প্রথম পদক্ষেপ হলো যাচাই করে দেখা আপনার শ্বাস কষ্টটা ক্ষণস্থায়ী শ্বাসকষ্ট কিনা?
ক্ষণস্থায়ী শ্বাসকষ্ট টা অনেক কারণে হতে পারে যেমন প্যানিক অ্যাটাক, এটা তেমন উদ্বেগ এর কারণ নয়। শ্বাসকষ্টটা ক্ষণস্থায়ী কিনা এটা যাচাই করার জন্য আপনাকে তিনটা ছোট ছোট কাজ করতে হবে,
প্রথমে একটা ঠান্ডা জায়গায় যাবেন, বাসায় থাকলে রুমের জানালাগুলো খুলে দিবেন। তারপরে ধীরে ধীরে নাক দিয়ে শ্বাস নিয়ে মুখ দিয়ে ছাড়বেন ,এমন ভাবে ছাড়বেন যেন আপনি একটা মোমবাতি নেভাচ্ছেন। এটা করতে করতে একটা চেয়ারে সোজা হয়ে বসবেন মেরুদন্ডটা টানটান করে, কুঁজো হয়ে বসবেন না। কাধ দুটো আরাম করে ছেড়ে দিবেন। হাঁটুর ওপর ভর দিয়ে একটু সামনে ঝুকে আসবেন।
এই পদক্ষেপ গুলো নিয়ে দেখেন আস্তে আস্তে আপনার শ্বাস-প্রশ্বাস স্বাভাবিক হচ্ছে কিনা।
যদি স্বাভাবিক হয়ে যায় তাহলে সচারচর বিশেষ কোনো চিন্তার কারণ থাকে না তবে ব্যতিক্রম হতে পারে। সেটা দ্বিতীয় ধাপে বলছি।
এই দ্বিতীয় পদক্ষেপ এ সিদ্ধান্ত নিবেন হাসপাতালে যাওয়ার প্রয়োজন কিনা।
দ্বিতীয় ধাপে তিনটা ভিন্ন ভিন্ন পদক্ষেপের কথা বলব। প্রথম ২ টা পরিস্থিতি যাদের বাসায় পালস অক্সিমিটার আছে তাদের জন্য।তৃতীয় পরিস্থিতি যাদের বাসায় পালস অক্সিমিটার নাই তাদের জন্য।
এক ,যদি বাসায় পালসঅক্সিমিটার থাকে সেটা দিয়ে আপনারা অক্সিজেনটা মেপে দেখবেন।
অক্সিজেনের পরিমাণ যদি 94 এর কম থাকে তাহলে আপনাকে হাসপাতালে যেতে হবে ,তখন আপনার শ্বাসকষ্ট থাকুক বা না থাকুক। তবে যদি আপনার স্বাভাবিকভাবে অক্সিজেন টা কম থাকে ফুসফুসে রোগের কারণে বা অন্য কারণে তবে ৯৪ আপনার জন্য প্রযোজ্য নয়।
দুই , অক্সিজেন দিয়ে মেপে দেখলেন ৯৪ এর উপরে আছে কিন্তু রোগীর শ্বাসকষ্ট কমছে না।তাহলেও হাসপাতালে যেতে হবে ,করোনা আসার আগেও রোগীর শ্বাসকষ্ট হলে হাসপাতালে যাওয়ার পরামর্শ দেয়া হতো সেটা এখনো একই।
তিন ,বাসায় যদি পালস অক্সিমিটার না থাকে তবে রোগীর শ্বাসকষ্ট না কমলে হাসপাতালে যেতে হবে।
এখন আসছি তৃতীয় পদক্ষেপে।
যদি দেখেন আপনার অক্সিজেন 94 এর চেয়ে কম অথবা আপনার শ্বাসকষ্ট থামছে না ,কমছে না।তাহলে তো আপনাকে হাসপাতালে যেতে হবে। যতক্ষণে আপনার জন্য হাসপাতালে ব্যবস্থা করা হয়েছে ততক্ষণ আপনি আরেকটা কাজ করতে পারেন আপনার ফুসফুসের উপকারের জন্য।যেটাকে আমরা বলি প্রোনিং সহজ বাংলায় বললে উপর হয়ে শুয়ে থাকা। ইংল্যান্ডে হাসপাতালে ভর্তি করোনা রোগীর এটা প্রয়োগ করা হয়েছে। আমাদের দেশে করোনা রোগীদের এটা চালু করা আছে। হাসপাতালে পৌঁছানোর আগ পর্যন্ত সম্ভব হলে আপনারা এটা বাসায় করতে পারেন। নিয়মটা বলে দেই ,মোট চারটা পজিশন ,
প্রথমটা হল উপুর র হয়ে শুয়ে থাকা। তারপরে হচ্ছে ডান কাঁধ হয়ে শোয়া। তিন নাম্বারটা হচ্ছে বালিশে হেলান দিয়ে বসা। একদম উঠে বসে পড়া না,আবার চিত হয়ে সোয়া না।বিছানা থেকে ৩০ থেকে ৬০ ডিগ্রি কোণ করে শোয়া। আর শেষটা হচ্ছে বাম কাঁধ হয়ে শোয়া। তাহলে কি হলো?
উপুর ,ডান,হেলান ,বাম এক একটাতে অন্তত আধাঘন্টা করে থাকতে হবে। চারটাতে দুই ঘণ্টা পর্যন্ত চালাবেন। তারপর আবার জায়গা বদলাবেন।
কখন এই প্রনিং করা যাবে না?
আসলে প্র্নিং একটা চিকিৎসকের তত্ত্বাবধানে করা হয়। যিনি দেখেন এটা রোগের জন্য উপযোগী কিনা। আগেই বলেছি যেহেতু সময় লাগছে হাসপাতাল খুঁজে পেতে । সেজন্যই এগুলো আপনাদের কে বলা ।যদি হাসপাতালে ভর্তি হয়ে যেতে পারেন সাথে সাথে তখন তো ডাক্তারের পরামর্শে চিকিৎসা চলবে।
এখন বলব কখন প্রোনিং থেকে বিরত থাকবেন।
যদি প্রচন্ড শ্বাসকষ্ট হয়, এটা আসলে বোঝানো কঠিন। তারপরও বোঝানোর চেষ্টা করছি রোগী মিনিটে শ্বাস নিচ্ছে ৩৫পারের বেশি। বা শ্বাস নিতে অন্যান্য মাংসপেশি ব্যবহার করছে।
এক , পাঁজরের মধ্যে চামড়া ভেতরে ঢুকে যাচ্ছে। গলার মাংসপেশি ফুলে উঠেছে ইত্যাদি।
দুই ,রোগী খুব উত্তেজিত অবস্থায় আছে বা কনফিউস অবস্থায় আছে।
তিন ,ব্লাড প্রেসার ৯০ এর নিচে নেমে গেছে।
চার ,রোগীর হার্টের রিদমে সমস্যা আছে।
পাঁচ রোগীর মেরুদন্ড স্টেবল না। বুকে ইনজুরি আছে বা কিছুদিন আগে পেটের অপারেশন হয়েছে। এসব ক্ষেত্রে প্রোনিং করা যাবে না।
আর কিছু ক্ষেত্রে সাবধানতা অবলম্বন করতে হবে।
রোগী যদি তিন মাসের বেশি গর্ভবতী হন ,শরীরের ওজন অনেক বেশি হলে। শরীরে ঘা হয়ে থাকলে। মুখমণ্ডলে ইনজুরি থাকলে। খিচুনি রোগ বাই স্নায়ুতন্ত্রের অন্যান্য রোগ থাকলে।
নিরাপদে থাকবেন।
Leave a Reply