নারীদের পিরিয়ডে টিকার নতুন পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া

যুক্তরাজ্যে এ পর্যন্ত ১৩ হাজারের বেশি মহিলা জানিয়েছেন যে টিকা গ্রহণের পরে তাদের মাসিকের পরিবর্তন দেখা দিয়েছে। এদের মধ্যে অনেকে জানিয়েছেন যে টিকা গ্রহণের পর আগের চেয়ে বেশি রক্তপাত হয়েছে। মাসিকের এই পরিবর্তন টিকার কারণেই হয়েছে কিনা তা আমরা নিশ্চিত নয়। তবে এটা টিকার কারণেও হতে পারে। আগের কিছু টিকার ক্ষেত্রে এমনটা দেখা গেছে, যেমন ফ্লু ভ্যাকসিন তারপর মেয়েদের জরায়ু মুখের ক্যান্সার প্রতিরোধে যে টিকা দেয়া হয় এই টিকাগুলো নেয়ার পরে মাসিকে সাময়িক কিছু পরিবর্তন আসতে পারে।

এর কোনটাই লং টার্ম নয় কিছুদিন পরেই ঠিক হয়ে যায়। টিকা নেওয়ার  পরে আমাদের রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থা আমাদের ইমিউনিটি সিস্টেম রিঅ্যাকশন শুরু করে, প্রস্তুতি নেয়া শুরু করে যাতে করে আসল করোনাভাইরাস যদি আমাদের শরীরে তাহলে সে যাতে মোকাবেলা করতে পারে।এই যে যখন আমাদের ইমিউনিটি সিস্টেম তৈরি হচ্ছে তখন আমাদের শরীরে কিছু পরিবর্তন দেখা দিতে পারে।যেমন একটু জ্বর আসতে পারে,কাঁপুনি লাগতে পারে,মাথা ব্যথা হতে পারে। আমাদের ইমিউনিটি সিস্টেম শরীরে অন্যান্য জায়গায় যেমন আছে আমাদের জরায়ুতে অর্থাৎ যেখান থেকে মাসিকের রক্ত বের হয় সেখানেও কিন্তু ইমিউনিটি সিস্টেম আছে,রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থা আছে। শরীরে অন্যান্য জায়গায় যেমন রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থা তৈরি হচ্ছে জরায়ুতে যে ইমিউনিটি সিস্টেম আছে সেখানেও কিছু পরিবর্তন আসতে পারে এবং জরায়ুর ইমিউনিটি সিস্টেমের পরিবর্তনের ফলে মাসিকের পরিবর্তন দেখা দিতে পারে। 

মাসিকের পরিবর্তনের কথা শুনে অনেকে ভয় পান,যে টিকা নিলে  কি গর্ভধারণের ক্ষমতা কমে যাবে?বাচ্চা নিতে সমস্যা হবে?

একদমই না। ওই যে দুটো টিকার কথা বললাম ফ্লু টিকা আর এইচপিভি টিকা অর্থাৎ জরায়ু  মুখের ক্যান্সারের এর টিকা যেগুলা গ্রহণ করার পর  আমরা অতীতে দেখেছি যে মাসিকে সাময়িক পরিবর্তন আসতে পারে,

এর কোনটাই গর্ভধারণে ক্ষমতা কমায় না,বাচ্চা নিতে কোন সমস্যা সৃষ্টি করে না। হাজার হাজার দম্পতির  উপরে করা খুব ভালো গবেষণা থেকে আমরা এটা জানি। 

এখন আপনি প্রশ্ন করতে পারেন,বুঝলাম আগের টিকায় সমস্যা হয় নাই করোনা  টিকায় বাচ্চা নিতে সমস্যা হবে না এমন কোন প্রমাণ আছে?

উত্তর হচ্ছে, আছে,

করোনা টিকা যখন গবেষণা চলছিল তখন প্রাথমিকভাবে সীমিত কিছু মানুষকে টিকা দেয়া হয়েছিল। যে মহিলারা ট্রায়াল এ অংশগ্রহণ করেছিলেন তাদেরকে বলা হয়েছিল যে ট্রায়াল চলাকালীন সময় আপনারা গর্ভবতী হবেন না। নিষেধ করার পরেও যুক্তরাজ্যে চারটি টায়ালে মোট ৬৫ জন গর্ভবতী হন। আপনারা জানেন যে ট্রায়ালের সময় অংশগ্রহণকারীদের কে দুইদলে ভাগ করা হয়, একদলকে টিকা দেয়া হয় আর আরেক দলকে টিকার মতোই অন্য একটা কিছু স্যালাইন দেয়া হয়।তো টিকা যদি গর্ভধারণের সমস্যা সৃষ্টি করত তাহলে যে দল টিকা পেয়েছে তাদের মধ্যে তুলনামূলকভাবে অল্প সংখ্যক নারী গর্ভবতী হওয়ার কথা। কিন্তু দেখা গেছে ৬৫ জনের মধ্যে প্রায় সমান সংখ্যক নারী দুই দলে ছিলেন। আর এই ট্রায়াল এর মধ্যে কোটি কোটি  মানুষের মধ্যে টিকা দেয়া হয়েছে যারা টিকা পেয়েছে তাদেরকে গবেষণায় এনে দেখা হয়েছে  টিকার কারণে গর্ভধারণে কোন সমস্যা হয় এমন কোন প্রমাণ মিলেনি।তাহলে এটা কোন চিন্তার বিষয় নয়।যেকোনো ওষুধে পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া রয়েছে তাই উপকার আর ঝুঁকির হিসাব কষাটা খুব গুরুত্বপূর্ণ। টিকার মাধ্যমে আমরা করোনা ঠেকানোর চেষ্টা করছি। আমরা জানি গর্ভবতী মহিলাদের ক্ষেত্রে করোনা গুরুতর হওয়ার সম্ভাবনা বেশি। আর করোনা থেকে মৃত্যুর সম্ভাবনা তো রয়েছেই। তো টিকার উপকারিতা ও ঝুঁকির হিসাব করে আমি নির্দ্বিধায় টিকা নিয়েছি, আমার পরিবার ও রোগীদের জন্য আমার একই পরামর্শ।

নিরাপদে থাকবেন।

Comments

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Call Now Button