর অ্যাসিড তৈরি কমায়। তবে এরা হিস্টামিন ২ ব্লকারদের থেকেও বেশি কার্যকর। উদাহরণ: ওমেপ্রাজল।

    Helicobacter pylori নামক ব্যাকটেরিয়ার কারণে হওয়া গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা  H. pylori gastritis

    অনেকেই এই ব্যাকটেরিয়া দিয়ে সংক্রমিত হলেও বুঝতে পারেন না। বহু মানুষের পাকস্থলীতে এই ব্যাকটেরিয়ার সংক্রমণ থাকে, কিন্তু সাধারণত কোন লক্ষণ প্রকাশ পায় না। তবে এই ব্যাকটেরিয়ার কারণে পাকস্থলীর আবরণীতে প্রদাহ হয়ে বারবার বদহজম সৃষ্টি করতে পারে।

    এই সমস্যা বয়স্কদের মধ্যে বেশি দেখা যায় এবং সাধারণত পাকস্থলীর আবরণী ক্ষয় করে না এমন দীর্ঘমেয়াদী রোগের chronic  persistent non-erosive casesপেছনে দায়ী। ব্যাকটেরিয়া নির্মূল করার চিকিৎসা না পেলে এই সংক্রমণ সাধারণত সারাজীবন থেকে যায়।

    ব্যাকটেরিয়া নির্মূল করতে প্রোটন পাম্প ইনহিবিটর এর সাথে কিছু এন্টিবায়োটিক একটি নির্দিষ্ট সময়ের জন্য সেবন করতে হবে।

    লক্ষণ উপশমের জন্য আপনি কী করতে পারেন?

    আপনার যদি মনে হয় বারবার ব্যথার ওষুধ  NSAIDs সেবন করার কারণে আপনার গ্যাস্ট্রিকের সমস্যার হচ্ছে, তাহলে  NSAIDs দলভুক্ত নয়’ এমন কোন ব্যথার ওষুধ সেবন করা যেতে পারে, যেমন প্যারাসিটামল। এ বিষয়ে একজন ডাক্তারের পরামর্শ নিন।

    আরেকটা গুরুত্বপূর্ণ বিষয় বলবো। যেটা আপনার স্বাস্থ্যের জন্য উপকারী হবে। আপনার যদি ওজন বেশি হয় তাহলে সেটা  কমানোর চেষ্টা করুন।অতিরিক্ত ওজন অনেক ধরনের স্বাস্থ্য সমস্যা সৃষ্টি করে ,ডায়াবেটিস হার্টের রোগ ইত্যাদি অনেক কিছুই এই অতিরিক্ত ওজনের সাথে সম্পৃক্ত। তাই ওজন কমিয়ে ফেলা এবং কমানোর পর সেটা ধরে রাখা শ্রেয়। আপনার বুক জ্বালাপোড়া সমস্যা সমাধানেও এটা অনেক সাহায্য করবে। 

    ধূমপান বন্ধ করতে হবে।গবেষণায় দেখা গেছে  যারা ধূমপান  কমিয়ে ফেলে বা বন্ধ করে দেয় তাদের এই সমস্যা অনেকাংশে কমে যায়। ধূমপান নানা রোগের কারণ তাই এই অভ্যাসটা পরিত্যাগ করাই শ্রেয়।

    এখন  বলে দিচ্ছি কোন কোন লক্ষণ দেখা দিলে চিকিৎসকের পরামর্শ নিবেন ? 

    যদি বারবার গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা দেখা দেয় ,প্রতিদিনের কাজে ব্যাঘাত ঘটায় অথবা তিন সপ্তাহ বা তার বেশি সময় ধরে প্রতিদিনই এই সমস্যা দেখা দেয়, বয়স যদি ৫৫ বা তার বেশি হয়ে থাকে তাহলে চিকিৎসকের পরামর্শ নিবেন। কিছু লক্ষণের  কথা আপনার মাথায় রাখতে হবে,এগুলো দেখা দিলে আপনাকে অবশ্যই অবশ্যই চিকিৎসকের সহায়তা নিতে হবে এগুলোকে বলে এলার্ম সিমটম।অর্থাৎ এগুলো দেখা দিলে অন্য কোন গুরুতর রোগ হচ্ছে কিনা যাচাই করার প্রয়োজন পড়ে চিকিৎসক সেটা যাচাই করবেন ,তবে লক্ষণ গুলো আপনার জানা থাকা লাগবে যাতে আপনি সময়মতো চিকিৎসকের শরণাপন্ন হতে পারেন।ছয়টা লক্ষণ আছে?এগুলো ,

    ১, ওজন অনেক কমে যাচ্ছে  ছাড়াই কোন কারণ ছাড়াই। 

     ২, খাবার গিলতে সমস্যা হচ্ছে,গলায় আটকে যাচ্ছে। 

    ৩, বারবার বমি হচ্ছে।বমির মধ্যে কফির দানার মত রক্ত দেখা যাচ্ছে 

    ৪, পায়খানার সাথে রক্ত যাচ্ছে। পায়খানা কালো হচ্ছে। 

     ৫, মনে হচ্ছে পেটে চাকার মতো কিছু হয়েছে। 

    ৬, আয়রনের অভাবজনিত রক্তশূন্যতায় ভুগছেন, এসব লক্ষণ দেখা দেয়া মানেই গুরুতর হয়েছে এমন না। কিন্তু গুরুতর হওয়ার সম্ভাবনা আছে তাই চিকিৎসকের  সহায়তা নিবেন। আর যদি পেটে হঠাৎ করে তীব্র ব্যথা শুরু হয় তাহলে দ্রুত হাসপাতালে যেতে হবে। 

    নিরাপদে থাকবেন।

  • করোনা হলে বাসায় যেভাবে চিকিৎসা করবেন

    করোনা হলে বাসায় যেভাবে চিকিৎসা করবেন

    করোনা লক্ষণ দেখা দিলে বাসায় রোগীর ব্যবস্থাপনা কিভাবে করতে হবে সে বিষয়ে আজকে এ টু জেড একটা ধারণা দেয়ার চেষ্টা করব। কি ওষুধ খাওয়াবেন? কিভাবে বুঝবেন রোগীর অবস্থা স্বাভাবিক? গুরুতর দিকে যায়নি এখনো ,কোন খাবার দিবেন ,কোন খাবার গুলো এড়িয়ে যাবেন,কোন যন্ত্র সাথে রাখবেন, কিভাবে যন্ত্রগুলো ব্যবহার করবেন? আর কি কি সাবধানতা অবলম্বন করতে হবে,এসবগুলো বিষয় একসাথে থাকবে।

    করণা রোগীর  ব্যবস্থাপনা নিয়ে অনেক পরামর্শ দেখা যাচ্ছে যা বিজ্ঞানসম্মত নয়।

    আমি শুধু বিশ্বস্ত প্রতিষ্ঠানের পরামর্শ তুলে ধরব। 

    শুরুতে বলছি করোনা হয়েছে কিনা কিভাবে বুঝবেন? 

    ১, টেস্ট করার মাধ্যমে যদি পজেটিভ ফলাফল আসে, 

    ২, টেস্ট করার সুযোগ নেই তবে করোনার লক্ষণ দেখা দিয়েছে। এক্ষেত্রে করোনা যে হয়েছে নিশ্চিত নয় তবে একই সাবধানতার অবলম্বন করা প্রয়োজন। হতেই পারে আপনার করোনা হয়নি।তবে সাবধানতা যদি অবলম্বন না করেন ,তবে অন্যকে আক্রান্ত করার সম্ভাবনা বহু গুণে বেড়ে যায়।

    এখন বলব কি ওষুধ খাবেন?

    টেস্টে পজিটিভ এসেছে বা টেস্ট করার সুযোগ নেই,  কিন্তু লক্ষণ দেখা দিয়েছে অথবা রিপোর্টের অপেক্ষায় আছেন।এই অবস্থায় কি ওষুধ খাওয়া যাবে? কোরোনার ঔষধ এখনো পাওয়া যায়নি। তবে করোনার যে উপসর্গ গুলো দেখা দেয়,তার ওষুধ আগেই আবিষ্কার হয়েছে। তাই করোনার যে ওষুধ দেয়া হয় লক্ষণ বা উপসর্গ অনুযায়ী।  জ্বর হলে জ্বরের ওষুধ,কাশি  থাকলে কাশির ওষুধ,অক্সিজেন কমে গেলে অক্সিজেন। শ্বাস কষ্ট শুরু হলে সে অনুযায়ী চিকিৎসা। 

    প্রথমেই বলছি জ্বর নিয়ে,

    যদি গায়ে জ্বর থাকে আপনাকে অস্বস্তি লাগে তাহলে প্যারাসিটামল খেতে পারেন। এটা একটা over the counted  ঔষধ অর্থাৎ ডাক্তারের পরামর্শ ছাড়াই সব দেশে এটা  পরিমিত পরিমাণে কেনা যায় ও সেবন করা যায়। বয়স অনুযায়ী প্যারাসিটামল এর ডোজ নিতে হবে। ঔষধ এর প্যাকেটে এটা লেখা দেখতে পারবেন,অতিরিক্ত সেবন করবেন না। 

    এখন বলছি কাশির ব্যবস্থাপনা নিয়ে,

    যদি কাশি হয় এক চা চামচ মধু খেয়ে দেখতে পারেন। চিৎ হয়ে না শুয়ে এক কাত হয়ে শুবেন  সোজা হয়ে বসবেন।তারপরে যদি দেখেন কাশির  কারণে অনেক বেগ পেতে হচ্ছে,তাহলে একজন চিকিৎসকের পরামর্শ নিবেন।আর মনে রাখবেন করোনাই কিন্তু বেশ অনেকদিন কাশি থাকবে।ডাক্তারের পরামর্শ ছাড়া আর কোন ওষুধ সেবনের প্রয়োজন নেই। 

    এই কথাতে অনেকে মনে ক্ষুন্ন হতে পারেন।যেমন প্যারাসিটামল ছাড়া আর কোন ওষুধ কেন দিচ্ছে না। ওষুধ খাওয়ার ব্যাপারটা হালকাভাবে নিবেন না। করোনা রোগ সারাবে এমন কোন ওষুধ পাওয়া যায়নি,আর প্রতিটা ওষুধের পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া আছে।তাই ডাক্তারের পরামর্শ ছাড়া কোন ওষুধ সেবন করা বুদ্ধিমানের কাজ হবে না।তাই আসি শতাংশ করোনা রোগী কোন বিশেষ চিকিৎসা ছাড়াই ভালো হয়ে যায়।একটা ওষুধ রোগ সারাতে কাজ করে কিনা,রোগীর শরীরে কোন ক্ষতি করে কিনা কয়েক ধাপে সূক্ষ্ম গবেষণার পরেই বোঝা যায়।করোনা একটা ভাইরাস। অ্যান্টিবায়োটিক ওষুধ যুদ্ধ করে ব্যাকটেরিয়ার সাথে।ভাইরাস আর ব্যাকটেরিয়া দুইটা ভিন্ন জিনিস। ভাইরাসের কারণে জ্বর হলে এন্টিবায়োটিক খাওয়ার কোন প্রয়োজন নেই। তবে ডাক্তার আপনাকে পরীক্ষা করার  পরে যদি মনে করে ব্যাকটেরিয়া দিয়ে আক্রান্ত ভাইরাস নয়, অথবা ভাইরাস ব্যাকটেরিয়া দুইটা ধারে আক্রান্ত হয়েছেন তখন তিনি আপনাকে এন্টিবায়োটিক লিখে দিবেন। মোটকথা চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া প্যারাসিটামল বাদে আর কোন ওষুধ খাওয়ার প্রয়োজন নেই।

    এখন কথা বলব অক্সিজেন কমে যাওয়া নিয়ে। 

    অক্সিজেন কমে গেলে অধিকাংশ সময় রোগীর  শ্বাসকষ্ট শুরু হয়।তবে কিছু কিছু সময় শ্বাস কষ্ট শুরু হওয়ার আগেই রোগীর অবস্থা মারাত্মক হয়ে যায়। তাই করোনা রোগীর অক্সিজেনটা নিয়মিত মাপাটা গুরুত্বপূর্ণ। অক্সিজেন মাপার জন্য যে যন্ত্রটা  ব্যবহার করতে হয় তার নাম পালস অক্সিমিটার।এখন একটা প্রশ্ন করব,প্রশ্নটা হল

    রোগী যে ঠিকঠাক অবস্থায় আছে এটা কিভাবে বুঝব? কখন হাসপাতালে নিতে হবে? কোন বিষয়টিকে খেয়াল রাখব?বাসায় করোনা হলে আমরা উৎকণ্ঠায়  থাকি রোগী ঠিকঠাক আছে কিনা ,অবস্থা খারাপের দিকে গেছে কিনা। রোগী  ঠিক অবস্থায় আছে জানতে পারলে মনে অনেক সাহস আসে।তাই এই প্রশ্নটির উত্তর মনোযোগ দিয়ে শুনুন।

    রোগীর জ্বর কাশি আছে বা অন্যান্য মৃদু উপসর্গ আছে তোদের রোগী ভালো আছে ,খাওয়া দাওয়া করছে,অক্সিজেনের পরিমাণ ঠিক আছে, অন্যান্য রোগ যেমন ডায়াবেটিস থাকলে সেটা কন্ট্রোলে আছে তাহলে ধরে নিবেন রোগী  ঠিকঠাক অবস্থায় আছে এবং বাসাতেই পরিচর্যা চালানো যাবে।তবে জানা থাকা লাগবে কখন রোগীকে হাসপাতালে নিতে হবে এবং সেই লক্ষণ গুলো কি কি।

    যে লক্ষণ গুলো দেখা দিলে আপনাকে হাসপাতালে যেতে হবে। আমি একটা নিয়ে এখানে বিশেষভাবে বলছি সেটা হল শ্বাসকষ্ট। 

    রোগের শ্বাসকষ্ট দেখা দিলে দ্রুত ডাক্তারের শরণাপন্ন হতে হবে।তবে ডাক্তারের শরণাপন্ন হতে হলে কিছুক্ষণ তো সময় লাগে,সে সময় সঠিক পদক্ষেপ গুলো কি কি হবে,বাসা থেকে রোগীকে শ্বাস কষ্টের কোন চিকিৎসাটি শুরু করতে পারেন।

    এখন বলবো  কোন খাবারটি খেতে হবে।আদা,লেবু ,তেজপাতা মিশিয়ে গরম পানি এক ঘন্টা পর পর খেলে করোনা নেগেটিভ নাকি ৫  দিনে হয়।এমন পরামর্শ অনেকের দিচ্ছে। গরম পানির ভাব,আদার চা,বা মশলা চা,রসুন ,এলাচ দারচিনি,মনে করেন রান্না করে যা যা পাওয়া যায় এসব নিয়ে বিভিন্ন জায়গায় বিভিন্ন নিয়ম চালু হয়ে গেছে। তবে এগুলা করোনা সারাবে এমন কোন বৈজ্ঞানিক ভিত্তি নেই। এগুলো আপনাকে আরাম দিতে পারে। তবে করোনা সারাতে কার্যকর এমন কোন প্রমাণ নেই। আপনার যদি গরম পানি খেতে আরাম লাগে তবে খাবেন। আপনার ভালো লাগলে এগুলো খেতেই পারেন কোন সমস্যা নাই। ভিটামিন সি, ভিটামিন ডি ,ইত্যাদি কি খেতে হবে? 

    প্রতিদিন বিভিন্ন ধরনের তাজা খাবার খেলে সেখান থেকে  আপনার শরীর  প্রয়োজনীয় ভিটামিন,মিনারেল নিয়ে নেবে। 

    একটা ব্যতিক্রম হচ্ছে ভিটামিন ডি,যা তৈরি করতে শরীরে সূর্যের আলো প্রয়োজন।অনেকদিন রোদে যেতে পারেননি লকডাউনের জন্য বা করোনা লক্ষণে  এখন এক রুমে আটকে আছেন রোদ পাওয়ার উপায় নাই সে ক্ষেত্রে ভিটামিন ডি এর ঘাটতি দেখা দিতে পারে তখন ভিটামিন ডি টা শুধুমাত্র আলাদা করে খেতে পারেন। আপনি পুষ্টিকর কোন খাবার খেতে পারছেন, নিয়মিত শাকসবজি,ফলমূল খাচ্ছেন,দিনে রোদ পোহাচ্ছেন,তখন আলাদা করে কোন ভিটামিন খাওয়ার প্রয়োজন নেই।শরীরে ভিটামিনের অভাব থাকলে শুধু প্রয়োজন অনুযায়ী ভিটামিন খেলে উপকারে আসবে। 

    তাহলে কি খাবেন? 

    খেতে হবে সুষম খাবার। প্রতিদিন দুই কাপ ফল,আড়াই কাপ সবজি ,এক কাপ শস্য দানা,এক কাপ মাংস বা ডাল শিম জাতীয় খাবার হচ্ছে সুষম খাবার। এত মেপে মেপে কি খাওয়া যায়?

     যতটা কাছাকাছি যেতে পারেন ততটাই ভালো। 

    শাকসবজি ফলমূল বেশি খাবেন ,ভাজাপোড়া,আর খেতে হবে পর্যাপ্ত পরিমাণে পানি।

    তেল চর্বি, চিনি যুক্ত খাবার পরিহার করবেন।ফুসফুস ভালো রাখার জন্য ধূমপান পরিহার করবেন। 

    দিনে 8 থেকে 10 কাপ পানি খাবেন। যথেষ্ট পরিমাণে পানি খাচ্ছেন কিনা সেটা বোঝার জন্য একটা উপায় হল প্রসাবের রং দেখা। প্রসাবে রং  যদি গারো  হলুদ হয় তারমানে আপনি পর্যাপ্ত পরিমাণে পানি খাচ্ছেন না। যদি বমি বা ডায়রিয়া হয় সে ক্ষেত্রে স্যালাইন খেতে হবে এবং অনেক সচেতন ভাবে পানি শূন্যতা এড়িয়ে চলতে হবে। 

    একটা থার্মোমিটার রাখতে পারেন জ্বর মাপার জন্য। বাসায় অন্যদের মাঝে করোনা  না ছড়ায়সে ক্ষেত্রে বাসায় নিজেকে এক রুমে আটকে রাখুন দরজা বন্ধ করে রাখুন,খাবার খাবেন রুমের ভিতরে।তবে যদি কারণে রোগের সামনে যেতেই হয় তবে সার্জক্যাল মাক্স  ব্যবহার করে যাবেন। যার আপনাকে সেবা দিচ্ছে তারাও আপনার সংস্পর্শে আসার জন্য সার্জকাল মাক্স  পরে নিবেন।সম্ভব হলে বাথরুম আলাদা করে ফেলবেন। আর যদি সম্ভব না হয় তবে অন্নরা ব্যবহার করার পরে আপনি বাথরুম ব্যবহার করবেন। কতদিন ব্যবহারের পরে আপনি যে জায়গা গুলো হাত দিয়ে ধরেছেন এই জায়গা গুলো পরিষ্কার করতে হবে। গ্লাস,প্লেট ,চাদর ,তোয়াল ,ইত্যাদি সব আলাদা করে ফেলুন। সেগুলো কারো সাথে ভাগাভাগি করে ব্যবহার করবেন না। নিজের রুম আর বাথরুম প্রতিদিন নিজের পরিষ্কার করুন। এসব জায়গা বেশি বেশি স্পর্শ করেছেন যেমন টেবিল, দরজা  হাতল ইত্যাদি পরিষ্কার করেন। আর বারবার হাত ধুতে হবে। হাত না দিলে হাত দিয়ে ভাইরাস ছড়াবে।পুষ্টিকর খাবার খাবেন,ধূমপান করবেন না, চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া ওষুধ খাবেন না,নিয়মিত অক্সিজেন মাপবেন আর খেয়াল রাখবেন রোগীর অবস্থা খারাপের দিকে যাচ্ছে কিনা।

    নিরাপদে থাকবেন।

  • করোনা থেকে বাড়ি জীবাণুমুক্ত করার সহজ উপায়|

    করোনা থেকে বাড়ি জীবাণুমুক্ত করার সহজ উপায়|

    আপনার বাসায় যদি করোনা ভাইরাস ঢুকে পড়ে বা ঢুকে পড়ার সম্ভাবনা থাকে, তাহলে কিভাবে বাসা জীবাণুমুক্ত করবেন? 

    এ বিষয়টিকে দুইটি ভাগে ভাগ করে খুব সহজ ভাবে তুলে ধরব। 

    শুরু করার আগে হাতে রাবারের গ্লাভস পড়বেন।

    পা ঢেকে থাকে এমন সু পড়ে নেবেন। আর গায়ে একটা ওয়াটার প্রুফ জামা যেমন রেইনকোট পড়ে নেবেন। 

    এগুলোর বাইরে আরো কিছু সাবধানতার প্রয়োজন হতে পারে। যেমন চোখে মুখে ছিটা আসার সম্ভাবনা থাকলে একটা সার্জিকাল  মাক্স পড়ার আর চোখের জন্য চশমা ব্যবহার  পরামর্শ দেয় বিশেষজ্ঞরা।

    এর কোন টা না থাকলে বাসায় সাবধানতা সহ কাজ করবেন,বাসায় পাওয়ার ছাড়া চশমা থাকলে সেটা ব্যবহার করতে পারেন,যত বড় চশমা তত সুরক্ষার সম্ভাবনা বেশি। 

    এখন বলবো জীবাণুমুক্ত করার দুইটি ধাপ। 

    প্রথম ধাপ হচ্ছে ক্লিনিং বা পরিষ্কার করা। জায়গা গুলো কে সাবান পানি দিয়ে বা ডিটারজেন্ট পানি  দিয়ে ঘষে ঘষে পরিষ্কার করে নিতে হবে।যে জায়গা পরিষ্কার করবেন সেই জায়গা ধুলাবালি থাকলে সেখানে জীবাণু নাশকের কার্যবলি ঠিক মত সম্পন্ন হয় না।ধরেন আপনি দরজার হাতল পরিষ্কার করছেন,তখন দরজার  এবং জীবাণুনাশক এর মাঝে একটা পর্দা বা বাধা হিসেবে কাজ করবে সেই ধুলোবালি।সেটা জীবাণুনাশক কে  নিষ্ক্রিয় করে দিতে পারে। মনে রাখবেন সব ধুলাবালি কিন্তু আমরা চোখে দেখতে পাই না।

    মোট কথা আগে পরিষ্কার করে না নিলে জীবাণুনাশক  ভালোভাবে কাজ করতে পারবে না।তার আগে ভালোভাবে পরিষ্কার করে নিবেন। পরিষ্কার করার সময় দুইটি বিষয় খেয়াল রাখবেন। 

    এক ,যেখানে ময়লা বেশি দেখা যাচ্ছে এটা আগে পরিষ্কার করা যাবে না। সবচেয়ে কম ময়লা থেকে বেশি ময়লার দিকে আসতে হবে।

    উপরে জিনিস পরিষ্কারের পরে নিচের দিকে আসতে হবে যেমন আগে টেবিল পরিষ্কার করে ফ্লোর পরিষ্কার করবেন। প্রথম ধাত শেষ এখন আসছি দ্বিতীয় ধাপ। 

    ডিসিনফ্যাক্ট করা বা জীবাণুমুক্ত করা। 

    এই ধাপে জীবাণুগুলো নিষ্ক্রিয় হবে। জীবাণুনাশক  আপনি বাজার থেকে কিনে আনতে পারেন অথবা বাসায় বানিয়ে নিতে পারেন। জীবাণুমুক্ত করার ক্ষেত্রে আপনাকে চারটা বিষয় খেয়াল রাখতে হবে। এগুলো বলছি। 

    এক,

     বাজারে পাওয়া জীবাণুনাশক কোন কোন তাতে পানি মিশিয়ে দিতে  হয়।পানি মিশানোর সময় দরজা জানলা খোলা রাখবেন অথবা ভালো  আলো বাতাস আছে এমন জায়গা বেছে নিবেন। 

    দুই ,জীবাণুন আসুক স্প্রে না করার পরামর্শ দিচ্ছে  বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা। স্প্রে করলে অনেক জায়গা পরিষ্কার নাও হতে পারে আর স্প্রে করলে সেটা চোখ, শ্বাসনালী ,চামড়ার জন্য ক্ষতিকারক হতে পারে। 

    জীবাণু নাশকে একটা কাপড় ভিজিয়ে নিয়ে সে কাপড় দিয়ে জিনিসপত্র পরিষ্কার করবেন।আগেই বলেছি এই সময় অবশ্যই রাবারের গ্লাভস পড়ে নেবেন। 

    তিন , যা পরিষ্কার করছেন খেয়াল রাখবেন সেটা যাতে  অন্তত  এক মিনিট জীবাণুনাশক  দিয়ে ভেজা থাকে। না, হলে ভাইরাস নিষ্ক্রিয় হবে না। এই সময়টাকে বলে কন্টাক্ট টাইম।এ জীবাণুনাশক  ব্যবহার করছেন দেখে নেবেন এটার গায়ে লেখা কন্টাক্ট টাইম ভিন্ন কিনা। ভিন্ন হলে সে অনুযায়ী ব্যবহার করবেন। তারপর ফ্যান ছেড়ে শুকিয়ে নিবেন। শুকানোর আগ পর্যন্ত এবং জীবাণুনাশকের গন্ধ যাওয়ার আগ পর্যন্ত, সেখান থেকে অন্য মানুষ, ছোট বাচ্চা আর পোষা প্রাণী দূরে রাখবেন। 

    ৪ , বাসায় করোনা রোগী থাকলে আশপাশ যা দিয়ে পরিষ্কার করছেন সে গুলো অন্য জায়গা পরিষ্কারের জন্য ব্যবহার করবেন না। বালতি নে্কড়া যে জীবাণুনাশক ভিজে পরিষ্কার করছেন সব আলাদা। বাসা জীবাণুমুক্ত করার পরে গ্লাভস খুলে হাত সাবান দিয়ে ভালো করে ধুয়ে নেবেন। যদি সার্জিক্যাল মাক্স  ব্যবহার করে থাকেন সেটা খুলে ফেলে দেবেন।

    নিরাপদ এ থাকবেন

Call Now Button