যে ধরণের মাথাব্যথা স্ট্রোকের লক্ষণ

আজকে মাথা ব্যাথা নিয়ে খুব গুরুত্বপূর্ণ সর্তকতা জানাতে আলোচনা করছি। 

কয়েক সপ্তাহ আগে আমি একজন রোগী দেখি যার স্ট্রোক হয়েছিল অর্থাৎ ব্রেনের রক্তক্ষরণ হয়েছে। তার মাথায় এক ধরনের ব্যথা হয় কিন্তু তিনি জানতে না, ওই মাথা ব্যথা ব্রেন স্টোকের লক্ষণ। মাথাব্যথা আস্তে আস্তে কমে তাই তিনি আর হাসপাতালে আসেননি, ডাক্তারের সাথে আলোচনাও করেননি। কিন্তু কয়েকদিন পরেই তার খিচুনি শুরু হয় এই পর্যায়ের পরিবার তাকে হাসপাতালে নিয়ে আসে। তখন আমরা কিছু পরীক্ষা করে দেখতে পাই তার ব্রেনে রক্তক্ষরণ হয়েছে ,স্ট্রোক  হয়েছে। সব ধরনের চিকিৎসায় দেয়া হয় কিন্তু তিনি না ফেরার দেশে চলে যান। তবে তিনি যদি আগেই হাসপাতালে আসতেন প্রথম যখন মাথা ব্যথা হয়েছিল তাহলে বেঁচে যাওয়ার সম্ভাবনা বেশি থাকতো। আজকে আলোচনা করছি ওই মাথাব্যথাটা ভালো করে বুঝিয়ে ও চিনিয়ে দিতে যাতে আপনার প্রিয়জনের বা আশেপাশে  কারোর যদি এই ধরনের মাথাব্যথা দেখা দেয় তখন সঠিক পদক্ষেপটা নিতে পারেন এবং সময়মতো হাসপাতালে গিয়ে চিকিৎসাটা নিতে পারেন। তাহলে শুরু করি। 

আপনাদের সবারই কমবেশি মাথাব্যথা হয়। নানা কারণে মাথাব্যথা হতে পারে। একটু পানি কম খেলে ,এক বেলা খাবার না খেলে,অনেক ক্লান্ত থাকলে, ঘুম কম হলে মাথা ব্যথা করতে পারে। প্রায় অনেক ধরনের মাথা ব্যথার ধরন আছে। এগুলো বেশি ভাগ মাথাব্যথা কারণ দুশ্চিন্তার কারণ না এমনি চলে যায়। 

কিন্তু এক ধরনের মাথা ব্যথা হলে খুব দ্রুত মৃত্যুর মুখে ফেলে দিতে পারে। তাই এটা কোনমতে এড়িয়ে চলা যাবে না। সেটা কি ধরনের মাথাব্যথা? 

শুরুতেই যে রোগীর কথা বলেছিলাম,সেখানে ফিরে যাই। তিনি প্রতিদিন সাধারনত যা যা করছিলেন সেদিন ও তাই করছিলেন। মাথাব্যথা যখন শুরু হয় তখন তিনি বসে বই পড়ছিলেন এই অবস্থায় হঠাৎ করে মাথার পেছনদিকে প্রচন্ড ব্যথা শুরু হয়। মনে হয় কেউ হঠাৎ করে মাথায় ইট দিয়ে বাড়ি করেছে এমন তীব্র মাথাব্যথা তার জীবনে কখনো হয়নি। তার বমি বমি লাগে এবং তিনি কয়েকবার বমি করেন। কয়েক ঘন্টা পর আস্তে আস্তে ব্যাথাটা কমতে থাকে, মাথাব্যথা থাকে কিন্তু আগের মত ঠিক এতটা না। তিনি ভালো বোধ করতে শুরু করেন তাই হাসপাতালে আর আসেননি। কয়েকদিন পরে তার খিচুনি শুরু হলে তাকে হাসপাতাল আনা হয়। আমরা মাথায় সিটি স্ক্যান করায় তখন দেখতে পায় তার মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণ হয়েছিল,ব্রেন স্টক হয়েছিল কিন্তু অনেক দেরি হয়ে যাওয়াতে পরে চিকিৎসা করেও তাকে সুস্থ করে তোলা সম্ভব হয়নি। তাহলে কোন ধরনের মাথা ব্যথায় দ্রুত হাসপাতালে যেতে হবে??

যদি আপনার মাথা ব্যথা খুব দ্রুত তীব্র আকার ধারণ করে বা হঠাৎ করে প্রচন্ড মাথা ব্যথা শুরু হয়। যেটা এই রোগীর ক্ষেত্রে হয়েছিল। যদি মাথা ব্যথা শুরু হওয়ার কয়েক সেকেন্ডের মধ্যে খুব তীব্র হয়ে যায় তাহলে সেটা দুশ্চিন্তার কারণ। বজ্রপাতের মত কম সময় প্রচন্ড মাথা ব্যথা শুরু হলে সেটা দুশ্চিন্তার কারণ। অধিকাংশ রোগীর  ক্ষেত্রে মাথা ব্যাথা খুব কম সময় তীব্র হতে পারে। তবে কারো কারো ক্ষেত্রে কয়েক মিনিট বা এক থেকে পাঁচ মিনিট পর্যন্ত  লাগতে পারে। কয়েক সেকেন্ড বা কয়েক মিনিট যতই হোক আপনি দ্রুত হাসপাতালে যাবেন।এখানে খেয়াল করেন সাধারণত আমাদের মাথাব্যথা কিন্তু এমন হয় না। প্রথমে আমাদের মাথা হালকা ব্যথা হতে শুরু করে কেউ কেউ বুঝতে পারে এই বুঝি মাথা ব্যথা শুরু হবে। অনেকেই এটা সেটা করে কমানোর চেষ্টা করে। তারপর অনেক সময় মাথাব্যথা সেরে যায় অনেক সময় চলতে থাকে আবার কখনো আস্তে আস্তে মাথা ব্যথা আরো তীব্র হতে থাকে। এই মাথা ব্যাথার কথা আমরা এখানে বলছি না ,এই ব্যথা তেমন দুশ্চিন্তার কারণ নয়।

শুরুতেই খুব তীব্র মাথাব্যথা হবে কয়েক সেকেন্ড বা কয়েক মিনিটেই প্রচন্ড হলে এরকম ব্যথা দুশ্চিন্তার কারণ,তখন চিকিৎসক এর  শরণাপন্ন অবশ্যই হতে হবে। এমন মাথা ব্যথার সাথে আরও কিছু লক্ষণ থাকতে পারে।

অন্যান্য যেসব লক্ষণ থাকতে পারে যেমন,

  • বমি বমি ভাব বা বমি। 
  • আলোতে অসস্তি।
  • আবোল তাবোল বলা বা কনফিউশন। 
  • জ্ঞান হারানো। 
  • চোখে ব্যথা, চোখের পাতা নিচে নেমে আসা।
  • একটার জায়গায় দুইটা দেখা 
  • ঘাড় শক্ত হওয়া। 
  • খিচুনি ইত্যাদি।

এই মাথাব্যথার সাথে যদি আর কোন লক্ষণ না ও থাকে তাও দ্রুত হাসপাতালে যাবেন। কিছু কিছু রোগীর ক্ষেত্রে শুধুমাত্র তীব্র মাথাব্যথা হয় এবং আস্তে আস্তে বাড়ে কিন্তু এসব লক্ষণ থাকে না। কিন্তু তাদের মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণ হয়েছে এবং দ্রুত চিকিৎসা প্রয়োজন। এ জায়গাটাতে অনেক রোগী ভুল করে দেখা যায় যে কিছু সময় পার হলে মাথা ব্যথা কমে যায় তখন তারা মনে করেন যে ডাক্তারের কাছে যাওয়ার কোনো প্রয়োজন নেই মাথাব্যথা তো সেরেই যাচ্ছে। এটা করবেন না যেমন বজ্রপাতের মত মাথা ব্যাথার কথা বললাম এমন হলে অবশ্যই দ্রুত হাসপাতালে যাবেন। একটা গুরুত্বপূর্ণ বিষয় বলে আলোচনাটা শেষ করতে চাই। এমন মাথাব্যথা হলেই ঘাবড়ে যাবেন না এই ধরনের মাথাব্যথা তা হওয়ার মানে যে বিপদ তা না।সহজেই সেরে যাবে বা দুশ্চিন্তার কারণ নেই এমন কিছু কারণেও এই ধরনের মাথা ব্যথা হতে পারে। তবে গুরুতর হওয়ার যেহেতু একটা সম্ভাবনা আছে তাই চিকিৎসকের কাছে যাওয়া প্রয়োজন। তিনি আপনার সাথে কথা বলে আপনার হাত, পা, চোখ ,মুখ, ইত্যাদি পরীক্ষা করে সঠিক পরামর্শটা দিতে পারবেন। তাকে অবশ্যই আপনার সকল সমস্যা খুলে বলবেন।এটা শুনে তিনি সঠিক পরামর্শ দিতে পারবেন।

নিরাপদে থাকবেন।

Comments

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Call Now Button