মাইক্রোওয়েভ ওভেনে রান্না নিয়ে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য

মাইক্রোওয়েভ ওভেনে রান্না করা বা গরম করা কি অনিরাপদ?

মাইক্রোওয়েভ কি খাবারের সব গুনাগুন পুষ্টি গুনাগুন কি নষ্ট করে দেয়? 

অনেকেরই একটা ধারণা আছে যে মাইক্রোওয়েভে রান্না করা বা গরম করা খাবার স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর এবং এভাবে রান্না করলে বা গরম করলে খাবারের পুষ্টি গুনাগুন নষ্ট হয়ে যায়। 

এই ধারণা সম্পূর্ণ ভুল এবং মোটেও বিজ্ঞানসম্মত নয়। 

অন্যান্য রান্না করা পদ্ধতির মতই মাইক্রোওয়েভে রান্না করা নিরাপদ এবং কিছু কিছু ক্ষেত্রে মাইক্রোওয়েভ এ রান্না করলে খাবারের পুষ্টি বরং বেশি অটুট থাকে। এই পুরো ব্যাপারটা পরিষ্কার করে বুঝিয়ে বলব। 

প্রথমেই আসি কেন বললাম যে মাইক্রোওয়েভে রান্না করলে কিছু খাবারের পুষ্টি গুনাগুন  বেশি অটুট থাকতে পারে। আমরা সাধারণত কোন খাবার রান্না করতে হলে তাপ দিয়ে রান্না করি,সেটা গ্যাসের  চুলায় রান্না হোক ,লাকড়ি চুলায় রান্না হোক মাইক্রোওয়েভ ওভেন বা অন্য ধরনের ওভেনে রান্নাই হোক। যখন আমরা একটা খাবারে তাপ দিয়ে রান্না করছি তখন সে খাবারের পুষ্টি গুনাগুন কিছুটা কমে যায়। কিছু পুষ্টি  উপাদান নষ্ট হয়। যত বেশি সময় ধরে সে খাবারটা তাপে থাকে,তত বেশি পুষ্টির উপাদান নষ্ট হতে থাকে। 

তো এখন এই যে বিভিন্ন পদ্ধতির রান্নার  কথা বললাম,এরমধ্যে খেয়াল করে দেখেন মাইক্রোওয়েভ ওভেনে কিন্তু রান্না তাড়াতাড়ি হয়। খাবারটা অল্প সময় তাপে থাকে। তাই কিছু ক্ষেত্রে মাইক্রোওয়েভ ওভেনে রান্না করলে খাবারের পুষ্টি উপাদান বেশি অটুট থাকে। কিছু খাবার আছে যেটা আমরা তাপ ছাড়া রান্না ছাড়া খেতে পারি, কিন্তু বেশি ভাগ খাবারই আমাদেরকে তাপ দিয়ে রান্না করে খেতে হয়। না, হলে কাঁচা খাবারের যে সব জীবাণু আছে সেগুলো আমাদের শরীরে ঢুকে নানা রকম সমস্যার সৃষ্টি করতে পারে। ডায়রিয়া হতে পারে, বমি হতে পারে। তো এই যে তাপ দিয়ে রান্না করার ক্ষেত্রে অন্যান্য পদ্ধতির মধ্যে মাইক্রোওয়েভ ওভেনে যেহেতু কম সময় লাগে সেই জন্য কিছু ক্ষেত্রে খাবারের পুষ্টি উপাদান বেশি অটুট রাখে। আচ্ছা, পুষ্টি উপাদান না হয় বুঝলাম মাইক্রোওয়েভে রান্না করা খাবার কি আমাদের  শরীরের জন্য ক্ষতিকর? এই  খাবারে কি রেডিয়েশন থাকে? রেএ  থাকে যেটা আমরা যখন খাব আমাদের শরীরে মারাত্মক স্বাস্থ্য ঝুঁকি সৃষ্টি করবে ?

এটা বোঝার জন্য মাইক্রোওয়েভ কি এটা বোঝা জরুরী। মাইক্রোওয়েভ হলো এক ধরনের ইলেক্ট্রোম্যাগনেটিক রেডিয়েশন,আমরা যে আলো দেখতে পাই এটাও এক ধরনের ইলেক্ট্রোম্যাগনেটিক রেডিয়েশন। স্কুলে যারা ফিজিক্স পড়েছেন তাদের মনে থাকবে যে বিভিন্ন ধরনের ইলেক্ট্রোম্যাগনেটিক রেডিয়েশন আছে একেকটার কাজ একেক রকম।

মাইক্রোওয়েভ কি করে? 

পানি বা এমন মলিকিউ যেটাতে পজিটিভ এবং নেগেটিভ দুটো চার্জ ই আছে সেগুলোর মধ্যে কম্পন সৃষ্টি করে। এই কম্পনের ফলে তাপ উৎপন্ন হয় এবং সেটা দিয়েই রান্না হয়। এসব খাবারে পানি বেশি থাকে দেখবেন মাইক্রোওয়েভ ওভেনে সেগুলো তাড়াতাড়ি রান্না হয়ে যায়,যেমন সবজি। মাইক্রোওয়েভের ক্ষেত্রে আরেকটা গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হল সেটা নন আয়নাইজিং রেডিয়েশন। এটা কেন গুরুত্বপূর্ণ একদম সহজ করে বুঝিয়ে বলব। ইলেক্ট্রোম্যাগনেটিক রেডিয়েশন এর ক্ষেত্রে কিছু আছে আয়নাইজিং রেডিয়েশন, যেমন এক্সরে। এগুলোর শক্তি অনেক বেশি থাকে। দেখা যায় একটা পরমাণু থেকে ইলেকট্রন সরিয়ে নিতে পারে,অনু, পরমাণুকে  বদলে দিতে পারে,কোষে ড্যামেজ করতে পারে। এইজন্যই আমরা কোন রোগীকে এক্সরে  বা সিটি স্ক্যান করতে বললে খুব সাবধানতার সাথে বিবেচনা করি যাতে এই এক্সরে বা সিটি স্ক্যান করার ফলে যে ক্ষতির সম্ভাবনা আছে তার চেয়ে উপকারের সম্ভাবনা বেশি কিনা। কিন্তু মাইক্রোওয়েভ যেহেতু আয়নাইজিং রেডিয়েশন নয়, তাই তার ক্ষেত্রে এই আলোচনার কোন অবকাশ নেই। অর্থাৎ মাইক্রোওয়েভ থেকে খাবার বের করার পরে সেটাতে রেডিয়েশন আছে, সেটা শরীরে গেলে ক্ষতি করবে ,স্বাস্থ্যঝুঁকি আছে এই আলোচনাগুলো সম্পূর্ণ অবান্তর। তাহলে মোট কথা হলো অন্যান্য রান্নার পদ্ধতির মত মাইক্রোওয়েভ ওভেনেও একটা নিরাপদ রান্নার পদ্ধতি। এবং কিছু ক্ষেত্রে খাবারের পুষ্টি গুনাগুন এতে বেশি অটুট থাকে। তবে মাইক্রোওয়েভ ওভেন ব্যবহার করার জন্য অবশ্যই নিয়মগুলি মেনে চলবেন। যেসব পাত্রে মাইক্রোওয়েভ ওভেনে রান্না করা যায় বা গরম করা যায় সেসব পাত্র ব্যবহার করবেন। অনেকে অনেক সময় প্লাস্টিকের পাত্র ব্যবহার করেন, এটা থেকে খুব সাবধান থাকতে হবে। কারণ প্লাস্টিকে অনেক সময় এমন কিছু কেমিক্যাল ব্যবহার করা হয় যেটা প্লাস্টিক টাকে নরম করে কিন্তু আমাদের স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর।মাইক্রোওয়েভের তাপে সে প্লাস্টিকটা কিন্তু খাবারের মধ্যে আসতে পারে। তাই এসব  ব্যবহার না করে যে সব পাত্র মাইক্রোওয়েভে ব্যবহার করার জন্য উপযোগী সেগুলো ব্যবহার করবেন। 

নিরাপদে থাকবেন।

Comments

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Call Now Button