সঠিকভাবে ব্লাড প্রেশার মাপার পদ্ধতি

ব্লাড প্রেসার মাপতে গিয়ে আমরা অনেক রকমের  ভুল করি। এতে প্রেসার কম বা বেশি দেখায় ,আসল অবস্থা জানা যায় না। ফলে  অতিরিক্ত বা অল্প চিকিৎসা হয়। আজকে বলবো আপনি কিভাবে সঠিক ভাবে ব্লাড প্রেসার মাপতে পারবেন। 

প্রেশার মাপার আগে দুইটা বিষয় খেয়াল রাখতে হবে। 

১,ব্লাড প্রেসার মাপার আগে ৩০ মিনিট নির্দিষ্ট কিছু কাজ করা যাবে না। এ কাজগুলো কিছুক্ষণের জন্য প্রেসার বাড়িয়ে দিতে পারে। ফলে এইসবের পরে প্রেসার মাপলে প্রকৃত অবস্থা বোঝা যায় না। এই কাজগুলো কি কি? চা, কফি, কমল পানীয় পান, ধূমপান,আর ব্যায়াম। চা কফি কমল পানীয়তে আছে ক্যাফেইন,যা ব্লাড প্রেসার বাড়িয়ে দিতে পারে। সিগারেট আছে নিকোটিন সেটাও ব্লাড প্রেসার বাড়িয়ে দিতে পারে। আবার ব্যায়াম করলে ব্লাড প্রেসার বেড়ে যেতে পারে। 

দুই,প্রেসার মাপার সময় নিজেকে স্বস্তিতে রাখবেন। আমেরিকান হার্ট অ্যাসোসিয়েশন সহ অন্যান্য বিশ্বস্ত প্রতিষ্ঠান পরামর্শ দেয় যে প্রেশার মাপার আগে কমপক্ষে পাঁচ মিনিট চুপ করে বসে বিশ্রাম নিতে। এই সময় কারো সাথে কথা বলবেন না। নিজেকে রিলাক্স করার জন্য এই সময়টা কাজে লাগাবেন। প্রেশার মাপার সময় স্বস্তিতে থাকা নিয়ে আরেকটা কথা, পেটে যদি প্রসাবের চাপ থাকে তাহলে তা অস্বস্তি  বাড়াতে পারে,ব্লাড প্রেসার বাড়িয়ে দিতে পারে। তাই প্রেসার মাপার আগে বাথরুম সেরে নিবেন। পেটে যাতে কোনরকম চাপ বা অস্বস্তি না থাকে। 

এখন বলব প্রেসার মাপার  সাতটা নিয়ম। 

খুব সহজ করে বলবো। 

এক, প্রেসার কি বসে  মাপবেন, দাড়িয়ে মাপবেন ,নাকি শুয়ে মাপবেন? উত্তর হচ্ছে বসে মাপবেন। যেখানেই বসেন আপনার দুইটা জিনিস খেয়াল রাখতে হবে। পিঠ কিছুটা হেলান দিয়ে আছেন আর সোজা হয়ে বসেছেন। অনেকেই বিছানায় বসে প্রেসার মাপেন বিছানায় বসলে সাধারণত  পিঠের পিছনে হেলান দেয়ার জন্য কিছু থাকে না। পীর যদি কোথাও হেলান না দেন তাহলে আপনার সিস্টলিক প্রেসার ,অর্থাৎ প্রেসার মাপলে উপরের যে  সংখ্যাটা আসে সেটা ৫  থেকে ১৫ পয়েন্ট পর্যন্ত বেড়ে যেতে পারে। আর ডায়ালস্টিক প্রেসার অর্থাৎ নিচের সংখ্যা ছয়  পয়েন্ট পর্যন্ত বেড়ে যেতে পারে।তাই পিঠ  হেলান দিয়ে বসা খুব গুরুত্বপূর্ণ। আবার কেউ কেউ সোফায় বসে প্রেসার মাপেন এতে প্রেসার  বেশি আসতে পারে।প্রেসার  মাপার জন্য একটা চেয়ারে সোজা হয়ে বসবেন।

শুরু করছি কিভাবে উচ্চ রক্তচাপের সৃষ্টি হয় সেটা  সহজ ভাষায় বুঝিয়ে বলতে,

আমাদের শরীরের রক্ত নালীগুলো রাবারের মত সেটা প্রসারিত ও সংকুচিত হতে পারে কিন্তু এই রক্তনালী যদি শক্ত হয়ে যায় তখন প্রয়োজন মত প্রসারিত হতে পারেনা, রক্ত চলাচলে বাধা বেড়ে যায় দেখা দেয় হায় ব্লাড প্রেসার। এছাড়াও প্রেসার বাড়ার আরো কিছু  সূক্ষ্ম কারণ রয়েছে।

এখন খুব সহজ করে বুঝিয়ে বলছি প্রেসার বেড়ে গেলে কি কি সমস্যার সৃষ্টি হতে পারে ?

এক, উচ্চ রক্তচাপের ফলে রক্ত নালি গুলো দুর্বল হয়ে যেতে পারে, রক্তনালী গুলোর  দেয়াল পাতলা হয়ে বেলুনের মতো ফুলে ওঠে সেটা হঠাৎ ছিড়ে  যেতে পারে তখন ব্রেনে মারাত্মক রক্তক্ষরণ দেখা দেয়, একই সমস্যা পেটের রক্তনালিতেও হতে পারে 

দ্বিতীয় যে সমস্যাটা হতে পারে সেটা হল রক্তনালীতে চর্বি জমা সুস্থ স্বাভাবিক রক্তনালী তার গায়ে চর্বি জমতে দেয় না তবে উচ্চ রক্তচাপ রক্তনালীকে ক্ষতিগ্রস্ত করতে থাকে তখন রক্ত  নালিগুলোর  গায়ে চর্বি  কোলেস্ট্রল ও ক্যালসিয়াম ডমাট বাঁধতে  পারে আস্তে আস্তে এই চর্বি জমাট বড় হয় রক্তনালী সরু হয়।কিছু ক্ষেত্রে দেখা যায় চর্বির গায়ে এসে  রক্ত জমাট বাঁধে এক পর্যায়ে রক্তনালীর মুখ পুরোটাই বন্ধ হয়ে যেতে পারে তখন রক্ত আর সামনে আগাতে পারে না ,এটা খুবই মারাত্মক ঘটনা 

আপনারা নিশ্চয়ই ব্রেইন স্টক আর হার্ট অ্যাটাকের কথা শুনেছেন এইটা সেই ঘটনা ,

ব্রেন এর রক্তনালী বন্ধ হলে হয় স্ট্রোক তখন ব্রেইনের এক  অংশ আর  রক্ত পায় না কোষগুলো মরে যায় 

একইভাবে হার্টের রক্তনালী বন্ধ হলে হয় হার্ট অ্যাটাক। এছাড়াও হাই ব্লাড প্রেসার দীর্ঘদিন থাকলে আরো অনেক ধরনের সমস্যা দেখা দিতে পারে যেমন হার্ট দুর্বল হয়ে ,যাওয়া কিডনি ওকেজো হয়ে যাওয়া দৃষ্টিশক্তিতে সমস্যা দেখা দেয়া ইত্যাদি।

আপনার ব্লাড প্রেসার এর সংখ্যা দেখে ডাক্তাররা অনেক ধরনের সিদ্ধান্ত নেয়। আপনার ওষুধ কাজ করছে কিনা, ওষুধের ডোজ বাড়াতে হবে কিনা,নতুন ওষুধ যোগ করতে হবে কিনা ইত্যাদি।নিয়ম না জানার  কারণে কিংবা ভুল বা অসতর্কতার কারণে আপনার প্রেসার সংখ্যাগুলো যদি বেশি হয় তাহলে ব্লাড প্রেসার নিয়ন্ত্রণে থাকার পরেও মনে হবে যে সেটা নিয়ন্ত্রণে নেই। তখন  যে ওষুধ আপনার প্রয়োজন নেই সেটা আপনাকে খেতে দেয়া হবে। ওষুধ যেখানে কমানো যেত সেখানে হয়তো ওষুধ বাড়িয়ে দেয়া হবে। আর প্রেসার হাই এই চিন্তা করে আপনি এবং আপনার আপনজন টেনশন করতে থাকবে। 

এখন বলব প্রেসার মাপার সময় পা কিভাবে রাখবেন? 

পায়ের পাতা গুলো মেঝের উপর সমান ভাবে রাখবেন। একটা ছোট টুলের ওপরেও রাখতে পারেন। অনেকেই খাটের এক পাশে বসে পা ঝুলিয়ে প্রেসার মাপেন পায়ের পাতা নিচে কিছু না রেখে পা ঝুলে প্রেসার মাপলে প্রেসার বেশি আসতে পারে। আবার পা একটার উপর আর  একটা উঠিয়ে বসা যাবে না। এমন করলে পায়ের রক্তনালীতে চাপ পড়ে ফলে প্রেসার হালকা বেশি আসতে পারে। প্রেসার এর উপরে সংখ্যা 5 থেকে 8 পয়েন্ট  পর্যন্ত বেড়ে যেতে পারে।আর নিচের সংখ্যাটা পাঁচ পয়েন্ট পর্যন্ত বাড়তে পারে।

প্রেশার মাপার সময় হাত কোথায় ও কিভাবে রাখবেন? 

আপনার হাত থাকতে হবে হার্টের লেভেল বরাবর। হার্টের লেভেল হচ্ছে বুকের মাঝখানে  হাড্ডির মাঝ বরাবর।আপনার হাতের রক্তনালীর ভিতরে যে রক্ত প্রবাহ হচ্ছে এটা থেকেই মেশিন প্রেসার মাপবে  হাতের মাংস পেশি সংকুচিত হয়ে থাকলে প্রেসার বেশি আসবে। 

হাতের উপর জামা কাপড় থাকলে কি করবেন? 

প্রেসার মাপার সময় হাত থেকে কাপড় সরিয়ে নিতে হবে। তাই ছোট হাতের শার্ট গেঞ্জি বা জামা পড়বেন, যাতে সহজেই প্রেসার  মাপা যায়।

নিরাপদ এ থাকবেন|

Comments

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Call Now Button